1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. Azharislam729@gmail.com : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
  4. bobinrahman37@gmail.com : Bobin Rahman : Bobin Rahman
  5. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  6. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  7. harun.cht@gmail.com : চৌধুরী হারুনুর রশীদ : চৌধুরী হারুনুর রশীদ
  8. shanto.hasan000@gmail.com : Rakibul Hasan : Rakibul Hasan
  9. msharifhossain3487@gmail.com : Md Sharif Hossain : Md Sharif Hossain
  10. humiraproma8@gmail.com : হুমায়রা প্রমা : হুমায়রা প্রমা
  11. dailyprottoy@gmail.com : প্রত্যয় আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রত্যয় আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  12. namou9374@gmail.com : ইকবাল হাসান : ইকবাল হাসান
  13. mohammedrizwanulislam@gmail.com : Mohammed Rizwanul Islam : Mohammed Rizwanul Islam
  14. hasanuzzamankoushik@yahoo.com : হাসানুজ্জামান কৌশিক : এ. কে. এম. হাসানুজ্জামান কৌশিক
  15. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  16. niloyrahman482@gmail.com : Rahman Rafiur : Rafiur Rahman
  17. Sabirareza@gmail.com : সাবিরা রেজা নুপুর : সাবিরা রেজা নুপুর
  18. prottoybiswas5@gmail.com : Prottoy Biswas : Prottoy Biswas
  19. rajeebs495@gmail.com : Sarkar Rajeeb : সরকার রাজীব
  20. sadik.h.emon@gmail.com : সাদিক হাসান ইমন : সাদিক হাসান ইমন
  21. safuzahid@gmail.com : Safwan Zahid : Safwan Zahid
  22. mhsamadeee@gmail.com : M.H. Samad : M.H. Samad
  23. Shazedulhossain15@gmail.com : মোহাম্মদ সাজেদুল হোছাইন টিটু : মোহাম্মদ সাজেদুল হোছাইন টিটু
  24. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  25. showdip4@gmail.com : মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ : মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ
  26. shrabonhossain251@gmail.com : Sholaman Hossain : Sholaman Hossain
  27. tanimshikder1@gmail.com : Tanim Shikder : Tanim Shikder
  28. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :
  29. Fokhrulpress@gmail.com : ফকরুল ইসলাম : ফকরুল ইসলাম
  30. uttamkumarray101@gmail.com : Uttam Kumar Ray : Uttam Kumar Ray
  31. msk.zahir16062012@gmail.com : প্রত্যয় নিউজ ডেস্ক : প্রত্যয় নিউজ ডেস্ক

মধ্যযুগে সমাজ পরিবর্তন ও নগরজীবনের পুনরুত্থান!

  • Update Time : বুধবার, ২৬ মে, ২০২১
  • ৫৩৬ Time View
নাইম ইসলাম নিবির

মধ্যযুগের নাগরগুলির উৎপত্তির সর্বজনগ্রাহ্য বিশ্লেষণী ব্যাখ্যা পাওয়া যেমন সম্ভব নয়। তেমনি মধ্যযুগের নগর আয়তন,  বিধিসম্মত প্রতিষ্ঠা এবং প্রভাব-প্রতিপত্তি বিকাশের কাহিনীর ব্যাপারেও একের সঙ্গে  অন্যের অমিল অত্যন্ত স্পষ্ট। তবে এসম্পর্কে কোনো  দ্বিমত নেই যে একাদশ শতকের শুরু থেকে নগরের সংখ্যা এবং গুরুত্ব বৃদ্ধির ফলে মধ্যযুগীয় ইউরোপের সামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন এক মাত্রা  সংযোজিত হয়েছিল।  প্রায় এক হাজার বছর আগে ইউরোপীয় মহাদেশ নগরায়ণের নতুন পর্বে প্রবেশ করেছিল। জনসংখ্যাতাত্ত্বিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ঘটনার কারনে ইউরোপে যে একটি জটিল আন্তঃব্যবস্থা সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল তা নতুন শহরগুলির উত্থানে সাহায্য করে। নগরগুলি আকারে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে ও মানুষ, পণ্য কিংবা তথ্য প্রবাহের জন্য আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে আস্তে আস্তে বিকশিত হয়ে ওঠে। নবম দশম শতকের অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার পর একাদশ শতক থেকে শুরু হয় ইউরোপের ইতিহাস। এরপর বেশ কয়েক শতাব্দি ধরে এই বিকশিত হওয়া নগরগুলির অস্তিত্ব ইউরোপের সমাজকে বহুভাবে নিয়ন্ত্রিত ও প্রভাবিত  করে তোলে।

