বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:
বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া বড় ধরনের কোনও হিংসার আঁচ লাগেনি পশ্চিমবাংলার বিধানসভা নির্বাচনের সপ্তম দফার ভোটে। তবে করোনা আবহে অন্য দফাগুলির তুলনায় এই দফায় ভোট কিছুটা কম পড়েছে। সোমবার রাজ্যের ৫টি জেলার ৩৪টি আসনে ভোট গ্রহণ হয়। নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দিয়েছে, এই দফার ভোট নির্বিঘ্নেই হয়েছে। কলকাতা থেকে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আরিজ আফতাব জানিয়েছেন, বড় ধরনের কোনও হিংসার ঘটনা এই দফার ভোটে ঘটেনি। কারণ হিসেবে তিনি জানান, হিংসা ছড়ানোর আশঙ্কায় আগেই ৩৪টি কেন্দ্র থেকেই ৭৪২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়া এদিন প্রতিটি বুথের ১০০ এবং ২০০ মিটারের মধ্যে জারি ছিল ১৪৪ ধারা। এই ১৪৪ ধারা ভাঙার জন্য ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। আবার, অন্যান্য নির্দিষ্ট অভিযোগে ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর প্রভাব নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে কাজে এসেছে বলেই মনে করছে কমিশন।
কমিশনের তরফে এদিন সন্ধেয় জানানো হয়েছে, বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৭৫.০৬ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে মুর্শিদাবাদে। সোমবার মুর্শিদাবাদের ৯টি আসনে ভোট নেওয়া হয়। এই আসনগুলিতে মোট ভোট পড়েছে ৮০.৩০ শতাংশ। সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে দক্ষিণ কলকাতায়। এদিন দক্ষিণ কলকাতার ৪টি আসনে ভোট নেওয়া হয়। এই আসনগুলিতে ভোট পড়েছে ৫৯.৯১ শতাংশ। এ ছাড়া দক্ষিণ দিনাজপুরের ৬টি, পশ্চিম বর্ধমানের ৯টি এবং মালদার ৬টি আসনে ভোট গ্রহণ হয়। দক্ষিণ দিনাজপুরে ভোট পড়েছে ৮০.২১ শতাংশ, মালদায় ভোট পড়েছে ৭৮.৭৬ শতাংশ এবং পশ্চিম বর্ধমানে ভোট পড়েছে ৭০.৩৪ শতাংশ। যদিও এই হিসেব বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। ভোট গ্রহণ হয়েছে সন্ধে সাড়ে ছটা পর্যন্ত। আশা করা যায়, পাঁচটার পর দেড় ঘণ্টা আরও পাঁচ–ছয় শতাংশ বা তার বেশি ভোট পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সেই হিসেব এদিন রাত পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
সোমবার ৩৪টি আসনে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ২৬৮ জন প্রার্থীর ভাগ্য পরীক্ষা হয়। তাঁদের মধ্যে ছিলেন রাজ্যের ৪ জন মন্ত্রী। তাঁরা হলেন পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, পুরমন্ত্রী ও কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র ফিরহাদ হাকিম এবং আইন ও শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক। এ ছাড়া এদিন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অশোক লাহিড়ি, অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ, ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পাল, ছাত্র নেত্রী ঐশী ঘোষেরও ভাগ্য পরীক্ষা হয়। এই ভোট গ্রহণের সময় বিক্ষিপ্ত হিংসার ঘটনা ঘটেছে মুর্শিদাবাদ ও মালদায়। মুর্শিদাবাদের রানিনগরে বিজেপি প্রার্থীর গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। বুথে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বয়ং বাম প্রার্থী ঐশী ঘোষও। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, দক্ষিণ কলকাতার রাসবিহারীর তৃণমূল প্রার্থী দেবাশিস কুমারও একই অভিযোগ করেছেন। যদিও এডিজি আইন শৃঙ্খলা জগমোহন জানান, মালদা ও মুর্শিদাবাদে হিংসার কোনও ঘটনা ঘটেনি। অষ্টম তথা শেষ দফার ভোট হবে বৃহস্পতিবার। ইতিমধ্যেই উচ্চ আদালতের নির্দেশ মেনে কোভিধ বিধি মেনে স্যানিটাইজেশন করে সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে ওই দিন ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর পর ২ মে হবে ভোট গণনা।
এদিন দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর কেন্দ্রে ভোট দেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিকেল চারটের পর তিনি ভবানীপুরের মিত্র ইনস্টিটিউশনে হুইলচেয়ারে করে গিয়ে ভোট দেন। ভোট দেওয়ার পর বুথ থেকে বেরিয়ে উপস্থিত জনতাকে ‘ভি’ (ভিকট্রি) সাইন দেখান। বলেন, ‘আমরাই জিতব। আমরাই সরকার গড়ব। কেন্দ্রীয় বাহিনীর পুরোপুরি সাহায্য করেছে বিজেপিকে। তবু তাদের আসন সংখ্যা বেড়ে ৮০–র বেশি হবে না। তাই এবারও বাংলায় বিজেপি কিছুই করতে পারবে না।’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘ভোটে নির্বাচন কমিশনও বিজেপির হয়ে কাজ করেছে। আমার কাছে প্রমাণ আছে। আমি আদালতে যাব। অনেক সহ্য করেছি, আর করব না।’ ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, ভোটের ফল মমতার অনুকূলে না হলে তিনি সেই ফল মেনে নাও নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে রাজ্যে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।