নারীর পোশাক বিতর্ক
লতিফুর রহমান প্রামাণিক, লেখক ও আইনজীবী
এই বিতর্কের সূচনাকাল কবে বা কোথা থেকে শুরু তার ইতিহাস খুঁজে পাওয়া সহজ নয়। হাজার বছর ধরে চলতে থাকা এই বিতর্ক সারা দুনিয়ার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। গত দশক থেকে বরঞ্চ আরও নতুন ভাবে যেন আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়ার মতো ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে যাচ্ছে। সেটা হোক ভারতীয় উপমহাদেশে, আরব দেশ বা ইউরোপ এর সভ্য দেশ বলে দাবি করা দেশগুলোতে। কিন্তু এই বিতর্ক কবে শেষ হবে? তার উত্তর হয়তো আমাদের কারো জানা নেই। অদ্ভুত হলো ও সত্য যে, নারীর শালীন পোশাকের দাবীতে আমরা যেমন প্রতিবাদী হতে রাস্তায় নারীদের দাঁড়িয়ে আন্দোলন দেখি আবার কথিত স্বাধীন পোশাকের দাবীতে আমরা আবারও নারীদের দাঁড়িয়ে আন্দোলন দেখি রাস্তায়। এর সঠিক উত্তর আমাদের জানা নেই। কিন্তু কেন এই বিতর্ক? কেন নারীরা ধর্মের বিধানের কাছে নত নয়? কেনই বা নারী শালীন পোশাকের দাবীতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যায়? আর কেনই বা অন্তবাস আর বুক বন্ধনী পরে চিৎকার করে বলে, পোশাক আমার অধিকার, কি পরব না পরবো আমার ইচ্ছেধীন। আর কেনই বা নগ্ন হয়ে বসবাস করতে চাওয়া এক শ্রেণির নব ভাবনার মানুষ দাবি তুলছে? এর উত্তর খুঁজে দেখবো, সেই প্রচেষ্টার জন্য এই লেখা। পৃথিবীতে ধর্মের সূচনা হওয়ার সাথে সাথে ঈশ্বর, ভগবান, স্রস্টা বা আল্লাহর দেয়া বিধান বা ধর্ম মানুষের জন্য আইন হয়ে যায়। এবং কিয়ামত অব্দি সেই বিধান মানুষের মতো টিকে থাকবে এর ব্যতিক্রম হওয়ার সম্ভাবনা নেই। প্রতিটি ধর্মের প্রধান শিক্ষা হলো জীবন বিধান আর পরকালে অন্তহীন জান্নাতি বা স্বর্গীয় জীবনলাভ। নারী আর পুরুষ দুজনেই মানুষ। কিন্তু শারীরিক নকশা আর জেনেটিক আচরণ মানুষকে করেছে নারী আর পুরুষ। এই তফাত আল্লাহ প্রদত্ত অথবা অন্য ধর্মের স্রস্টা বা ঈশ্বরের। ইহাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। এতে মানুষের হাত নেই কিন্তু সেই নিয়মের বিরুদ্ধে আমরা যারা সীমালঙ্ঘনকারী তারাই প্রশ্ন তুলে দাঁড়িয়ে যাই। আগেই বলেছি প্রতিটি ধর্মের প্রধান উদ্দেশ্য হলো মানুষের জীবনবিধান। কোন ধর্মে পুর্নাঙ্গ জীবন বিধান রয়েছে সেই বিষয় টা অন্য আলোচনার বিষয় তা নিয়ে এগুতে চাওয়া আজকের আলোচনার বিষয় বস্ত নয় কাজেই নিবৃত হলাম সেদিকে। নারীর পোশাক বিতর্ক নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, সেদিকে দৃষ্টি রাখি। সব ধর্মে না হলেও দুনিয়ার বহুল প্রচলিত ধর্মের বিধানের আলোচনা তে নারীর পোশাক নিয়ে, তার রকমফের নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।