ব্যবসা বাণিজ্যের অসামান্য বৃদ্ধির কারণেও অধিকাংশ নগরের উৎপত্তির হয়েছিল। দশম শতকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত স্থায়ী ও জাতীয় অর্থনীতির মধ্যে নগরের কোন স্থান বা ঠাই কোনোটিই ছিলনা বললেই চলে। কিন্তু বাণিজ্যিক তাগিদে এবং অন্তর্নিহিত প্রয়োজনে মানুষকে একত্রিত হতে হতো। পণ্য আমদানি রপ্তানি, উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থাকে সক্রিয় ও চাঙ্গা করে রাখতে নাগরিক জীবনের আবির্ভাবের প্রয়োজন ছিল প্রখর। তাই পশ্চিম ইউরোপে বাণিজ্যের প্রয়োজনে যে সমস্ত স্থানে বণিক সমাজের সমাবেশ ঘটেছিল, সেগুলোর অধিকাংশ জনপদ রূপে আগে থেকেই গড়ে উঠেছিল। ইতালি, এবং স্পেনে এদের বেশিরভাগই ছিল বিশপ শাসিত অঞ্চলের নগর, আর নেদারল্যান্ডস, রাইনের পূর্বাঞ্চল ও দানিয়ুবের উত্তরাংশে জনপদগুলোর প্রসিদ্ধি ছিল বুর্গ বা দুর্গের অধিষ্ঠান কেন্দ্র-রূপে। পরবর্তীতে  এগুলিকে কৃষি সমাজের অপরিহার্য অঙ্গ বা শাসনের সুবিধার জন্য কতকগুলি কেন্দ্র বলে মনে হতো। দ্বাদশ শতকের অসামান্য বাণিজ্যিক তৎপরতা বহু নগরকে পৌর চরিত্র অর্জনে সাহায্য করে তাদের রূপান্তর ঘটিয়েছিল।

মূলত একাদশ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ইউরোপের কৃষি উৎপাদনের অভাবনীয় বৃদ্ধি, জনস্ফিতি, এবং শ্রমিক সরবরাহের নিশ্চয়তাকে নগরগুলির উত্থানের অতি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক উপাদান হিসাবে আমরা বিবেচনা করতে পারি। তাছাড়া সামন্ত ব্যবস্থা বিস্তারের ফলে উদ্ভূত ছিন্নমূল কারিগররা নিকটস্থ নগরগুলিতে আশ্রয় নিয়ে সেখানকার উৎপাদন ব্যাবস্থার অংশীদার হয়ে ওঠে। এভাবেও নগরের বিকাশ অত্যন্ত সহজতর হয়ে উঠেছিল। দ্বাদশ শতকের বহু আগেই ইউরোপের উত্তরাঞ্চলে অর্থাৎ ফ্রান্স ও জার্মানির উত্তরাঞ্চল, ইংল্যান্ড এবং স্ক্যান্ডিনেভীয় দেশগুলির জনবসতি ক্রমবর্ধমান হওয়ায় ভুমধ্যসাগারিয় অঞ্চল ও প্রাচ্যের পণ্যাদির জন্য চাহিদা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ইউরোপের উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তের এই চাহিদা ও সরবরাহ সহজতর করার জন্য মধ্যবর্তী অঞ্চলের বহু স্থানে বাণিজ্য কেন্দ্রের আবির্ভাব ঘটে। ফ্লান্দর এর বস্ত্র শিল্প, ডিনাটের তামার জিনিসপত্র, কর্ডোভার চর্মশিল্প এবং মওঁপেলিয়ের মশলা ও রঞ্জক দ্রব্যের উৎপাদন সমস্ত ইউরোপের বণিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। যেকারণে দ্বাদশ শতকের মধ্যেই বাণিজ্য ও শিল্পোৎপাদন শুধু  ভুমধ্যসাগারিয় অঞ্চলে সীমাবদ্ধ না থেকে উত্তর ও মধ্য ইউরোপীয় নগরগুলি, জেনোয়া, পিসা বা ভেনিসের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। ভেনিসের সঙ্গে কন্সট্যান্টিনপলের বাণিজ্য ছাড়া দশম খ্রিস্টাব্দের পর, প্রাচ্যের মুসলমান রাজ্যগুলির পারস্পরিক যুদ্ধবিগ্রহজনিত দুর্বলতার সুযোগে ভেনিস, পিসা প্রভৃতি অতি দ্রুত অভাবনীয় সাফল্যের পথে এগিয়ে যায়। প্রথম ক্রুসেডের আগেই ইতালির বাণিজ্য জাহাজ সারাসেন কবল মুক্ত সমুদ্রপথে প্রাচ্য দেশগুলির সঙ্গে অনায়সে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। ইতালির বনিকদের এই সাফল্যই ইতালির অসংখ্য নগরের উত্থানের পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছিল।

