সম্পত্তির উপর নারীর অধিকার, হিন্দু ও মুসলিম আইন এবং একটি পর্যালোচনা।
লতিফুর রহমান প্রামানিক, কবি ও আইনজীবী।
(শেষ কিস্তি)
তথাপি ও ১৯৩৭ সালের হিন্দু
আইনের নিম্নোক্ত বিধান মতে সম্পত্তির উত্তরাধিকার বা ওয়ারিশ গন মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি প্রাপ্ত হয়ে থাকেন। যুগের পরিবর্তন এর সাথে সাথে হিন্দু আইনে কিছু কিছু বিষয় নিয়ে কখনো কখনো বাংলাদেশ ও ভারতীয় আইনে সামান্য কিছু সংশোধন, পরিমার্জন করা হইলেও হিন্দু আইনে নারীর সম্পত্তির উপর অধিকার নিয়ে কখনো কোন শাসক ভুমিকা রাখেনি। বরঞ্চ বহু কালের লাঞ্চনা বঞ্চনা আর পুরুষ শাসিত সমাজের হাতে গড়া আইনের উপর মুখিয়ে থাকতে হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের আইনে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিবাহের সময় তার ভবিষ্যৎ প্রমানের জন্য বিবাহ রেজিষ্ট্রেশন এর বিধান যুক্ত হয়েছে। যদিও তাহা বাধ্যতামূলক নহে। তবে তাহা অবশ্যই একটি নতুন আলোর দিশারি মতো। ব্রিটিশদের হাতে গড়া আইনের উপর এখনো ভরসা করে এখনো চলছে পুরো ভারত ও বাংলাদেশ।
হিন্দু আইনে দুই ধরনের উত্তরাধিকার পদ্ধতি চালু আছে:
(ক) মিতক্ষরা পদ্ধতি
(খ) দায়ভাগ পদ্ধতি।বাংলাদেশে দায়ভাগ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এ আইন অনুযায়ী, যারা মৃত ব্যক্তির আত্মার কল্যানের জন্য পিণ্ডদানের অধিকারী, কেবলমাত্র তারাই মৃত ব্যক্তির সপিণ্ড এবং যোগ্য উত্তরাধিকারী।
নিম্নে মোট ৫৩ জন সপিন্ডগণের তালিকা ক্রমানুসারে দেওয়া হলঃ
১। পুত্র
২। পুত্রের পুত্র
৩। পুত্রের পুত্রের পুত্র
৪। স্ত্রী, পুত্রের স্ত্রী, পুত্রের পুত্রের স্ত্রী, পুত্রের পুত্রের পুত্রের স্ত্রী।
৫। কন্যা
৬। কন্যার পুত্র
৭। পিতা
৮। মাতা
৯। ভাই, সহোদর ভাই না থাকলে বৈমাত্রেয় ভাই।
১০। ভাই এর পুত্র, সহোদর ভাই না থাকলে বৈমাত্রেয় ভাই এর পুত্র
১১। ভাই এর পুত্রের পুত্র, সহোদর ভাই না থাকলে বৈমাত্রেয় ভাই এর পুত্রের পুত্র।
১২। বোনের পুত্র
১৩। পিতার পিতা
১৪। পিতার মাতা
১৫। পিতার ভাই
১৬। পিতার ভাইয়ের পুত্র
১৭। পিতার ভাইয়ের পুত্রের পুত্র
১৮। পিতার বোনের পুত্র
১৯। পিতার পিতার পিতা
২০। পিতার পিতার মাতা
২১। পিতার পিতার ভাই
২২। পিতার পিতার ভাইয়ের পুত্র
২৩। পিতার পিতার ভাইয়ের পুত্রের পুত্র
২৪। পিতার পিসির পুত্র
২৫। পুত্রের কন্যার পুত্র
২৬। পুত্রের পুত্রের কন্যার পুত্র
২৭। ভাইয়ের কন্যার পুত্র
২৮। ভাইয়ের পুত্রের কন্যার পুত্র
২৯। খুড়ার কন্যার পুত্র
৩০। খুড়ার পুত্রের কন্যার পুত্র
৩১। পিতার খুড়ার কন্যার পুত্র
৩২। পিতার খুড়ার পুত্রের কন্যার পুত্র
৩৩। মাতার পিতা (নানা)
৩৪। মাতার ভাই (মামা)
৩৫। মাতার ভাইয়ের পুত্র (মামার পুত্র)
৩৬। মাতার ভাইয়ের পুত্রের পুত্র (মামার পুত্রের পুত্র)
৩৭। মাতার বোনের পুত্র (মাসির পুত্র)
৩৮। মাতার পিতার পিতা
৩৯। মাতার পিতার ভাই
৪০। মাতার পিতার ভাইয়ের পুত্র
৪১। মাতার পিতার ভাইয়ের পুত্রের পুত্র
৪২। মাতার পিতার বোনের পুত্রের পুত্র
৪৩। মাতার পিতার পিতার পিতা
৪৪। মাতার পিতার পিতার ভাই।
৪৫। মাতার পিতার পিতার ভাইয়ের পুত্র
৪৬। মাতার পিতার পিতার ভাইয়ের পুত্রের পুত্র
৪৭। মাতার পিতার পিতার বোনের পুত্র
৪৮। মাতার ভাইয়ের কন্যার পুত্র
৪৯। মাতার ভাইয়ের পুত্রের কন্যার পুত্র
৫০। মাতার পিতার ভাইয়ের কন্যার পুত্র
৫১। মাতার পিতার ভাইয়ের পুত্রের কন্যার পুত্র
৫২। মাতার পিতার পিতার ভাইয়ের কন্যার পুত্র
