রাঙামাটি প্রতিনিধি: সম্প্রতি রাঙামাটি পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ,বসতবাড়িতে হামলাসহ নানান অভিযোগ তোলেন রাঙামাটি যুব মহিলা লীগের কর্মী বলে দাবি করা মনিকা আক্তার নামে এক নারী। তিনি ফেসবুকে লাইভে এসে বিভিন্ন অভিযোগ তোলেন পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে। এমনকি ঢাকার বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে এ ঘটনার প্রতিবাদে মনিকা আক্তারকে প্রধান আসামী করে ও সাবেক মেয়র হাবিবুর রহমানের পুত্র সাইফুর রহমানকে আসামী করে ২৯ তারিখে রাঙামাটি কোতয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী।
মেয়র থানায় মামলা দায়ের করার পর বৃহস্পতিবার রাতে কুমিল্লায় তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেন। পরে আসামী মনিকা আক্তারকে রাঙামাটিতে প্রেরণ করলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়। কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন রাঙামাটি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার( সদর সার্কেল) তাপস রঞ্জন ঘোষ।
অন্যদিকে গ্রেপ্তারের আগে ঢাকার বিভিন্ন গণমাধ্যমে মেয়রের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে মনিকা আক্তার বলেন,‘রাঙামাটি কতোয়ালি থানায় মেয়রের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে পুলিশ তা নেয়নি। শুধু তাই নয়,একটা জিডি করেও তার কোন তদন্ত হয়নি।’ তবে মনিকা কতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করতে চাওয়া বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন রাঙামাটি কতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়র হোসেন। তিনি নিউজবাংলার এ প্রতিবেদককে বলেন,‘মনিকা মেয়রের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতে কখনও আসেন নি। এসব কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তবে মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী মনিকার বিরুদ্ধে কয়েকদিন আগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেছেন।’
মনিকা আরো বলেন,‘দীর্ঘ চারবছর ধরে মেয়র আকবরের সাথে সম্পর্ক ছিল। মেয়র বিয়ের আশ্বাস দিয়ে বলে সে কখনও বিয়ে করবে না। যদি বিয়ে করেন তাহলে আমাকে করবে। কিন্তু সে কথা রাখেনি। পরে মেয়রের বিয়ের তিনদিন পরে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম যা রাঙামাটিবাসী জানে। পুরো ১৮দিন মেডিকেলে ছিলাম। এখনও মেয়র তা স্বীকার করে না।’ তবে রাঙামাটি পৌর মেয়র মনিকার এসব বিষয় অস্বীকার করে বলেন,‘মনিকার এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট এবং ষড়যন্ত্র।
আকবর আরো বলেন,‘মনিকা আমার বিরদ্ধে বিভিন্ন অনলাইনে অপপ্রচার করা সম্পূর্ণ এ ষড়যন্ত্র। যার কারণে মনিকাকে প্রধান আসামী করে সাবেক মেয়র হাবিবুর রহমানের পুত্র সাইফুর রহমানসহ বিভিন্ন অনলাইনকে যুক্ত করে ২৯ তারিখে মামলা দায়ের করেছি।’
অপরদিকে শুক্রবার বিকেলে রাঙামাটি যুব মহিলা লীগের সভাপতি রোকেয়া আক্তার ও সাবেক মহিলা এমপি এবং রাঙামাটি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজা বেগম চিনুসহ দুই দলের যৌথ স্বাক্ষরে মনিকা আক্তারকে রাঙামাটিতে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে প্রেস বিবৃতি দেয়া হয়।
প্রেস বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়- আমরা লক্ষ্য করছি দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও বর্তমান সরকারের চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ড ব্যহত করতে নানা ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। একইসাথে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এই চক্রটি আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের জড়িয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে দলের সুনাম নষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
রাঙামাটিতে মনিকা আক্তার নামে এক নারী নিজেকে যুুব মহিলা লীগের ভূয়া নেত্রী পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরণের অপর্কম করে আসছে।
এই মনিকা কখনই যুব মহিলালীগের কোন পর্যায়ের নেতা বা কর্মী ছিল না। মনিকার মুল কাজ হচ্ছে বিভিন্ন অপশক্তির সাথে মিলে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে টাকা হাতিয়ে নেয়া। মনিকা ঐসব রাজনৈতিক কুচক্রী মহলের সাথে যুক্ত হয়ে আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত নেতা কর্মীদের নামে মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগ দিয়ে অপপ্রচার করে গভীর ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় মনিকা রাঙ্গামাটি পৌরসভার জনপ্রিয় মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরীর জনপ্রিয়তা ও তাঁর রাজনৈতিক অগ্রযাত্রায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তাঁর নামে নানা ধরণের মিথ্যা, বানোয়াট, কাল্পনিক অভিযোগ প্রচার করছে। আমরা এমন অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। অচিরেই এসব রাজনৈতিক কুচক্রি মহলের মুখোশ উম্মোচিত করা হবে।
‘মনিকা আক্তার রাজনৈতিক পরিচয়ে নানা ধরনের অপকর্ম করে আসছে এবং মনিকা যুব মহিলা লীগের কোন নেতা বা কর্মী ছিল না’ এসব আগে জানতেন তাহলে আপনারা এর আগে কেন সাংগঠনিক কোন পদক্ষেপ নেননি…? এমন প্রশ্নে প্রতিবেদককে সাবেক মহিলা এমপি এবং রাঙামাটি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজা বেগম চিনু বলেন,‘তার অপকর্ম অতিরিক্ত হওয়াতে এবং ফেসবুক লাইভে দীপংকর তালুকদার,মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরীসহ আমাকে জড়িয়ে বিভিন্নভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। যার কারণে আমরা দলীয়ভাবে রাঙামাটিতে তাকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছি।’