মধ্যযুগের ইউরোপীয় নগরগুলির উৎপত্তি এবং অসামান্য বিস্তারের জন্য ক্রুসেডগুলির ভূমিকা বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। ক্রুসেডে অংশগ্রহণকারী যোদ্ধারা স্থায়িভাবে জেরুজালেম উদ্ধারে ব্যর্থ হলে খ্রিস্টান বণিকেরা এই উপলক্ষে মুসালমান ও বাইজানটাইন অধিকার থেকে পূর্ব ও পশ্চিম ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলকে মুক্ত করে তাদের দখলে নেন। ভেনিস, পিসা ও জেনোয়া সিরিয়ার উপকূলবর্তী বন্দরগুলির অবরোধে অংশ নেয় এবং সেগুলির উপর আধিপত্য স্থাপনে সক্ষম হয়। এছাড়াও অ্যামালফি, মার্সেই, বার্সেলোনাও প্রাশ্চাত্যের দেশগুলির সঙ্গে বসফোরাস ও কৃষ্ণসাগরীয় অঞ্চলে বাণিজ্যের বিস্তার সহজতর করে দেয়  ক্রুসেডগুলি। রোমান আমলের রাজপথগুলির সংস্কার এবং নতুন পথের সঙ্গে সেগুলির সংযুক্তি ব্যবসা বাণিজ্যের সম্প্রাসরনের পাশাপাশি নতুন নতুন নগর স্থাপনেও সাহায্য করেছিল। চতুর্থ ক্রুসেডের পরে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের বাণিজ্যে কন্সট্যান্টিনপলের মধ্যযুগের ভূমিকার অবসান ঘটে। ক্রুসেডের এই প্রভাব আল্পস অতিক্রম করে ফরাসি জার্মান ও ফ্লেমিশ নগরগুলির বিকাশের ক্ষেত্রেও কার্যকর ছিল।

জনপদ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যে কারণগুলির অবদান ছিল তাদের মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। দশম খ্রিস্টাব্দ থেকে এয়োদশ খ্রিস্টব্দের মধ্যে পশ্চিম ইউরোপের জনসংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়, এবং কোথাও কোথাও সেই সংখ্যাটা চারগুণ বেড়ে যায়। শহুরের জনসংখ্যা এই সময়ে  গ্রামাঞ্চলের চেয়ে দ্রুত বেড়ে গিয়েছিল। ব্রিটেনে উদাহরণস্বরূপ, জনসংখ্যা ১০৬৬ খ্রিস্টাব্দ এবং ১৩৫০ খ্রিস্টাব্দ এর মধ্যে  তিনগুণ বেড়ে যায়। দ্বাদশ শতকের মধ্যবর্তীকাল থেকে বিভিন্ন পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, বাণিজ্য প্রসূত লাভ বনিক শ্রেণির হাতে অপর্যাপ্ত মূলধন তুলে দেয়।

