স্বার্থ সঙ্ঘাতের দুনিয়ায় নিঃস্বার্থ ভালোবাসা সাবের হোসেন চৌধুরীর জন্য।
— নাইম ইসলাম নিবির।
বর্তমান সময়কার রাজনীতি ও পরিস্থিতির নানা জটিলতা ইদানিং আমায় নিদারুণভাবে ব্যথিত করে তোলে। চলতে ফিরতে ইদানিং আগের মতো করে আর অনুপ্রেরণা পাই না। বয়সে নেহাত তরুণ হলেও মাঝেমধ্যেই বৃদ্ধাদের মতো বার্ধক্যের জটিলতা অনুভব করতে পাই। প্রায়শই মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে একলা আনমনে ছুটে চলি গন্তব্যহীণ পথে। রাস্তার পাশে এলোপাথাড়ি অট্টালিকার কক্ষগুলোতে মানবিকতার অভাব স্পষ্টই দেখতে পাই। নিজের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সূচনালগ্ন থেকেই ধন-সম্পদ-কামনা-বাসনা-ভোগ-বিলাসের মোহময়তা আমার শরীর-মন-মস্তিষ্ককে উজ্জীবিত বা উত্তেজিত করে তোলেনি কখনওই। উপরন্তু মানবিকতাকে উপেক্ষা করে অর্থকড়ির জন্য ছুটে চলেছি এধরণের অভিযোগ আমার ঘোরতর শত্রুরাও বলতে ব্যর্থ হবেন। কিন্তু গত দুই বছরে আমার জীবনে ঘটে যাওয়া নির্মম বাস্তবতার উপর ভিত্তি করে আমি এখন জোড়ালভাবে বলতে পারি আমার এতোদিনের জীবনদর্শনের প্রতিটি পৃষ্ঠা ছিলো নেহাত ভূলে ভরা।
আমি এখন প্রায় সময়ই একাকিত্বের সাগরে নিমজ্জিত থাকি এবং প্রায়ই কবি সৈয়দ শামসুল হকের নষ্ট খেত, নষ্ট মাঠ, নষ্ট সমাজ নিয়ে চিন্তাভাবনা করি। আমার এই চিন্তার সূচনা হয় করোনা মহামারীর শুরুর দিকে। করোনার মহামারী শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত আমি ছিলাম জীবনযুদ্ধে মরণপণ লড়াইরত একজন সংগ্রামী তরুণ। রাজপথ আর কলাম লেখালিখির কারণে প্রায়শই রাত তিনটার সময় জেগে উঠতাম। হরদম লেখালিখি শেষ করে ভোরবেলা থেকে দৈনন্দিন কাজকর্ম করে আমি যে সবার নয়নের মণি ও অনুকরণীয় হয়ে উঠেছিলাম তা আজ বিলুপ্তির পথে। আমার তখনকার দৈনিক ১৮ ঘণ্টার শ্রমে যে কর্মশক্তি ছিল এবং কর্মের বিনিময়ে যে সফলতা ছিল তা এখন কমে দশ ভাগের এক ভাগে দাঁড়িয়েছে। আগেকার দিনে চলতে ফিরতে কিংবা কাজকর্মে কোনো বাধা এলে তা অতিক্রম করার দারুণ প্রত্যয় ছিল। কিন্তু এখন সব বাধাবিঘ্ন পাশ কাটিয়ে ভিন্নপথে হাঁটার যে নমনীয় কৌশল অনুসরণ করি তা আমার সারা জীবনের কর্মপন্থা, আচার-আচরণ এবং অভ্যাসের সম্পূর্ণ বিপরীত। চলতে ফিরতে ইদানিং আগের মতো শক্তি পাই না। অর্থকষ্ট মনোকষ্ট ইদানিং আমায় নিদারুণভাবে পেরেশান করে তুলছে।
নিজের সম্পর্কে আমার উল্লিখিত আত্মোপলব্ধির কাহিনী আজ আপনাদের শোনানোর পেছনে মূলত দু’টি কারণ রয়েছে। প্রথম কারণ হলো, ঢাকা– ৯ আসনের সংসদ সদস্য জনাব সাবের হোসেন চৌধুরীর নিঃস্বার্থ ভালোবাসা কিভাবে আমাকে অশ্রুসিক্ত করেছে এবং দ্বিতীয় কারণ হলো, রাজনীতি করতে এসে অত্যন্ত সাহসী বিনয়ী ও রাজনৈতিক ভাবে মেধাবী হয়েও আমার রাজনৈতিক দর্শন ও জীবনমান নিয়ে আমার পরিচিত জন ও ছাত্রের কিছু উক্তিতে আবেগতাড়িত হয়ে যে উত্তর দিয়েছিলাম তার অন্তরালে ছিলো মূলত আমার অত্যধিক অসহায়ত্ব। দুটো কাহিনীর মধ্যে আমার ছাত্রের কাহিনীটি আগে বলব। তারপর এমপি সাহেবের ভালোবাসার গল্প দিয়ে নিবন্ধের ইতি টানব।