বুদ্ধ শিখিয়েছিলেন যে স্ত্রীকে তার স্বামীর প্রতি বাধ্য হতে হবে (05:33), এবং এটাও শিখিয়েছে যে স্বামীদের তাদের স্ত্রীদের সম্মান করা উচিত।
ফুরে বার্নার্ড এবং মিরান্ডা শ এর মতো কিছু পণ্ডিত একমত হন যে বৌদ্ধ শিক্ষা তার প্রথম দিনগুলিতে লিঙ্গ সমস্যাগুলি ব্যাপকভাবে মোকাবেলা করে এবং এটিকে খুব মনোযোগ দেয়।
প্রাক-বৌদ্ধধর্মসম্পাদনাযে সামাজিক শ্রেনিবিন্যাসে বৌদ্ধ ধর্মের উদ্ভব হয়েছিল তা ছিল এমন একটি ব্যবস্থা যা নারীদেরকে এই বিষয়ে পুরুষদের থেকে নিকৃষ্ট অবস্থানে রেখেছিল। ভারতীয় সমাজ অন্যান্য সমাজের পরিস্থিতি থেকে মূলত আলাদা ছিল না। যেমন বৌদ্ধধর্মের ধারণা নারীদের সঙ্গে অনেক আচরণের ক্ষেত্রে পরিবর্তিত হয়েছে এবং বৌদ্ধধর্মের আবির্ভাবের সাথে তা চলে গেছে।
বুদ্ধের সময় হিন্দু ধর্ম নারীর প্রতি কিছুটা হলেও বর্ণবাদী ছিল। সেটা হলো নারী তার পিতা, স্বামী বা ভাইয়ের হেফাজতে থাকবেو তাদের সম্পূর্ণ আনুগত্য মেনে চলতে হবে, এবং কোনভাবেই স্বাধীন হতে হবে না। তবে এটাও সত্য বুদ্ধ ধর্মের নারীর পোশাক নিয়ে কখনো বিতর্ক শোনা যায় না, আর এই পোশাক কে অশালীন আখ্যা দিয়েছে এমন গল্প ও নেই বললে চলে। যদি ও বুদ্ধদের এই পোশাক ও ধরন বা ডিজাইন দেশ ভেদে আলাদা। কম্বোডিয়ার পোশাক এর সাথে জাপানের বা চীনের মিল পাবেন না। অথবা বার্মা র সাথে কোরিয়ার। কিন্তু এই ক্ষুদ্র তফাত ছাড়া মোটামুটি একটা শালীন পোশাকের বড়ো দাবী করতেই পারে তারা।
খ্রিস্টান ইসলাম ধর্মে মোটামুটি পোশাক কেমন হবে সে বিষয়ে বলা হয়েছে। তবে হিন্দু ধর্মে পর্দা প্রথা সম্পর্কে বলছে, উল্লেখ আছে ঋগবেদ অধ্যায় নাম্বার ৮ অনুচ্ছেদের ৩৩, পরিচ্ছেদ ১৯, বলা হয়েছেঃ-যেহেতু ব্রহ্মা তোমাদের নারী করেছেন তাই দৃষ্টিকে অবনত রাখবে, উপরে নয় নিজেদের পা সামলে রাখো । এমন পোষাক পড়ো যাতে কেউ তোমার দেহ দেখতে না পায়।ঋগ্বেদে আছে, “হে নারী! তুই নিচে দৃষ্টি রাখ, উর্ধ্বে দৃষ্টি করিস না। আপন পদযুগল একত্রে মিলিয়া রাখ। তোর নাক যেন কেউ দেখতে না পায়, যদি এমন লজ্জাবতী হতে পারিস, তাহলে নারী হয়েও তুই সম্মেলনের পাত্রী হতে পারবি। “এছাড়াও বলা হইছে, “কি বালিকা, কি যুবতী, কি বৃদ্ধা, কোন স্ত্রীলোককেই নিজ গৃহেও স্বাধীনভাবে কোন কার্য করা উচিত নয়। “(স্ত্রী ধর্ম :১৪৭)প্রশ্ন তা মনে হবার কারণ হলো -কর্নাটকে মুছলিম নারী পোশাক নিয়ে বা নারী পোশাক নপৱা নিয়ে হিন্দু রাজনীতি যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে ,হিন্দু বা নারীদের পোশাক নিয়ে কোনো আলোচনায় হচ্ছে না ,তাহলে কি হিন্দু নারীর ধর্মীয় কোনো পোশাক নেই (!?)