প্রত্যয় নিউজ: গত জানুয়ারি মাসের প্রকৃতি আর বর্তমান প্রকৃতির মধ্যে বিস্তর তফাৎ পরিলক্ষন করেছেন পরিবেশবিদরা। কিছুদিন আগেও মানুষের কাছে প্রকৃতি ছিলো অবহেলিত। কিন্তু কোভিড-১৯ এর তাণ্ডবে সারাবিশ্বের মানুষ যখন বিপর্যস্ত তখন প্রকৃতিতে ফিরেছে প্রাণ। গত চার মাস ধরে পৃথিবীর মানুষ একপ্রকার ঘরবন্দি। প্রকৃতির ওপর চালানোর অবিচার কমে আসায় প্রকৃতি যেন নিজেকে মেলে ধরেছে। ফিরেছে স্বমহিমায়। এই বাস্তবতা থেকে নতুন করে শিখতে শুরু করেছে মানুষ। তবে সেই শিক্ষা করোনার পরও থাকবে কিনা এখন সেটিই দেখার বিষয়। আর এই বিষয়কে মাথায় নিয়েই সারাবিশ্বে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জীববৈচিত্র্য রক্ষার যে তাগিদ দুনিয়াব্যাপি আলোচিত হচ্ছিলো মানুষের অতিপ্রয়োজনীয়তা তাতে বাঁধ সাধছিল। করোনা মানুষের সেই অতিপ্রয়োজনীতা কমিয়ে জীববৈচিত্র্য রক্ষা করছে। বিশ্ব পরিবেশ দিবসে ঢাকার বাতাসে যেমন কমেছে সিসার বিষ, তেমনি শব্দের দূষণও কমেছে।
এবার পরিবেশ দিবসের আয়োজক দেশ কলম্বিয়া। জার্মানির সহযোগিতায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে তারা। গত বছর ছিল চীন। সারা বিশ্বের জীববৈচিত্র্যের ১০ শতাংশই রয়েছে কলম্বিয়াতে। অ্যামাজন এর একটি বড় অংশ রয়েছেই কলম্বিয়াতে। এই অ্যামাজনেই বছরের পর বছর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকার বনভূমিতেও গত বছর বড় রকমের আগুনের সূত্রপাত হয়।
জাতিসংঘ বলছে, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ না করাতে আমাদের পরিবেশের ভারসাম্যই শুধু নষ্ট হচ্ছে না আমরা এর মাধ্যমে আমাদের জীবনকে ধ্বংস করছি। কোভিড আমাদের সেই শিক্ষা দিচ্ছে উল্লেখ করে জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে আমরা জীববৈচিত্র্য রক্ষা করলে শুধু খাদ্যেরই যোগান পাব না বরং ওষুধসহ নির্মল পানি এবং বাতাস পাব। যা মানুষের সুস্থতার বড় অনুষঙ্গ হতে পারে।
আয়োজক কলম্বিয়া বলছে, এখন তাদের দেশে প্রায় ১০ লাখ জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে এর থেকে গুরুত্বপূর্ণ সময় আর আসেনি। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ না করায় জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে যার শিকার হচ্ছে বাংলাদেশও। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সঙ্গে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়াতে লবণাক্ত পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে বিস্তর এলাকা। এতে মানুষ গৃহহীন হয়ে ভাসমান জীবন যাপন করছে। শুধু বাড়িই নয় মানুষ হারাচ্ছে ফসলের মাঠ এবং তার কাজের জায়গাও।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের বায়ুমান যাচাই বিষয়ক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘এয়ার ভিজ্যুয়াল’ এর বায়ুমান সূচকে (একিউআই) বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম স্থান থেকে সরে ৭৩ তমতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। সূচকের মান জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি মাসে যেখানে ছিল ৩০০ এর উপরে। যা শুধু অস্বাস্থ্যকর নয়, দুর্যোগের পর্যায়ে বলে মনে করতেন বিশেষজ্ঞরা। সেখানে এখন সেই সূচক নেমে এসেছে ৫০ এর নিচে। গত দুইদিনের বৃষ্টিতে এখন তা নেমে দাঁড়িয়েছে ২৫ এ।