1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. Azharislam729@gmail.com : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
  4. bobinrahman37@gmail.com : Bobin Rahman : Bobin Rahman
  5. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  6. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  7. harun.cht@gmail.com : চৌধুরী হারুনুর রশীদ : চৌধুরী হারুনুর রশীদ
  8. shanto.hasan000@gmail.com : Rakibul Hasan : Rakibul Hasan
  9. msharifhossain3487@gmail.com : Md Sharif Hossain : Md Sharif Hossain
  10. humiraproma8@gmail.com : হুমায়রা প্রমা : হুমায়রা প্রমা
  11. dailyprottoy@gmail.com : প্রত্যয় আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রত্যয় আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  12. namou9374@gmail.com : ইকবাল হাসান : ইকবাল হাসান
  13. mohammedrizwanulislam@gmail.com : Mohammed Rizwanul Islam : Mohammed Rizwanul Islam
  14. hasanuzzamankoushik@yahoo.com : হাসানুজ্জামান কৌশিক : এ. কে. এম. হাসানুজ্জামান কৌশিক
  15. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  16. niloyrahman482@gmail.com : Rahman Rafiur : Rafiur Rahman
  17. Sabirareza@gmail.com : সাবিরা রেজা নুপুর : সাবিরা রেজা নুপুর
  18. prottoybiswas5@gmail.com : Prottoy Biswas : Prottoy Biswas
  19. rajeebs495@gmail.com : Sarkar Rajeeb : সরকার রাজীব
  20. sadik.h.emon@gmail.com : সাদিক হাসান ইমন : সাদিক হাসান ইমন
  21. safuzahid@gmail.com : Safwan Zahid : Safwan Zahid
  22. mhsamadeee@gmail.com : M.H. Samad : M.H. Samad
  23. Shazedulhossain15@gmail.com : মোহাম্মদ সাজেদুল হোছাইন টিটু : মোহাম্মদ সাজেদুল হোছাইন টিটু
  24. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  25. showdip4@gmail.com : মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ : মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ
  26. shrabonhossain251@gmail.com : Sholaman Hossain : Sholaman Hossain
  27. tanimshikder1@gmail.com : Tanim Shikder : Tanim Shikder
  28. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :
  29. Fokhrulpress@gmail.com : ফকরুল ইসলাম : ফকরুল ইসলাম
  30. uttamkumarray101@gmail.com : Uttam Kumar Ray : Uttam Kumar Ray
  31. msk.zahir16062012@gmail.com : প্রত্যয় নিউজ ডেস্ক : প্রত্যয় নিউজ ডেস্ক
রাষ্ট্র পরিচালনায় বিষ্ণুগুপ্তের নীতি ও শিক্ষা:নাইম ইসলাম নিবির  - দৈনিক প্রত্যয়

রাষ্ট্র পরিচালনায় বিষ্ণুগুপ্তের নীতি ও শিক্ষা:নাইম ইসলাম নিবির 

  • Update Time : বুধবার, ১ জুন, ২০২২
  • ২৪২ Time View

রাষ্ট্র পরিচালনায় বিষ্ণুগুপ্তের নীতি ও শিক্ষা 

— নাইম ইসলাম নিবির 

 

‘বিষের পাত্র থেকে অমৃত, নোংরা স্থান থেকে স্বর্ণ, সবচেয়ে নীচ ব্যক্তির কাছ থেকেও জ্ঞান এবং নীচ বংশের পরিবার থেকেও গুণবতী স্ত্রী গ্রহণ করা উচিত।’ ‘দারিদ্র্য, রোগ, দুঃখ, বন্ধন ও বিপদ- সব কিছুই মানুষের নিজস্ব অপরাধবৃক্ষের ফুল-ফসল।’ ‘বইয়ে থাকা বিদ্যা, পরের হাতে থাকা ধন একই রকম। প্রয়োজন কালে তা বিদ্যাই নয়, ধনই নয়।’