শাড়ি সংস্কৃতি ,ধর্মীয় পোশাক নয়।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, প্রাচীন ভারতে নারীদের মধ্যে পর্দা প্রথার প্রচলন ছিল। প্রাচীন আর্য সমাজের নারীরা পর্দার এ বিধান মেনে চলতো। ভারতের উত্তরপ্রদেশে বসবাসকারী আর্য কুমারী মেয়েরা ভিন্ন ভিন্ন দুই খানা কাপড় পরিধান করতো। এ কাপড় দিয়ে তারা তাদের মাথা, মুখ ও দেহ ঢেকে রাখতো। এটা ছিল তাদের ধর্মীয় শাস্ত্রের অলঙ্ঘনীয় নির্দেশ। হিন্দু ধর্মীয় শাস্ত্রেও পর্দার বিধানের আলোচনা দেখতে পাওয়া যায়। হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ ঋগবেদে বলা হয়েছে, ‘যেহেতু ব্রম্মা তোমাদের নারী হিসেবে সৃষ্টি করেছেন, তাই তোমরা তোমাদের দৃষ্টিকে নিম্নগামী রাখবে, ঊর্ধ্বগামী নয়। আর নিজেদের পা সামলে রাখবে। আর এমন পোশাক পরবে যাতে তোমার দেহ কেউ দেখতে না পায়।’ (ঋগবেদ ৮/৩৩/১৯)। এ গ্রন্থের অপর এক শ্লোকে বলা হয়েছে, ‘হে নারী! তোমার নাক যেন কেউ দেখতে না পায়! তুমি যদি এমন লজ্জাবতী হতে পারো, তাহলে নারী হয়েও তুমি সম্মানের পাত্রী হতে পারবে।’ (স্ত্রী ধর্ম: ১৪৭)।হিন্দু শাস্ত্রের পর্দা অধ্যায়টি পাঠ করলে এ সম্পর্কিত আরও অনেক বিষয় জানতে পারা যায়। ধর্ম সম্পর্কীয় বিশিষ্ট গবেষক মাহমুদ শামসুল হক তার ‘নারী কোষ’ বইয়ের এক জায়গায় লিখেছেন, ‘এক সময় হিন্দু নারীরা মশারির ভিতর বসে গঙ্গাস্নানে যেতো। ভারতবর্ষের হিন্দু-মুসলিম নারীরা অসুস্থ হলেও ঘেরাটোপের আড়াল থেকেই ডাক্তার দেখাতো। প্রাচীনকাল থেকে হিন্দু সমাজে অসূর্যস্পশ্যা নামে একটি শাস্ত্রীয় শব্দ চালু আছে। এর অর্থ দাঁড়ায়, সূর্যের আলোও নারীদেরকে স্পর্শ করবে না।’ (নারী কোষ: পৃ. ১৭৭)। ঋগবেদে আরো বলা হয়েছে, ‘মহিলারা পুরুষদের মতো পোশাক পরতে পারবে না। আর পুরুষরাও তাদের স্ত্রীদের পোশাক পরিধান করবে না।’ (ঋগবেদ: অনুচ্ছেদ: ৮৫, পরিচ্ছেদ: ৩০)। এ সম্পর্কে হিন্দু শাস্ত্রে আরও বলা হয়েছে, ‘স্ত্রীগণ পর পুরুষ তো দূরের কথা নিজের স্বামীর সামনেও বিবস্ত্র হতে পারবে না। হে কুমারী সকল! তোমরা নিজেদেরকে বহু লোকের ভোগের বস্তুতে পরিণত হইও না। তোমরা তোমাদের ঐ শরীরকে বহু পুরুষের চক্ষু ইন্দ্রিয় হতে সর্বদা আগলে রাখবে। এমন স্থানে তোমরা স্নান সম্পন্ন করিও যেখানে কোনো পুরুষের দৃষ্টি নিবদ্ধ হবে না’ ইত্যাদি। বৌদ্ধ ধর্মও পর্দাপ্রথার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করে থাকে। এ ব্যাপারে বৌদ্ধ শাস্ত্রে বলা হয়েছে, ‘ভুলেও পর পুরুষের প্রতি খারাপ মনোভাব নিয়ে দৃষ্টি দেবে না। পতিব্রতা ধর্ম উত্তমরূপে রক্ষা করবে। স্বামী প্রমুখ বাড়িস্থ অসুখ-বিসুখ সর্বদা খেয়াল রাখবে। আর এমনভাবে বস্ত্র পরিধান করবে যাতে উদর, পেট ও স্তন দেখা না যায়। সর্বদা পরিষ্কার কাপড় পরিধান করবে। পুরুষের সম্মুখে চুল আঁচড়াবে না, উকুনও ধরবে না।’ (গৃহনীতি পর্ব: নারীদের কর্তব্য: পৃ. ২৫২)। পর্দার ব্যাপারে গ্রিক সভ্যতাকেও বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করতে দেখা যায়। এ সভ্যতা চর্চায় দেখা যায়, তাদের মাঝেও শালীন পোশাক পরার রীতি চালু ছিল। গ্রিক মেয়েরা ঘরের বাইরে যাওয়ার সময় ভিন্ন ভিন্ন কাপড় দিয়ে তাদের মুখমন্ডল এবং দেহ ঢেকে রাখতো। (ঝযধসধহ ধহঃরয়ঁরঃব এৎবপয়ঁবংঃ, ঢ়. ৫৮৩)
ইহুদী নারীদের সাধারণ পোশাকের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ ছিল নেকাব। তৎকালীন এই নেকাব দিয়ে তারা মাথা, মুখমন্ডল এবং বক্ষদেশ আবৃত করে রাখতো। আবার কখনও কখনও এই নেকাব পায়ের নিম্নদেশ পর্যন্ত নেমে যেতো। (এনসাইক্লোপিডিয়া, পৃ. ৫২৪৭)। বাইবেল অধ্যয়ন করলে খ্রিস্টান নারীদের পর্দা প্রথা সম্পর্কে একটা বিশেষ ধারণা পাওয়া যায়। খ্রিস্টান ধর্মে নারীদের পর্দার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। শালীনতা না মানলে ইহকালে তাদের জন্য শাস্তির বিধানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
বাইবেলের নিউ টেস্টামেন্টে বলা হয়েছে, ‘কোনো নারী যদি মাথা ও বুক ঢেকে না রাখে তাহলে তার মাথা মুন্ডন করে দিতে হবে। এটা যদি কোনো নারীর জন্য অপমানজনক হয় তাহলে সে নারী যেন মাথা ও বুক ঢেকে রাখে।’ (করিন্থীয়: ১১.৫ পদ)। বাইবেলের পুরাতন নিয়মে বলা হয়েছে, ‘বিবিকা চোখ মেলে যখন ইসহাককে দেখলেন, তখন উটের পিঠ থেকে নেমে দাসকে জিজ্ঞেস করলেন, আমাদের সাথে দেখা করতে যিনি মাঠ দিয়ে হেঁটে আসতেছেন ঐ পুরুষ লোকটি কে? জবাবে দাস বললেন, উনি আমার মালিক। তখন বিবিকা অন্য এক টুকরা কাপড় দিয়ে নিজের মুখ ও দেহ আচ্ছাদন করলেন।’ (আদিপুস্তক: ২৪:৬৪, ৬৫ পদ)।
ইসলাম ধর্মের অনন্য মর্যাদাপূর্ণ এক বিধানের নাম এ পর্দা। আল-কোরআন মুমিন নারীদেরকে এ বিধান মানতে জোরালো নির্দেশ প্রদান করেছে। উম্মুহাতুল মু’মিনিন খ্যাত নবী (সা.) এর স্ত্রীগণও এর বাইরে নন। আল্লাহতাআলা তাদেরকে এ বিধান মানতে কঠোর নির্দেশ প্রদান করে আয়াত নাজিল করেছেন। আল-কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘হে নবী! আপনি মুমিন নারীদেরকে বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে, তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে এবং সাজসজ্জা প্রদর্শন না করে; তবে যা নিজে প্রকাশ হয়ে যায় সেটা ছাড়া। তারা যেন তাদের উড়নার আঁচল দিয়ে তাদের বুক ঢেকে রাখে এবং তাদের সাজ-সজ্জা (পর পুরুষের সামনে) প্রকাশ না করে।’ (সূরা আল মুমিনুন: ৩১)। ‘হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রী, কন্যা ও মুমিন নারীদের বলে দিন যে, তারা যেন নিজেদের চাদর ভালোভাবে জড়িয়ে ঢেকে নেয় এবং একটি অংশ দিয়ে মুখের উপর লটকিয়ে দেয়। আর এটা হলো অধিক উপযোগী পদ্ধতি, যা দিয়ে তাদেরকে (সম্ভ্রান্ত, অভিজাত ও ভদ্র হিসেবে) চেনা যায়।’ (সূরা আহযাব: ৫৯)। হাদীস শরীফে পর্দার বিধান সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট হলো তারা, যারা তাদের দেহকে শালীন পোশাকে আবৃত রাখে না এবং যারা দম্ভ করে চলে। এসমস্ত নারীরা হলো মুনাফিক। এরা লাল ঠোঁট ও পা বিশিষ্ট কাকদের মতো। যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (বায়হাকি: ১৩৪৭৮)। মহানবী (সা.) আরো বলেছেন, ‘জাহান্নামীদের মধ্যে একটি নারী দল থাকবে, যারা দুনিয়ায় পোশাক পরেও উলঙ্গ থাকবে। এ উলঙ্গ পোশাক দিয়ে তারা তাদের দিকে অন্য পুরুষকে আকৃষ্ট করবে। আর নিজেরাও অন্যদের প্রতি ঝুঁকে পড়বে। কেয়ামতের দিন তাদের মাথা হবে উটের পিঠের কুঁজের মতো। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (মুসলিম: ২১২৮)।
বিবিসির সূত্রে বলা হচ্ছে: ২০১৫ সাল থেকে ব্রিটেনে মুসলিম বিদ্বেষী আচরণ শুরু হয়েছে। এ বিদ্বেষের মূল টার্গেট হলো হিজাবধারী নারী। একই সালে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসে হিজাব পরিহিত এক ছাত্রীকে বাস থেকে নামিয়ে দেয়া হয়। ২০১৮ সালে স্কার্ফ পরা এক মুসলিম আইনজীবীকে ইতালির আদালত থেকে বের করে দেয়া হয়। ২০১৮ সালে অস্ট্রিয়ার সরকার ছাত্রীদের মাথায় স্কার্ফ পরতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ২০১১ সালে ফ্রান্স সরকার মুসলিম নারীদের মুখ ঢাকা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ২০১৬ সালে ফ্রান্সের কান্স শহরের মেয়র ফরাসি মুসলিম নারীদের উপর সাঁতারের সময় শরীরে পরিধেয় বস্ত্র বুরকিনী নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। ২০১১ সালের জুলাই মাসে বেলজিয়াম সরকার মুসলিম নারীদের নেকাব ও বোরকা পরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এ আইন অমান্যকারীদের জন্য ১৩৭.৫ ইউরো জরিমানাও ধার্য করা হয়। এটা অনাদায়ের শাস্তি হিসেবে ৭ দিনের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়। ২০১৬ সালে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন এলাকায় শরীর ঢাকা পোশাক পরিধান নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এ আইন অমান্যকারীদের জন্য জরিমানা ধার্য করা হয়। ২০১৬ সালের অক্টোবরে বুলগেরিয়াতেও একই আদেশ জারি করে। ২০১৭ সালে জার্মান সরকার