দ্বাদশ শতকে বহু ভূস্বামী তাদের ভূসম্পত্তির মধ্যে জনগণকে বসতি স্থাপনে উৎসাহিত করার জন্য ভুমিদাসত্ব থেকে মুক্তি ও বিনা শর্তে জমিদানের দ্বারা নিকটবর্তী অঞ্চলের মানুষদের প্রলোভিত করতেন। নগর গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে ভূস্বামীদের থেকে স্বাধীন হয়ে গড়ে ওঠা এই জনপদগুলি স্বায়ত্তশাসন লাভ করে নগরে পরিণত হয়েছিল। যে সকল অঞ্চলে সামন্ততন্ত্রের ভিত্তি দুর্বল ছিল সেই সকল জনপদগুলিতে পৌরশাসনের বিকাশ সহজ হয়েছিল, বিশেষ করে ফ্রান্স, বার্গান্ডি, ফ্লদের, জার্মানির মধ্যাঞ্চলে। এই সকল অঞ্চলের জনপদগুলিকে কনসুলেট আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। ক্রুসেডের সময় বহু সামন্তপ্রভু অর্থ সংগ্রহের আগ্রহে এই জনপদগুলিকে সনদ দান করে তাদের পুরোপুরি নগরে রূপান্তরিত হবার পথ তৈরি করে দিয়েছিলেন। আবার কখনো কখনো বিক্ষুব্ধ নাগরিকদের দ্বারা মালিকদের বহিষ্কৃত করার ঘটনাও বিরল ছিলনা। ১১৪১ খ্রিষ্টাব্দে এমনি ঘটনা ঘটেছিল মওঁপেলিয়েরে। উত্তর ও মধ্য ফ্রান্সে ভূস্বামিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে নগরগুলির অধিবাসীরা স্বাত্তশাসনের অধিকার পেয়েছিল।

শ্যাম্পেনের বিখ্যাত মেলা এবং ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে বাণিজ্যের প্রসার, রোণ নদীপথে পণ্য সামগ্রী রপ্তানি আমদানিই ছিল ফ্রান্সের মধ্যাঞ্চলের নগরগুলির সমৃদ্ধির মূল কারণ।

উত্তর সাগারীয় অঞ্চলের বাণিজ্যের ফলে নেদারল্যান্ডসের নগরগুলি প্রভাবিত হয়েছিল। স্ক্যান্ডিনেভীয়রা ইউরোপের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চল বাণিজ্য বিস্তারে সক্ষম হয়। নদী ও রাজপথের সঙ্গমস্থলে, বন্দরের তীরে লিজ, ব্রুজ এবং ঘেণ্টেরমত নতুন নগরের আবির্ভাব অতি সহজেই সম্ভব হয়েছিল। এইসব নগর থেকে বনিকরা ইংল্যান্ড, জার্মানি অথবা শ্যাম্পেনের মেলাতে পণ্য সরবরাহ করত। যে সমস্ত বনিক পরিবার বংশানুক্রমে বিভিন্ন কাঁচামাল, ধাতু, এবং উল আমদানি করতো তারাই নিজেদের হাতে নগরগুলির শাসনভার তুলে নিয়েছিল। জার্মানিতে রাইনের দুই তীরে ইহুদিদের সাহায্যে জনপদগুলি বাণিজ্যে অংশগ্রহণ করতে শুরু করার পরে স্বায়ত্তশাসন লাভ করে পুরোপুরি নগরে পরিণত হতে বেশি দেরি হয়নি। কোলোন, মেঞ্জ, ওয়ার্মস, বাসেল, স্পেইয়ার, ল্যুবেক, হামবুর্গ, এবং ব্রিমেন এই জাতীয় অধিকার লাভ করে বাণিজ্য বিস্তারে অগ্রণীর ভূমিকা গ্রহণ করে।

কিছু ঐতিহাসিকদের অনুসনদ্ধান থেকে জানা যায় দ্বাদশ শতকের শুরুতে গড়ে ওঠা নগরগুলির আয়তন বৃদ্ধি পায় বলে। মধ্যযুগের জার্মানির মাঝারি নগরগুলির আয়তন ৫০ হেক্টরের বেশি ছিল না। দ্বাদশ শতকের শুরুতে কোলোন এর আয়তন ছিল ১১৮ হেক্টর, ১১৮০ খ্রিষ্টাব্দে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৩৯৬ হেক্টরে।

মধ্যযুগের প্রায় সমস্ত নগরই ছিল সুরক্ষিত। নগরের প্রাচীর গ্রামাঞ্চল ও নগরের মধ্যবর্তী সীমা রেখাকে নির্দিষ্ট করত। সাধারণত নগরের মাঝে তৈরি হত বাজার এবং তারই কাছাকাছি গির্জা এবং টাউনহল। রাস্তাগুলি ছিল সংকীর্ণ, অধিকাংশ নগরই ছিল কুশ্রী ও ঘিঞ্জি। পরবর্তীত