প্রিয় পাঠক! উক্তি সমূহ থেকে বোঝাই যাচ্ছে একজন বাস্তববোধসম্পন্ন প্রজ্ঞাবানের প্রসঙ্গে আমরা আজকের আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছি। যার অভিজ্ঞান পরিণত হয়েছে প্রবাদে।

আমাদের আলোচনার বিখ্যাত ব্যক্তিটি আর কেউ নন তিনি হচ্ছেন চাণক্য; একজন শিক্ষক, দার্শনিক, অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিবিশারদ হিসেবে যার খ্যাতি সুপ্রতিষ্ঠিত। কৌটিল্য বা বিষ্ণুগুপ্ত (খ্রিষ্টপূর্ব ৩৭০-২৮৩ অব্দ) তার নাম হলেও চাণক্য পরিচয়ে ইতিহাসে তিনি অধিকতর পরিচিত।

অর্থশাস্ত্র গ্রন্থের শেষে নিজের নাম তিনি উল্লেখ করেন বিষ্ণুগুপ্ত। আর যেহেতু তিনি ‘কুটিলা গোত্র’ থেকে উদ্ভূত হয়েছিলেন তাই তিনি ‘কৌটিল্য’ ছদ্মনাম গ্রহণ করেন। অন্য দিকে ‘চাণক্য’ নামের উদ্ভব ‘চানকা’ নামক শব্দ থেকে। চানকা হচ্ছে তার গ্রামের নাম। এই গ্রামেই তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মতান্তরে তার পিতার নাম ‘চাণক’ থেকে তিনি পরিচিত হন ‘চাণক্য’ নামে। তার মায়ের নাম ছিল চনেশ্বরী।

খ্রিষ্টপূর্ব ৩৭৫ অব্দে তক্ষশীলা নগরে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ বংশে চাণক্যের জন্ম হয়। শৈশবেই হন পিতৃহারা। অল্পবয়সেই তিনি সমগ্র বেদ অধ্যয়ন করেন। তিনটি বেদে বিশেষ পারদর্শিতার কারণে তাকে বলা হতো ত্রিবেদী। তক্ষশীলার প্রাচীন জ্ঞানাগারে শিক্ষালাভ করেন তিনি, যা বর্তমানে পাকিস্তানে অবস্থিত। আপন কালে তিনি অর্থনীতি, রাজনীতি, যুদ্ধের কৌশল, চিকিৎসা ও জ্যোতিষশাস্ত্রে অধিকার করেন গভীর পাণ্ডিত্য। কর্মজীবন শুরু করেন তক্ষশীলায় একজন শিক্ষক হিসেবে এবং একপর্যায়ে হয়ে ওঠেন সম্র্রাট চন্দ্রগুপ্তের প্রধানমন্ত্রী, উপদেষ্টা ও বিশ্বস্ত সহযোগী।