দেশের ১৬ রাজ্যের ৮টিতে নারী শিক্ষকদের উপর হিজাব পরিধান নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ২০১৮ সালে নেদারল্যান্ডস সে দেশের সকল সরকারি অফিসে নেকাব ও বোরকা পরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। একই সালে নরওয়ের পার্লামেন্ট স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে হিজাব নিষিদ্ধের পক্ষে ভোট দেয়। ২০১৫ সালে রাশিয়ার সুপ্রিম কোর্ট সেদেশের বিভিন্ন স্কুলে হিজাব পরিধান নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। হিজাব বিরোধী এ বিদ্বেষ এশিয়াতেও ছড়িয়ে পড়ে।
অষ্টাদশ শতাব্দীতে ইউরোপীয়রা ভারতীয় উপমহাদেশের রাজ্যক্ষমতা দখল করে। এসময় পর্যন্ত উপমহাদেশের সব ধর্মের রমনীগণ পর্দা পালন করতেন। বাংলা ও ভারতীয় ঐতিহ্যবাহী শাড়ি দিয়ে নারীরা তাদের শরীর আবৃত করে রাখত। ১৮০০ সাল পর্যন্ত ভারতীয় উপমহাদেশের কোথাও কোনো অশালীন পোশাকের নজির পাওয়া যায় না। ভারতবর্ষে ইউরোপীয়দের আগমনকাল থেকে দৃশ্যপট পাল্টে যেতে থাকে। প্রায় ২০০ বছরের শাসনামলে তাদের নির্লজ্জ সংস্কৃতি গোটা উপমহাদেশে ব্যাপকভাবে প্রসার ঘটে। মানুষের মাঝ থেকে লাজ-লজ্জা উঠে যেতে থাকে। এ নির্লজ্জ সংস্কৃতির সর্বশেষ নির্মম শিকার হলেন কর্নাটকের কলেজছাত্রী মুসকান খান। কর্নাটকের মান্ডা জেলার একটি প্রি-ইউনিভার্সিটি কলেজের ছাত্রী মুসকান খান। অন্য দিনের ন্যায় তিনি একইভাবে হিজাব পরিধান করে কলেজে আসছিলেন। কিন্তু গেরুয়া রঙের স্কার্ফ পরিহিত একদল যুবক তার দিকে এগিয়ে আসে। তারা সংখ্যায় ছিল ৪০ জনের মতো। তাদের মুখে ছিল ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান। স্লোগান দিয়ে তারা তার দিকে তেড়ে আসে। চিৎকার করে বলতে থাকে, ‘বোরকা ও হিজাব খুলে কলেজে যাও! আর যদি বোরকা পরে থাকতে চাও, তবে বাড়ি ফিরে যাও!’ একাকী তরুণী মুসকান তখন ভয় না পেয়ে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে তাকবীর ধ্বনী দিতে থাকেন। এ ধ্বনিটি মুহূর্তের মধ্যেই ভাইরাল হয়ে পড়ে। এ তাকবীর ধ্বনি একদিকে হিজাব বিরোধীদের মুখে চপেটাঘাতের শামিল। অন্যদিকে ২০০ কোটি মুসলমানদের হারানো অধিকার ফিরে পাবার বার্তা।
বিনয়, কখনও কখনও হিসাবে পরিচিত ক্ষয়ক্ষতি, পোষাক এবং নির্বাসন একটি মোড যা উত্সাহজনক এড়াতে চায় যৌন আকর্ষণ অন্যদের মধ্যে “বিনয়” শব্দটি এসেছে লাতিন শব্দ থেকে মোডেস্টাস যার অর্থ “পরিমাপের মধ্যে রাখা”।