আমি যেই ছাত্রটির কথা বলছি সে এবার ইন্টারমেডিয়েট পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। অত্যন্ত সাবলীল ও ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে আমি যে কারোর সাথেই হরহামেশায় মিশে যাই। আমার সেই ছাত্রের সঙ্গে দীর্ঘদিন পরে দেখা হওয়ায় স্বভাবতই নানান আলাপ আলোচনার একপর্যায়ে সে আমাকে বলে ফেলেন ‘রাজনীতি করেন হুদাই, কোনও ত্যাজফ্যাজ নাই।’ আমার সেই ছাত্রের কথায় আমি তেমন কোনও উত্তর না দিয়ে একটু মন খারাপ করে রসিকতার ছলে বলেছিলাম মেধাভিত্তিক রাজনীতি করলে নাম ডাক কমই থাকে। আরও নানাবিধ সৌহার্দ্যপূর্ন উত্তর দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে এসেছি ঠিকই। কিন্তু বাসায় এসে তার কথা এবং বর্তমান সময়কার রাজনৈতিক মাঠ নিয়ে বেশ চিন্তা ভাবনা করে আপনাদের মাঝে কিছু আলোচনা করতে শক্তভাবে বসে পড়লাম। আমরা যারা ছাত্রাবস্থায় রাজনীতি করি তাদেরকে বন্ধু বান্ধব পরিবার পরিজন প্রতিবেশী থেকে শুরু করে প্রায় সবাই-ই একটু বিশেষ নজরে দেখেন এবং কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা করেন।
যার কারণে হাজারো সীমাবদ্ধতা স্বত্বেও সকলের প্রয়োজনে পাশে গিয়ে দাঁড়াতে হয়। আবার কোনও কারণে যদি আর্থিকভাবে কিছুটা সংকটে দিন কাটাই আর সেটি যদি তাদের দৃষ্টিগোচর হয় তাহলে উপহাস ঠাট্টা বিদ্রুপ কানাঘুষার কোনও সীমা থাকেনা। ঠিক যেমনটি হয়েছিল বছর খানেক আগে। একবার আমার কিছু বন্ধুদের সঙ্গে করে বিখ্যাত ফ্যাশন ব্রান্ড লারিভ ওয়ার হাউসে যাই মুজিব কোর্ট কিনবার উদ্দেশ্যে। সেখানে মুজিব কোর্টটি যে দাম নির্ধারণ করা ছিলো সে দাম দিয়ে কিনবার মতো সক্ষমতা আমার না থাকায় বন্ধুদের কাছে সেবার কি যে এক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছিলাম তা হয়ত হাজার কোটি টাকা পাচারের এ-যুগে নিতান্তই অবিশ্বাস্য বস্তু বলে মনে হবে।
আমার বন্ধুমহলে সেদিনকার সেই মুজিব কোর্টটি হয়তো আমি কিনতে ব্যর্থ হয়েছি সত্যি কিন্তু নিজে নিজে যখন চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জবরদখল, চোরাকারবারি, হাইব্রিড পাতিনেতাদের গায়ে দামি দামি মুজিব কোর্ট আর স্বর্নের নৌকা ব্যাজ পড়তে দেখি তখন অপ্রত্যাশিত ভাবেই মনের গভীরে একরকম আনন্দ অনুভব করি। তবে এটাকে আনন্দ নাকি ক্ষোভ বলে।
অভিহিত করবো তার সিদ্ধান্ত সম্মানিত পাঠকদের কাছে ছেড়ে দিলাম। আমার এই আনন্দ বিশালাকার ধারণ করে যখন বাংলাদেশের রাজনীতি কিংবা দলের জন্য তাদের অবদান বা অবস্থান এবং কার্যকারণ অনুধাবন করি। তখন আনমনে নিজেকে নিজেই বলতে থাকি একটি মুজিব কোর্ট কিনবার সামর্থ্য হয়তো আমার নেই কিন্তু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্য আছে একরাশ সুমধুর অনুভূতি। প্রতি মাসে লেখালিখির জন্য যে অর্থ আমি ব্যয় করি তাদিয়ে শুধু মুজিব কোর্ট নয় একটি পরিবার ভালো মতো পরিচালনা করা যায়।