চন্দ্রগুপ্ত মূলত কে ছিলেন, তা অস্পষ্ট। কারো মতে গ্রাম্য বালক, কারো মতে মগধের সম্রাটের বৈমাত্রেয় ভাই, যাকে অন্যায়ভাবে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেন মগধের রাজা। চন্দ্রগুপ্ত নন্দরাজার বিরুদ্ধে প্রতিশোধপরায়ণ ছিলেন, নিজস্ব অধিকার ফিরে পেতে ছিলেন উদগ্রীব। চাণক্য নন্দরাজার পতন চাইছিলেন নিজের ওপর অপমানের প্রতিশোধ নিতে। রাজা তার পিতৃপুরুষের শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠান থেকে চাণক্যকে তাড়িয়ে দেন। কারণ তিনি দেখতে ছিলেন কুৎসিত। রূপজনিত অপমানে চাণক্য তার মাথার শিখা খুলে নন্দবংশের পতন ঘটাতে দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। রাজমহল থেকে চলে যাওয়ার পথে তিনি একটি বালকের সন্ধান পান, যার মধ্যে তিনি লক্ষ করেন ভবিষ্যতের রাজা হওয়ার লক্ষণ। তিনি তাকে সঙ্গী করে তক্ষশীলায় নিয়ে আসেন এবং আইন, রাষ্ট্রনীতি, গণিত, ইতিহাস ও যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী করে তোলেন। এ বালকই নন্দবংশের পতন নিশ্চিত করেন এবং পরবর্তীতে রাজা চন্দ্রগুপ্ত নামে মগধের সিংহাসনে বসেন। ২৪ বছরের রাজত্বের শেষে চন্দ্রগুপ্ত বিদায় নিলেন সিংহাসন থেকে। তার পর চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের পুত্র বিন্দুসার রাজা হন এবং চাণক্য তার জীবনের শেষ দিন অবধি ছিলেন বিন্দুসারের প্রধান রাজনৈতিক উপদেষ্টা। তিনি তাকে সব দিক দিয়ে পৃষ্ঠপোষকতা দেন। রাজকীয় পদ-পদবি তাকে ভোগ বিলাসে প্রণোদিত করেনি।

এ সময়ে বিলাসী জীবন উপেক্ষা করে চাণক্য শ্মশানবর্তী খুব সাধারণ একটি কুঁঁড়েঘরে সন্ন্যাস জীবনযাপন করতেন। ওখানে থেকেই রাজপ্রদত্ত দায়িত্ব পালন করতেন। আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ২৮৩ খ্রিস্টাব্দে চাণক্য মৃত্যু বরণ করেন।

চাণক্যের একটি বিখ্যাত গ্রন্থ রয়েছে ‘চাণক্য নীতি’। এই চাণক্য নীতিগ্রন্থ ৬০০টি শ্লোকে প্রণীত হয়। এগ্রন্থে তিনি সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিধান বিবৃত করেন। তার মতে, সাফল্যের পথ খুব কঠিন নয়। কিন্তু সাফল্য পাওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম ও শৃঙ্খলা প্রয়োজন। সমাজে বসবাসকারী সবার জন্য নিয়মের প্রস্তাব করেন তিনি। লিখেন, উচ্চবংশে জন্মগ্রহণ করেও মানুষ যদি বিদ্যাহীন হয়, তা হলে কোথাও সে সম্মান পায় না, কিন্তু হীনবংশে জন্ম নিয়েও কেউ যদি শাস্ত্রজ্ঞান লাভ করে, তা হলে দেবতারাও তাকে সম্মান করেন।

একজন বাবার কর্তব্য প্রশ্নে তিনি লিখেন, পাঁচ বছর অবধি সন্তানকে স্নেহ দিয়ে মানুষ করবে তার বাবা, ১০ বছর অবধি তাকে কঠোরভাবে শাসন করে গড়ে নেবেন, ১৬ বছর বয়স থেকে তার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার করবেন তিনি। বাবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য পুত্রকে ভালো শিক্ষাদান করা। তিনি পিতামাতাকে সতর্ক করেন, ‘পুত্রকে যারা পড়ান না, সেই পিতামাতা সন্তানের শত্রু’। সন্তানদেরও তিনি সতর্ক করেন এবং উদ্বুদ্ধ করেন সদগুণ অর্জনে। তার মতে, সদগুণসম্পন্ন একজন পুত্র অযোগ্য শত শত পুত্রের চেয়ে অনেক শ্রেয়। কারণ চাণক্যের মতে রাতের আকাশে একটিমাত্র চাঁদই আকাশের সব অন্ধকার দূর করতে পারে।

