বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:লাদাখ সীমান্তের গালোয়ানে ভারত–চিনের তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনার জন্য সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বৈঠকটি হবে শুক্রবার বিকেল পাঁচটায়। করোনা পরিস্থিতিতে পুরো বৈঠকটিই হবে ভিডিও মারফত। ওই বৈঠকে তৃণমূল কংগ্রেস থাকবে। দলের তরফে বৈঠকে প্রতিনিধিত্ব করবেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি ভারত–চিন তপ্ত সম্পর্ক নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সর্বদলীয় বৈঠক ডাকাকে ইতিমধ্যে স্বাগত জানিয়েছেন মমতা।
সোমবার রাতে লাদাখের গালোয়ান সীমান্তে আচমকাই ভারত ও চিনের সেনাদের মধ্যে সঙ্ঘর্ষ হয়। ঘটনায় ভারতের ২০ জন সেনা প্রাণ হারান। ভারতীয় সেনাবাহিনীর তরফে এ কথা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। তবে হতাহতের ব্যাপারে চিন নীরব রয়েছে। ওই দেশের তরফে সংক্ষিপ্ত ভাষায় বলা হয়েছে, লাদাখ সীমান্তে দুই দেশের মধ্যে ভয়ঙ্কর সঙ্ঘর্ষ হয়েছে। ঘটনায় দুই পক্ষেরই অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। চিনের এই প্রতিক্রিয়ায় সংশয় তৈরি হয়েছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। তাঁদের ধারণা, চিনের কথায় স্পষ্ট, তাদেরও বহু সেনা প্রাণ হারিয়েছেন। তবে ঘটনার পর চিনের বহু অ্যাম্বুল্যান্স হেলিকপ্টারকে ঘটনাস্থলে নামতে এবং উঠতে দেখা গিয়েছে। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখার পর বেসরকারি সূত্র মতে, ওই সঙ্ঘর্ষে চিনের কমপক্ষে ৪৩ জন থেকে ৪৫ জন সেনার মৃত্যু হয়েছে।
ঘটনার পর দুই দেশের বিদেশ মন্ত্রকের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে চিন সুর অনেক নরম করলেও ঘটনাস্থলে তাদের সেনা তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীও সীমান্ত অঞ্চলে সক্রিয়তা বাড়িয়েছে। ঘটনা সম্পর্কে দেশবাসীকে সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘সীমান্ত অঞ্চলে ভারত কখনও কোনও দেশকে উস্কানি দেয়নি। এটা ভারতের নীতি নয়। তবে সেই সুযোগে অন্য দেশ যদি ভারতের ওপর হামলা চালায় বা চালানোর চেষ্টা করে, তা হলে তার সমুচিত জবাব ভারত দেবে।’ প্রধানমন্ত্রীর এমন প্রতিক্রিয়ার পরই চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ইয়ি ফোন করেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে। তিনি তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন। চিন যে উত্তেজনা চায় না, তা বোঝানোর চেষ্টা করেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়াকে বেজিং যে হালকা ভাবে নিতে পারেনি, তাদের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ইয়ির ফোনই তার প্রমাণ বলে মনে করছেন বিদেশনীতি বিষয়ক তথ্যাভিজ্ঞ মহল।
শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষণার পর উপমহাদেশ তথা গোটা পৃথিবীতেই বিষয়টি নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। অনেক দেশই আশঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছে, ভারত এবং চিন, দুটি দেশই পরমাণু শক্তিধর। যদি দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়, তা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে এগোতে পারে। তখন সেই যুদ্ধ পরমাণু যুদ্ধে পরিণত হতে পারে। তাই দুই দেশকেই যুদ্ধের পথ থেকে সরে আসার জন্য অনেক দেশই আবেদন করেছে। পাশাপাশি চিনের আগ্রাসন নীতিরও সমালোচনা করেছে অনেক দেশ। এদিকে, মঙ্গলবারের ঘটনার পরই বিরোধী দলগুলি সম্পূর্ণ ঘটনা সম্পর্কে দেশবাসীকে অবহিত করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর চাপ তৈরি করতে শুরু করে। যদিও ভারতের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এমন ক্ষেত্রে কোনও সরকারই পুরো ঘটনার কথা বলে দেশে উত্তেজনা তৈরি করতে চায় না। যতখানি বলা উচিত, ততখানিই দেশবাসীকে জানায়।
যদিও পরিস্থিতি বিবেচনা করে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সর্বদলীয় বৈঠকের ঘোষণা করা হয়। বৈঠকটি হবে পুরোপুরি ভিডিও মারফতই। সেই বৈঠকে দেশের সমস্ত দলই উপস্থিত থাকবে। সরকারের পক্ষে থাকবেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। থাকার কথা রয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। থাকতে পারেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে তৃণমূল দলনেত্রী বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার যে সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় সরকার নিয়েছে, তাকে সম্পূর্ণ সমর্থন করছি। এই সিদ্ধান্ত পুরোপুরি সঠিক।’ পাশাপাশি তিনি এ কথাও বলেন, ‘আমরা বিদেশ মন্ত্রকের নীতি এবং বিষয় নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে।’
বৈঠক সম্পর্কে তৃণমূল কংগ্রেস তাদের অবস্থান স্পষ্ট করার পর বলেছে, ‘এই পরিস্থিতিতে সরকারের পাশেই রয়েছে তৃণমূল। তাই এই ভিডিও কনফারেন্সে উপস্থিত থাকবেন আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আমরা মনে করি, এই সময় প্রতিটি দলেরই উচিত দেশের সরকারের পাশে থাকা।’ সূত্রের খবর, ওই বৈঠকেই প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রতিটি দলকেই ঘটনার সম্পূর্ণ বিবরণ দেওয়ার পাশাপাশি ভারত কী চায়, তাও ব্যাখ্যা করবেন। সেই সঙ্গে দলগুলির মতামতও জেনে নেবেন।