কালে ইতালিতে প্রথম শান বাধানো রাস্তা তৈরি হয়। তারপরে ফ্রান্স, প্রাগ ও ইউরোপের অন্যান্য শহরে শান বাধানো রাস্তা ও ফুটপাতের ব্যাবস্থা করা হয়। নগরে সাধারণত পৌরভবন ও ক্যাথিড্রালের থেকে উঁচু বাড়ী নির্মাণের অধিকার কাউকে দেওয়া হত না। কারুশিল্পীদের বাসস্থান দোতলা হতো যাতে বাড়ীর একতলা কারখানা হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারে। দ্বাদশ শতকের শেষে এবং ত্রয়োদশ শতকের শুরুতে বহু শাসক উন্নততর নগর পরিকল্পনার মাধ্যমে নতুন নগর প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ১২৯৭ খ্রিষ্টাব্দে ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্সে ইংরেজ শাসনাধীন অঞ্চলে ১২০ টি উপনিবেশ নগর গড়ে ওঠে।

নগর জীবনের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল পাকা দালান বা বিল্ডিং। বেশিরভাগ অঞ্চলের শহরগুলিতে একাদশ শতাব্দীর পর থেকে নির্মাণে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটে। বৃহত্তর শহরে রাস্তাগুলির কাঠামোর বিশেষ পরিবর্তন করা হয় নি। শুধুমাত্র নতুন রাস্তাগুলি সংযুক্ত হয়েছিল। নদীর তীরে  এবং জলায়ে নির্মাণ কাজ হতে থাকে। জমিদার এবং ভাড়াটিয়ারা খোলা জমিতে গৃহ নির্মান করেন। । যে সকল নগরে মেলা বসতো সেখানকার বাজারের রাস্তাগুলোই সাধারণত প্রশস্ত হতো। দক্ষিণে নতুন শহরগুলিতে রাস্তাগুলি গ্রিড ব্যবস্থায় গড়ে উঠেছিল। বাজারগুলি  প্রায়শই দুর্গ অথবা শহরের প্রবেশ পথে যেখানে বিভিন্ন রাস্তা এসে মিশত সেখানে গড়ে উঠত। একাধিক বাজারের অস্তিত্ব ছিল ব্যস্ত শহরগুলিতে। কোলনের মতো প্রধান নগরগুলিতে সংসদীয় অঞ্চল, কোর্টহাউস এবং নাগরিক ভবনগুলি প্রায়শই গড়ে উঠত প্রধান বাজার এবং শহর কর্তৃপক্ষের ভবন সংলগ্ন অঞ্চলে।

নগর পুনর্নির্মাণ বলতে সাধারণত দূর্গনির্মাণ, ক্যাথেড্রাল এবং গীর্জা পুনর্নির্মাণের সাথে যুক্ত বোঝাতো। মধ্যযুগের ইউরোপে এই জাতীয় কর্মসূচিতে বিশেষ অবদান ছিল বাণিজ্যিক সম্পদের, যা নব গঠিত নগরের নাগরিকদের ক্ষমতা এবং নগর শৃঙ্খলার ধর্মীয় আদর্শের প্রতি নগর কর্তৃপক্ষের সম্মতি উভয়ই প্রকাশ করতো। শহরের  প্রাকার নির্মাণ  গুরুত্বপূর্ণ সম্মিলিত প্রকল্পে পরিণত হয়  এবং জেনোয়ার  নাগরিকরা তাদের বন্দরের পুনর্নির্মাণ করেছিলেন। পিসা নাগরিকরা জেরুজালেমের  আদলে একটি ক্যাথেড্রাল নির্মাণের প্রকল্পের অর্থের জোগান দেন। উত্তর ইউরোপের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং ধর্মনিরপেক্ষ প্রভুদের ক্রমবর্ধমান সম্পদ এই স্থাপত্য শিল্পের উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করে।