বাংলাদেশের রাজনীতি এবং রাজনীতিবিদদের সম্পর্কে আমার উল্লিখিত পরিজনদের ধারণা খুবই বাজে প্রকৃতির। তাদের মতে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা পড়াশোনা করে না, অসৎ কিংবা উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন করে এবং তারা প্রায়শই দাম্ভিক, অসামাজিক এবং মূর্খের মতো আচরণ করে। অবশ্য বাংলাদেশে বর্তমান সময়ের রাজনীতি এবং রাজনীতিবিদদের মধ্যে মুষ্টিমেয় মেধাবী থাকলেও অধিকাংশ রাজনীতিবিদ নিজের অবস্থানের জন্য জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। তাই বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের মাঝে রাজনীতি নিয়ে যে বিরুপ বাজে ধারণা তাতে করে মনে হয় আমরা যারা মেধাবী তরুণ দেশকে ভালোবেসে রাজনীতি করতে এসেছি তারা মস্ত বড় ভূল করছি। এবং দুনিয়ার সবচেয়ে অধম, অপয়া, আন-স্মার্ট, অযোগ্যতায় আবদান রাখবার জন্য অচিরেই বেশ বড়সড় একটা এ্যাওয়ার্ড অর্জন করতে যাচ্ছি। ইদানিং আবার সুশীল ভদ্রসমাজের কর্তাব্যক্তিরা পথে ঘাটে যদি কোনও রাজনীতিবিদকে পান কিংবা কোনও তরুণ রাজনীতি করেন তা জানতে পারেন তবে একধরনের অস্বস্তি তাকে পেয়ে বসে। এমনভাবে কথা বলতে আরম্ভ করেন যা শুনে মনে হবে অভিজ্ঞতায় শিক্ষায় দীক্ষায় খুবই নিম্নমানের এবং উক্ত রাজনীতিবিদ কোনোকালে হয়তো তার অধীনে চাকরি-বাররি করতেন।
বর্তমান সময়ে আমরা যারা মেধাবী তুখোড় তরুণ প্রজন্মের রাজনীতিবিদ বা ছাত্র প্রতিনিধি আছি। যারা সত্যিকার অর্থে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় রাজনীতি করে দেশ ও জনগণের অধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করি। তারা অধিকাংশই এমন একটা সময় পার করছি যেখানে আমাদের এই সমাজে তরুণ রাজনীতিবিদদের দুটি পয়সারও মূল্যায়ন নেই। এখানে যদি কেউ তরুণ বয়সে টিকটকার হতে পারে, যদি কেউ চাঁদাবাজ হতে পারে, যদি কেউ হিরো আলম হতে পারে যদি কেউ অলিগলিতে ত্রাস সৃষ্টি করতে পারে তবেই তাদের কদর বৃদ্ধি পায়। অথচ মেধা দিয়ে কেউ চর্যাপদ রচনা করলেও সকলেই সেদিকে ভ্রুক্ষেপহীন। মেধার কদর করা আমরা আজ ভূলতে চলেছি প্রায়।
সমাজের এই মানুষগুলো এবং আমার পরিচিত জনদের নিয়ে বাজে অভিজ্ঞতার কথা বিশ্লেষণ করতে করতে নিজেকে নিয়ে আমার ভারি চিন্তা হলো। আমি স্মরণ করার চেষ্টা করলাম আমার সফলতম কর্মব্যস্ত দিনগুলো। ভোর ৫ টা থেকে রাজপথে বক্তৃতা শ্লোগান আন্দোলন সংগ্রাম মিছিল মিটিং, সাংবাদিকতা, রাজনীতি, শিক্ষকতা, লেখালিখি, সারাদিন চঞ্চলতার মাঝেও প্রতি সপ্তাহে তিনটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সম্পাদকীয় লিখতাম। কোই কোথাও তো ক্লান্তি অনুভব করিনি। কিন্তু আজ মানুষের দেয়া নানান আঘাত প্রতিঘাত নিজ দলের নেতাকর্মীদের স্বার্থান্বেষী স্বভাব। প্রতিটি স্থানে অসম্মানিত বোধ আমাকে এখন ভীষণ পীড়া দেয়। নিজের মাঝে এখন অনেক বিবর্তন ও পরিবর্তন অনুভব করতে পাই। আমার এই