[1] বিনয়ের মানগুলি সাংস্কৃতিকভাবে এবং প্রসঙ্গে নির্ভরশীল এবং ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়। এই ব্যবহারে, এটি শরীরের নির্দিষ্ট অংশগুলি প্রকাশের জন্য অনুপযুক্ত বা আপত্তিকর হিসাবে বিবেচিত হতে পারে। কিছু সমাজে শালীনতা মহিলাদের সম্পূর্ণরূপে তাদের দেহ andেকে রাখে এবং পরিবারের সাথে তাত্ক্ষণিক নয় এমন পুরুষদের সাথে কথা না বলে জড়িত থাকতে পারে; অন্যদের মধ্যে, মোটামুটি প্রকাশক তবে এক টুকরো স্নানের পোশাক অন্য মহিলারা পরিধানের সময় পরিমিত হিসাবে বিবেচিত হয় বিকিনি । কিছু দেশগুলিতে শালীনতার সম্প্রদায়গত মানগুলির লঙ্ঘনে শরীরের প্রকাশকে জনসাধারণের অশ্লীলতা হিসাবেও বিবেচনা করা হয়, এবং পাবলিক নগ্নতা সাধারণত বিশ্বের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অবৈধ এবং হিসাবে বিবেচিত হয় অশ্লীল এক্সপোজার । উদাহরণ স্বরূপ, স্টিফেন গফ, একা একা দক্ষিণে থেকে উত্তর দিকে নগ্ন পথে চলার চেষ্টা করছে যুক্তরাজ্য বারবার কারাবরণ করা হয়েছিল।তবে কোনও কোনও সময়ে নগ্নতা সহ্য করা হয়; উদাহরণস্বরূপ দিগম্বর ভারতে সন্ন্যাসী, যারা পোশাক ত্যাগ করেন তপস্বী কারণ, এবং একটি সময় ওয়ার্ল্ড নেকেড বাইক রাইড।
নারীর পোশাক নিয়ে ধর্মীয় বিশ্বাসের বাহিরে আমরা যারা মানুষ, যারা সামাজিক জীব বা সমাজ কিংবা পরিবার নামক জিনিসের সাথে হাজার বছরের সংস্কৃতি, লোকাচার, জুড়ে রয়েছে তা আইন না হলেও প্রথা হিসেবে আমাদের সাথে রক্তের বন্ধনের মতো জড়িয়ে আছে। এর বিরুদ্ধে দাড়ানো ও দুঃসাধ্য। কথিত পোশাকের স্বাধীনতার কথা বলে পুরো সমাজ ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ যারা করার সাহস দেখাতে চায় বরঞ্চ তারাই একটা সময় আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করে দেয় নিজেকে। এই সব বেহায়াপনায় কোন ধর্মের বিধানের সাথে মেলেনা। কথিত নাস্তিক্যবাদ ই হলো এসব চিন্তা ধারার ধারক বা বাহক।
অথচ আজ ব্লাউজ ছাড়া শাড়ি পরার দাবীতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যারা বেহাহা দাবীতে সোচ্ছার তারা ভুলে গেছে
মালয়ালম: തലക്കരം, মুলাক্করম বা মুল-আকরম) ট্রাভাঙ্কর রাজ্যে (বর্তমান ভারতের কেরালা) নিম্ন জাতি এবং অস্পৃশ্য হিন্দু মহিলাদের উপর ১৯২৪ সাল পর্যন্ত আরোপিত এক কর ছিল। নিম্ন বর্ণের মহিলাদের স্তন বর্ধনের সাথে সাথে প্রকাশ্য স্থানে স্তনযুগল ঢেকে রাখার জন্য সরকারকে এই কর পরিশোধ করতে হত।নিম্ন বর্ণের পুরুষরা তাঁদের মাথা ঢাকতে তলা-করম নামের কর দিতেন। ট্রাভাঙ্করের কর প্রধানরা প্রতিটি ঘরে গিয়ে যৌবনপ্রাপ্ত মহিলাদের থেকে কর সংগ্রহ করতেন। স্তনের আকার চাই করের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু এই করের কারণ এবং স্তনের আকারের সাথে সম্পর্কের ঐতিহাসিক তথ্য একেবারে কম। মনু এস পিল্লাই এবং অন্য পণ্ডিতরা স্তনের সাথে এই করের সংযোগের কথা নস্যাৎ করেছেন এবং এটি সব নিম্ন বর্ণের মহিলার থেকে সংগ্রহ করা এক সাধারণ কর বলে মন্তব্য করেছেন।