৫৩। মাতার পিতার পিতার ভাইয়ের পুত্রের কন্যার পুত্র
মোট ৫৩টি শ্রেণির মধ্যে মহিলা শ্রেণী ৫ টি।
১। স্ত্রী, পুত্রের স্ত্রী, পুত্রের পুত্রের স্ত্রী, পুত্রের পুত্রের পুত্রের স্ত্রী (তালিকায় যার স্থান ৪র্থ)।
২। কন্যা (তালিকায় যার স্থান ৫ম)।
৩। মাতা (তালিকায় যার স্থান ৮ম)।
৪। পিতার মাতা (তালিকায় যার স্থান ১৪ তম)।
৫। পিতার পিতার মাতা ( তালিকায় যার স্থান ২০ তম)।
এই ৫ শ্রেণীর মহিলা কোন সম্পত্তি পেলেও সীমিত কিছু শর্ত (যেমন- মৃতের শ্রাদ্ধ, মৃতের কৃতঋণ পরিশোধ ইত্যাদি) ছাড়া তা হস্তান্তর করতে পারে না। তারা মুলত জীবনস্বত্ব ভোগ করতে পারে। তাদের মৃতুর পর সম্পত্তি পূর্ব মালিকের কাছে ফিরে যাবে, যা নিকটস্থ উত্তরাধিকারী পাবেন। কোন পুরুষ উত্তরাধিকারী সম্পত্তি না পাওয়া পর্যন্ত এভাবে সম্পত্তি বারবার মৃত মুল মালিকের কাছে ফিরে যাবে।
১ থেকে ৪ নম্বর ক্রমিক পর্যন্ত কেউ জীবিত না থাকলে (৫ নম্বর ক্রমিকের) কন্যা সম্পত্তি পাবে। কন্যাদের মধ্যে কুমারী কন্যার দাবী অগ্রগণ্য, এর পর পুত্রবতী বা পুত্র সম্ভবা কন্যাদের দাবী। কন্যা উত্তরাধিকার সুত্রে সম্পত্তি পেলে তার মৃত্যুতে তার পুত্র সন্তান সম্পত্তি পাবে। তবে কন্যার পুত্র না থাকলে পুত্রের পুত্র কোন সম্পত্তি পাবে না।
এক বা একাধিক পুত্র থাকলে তারাই সমুদয় সম্পত্তি পাবে। নিকটবর্তী পুরুষ ওয়ারিশ থাকলে পরবর্তীরা সম্পত্তি পাবে না, যেমন পুত্র থাকলে পুত্রের-পুত্র সম্পত্তি পাবে না।
মৃত ব্যক্তির পূত্র ও স্ত্রী থাকলে, স্ত্রী এক পূত্রের সমান অংশ পাবে। একাধিক স্ত্রী থাকলে স্ত্রীর অংশ স্ত্রীদের মধ্যে তুলাংশে বন্টন হবে। স্ত্রী যেরূপ অংশ পাবে, পূত্রের স্ত্রী, পুত্রের পুত্রের স্ত্রী বা পুত্রের পুত্রের পুত্রের স্ত্রীও অনুরূপ অংশ পাবে।
মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বন্টনের সময় অংশীদারদের মধ্যে যদি কোন অংশীদার মৃত থাকেন, তবে মৃত ব্যক্তির জীবিত উত্তরাধিকারগণ ওয়ারিশ হবে।
স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী জীবনস্বত্ব (Life Interest) ভোগ করেন। তার মৃত্যর পর উক্ত সম্পত্তি পুত্রদের মধ্যে বন্টন করে দেওয়া হয়।
কোন হিন্দু-বিধবা মহিলা পুনরায় বিবাহ করলে তাকে তার পূর্বের স্বামীর নিকট থেকে প্রাপ্ত সম্পত্তি মৃত স্বামীর জীবিত অন্যান্য ওয়ারিশের নিকট ছেড়ে দিতে হয়।
একমাত্র হিন্দু ধর্মে দত্তক পুত্র গ্রহনের বিধান আছে। তাই দত্তক পুত্র স্বাভাবিক পুত্রের (১/৩) তিন ভাগের এক ভাগ পাবে।
হিন্দু আইনে সন্ন্যাসী উত্তরাধিকার হয় না। সন্ন্যাসীকে সংসার ত্যাগী হিসাবে মৃত ধরা হয়।
অন্ধ, বধির, মূক, অঙ্গহীন, পুরুষত্বহীন এবং হাবাগোবা পুরুষ ও মহিলাগণ হিন্দু আইনে উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত। এমনকি দূরারোগ্য কুষ্ঠ-ব্যধীগ্রস্ত ব্যক্তিগণও উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত। আইনের দৃষ্টিতে তাদেরকে মৃত হিসেবে বিবেচনা করে তাদের বৈধ সন্তান, পিতামহ ও পিতামহীর উপর উত্তরাধিকারিত্ব বর্তায়।
স্বামী অসতী স্ত্রী রেখে মারা গেলে, সেই অসতী স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তি পাবে না। তবে বিধবা স্ত্রী আইন সঙ্গতভাবে সম্পত্তি পাওয়ার পর অসতী হলে প্রাপ্ত সম্পত্তি হতে বঞ্চিত হবে না। অসতীত্বের কারনে মাতাও উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হয়। তবে অসতীত্বের কারনে কোন নারী, স্ত্রী-লোকের সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হয় না।