যে বিবর্তন তার জন্য কি আমি দায়ী – নাকি দেশের রাজনীতিবিদদের অন্ধত্ব, রাজনীতি বা বৈশ্বিক মহামারী দায়ী। যে ছেলেটি অতি ক্ষুদ্র বয়স, তরুণ বয়সে সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করে বিদ্যাবুদ্ধির উপর ভিত্তি করে রাজনীতিতে অনন্য সফলতা আনতে চায়। বিপথে না গিয়ে কিংবা পথভ্রষ্ট না হয়ে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করার দায়িত্ব নিতে চায়। যে বয়সে অন্যান্যরা দুটো লাইন লিখতে ব্যর্থ হয় সে বয়সে বাংলাদেশের প্রথম সারির তিনটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় নিয়মিত সম্পাদকীয় লিখার পরেও তাকে কেনও সামান্য বিষয়ে সহযোগিতার জন্য নিজ দলের লোকদের কাছেই অবহেলিত হতে হবে? তাকে কেনও সামান্য বিষয়ে হতাশা গুনতে হবে? তাকে কেনও অর্থাভাবে ঘর বন্দি জীবন যাপন করতে হবে? সেই প্রশ্নের জবাব কার কাছে চাইব!
আলোচনার এই পর্যায়ে এবার দ্বিতীয় প্রসঙ্গ অর্থাৎ সাবের হোসেন চৌধুরীকে ঘিরে আমার নিঃস্বার্থ ভালোবাসার কাহিনী আপনাদের বলব। আজ থেকে প্রায় ছয় সাতেক মাস আগের ঘটনা। হঠাৎ ব্যক্তিগত একটি অতিব জরুরি প্রয়োজনে আমার আজকের শিরোনামের আলোচিত ব্যক্তি ঢাকা–৯ আসনের সংসদ সদস্য জনাব সাবের হোসেন চৌধুরীর শরণাপন্ন হবার সঙ্গে সঙ্গে তার কাছ থেকে যে সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যবহার ও সহযোগিতা পেয়েছি তা আমার জীবনে পূর্বে কারো কাছ থেকে কোনো দিনও পাওয়া তো দূরে থাক আশাটুকুও করিনি। সেদিনকার সহোযোগিতার চেয়েও ভদ্রলোকের যে গুণটি আমাকে সবচেয়ে বেশি বিমোহিত করেছে তা হলো একজন তরুণ প্রজন্মের রাজনীতিবিদ ও জ্ঞানী লোকের কদর করার বিষয়টি। এমপি সাহেব আমার প্রয়োজনের বিষয়টি জানা মাত্রই দ্রুত সময়ের মধ্যে তা সমাধানের জন্য তার সহকারী জনাব আরমান আকন সাহেবকে নির্দেশ দেন। এবং তাদের দুজনের সহযোগিতায় আমার সেদিনের সেই সমস্যাটির সাময়িক সমাধা হয় ঠিকই। কিন্তু তার সেই উপকারের প্রতিদান পরিশোধ করার কোনো সুযোগ আমার হবে কিনা তা মহান আল্লাহ তায়া’লাই ভালো বলতে পারবেন।
প্রিয় পাঠক! আমি ঢাকার যে এলাকাটিতে বসবাস করি তা জাতীয় সংসদের ঢাকা–৯ আসনের অধীন এবং সাবের হোসেন চৌধুরী এখানকার সংসদ সদস্য। বর্তমান সময়ের রাজনীতিবিদদের মধ্যে তার মতো মার্জিত- মেধাবী- উদার- মানবিক- স্বচ্ছ প্রকৃতির মানুষ দ্বিতীয়টি আছে কিনা তা আমার অজানা। শুধু বাংলাদেশেই নয় বহির্বিশ্বের রাজনীতিতেও একজন আলোকিত নাম সাবের হোসেন চৌধুরী। তিনি প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে আন্তঃসংসদীয় ইউনিয়নের (আই.পি.ইউ) প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে বিশ্বব্যাপী আন্তঃসংসদীয় ইউনিয়নে নেতৃত্বের সর্বোচ্চ পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি শুধু একজন দক্ষ রাজনীতিকই নন বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট ক্রীড়াঙ্গনেও তার উল্লেখযোগ্য সাফল্য রয়েছে।