একটিমাত্র বৃক্ষে লাগা আগুনে যেমন সম্পূর্ণ বন ভস্মে পরিণত হতে পারে, তেমনি একজন কুপুত্রের কারণেও সম্পূর্ণ পরিবার ধ্বংস হতে পারে। একটিমাত্র পুষ্পিত সুগন্ধ বৃক্ষে যেমন সমস্ত বন সুবাসিত হয়, তেমনি একটি সুপুত্রকে দিয়ে সমস্ত কুল ধন্য হয়। গুরুর গুরুত্ব জীবনে বিপুল। গুরু শিষ্যকে যদি একটি অক্ষরও শিক্ষা দেন, তবে পৃথিবীতে এমন কোনো জিনিস নেই, যা দিয়ে সেই শিষ্য গুরুর ঋণ শোধ করতে পারে। চাণক্যের মতে, শিক্ষালাভ মানে সাধু বনে যাওয়া নয়। নানাভাবে শিক্ষা পেলেও দুর্জন সাধু হয় না, নিমগাছকে পানিতে ভিজিয়ে রাখলে কিংবা দুধ দিয়ে ধৌত করলেও কখনো সে মধুময় হয় না। তেমনি দুশ্চরিত্র ও নিকৃষ্টমনের মানুষ শিক্ষা লাভ করলেও নিকৃষ্ট থেকে যায়।

দুর্জন ব্যক্তি বিদ্যান হলেও যেকোনো মূল্যে তাকে এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ মণিভূষিত বিষাক্ত সাপও অধিক ভয়ঙ্কর হয়ে থাকে। কিন্তু বিদ্যা ছাড়া মানুষের উত্তরণ নেই। বিদ্বান সব গুণের আধার, অজ্ঞ সব দোষের আকর। তাই সমাজে হাজার মূর্খের চেয়ে একজন বিদ্বান অনেক কাম্য। যিনি জ্ঞানী, পৃথিবীর কোনো দেশই তার জন্য বিদেশ নয়।

সম্মানিত পাঠক! আপনারা নিশ্চয়ই জানেন জ্ঞানের অন্তহীনতা ও শাস্ত্রের ব্যাপকতায় বিশ্বাসী ছিলেন আমাদের আলোচিত এই  চাণক্য। বিস্তৃত বিদ্যা থেকে প্রয়োজনীয় সেরাটি বাছাই এবং বাস্তব জীবনে বিদ্যা কাজে লাগানোর সর্বোচ্চ আহ্বান ছিল তার কণ্ঠে। বলতেন, বিদ্যার চেয়ে বন্ধু নেই, ব্যাধির চেয়ে শত্রু নেই। সন্তানের চেয়ে স্নেহপাত্র নেই, দৈবের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বল নেই। শাস্ত্র অনন্ত, বিদ্যাও প্রচুর।

সময় অল্প অথচ বিঘœ অনেক।

তাই যা সারবস্তু, তারই চর্চা করা উচিত।

কিন্তু বিক্ষিপ্ত মন কি নাগাল পেতে পারে যথার্থ জ্ঞানের? চাণক্য বলছেন, না, ‘চঞ্চল মন যেকোনো বিষয়ে সম্পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করার পেছনে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।’ চাণক্যের শ্লোকগুলো জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ। নীতিদর্শনে এসব শ্লোকের রয়েছে বিশেষ মূল্য। আধুনিক পাঠকও নড়েচড়ে বসবেন, যখন তারা  চাণক্যের বাণী জানবেন– ১. আকাশে উড়ন্ত পাখির গতিও জানা যায়, কিন্তু প্রচ্ছন্ন প্রকৃতিকর্মীর গতিবিধি জানা সম্ভব নয়। ২. অতিপরিচয়ে দোষ আর ঢাকা থাকে না। ৩. অনেকে চারটি বেদ ও ধর্মশাস্ত্র অধ্যয়ন করলেও আত্মাকে জানে না, হাতা যেমন রন্ধন-রস জানে না। ৪. তিনটি বিষয়ে সন্তোষ বিধেয় : নিজের পতানীতে, ভোজনে ও ধনে। কিন্তু অধ্যয়ন, জপ আর দান- এ তিন বিষয়ে যেন কোনো সন্তোষ না থাকে। ৫. আপদের নিশ্চিত পথ হলো ইন্দ্রিয়গুলোর অসংযম, তাদের জয় করা হলো সম্পদের পথ, যার যেটি ইঙ্গিত সে সে পথেই যায়।

