বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘মানবাধিকারের সবচেয়ে বড় বিপদঘণ্টা’ বলে উল্লেখ করলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। মুর্শিদাবাদ থেকে ৬ জঙ্গিকে এনআইএ (জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা) গ্রেফতার করা নিয়ে সোমবার রাজ্য সরকারকেই তিনি দায়ী করেছেন। এর আগে রবিবারই রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান তৃণমূল সরকারকে ‘বোমা তৈরির কারখানা’ বলে উল্লেখ করেছিলেন।
মুর্শিদাবাদে ৬ আল কায়দা জঙ্গি রয়েছে, অথচ পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে সেই খবর নেই, এই প্রসঙ্গ তুলে সোমবার তিনি রাজ্যের পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশকে ‘সরীসৃপ’ বলে সমালোচনা করেন রাজ্যপাল। টুইটে তিনি লেখেন, ‘রাজ্য পুলিশের ডিজি উটপাখির মতো বালিতে মাথা গুঁজে রয়েছে। আইন–শৃঙ্খলার শোচনীয় পরিণতি দেখেও তাঁদের মধ্যে একটা ডোন্ট কেয়ার মনোভাব দেখতে পাচ্ছি। ব্যাপারটা প্রত্যক্ষ করে আমি হতবাক হয়ে যাচ্ছি। এই রাজ্য আসলে জঙ্গি, অপরাধী, বেআইনি বোমা তৈরির স্বর্গদ্যান হয়ে গিয়েছে।’
শুধু জঙ্গি ইস্যুই নয়, বিরোধী দলের সাংসদ, বিধায়ক, নেতা ও কর্মীদের ওপর পুলিশি তৎপরতার সমালোচনাও করেন জগদীপ ধনকড়। শাসক দলের নির্দেশেই যে পুলিশ এই কাজগুলি করছে, সেই অভিযোগও এদিন করেন তিনি। পাশাপাশি তোপ দেগে জানান, সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে রাজ্য সরকার রাজনীতি করছে। তিনি বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা দেখা দিলে যেখানে নিরপেক্ষ অবস্থান নেওয়া উচিত, সেখানে বিশেষ এক চোখা হয়ে একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির অংশকে রক্ষা করা হচ্ছে। এই নীতি গ্রহণযোগ্য নয়।’ এই ঘটনার মধ্য দিয়ে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা ‘মুসলিম তোষণ’ নীতির সমালোচনা করেছেন বলে ধারণা ওয়াকিবহাল মহলের।
তবে রাজ্যপালের এই টুইট নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তৃণমূল। দলের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যপালের সমালোচনা করে বলেছেন, ‘তিনি রাজনৈতিক দলের নেতার মতো কথা বলছেন। তিনি ভুলে যাচ্ছেন যে, তিনি একজন রাজ্যপাল। একটি সাংবিধানিক পদে থেকে এই মন্তব্য করা যায় না। তিনি যে মন্তব্য করছেন, তাতে রাজ্যের ক্ষতি হতে পারে। এইজন্য এই রাজ্যপালকেই গ্রেফতার করা উচিত।’ বিজেপির তরফে অবশ্য কল্যাণবাবুর মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। এই দলের পক্ষে বলা হয়, ক্ষমতা থাকলে কল্যাণবাবু তাঁর দল ও মুখ্যমন্ত্রীকে বলুন রাজ্যপালকে গ্রেফতার করতে। যে দলটা ৬ মাস পর আর থাকবে কিনা, তার ঠিক নেই, এখন সেই দলের একজন নেতা এ–সব কথা বলছেন!
এদিকে, রাজ্যে জঙ্গিদের এনআইএ–র ধরা নিয়ে রাজ্য সরকারের অসন্তোষ প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু বলেন, ‘দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে রাজ্য সরকারকে জানিয়ে কোনও কাজ করতে বাধ্য নয় এনআইএ। তবু হয়তো জানাত। জানায়নি, কারণ তারা হয়তো জানে রাজ্য সরকারকে জানালে তারা জঙ্গিদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করত।’