মধ্যযুগে ব্যাবসা বাণিজ্যের বিপুল বিস্তারে নগরগুলির ভূমিকা ছিল অত্যন্ত সক্রিয় এবং সেই কারণে নগরের ব্যাবসা সচল রাখা ও নাগরিকদের স্বার্থ অখুন্নরাখার প্রতি নগর কর্তৃপক্ষের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি থাকত। বিভিন্ন শ্রেণীর কারিগর বা ব্যাবসায়ীদের দ্বারা গঠিত গিল্ডগুলির ভূমিকা ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। পণ্যের চাহিদা ও জোগানের ব্যাপারে সামঞ্জস্য রাখা, উৎপাদনে নিযুক্ত কারিগরদের নিরাপত্তা প্রদান করা, সমাজের মুষ্টিমেয় মানুষের অনিয়ন্ত্রিত ও অপরিমিত মুনাফা লাভের পথ বন্ধ করা ইত্যাদি নাগরিক জীবনের সঙ্গে যুক্ত সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে দ্বাদশ শতকে উত্তর ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ কিছু গিল্ড গড়ে ওঠে। ত্রয়োদশ শতকে বিশেষ বিশেষ পণ্য উৎপাদনে নিউক্ত কারিগরদেরই গিল্ড তৈরির ব্যাপারে উদ্যোগী হতে দেখা যায়। ধীরে ধীরে অন্য পেশায় নিযুক্ত কারিগররা আলাদা আলাদা গিল্ড তৈরি করতে শুরু করে। পণ্যের মূল্য ন্যায্য রাখতে অ তার মান যথার্থ রাখতে গিল্ডগুলি নিজ নিজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে একচেটিয়া অধিকার দাবি করত। চতুর্দশ/পঞ্চদশ শতাব্দী থেকে গিল্ড ব্যাবস্থা মুষ্টিমেয় বনিকের স্বার্থ রক্ষাতেই নিয়োজিত হতে থাকে।

ইউরোপীয় সমাজে নগরের বাতাসে ঘুরে বেড়ায় মুক্তি ও স্বাধীনতা। জীবীকার প্রয়োজনে নগরের মধ্যে অসংখ্য মানুষের সমবেত হওয়ায় কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ইউরোপীয় সমাজ জীবনে অপরিহার্য হয়ে উঠেছিল। নগরের পণ্য উৎপাদক এবং কারিগর শ্রেণির প্রয়োজনে শ্রমিকের অভাব আর অনুভূত হতো না।স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নগরবাসীর বিজয়ের অর্থে ইউরোপে একটি নতুন শ্রেণির বিবর্তন হয়েছিল – একটি শক্তিশালী, স্বতন্ত্র এবং স্বাবলম্বী গোষ্ঠী, যাদের ব্যবসায়ের আগ্রহ সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ইতিহাসকে নতুন করে লিখতে বাধ্য করে।  এই শ্রেণীর সদস্যদের ডাকা হত বার্গার বলে এবং বুর্জোয়া বলা হত। রাজা সামন্তপ্রভুদের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এদের উপর বেশি করে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন এবং এই শ্রেণীর অর্থনৈতিক কায়েমি স্বার্থ ও কার্যকলাপ  ইউরোপে প্রাথমিক পুঁজিবাদের জন্ম দেয়। শহরগুলির উত্থান এবং বুর্জোয়া শ্রেণিগুলির আবির্ভাবের সাথে জড়িত ছিল সার্ফডম এবং ম্যানুয়াল ব্যবস্থার পতন এবং একটি আধুনিক সমাজের সূচনা। একটি মধ্যযুগীয় জনপদের নাগরিকের পদমর্যাদা জন্ম, বংশ, ও জমির উপর নয়, অর্থ এবং পণ্যের উপর নির্ভর করত। সামাজিক স্তরের শীর্ষে ছিল মেডিসি, ফুগার এবং কোউরের মতো নামধারী ব্যবসায়ী পরিবার, দুর্দান্ত বণিক এবং ব্যাংকিং পরিবার। তারপরের স্তরে থাকতেন মধ্যবিত্ত পর্যায়ের ধনী বণিক এবং তাদের নীচে কারিগর এবং ছোট দোকানদার। নিম্নতম স্তরে ছিল অদক্ষ শ্রমিক, যাদের দারিদ্রতা এবং অসন্তোষ মধ্যযুগের ইতিহাসের নিয়ত সত্য হয়ে ওঠে।

লেখকঃ রাজনীতিক ও কলামিস্ট।

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..