বিচিত্র বিষয়ে লিখেছেন চাণক্য। কিন্তু তিনি মুখ্যত অন্বেষণ করেছেন ভালো থাকার উপায়। ভালো থাকার জন্য তিনি প্রস্তাব করেন কিছু পদ্ধতি। তার মতে– ১. গরিবরা যেহেতু সমাজে কোনো সম্মান পায় না, তাই টাকা-পয়সার ভীষণ অভাবের কথা কাউকে কখনো বলতে নেই। কেননা এ সময়ে কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসে না, আবার কপট সাহায্যের আশ্বাস দেয়; যা উপকার নিয়ে আসে না। ২. দুর্বল ও সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি নিজের গোপনীয়তা লুকিয়ে রাখবে। ব্যক্তিগত সমস্যা কেউ যেন না জানে। অন্যকে তা জানালে তাদের চোখে আপনি হবেন নিচু ও বিরক্তিকর, আড়ালে হবেন বিদ্রুপের শিকার। নিজের স্ত্রী সম্পর্কে কাউকে কিছু বলাটা সবচেয়ে বিপজ্জনক। ৩. কখনো নিচপদস্থ ব্যক্তি দিয়ে অপমানিত হলে অন্যদের তা বলতে নেই। অন্যরা এতে লাই পেয়ে যাবে, সামনেই মশকরা করবে। ফলে তা মর্যাদা ও আত্মবিশ্বাসে আঘাত হানতে পারে। ৪. আদর দেয়ার অনেক দোষ, শাসন করার অনেক গুণ। তাই পুত্র ও শিষ্যকে শাসন করাই দরকার, আদর দেয়া নয়।

অর্থশাস্ত্র নামক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিখ্যাত গ্রন্থ রচনা করেন চাণক্য। ভারতীয় রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক বলা হয় তাকে। ভারতের ম্যাকিয়াভেলি হিসেবে তার যে পরিচিতি, এর মূলে আছে রাষ্ট্রচিন্তা ও প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে তার ভূমিকা। তার নীতিগুলো যুগ যুগ ধরে ভারতে প্রভাব ধরে রেখেছে, আজো সেগুলোর প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে যায়নি। ভারতীয় রাজনীতিতে তার প্রভাব এখনো অপ্রতিহত। রাজনীতির পাশাপাশি চিরায়ত অর্থনীতির বিকাশে তার নীতিগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে, সেসব নীতিকে বলে চাণক্যসূত্র।

তার প্রধান গ্রন্থটির নাম অর্থশাস্ত্র হলেও এতে মূলত শাসকের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রশাসন ও কূটনীতিবিষয়ক কৌশলের পরামর্শ। বইটি অর্থনৈতিক নীতিকে যেমন উপস্থাপন করে, তেমনি বয়ান করে সামরিক কৌশল। আইন, দেওয়ানি ব্যবস্থা, বাজার ও বাণিজ্যনীতি, যুদ্ধের তত্ত্ব, সরকারের দায়িত্ব ও কূটনীতি তত্ত্বের বিবরণ রয়েছে বইটিতে। দুর্ভিক্ষ, মহামারী ও যুদ্ধকালে রাজার কর্তব্য ও সামাজিক কল্যাণের মতো বিষয়ও এতে হয়েছে আলোচিত।