কোন হিন্দু লোক ধর্মান্তরিত হলে উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হয়।
হত্যাকারী এবং তার ওয়ারিশ মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হবে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে এই নিয়ম নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অসন্তোষ কম নয়। মাঝে মাঝে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হলেও তার চুড়ান্ত লক্ষ্য স্পর্শ করতে পারেনি।
এবার সম্প্রতি ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট হিন্দু সম্প্রদায়ের নারীর সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ে আইনের উপর হাত বাড়িয়ে এক যুগান্তকারী রায় প্রদান করেছে। সারাদেশে এমনকি বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে একটা আশাজাগানিয়া আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে। উভয় দেশের নারী সম্প্রদায়ের মধ্যে আশার প্রদীপ জ্বলে ওঠা নিয়ে বিশেষ করে পুরুষ সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচ্ছন্ন আপত্তি থাকলে ও তা আর প্রকাশ্যে আসেনি। বিশেষ করে সুপ্রিম কোর্টের মতো একটি চুড়ান্ত আইনের জায়গা থেকে সিদ্ধান্ত আসায় মুখে কুলুপ এঁটে গেছে সকলের।
১৯৫৬-এর হিন্দু উত্তরাধিকার আইন বৌদ্ধ, জৈন ও শিখদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এই আইনে পরিবারের মহিলাদের শর্তাধীন ভাবে পৈতৃক সম্পত্তির অধিকার দেওয়া হয়েছে। পুরুষতান্ত্রিক হিন্দু আইন আবার দুধরনের – দয়াভাগ ও মিতাক্ষর। পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও ত্রিপুরার মতো রাজ্যগুলোতে এবং ওড়িশার কয়েকটি অঞ্চলে দয়াভাগ আইন মেনে সম্পত্তি হস্তান্তর হয়। দেশের বাকি রাজ্যগুলোতে মিতাক্ষর আইন মানা হয়। মিতাক্ষর আইনটির আবার চারটি ধরন রয়েছে – বেনারস, মিথিলা, মৌক্ষ (মুম্বই) ও দ্রাবিড়ীয় (দক্ষিণ)।
মিতাক্ষর ধরনটিতে একজনের ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তিকে আলাদা করে গণ্য করা হয়। সেই ব্যক্তি তাঁর ব্যক্তিগত সম্পত্তি যাঁকে খুশি দিতে পারেন। কিন্তু তাঁর উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির অধিকার শুধুমাত্র তাঁর পুত্র সন্তানরাই পাবেন। তাঁর ব্যক্তিগত সম্পত্তি ছাড়া, তাঁর কন্যারা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তিতে শুধুমাত্র তাঁর ভাগের উত্তরাধিকার লাভ করতে পারবেন। কিন্তু মহিলারা কোনও ভাবেই পূর্বজদের সম্পত্তির শরিক হতে পারবেন না। মহিলারা খুব বেশি হলে পিতার সম্পত্তি থেকে তাঁদের ভাত-কাপড়ের দাবি করতে পারেন।
২০০৫ সালের সংশোধনের ফলে এই আইনের পরিবর্তন ঘটেছে। কিন্তু বিভিন্ন আদালত এই আইনের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের রায় দেওয়ায় এই সংশোধন নিয়ে এখনও প্রচুর বিভ্রান্তি রয়েছে।
বিভ্রান্তির সৃষ্টি
বোম্বাই হাইকোর্ট জানিয়েছিল যে, মহিলারা আইন সংশোধনের পরে জন্মেছেন (অর্থাৎ, ২০০৫ এর পরে) শুধুমাত্র তাঁদের ক্ষেত্রে এই নতুন পরিবর্তন (অর্থাৎ মহিলারা পৈতৃক সম্পত্তিতে সমান উত্তরাধিকার পাবেন) প্রযোজ্য। অন্যদিকে, দিল্লি, কর্ণাটক ও ওড়িশার হাইকোর্টগুলো জানিয়েছে যে মহিলারা ২০০৫ সাল পর্যন্ত বেঁচেছিলেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন প্রযোজ্য।