পার্শ্ব ঘটনাবলীসম্পাদনাবহু ইতিহাসবিদ লিপিবদ্ধ করেছেন যে নিম্ন বর্ণের মহিলাদের স্তন উম্মুক্ত করে রাখাটি উচ্চ জাতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন বলে ট্রাভাঙ্করে এক পরম্পরা ছিল। জাতির শ্রেণীবিভাজনকে অমান্য না করতে সরকার স্তন ঢেকে না রাখার নিয়ম বেঁধে দিয়েছিল। মূলতঃ এই কারণে নিম্ন বর্ণের লোকরা একাধিকবার বিদ্রোহ করেছিল।
অভিযোগমতে সেখানকার ব্রাহ্মণ শাসকরা নিম্ন বর্ণের হিন্দু মহিলাদের উপর স্তন কর বা মুলাক্করম জারি দিয়েছিলেন। এই নিয়ম অনুসারে প্রকাশ্য স্থানে স্তন ঢেকে রাখতে তাঁদের কর পরিশোধ করতে হত এবং স্তনের আকারমতে কর নির্ধারণ করা হত। কিন্তু এই করের কারণ এবং স্তনের আকারের সাথে সম্পর্কের ঐতিহাসিক তথ্য একেবারে কম। মনু এস পিল্লাই এবং অন্য পণ্ডিতরা স্তনের সাথে এই করের সংযোগের কথা নস্যাৎ করেছেন এবং এটি সব নিম্ন বর্ণের মহিলার থেকে সংগ্রহ করা এক সাধারণ কর বলে মন্তব্য করেছেন।
কয়েকটি বিদ্ৰোহেরর পর হিন্দু নাডার মহিলাদের ১৮৫৯ সালে স্তন ঢেকে রাখতে অনুমতি দেওয়া হয়।
নাঙেলির কাহিনীসম্পাদনাএই কাহিনী অনুসারে ১৯ শতকের শুরুতে ট্রাভাঙ্করের চার্থালা গ্রামে ইঝাভা জাতির নাঙেলি এবং স্বামী চিরুকন্দন বাস করত। তাঁরা নিঃসন্তান ছিল। একদিন ট্রাভাঙ্করের প্রবথিয়ার (গ্রামের প্রধান) স্তনের জরীপ করে কর সংগ্রহের জন্য নাঙেলির ঘরে আসেন। নাঙেলি এই কথার বিরোধ করে নিজের স্তনযুগল কেটে কলাপাতায় প্রধানকে দিয়ে অত্যধিক রক্তক্ষরণের ফলে মারা যান। নাঙেলির স্বামী চিরুকন্দন পত্নীর মৃত্যু সহ্য করতে না পেরে তার চিতায় ঝাঁপিয়ে আত্মাহুতি দেন। ভারতে পুরুষ সতী হওয়া এটিই প্ৰথম ঘটনা।
নাঙেলির মৃত্যুর পর সাধারণ লোকজন বিদ্ৰোহ শুরু করে। অপরাপর স্থানেও একইধরণের লোককথা পাওয়া গেছে। এর পর ট্ৰাভাঙ্করে স্তন করের নিয়ম বাতিল করা হয়। নাঙেলি বাস করা স্থানটি মুলাচিপরম্বু (স্তন থাকা মহিলার স্থান) বলে পরিচিত হয়।
যুগে যুগে নারীর শরীর রক্ষার এই আন্দোলনের ইতিহাস হাল আমলের নারীরা ভুলে গেছে। সেই ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নিয়ে নতুন করে চিরাচরিত ধর্মীয় বিশ্বাসের বা সামাজিক বিশ্বাসের উপর আঘাতের অপচেষ্টার মুল কারণ হলো অশিক্ষা, কথিত নাস্তিক্যবাদ প্রেম আর সমাজের অস্থিরতা তৈরির অপচেষ্টা। নারীর পোশাক বিতর্ক বলে কিছু নেই, এগুলো হলো পাশ্চাত্য উদ্ভট, বেহাহাপনার বীজ বুনে দেওয়ার ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়।
সহযোগিতায়ঃ উইকিপিডিয়া , পত্রিকা, জার্নাল।