গ্রন্থটিতে তিনি দেখান, একটি রাষ্ট্র কিভাবে গড়ে ওঠে এবং পরিণতি লাভ করে, কিভাবে একজন শাসককে নিজস্ব ভূখণ্ডের সীমানা পেরিয়ে আরো ভূখণ্ড অধিকার করতে হবে এবং মূল্যবান সম্পদ কিভাবে নিজের সাম্রাজ্যভুক্ত করা যেতে পারে। সম্পদ ও সাম্রাজ্য সম্প্রসারণের মাধ্যমে প্রজাদের নিরাপত্তা, কল্যাণ ও জীবনমান উন্নত করার জন্য রাজা কী কী পদক্ষেপ নিতে পারেন? চাণক্য তা সবিস্তারে প্রতিষ্ঠিত করবার লক্ষ্যে কাজ করেন।

রাষ্ট্র, রাজনীতি ও সমাজমনস্তত্ত্ব চাণক্যের মনোযোগে আন্দোলন সৃষ্টি করে।

চাণক্যের রাষ্ট্র কর্মমুখর, গতিশীল। সবাইকে কাজ করতে হবে। তা হলে অর্থ আসবেই। বিরাট পশুপালের মধ্যেও শাবক তার মাকে খুঁজে পায়। অনুরূপ যে কাজ করে অর্থ সবসময় তাকেই অনুসরণ করে।

রাজার অধিকতর ক্ষমতা ও খ্যাতির বাসনা অস্বাভাবিক নয়। মনের বাসনা দূরীভূত করা উচিত নয়। এসব বাসনা গানের গুঞ্জনের মতো কাজে লাগানো উচিত। কিন্তু রাজাকে হতে হবে দুর্বলের সহায়। কারণ দুর্বলের বল রাজা, শিশুর বল কান্না, মূর্খের বল নীরবতা, চোরের মিথ্যাই বল।

তিনি চান শক্তিশালী ও প্রতিকারে সক্ষম রাজা। তার মতে যে রাজা শত্রুর গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা করতে পারেন না এবং শুধু অভিযোগ করেন যে, তার পিঠে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে, তাকে সিংহাসনচ্যুত করা উচিত।

চাণক্যের রাষ্ট্রকে অবশ্যই অর্থনৈতিকভাবে দৃষ্টিসম্পন্ন ও দায়িত্ববান হতে হবে। কারণ সব উদ্যোগ নির্ভর করে অর্থের ওপর। সে জন্য সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দেয়া উচিত খাজাঞ্চিখানার দিকে। রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাতের প্রতিকার করতেই হবে। এটি ধামাচাপা দেয়া উচিত নয়। কারণ তহবিল তছরুপের ৪০টি পদ্ধতি আছে। জিহ্বার ডগায় বিষ রেখে যেমন মধুর আস্বাদন করা সম্ভব নয়, তেমনি কোনো রাজকর্মচারীর পক্ষে রাজার রাজস্বের সামান্য পরিমাণ না খেয়ে ফেলার ঘটনা অসম্ভব ব্যাপার। জলের নিচে মাছের গতিবিধি যেমন জল পান করে বা পান না করেও বোঝা সম্ভব নয়, অনুরূপ রাজকর্মচারীর তহবিল তছরূপও দেখা অসম্ভব। আকাশের অতি উঁচুতেও পাখির উড্ডয়ন দেখা সম্ভব, কিন্তু রাজকর্মচারীদের গোপন কার্যকলাপ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া সমভাবে অসম্ভব। চাণক্য দুই হাজার বছরেরও বহু আগে রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাৎ ও বহুমুখী দুর্নীতির বিস্তার সম্পর্কে রাষ্ট্র ও সরকারকে দায়িত্বশীল হওয়ার ওপর যে গুরুত্বারোপ করেছেন, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের বিদ্যমান বাস্তবতায় এর অপরিহার্যতা ও গুরুত্ব অত্যধিক বেশি!

নাইম ইসলাম নিবির : প্রধানমন্ত্রীর স্নেহধন্য  রাজনীতিক ও কলাম লেখক 

nayemulislamnayem148@gmail.com

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..