২০১৫ সালে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল যে, যদি কেউ সংশোধনের আগে মারা গিয়ে থাকেন তা হলে তাঁর কন্যারা পৈতৃক সম্পত্তির ভাগ পাবেন না। সুপ্রিম কোর্টের এই নতুন রায়ে আবার বলা হচ্ছে যে, ২০০৫ সালের আগের সম্পত্তি বিভাজন নিয়ে যে মামলাগুলো হয়েছে, সেগুলোতেও মহিলারা সম্পত্তির অধিকার লাভ করতে পারবেন। এমনকি, যদি কোনও মহিলা ২০০৫ সালের আগে মারা যান, তা হলে তাঁর সন্তানরাও মায়ের দিকের সম্পত্তির শরিক হবেন।
১২১ পাতার রায়ে ভারতীয় সমাজব্যবস্থা, যৌথ পরিবার, hindu religious thought, women’s conditions in society etc and others fact and discussion were argued in this historical case.
হিন্দু-আনডিভাইডেড ফ্যামিলি (HUF) প্রপার্টিতে মেয়েদের পক্ষে এই রায় অনুযায়ী, পৈতৃক সম্পত্তিতে সমান অধিকার রয়েছে মেয়েদেরও, এমনই জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি অরুণ মিশ্রের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ এই রায় দিয়েছেন।এই রায় অনুযায়ী, ২০০৫ সালের আগে অর্থাৎ হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের (Hindu Succession Act) সংশোধনী কার্যকর হওয়ার আগেও যদি কারও বাবা মারা গিয়ে থাকেন, তাহলেও তাঁর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হতে পারেন সেই ব্যক্তির মেয়েরা। এদিন রায় দেওয়ার আগে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা বলেন, ‘কন্যা সন্তান চিরকালই প্রিয় কন্যা সন্তান হয়েই থাকেন। মহিলার জন্ম যবেই হয়ে থাক ২০০৫ সালের সংশোধিত এই আইন অনুযায়ী সমস্ত মহিলার বাবার সম্পত্তি হিন্দু আইন অনুযায়ী অধিকার সমান। রায়ে একদম স্পষ্ট করেই জানানো হয়েছে, হিন্দু-সাকসেশন অ্যাক্ট সংশোধন হওয়ার পরে মেয়েদের এই আইনি অধিকার নিশ্চিত রয়েছে। তবে সংশোধনের সময় বাবা বেঁচে থাকলে বা না থাকলেও সকল মেয়েদেরই এই সুবিধা পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
আসলে ২০০৫ সালে হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের সংশোধনী কার্যকর হওয়ার আগে যাঁদের বাবা-মা মারা গিয়েছেন, তাঁরাও কি পৈতৃক সম্পত্তিতে সমান অধিকার পাবেন? এই নিয়ে একাধিক মামলা হয় সুপ্রিম কোর্টে। ২০১৬ সালে প্রকাশ বনাম ফুলবতী মামলা এই আইন কার্যকর হবে না বলে জানিয়েছিল আদালত। আবার ২০১৮ সালের অন্য আরেকটি মামলার প্রেক্ষিতে এই আইন কার্যকর হবে বলে জানায় সুপ্রিম কোর্ট। ফলে বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট কোনও দিশা ছিল না। কিন্তু এদিন সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, ২০০৫ সালে হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের ৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী পৈতৃক সম্পত্তিতে মেয়েদের সমানাধিকার আছে।৷
কিন্তু বিতর্ক দেখা দেয় ওই আইন কি ২০০৫ সালের আগেও কার্যকর (‘রেট্রোস্পেকটিভ এফেক্ট’) হবে কি না? এ রায়ের মধ্য দিয়ে বিতর্কের আপাত সুরাহা হলো
এদিন রায় দিয়ে বিচারপতি অরুণ মিশ্র বলেন, ‘একটা মেয়েই সারাজীবন বাবা-মায়ের আদরের মেয়ে হয়ে থাকেন। কিন্তু সম্পত্তির মালিক বেঁচে থাকুক আর না থাকুক, সেই সম্পত্তির উপর মেয়ের সারাজীবন অধিকার থাকবেই।’