এই লোকটির প্রতি আমার আগ্রহ এবং নিঃস্বার্থ ভালোবাসার পেছনের মূল কারণ হলো রাজনীতি করলেও ব্যাক্তিগতভাবে রাজনীতিদদের মধ্যে আমি অনককেই অপছন্দ করি। এমন একটি সময় ছিলো যখন রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য অনুকরণীয় ব্যাক্তিত্বের ভারী অভাববোধ আমাকে পেয়ে বসে ছিলো। এমনকি একটা সময় নিজেকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে নেবার জন্য সিদ্ধান্তে উপনীত হই। পরবর্তীতে যেসকল বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদদের আকর্ষণীয় নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আমি রাজনীতি করবার আশা ভরসা আগ্রহ পেয়েছি তাদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার পরের ব্যক্তিটিই হলেন আমার আলোচিত ব্যক্তি সাবের হোসেন চৌধুরী। ভদ্রলোক সত্যিকার অর্থেই একজন অনুকরণীয় এবং অনুস্মরণীয় মানুষ। করোনা মহামারীর মধ্যে তাকেই একমাত্র দেখেছি যে-কিনা মুহূর্তেই অসহায় মানুষের মাঝে কোটি টাকা বিলিয়ে দিয়েছেন কোনও ধরনের প্রচারণা ছাড়াই।
একমাত্র ভদ্রলোকেই দেখলাম নীরবে সবার খোঁজ খবর নিতে। ঠিক যেমনটি হয়েছিল আমার ক্ষেত্রেও। ব্যক্তিগত জীবনে আমি একজন শান্ত স্বাভাবিক লাজুক মানুষ। আমার চেয়ে যারা পদ পদবিতে বড় তাদের কাছে নিজ থেকে যেতে আমি ইতস্তত ও লজ্জাবোধ করি। তাই তারা যদি নিজ থেকে না ডাকেন কিংবা আমাকে আমার কাঙ্ক্ষিত মূল্যায়ন না করেন তাহলে আমি তাদের কাছে খুব একটা ভিড়ি না। ফলে বাস্তব জীবনের হাজারো বাধা বিপদ আর ছোট খাটো অভাব অনটনের সম্মুখীন হলেও আমি কাউকে তা বুঝতে দেই না। উপরন্তু নিজের সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করি লুকিয়ে রাখতে কিংবা এড়িয়ে চলতে। কিন্তু সেদিন উপায়ান্তর না পেয়ে শত লজ্জাবোধকে জলাঞ্জলি দিয়ে সাবের হোসেন চৌধুরীর দৃষ্টি আকর্ষণ করার প্রেক্ষিতে যে রেস্পন্স পেয়েছি তাতে নিজের অজান্তে অশ্রুভারাক্রান্ত হয়ে পড়লাম।
আলোচনার শুরুতে বলেছিলাম, বর্তমান সময়কার রাজনীতি ও পরিস্থিতির নানা জটিলতায় নিদারুণভাবে ব্যথিত হবার কথা।
বয়সে তরুণ হলেও বার্ধক্যের জটিলতা আমায় পেয়ে বসেছে। এর প্রধানতম সমস্যা হলো নিজের গো-বজায় রাখতে প্রচন্ড অর্থকষ্ট শ্বাসকষ্টের মতো করেই অনুভব করি। কারো সাথে দুই তিন মিনিট কথা বললে রীতিমতো অসুস্থ হয়ে পড়ি। কোনো কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছি না। এ অবস্থায় আমার আবেগী মন আশা করে আমার প্রিয়জনেরা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে অর্থকষ্টটা অনুভব করুক এবং আমাকে সান্ত্বনা দিক। কিন্তু গত কয়েক মাসে আমার প্রিয়জনেরা আমার সব কিছু দেখতে পায় কেবলমাত্র আমার অর্থাভাবটিই তাদের চোখে পড়ে না। সম্মানিত পাঠক! এবার আপনারাই বলুন আমার জায়গায় যদি আপনারা থাকতেন তবে আপনাদের কেমন লাগত।
নাইম ইসলাম নিবির : রাজনীতিক ও কলামিস্ট
www.facebook.com/politician.nayeem.nibir