চৌধুরী হারুনুর রশীদ,রাঙামাটি: কৃষিমন্ত্রী ড.মো:আব্দুর রাজ্জাক এমপি বলেছেন, গতানুগতিক কৃষিকাজ করে মানুষের জীবনমানের পরিবর্তন হবে না। কৃষি আধুনিক হলেই মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন হবে। সেজন্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার কৃষিকে আধুনিক ও লাভজনক করতে কাজ করছে। কৃষি উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাত ও রপ্তানি বৃদ্ধিতে বর্তমান সরকার সমন্বিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। নানান উদ্যোগের ফলে কৃষি এখন যান্ত্রিকীকরণ হচ্ছে, কৃষিপণ্যের প্রক্রিয়াজাত বাড়ছে ও রপ্তানিও বাড়ছে।
বৃহস্পতিবার সকালে রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলার সাপছড়ি ও দ্বিচানপাড়ায় ভার্মি কম্পোস্ট, সূর্যমুখীর খেত, মাল্টা,আনারস
কাজুবাদাম ও কফি বাগান পরিদর্শন এবং চাষিদের সাথে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ভিয়েতনাম কাজুবাদাম রপ্তানি করে বছরে ৪০ হাজার কোটি টাকা আয় করে। দেশটি যে পরিমাণ রপ্তানি করে, তার ৪০ ভাগ স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করে। বাকী ৫০-৬০ ভাগ বিদেশ থেকে আমদানি করে প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানি করে থাকে। আমাদের দেশেও কাজুবাদাম উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাত করে ভিয়েতনামের মতো আয় করা সম্ভব। সেজন্য, পাহাড়ের বিশাল এলাকায় এসব ফসলের চাষ আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে। সেলক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, কৃষিকে আরো লাভজনক করতে হলে ধান, গম, শাকসবজিসহ প্রচলিত ফসলের পাশাপাশি কফি, কাজুবাদাম, গোলমরিচ, আনারস, আমসহ বিভিন্ন অপ্রচলিত অর্থকরী ফসলের চাষ করতে হবে।
কৃষি মন্ত্রী ও আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড.মো.আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, রাজাকার আলবদরদের একাত্তরে রুখে দিয়েছিলাম। এখন যারা ষড়যন্ত্র করছে তাদের শেকড়,মূল উৎপাটন করব। বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে আছে। যারা গণতন্ত্রের নামে আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস করছে ষড়যন্ত্র করছে, তাদের আমরা রুখে দেব।
বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) বিকালে রাঙামাটিতে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে সম্ভাবনায় কাজুবাদাম ও কফি আবাদা, সম্প্রসারণ এবং বিভিন্ন জাতের ফলসহ টেকসই ফসলের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধি’ সম্পর্কিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিদেশী অর্থনীতিদের অনুমানকে ভুল প্রমাণ করেছেন, তিনি প্রমাণ করেছেন বাংলাদেশ টিকে থাকতে স্বাধীন হয়েছে। বতর্মানে আওয়ামী লীগ সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে। আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত দিতে চাই।’
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের রুচি বেড়েছে। ২০ টাকা খরচ করে মানুষ সান ফ্লাওয়ার ক্ষেতে গিয়ে ছবি তোলেন। এছাড়া দেশে সরিষার ফলন আমাদের এবছর অন্যান্য বছরের চেয়ে অনন্য। কৃষি ক্ষেত্রে অনেক সফলতার কাঠি আমি তুলে ধরতে পারি। কৃষির জন্য পাহাড়ি এলাকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এখানে সবই হয়।’
পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মন্ত্রণালয় এই এলাকায় কফি ও কাজু বাদাম চাষের জন্য ৪০ কোটির প্রকল্প নেয়া হয়েছে। ১২টি উপজেলায় আমাদের উদ্যোগ রয়েছে। এরমধ্যে চারটিকে আওতায় এনেছি।
মতবিনিময় সভায় রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও রাঙ্গামাটি সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা।
এসময় উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর, জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ও পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ প্রমুখ।
হর্টিকালচার সেন্টার বান্দরবানের উপপরিচালক আমিনুর রশিদের সঞ্চালনায় এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, ডিএই রাঙ্গামাটি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক তপন কুমার পাল। বক্তব্য রাখেন কৃষক অমলেন্দু চাকমা, আয়ুব আলী ও লিপি চাকমা।