The bench of Justices Arun Mishra, S. Abdul Nazeer and M.R. Shah held that since the right in coparcenary is by birth, it is not necessary that the father coparcener should have been living as on September 9, 2005. Therefore, a daughter is entitled to equal property rights under the amended Hindu Succession Act, even if her father (the coparcener) wasn’t alive when the amendment came into force. The court overruled contrary observations made in cases such as Mangammal vs TB Raju and Prakash vs Phulavati.
বাবা মা এর কাছে একজন ছেলে আর একজন মেয়ে শুধুমাত্র ছেলে আর মেয়ে নয়। তারা হলো সন্তান। সেখানে লিংগ কোন বিবেচ্য বিষয় নয়। সেহেতু ছেলে যেভাবে বাবা-মার কাছে দামী সেহেতু একজন মেয়ে ও তাই। রায়ের এই অংশ নিঃসন্দেহে একটা যুগান্তকারী বিষয় ছিলো। বিজ্ঞ বিচারক গন যা উপলব্ধি করেছেন তা নারীর জন্য শত শত বছরের ন্যায্য পাওনা ছিলো।
While pronouncing the judgment, Justice Mishra remarked: “Once a daughter, always a daughter, son is a son only till he is married.”
Justice Mishra added that daughters must be given equal rights as a son and a daughter will remain a coparcener throughout life, irrespective of whether her father is alive or not. A daughter will remain a loving daughter throughout life.
In the judgement the Supreme Court bench observed that according to Section 6 of the Hindu Succession Act, 1956, a daughter is a coparcener in the same way and with same rights and liabilities as a son, whether she us born before or after the amendment.
Therefore by giving full effect to provisions of the substituted Section 6, the daughters must be given share in coparcenary, equal to that of a son in pending proceedings for final decree or in an appeal, notwithstanding that a preliminary decree has been given.
The judgement has also stated that according to provisions of the Act, partition based on oral evidence alone cannot be accepted. A plea of oral partition is not a statutorily recognised mode of partition and will bot be accepted, unless in exceptional cases, where a plea of oral partition is supported by public documents and partition is finally shown in the same manner like being affected by a decree of a court. That may be accepted.
রায়ের শেষ অংশে পুরো মামলার শেষ আদেশে আদালত বলে যে,
“We understand that on this question, suits/appeals are pending before different High Courts and subordinate courts. The matters have already been delayed due to legal imbroglio caused by conflicting decisions. The daughters cannot be deprived of their right of equality conferred upon them by Section 6. Hence, we request that the pending matters be decided, as far as possible, within six months,” said the Court.
পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি হিন্দু সম্প্রদায়ের বসবাসের দেশ ভারতে আর এই রায়ের মধ্যে দিয়ে হিন্দু আইনে শত শত বছরের গোড়ামী আর ন্যায়বিচার হইতে বঞ্চিত হিন্দু সম্প্রদায়ের নারীর সম্পত্তির উপর উত্তরাধিকার অধিকারের প্রথম আইনি বিজয় এর মধ্য দিয়ে সূচীত হোক নব রেনেসাঁর।
সূত্র ঃ আল কোরআন, মুসলিম আইন, হিন্দু আইন, বিভিন্ন রায়, উইকিপিডিয়া ইত্যাদি।
সমাপ্ত।