রাঙামাটি প্রতিনিধি: রাঙামাটির নানিয়াচর উপজেলার তিন লক্ষ মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পুরুন হতে চলছে । কাল বুধবার (১২ জানুয়ারি) ভিডিও কনফারেন্সে উপজেলার চেঙ্গী সেতুর উদ্বোধন করবেন– প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নানিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিউলি রহমান তিন্নি সাংবাদিকদের জানান, বুধবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতু উদ্বোধন করা হচ্ছে। বুধবার নানিয়ারচরে সাপ্তাহিক বাজার। সবধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সাপ্তাহিক বাজার বন্ধ রাখা হয়েছে। সেতু উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে থাকছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারী। নানিয়াচর উপজলা কনফারেন্স রুমে রাঙামাটি সাংসদ সাবেক পার্বত্যমন্ত্রী দীপংকর তালুকদারসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত থাকবেন বলে ইউএনও মুঠোফোনে প্রতিবেদকে নিশ্চিত করেছেন ।
স্থানীয় প্রবীন ব্যবসায়ীরা জানান, কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির দীর্ঘ ৬০ বছর পর নানিয়ারচর দীর্ঘদিনের স্বপ্নের সেতু বাস্তবায়নে রাঙামাটি জেলার দুর্গম তিন উপজেলার মানুষ অত্যান্ত আনন্দিত। চেঙ্গী নদীর ওপর ৫শ মিটার দীর্ঘ এ সেতু দিয়ে শুধু নানিয়ারচর উপজেলায় দিয়ে, সহজেই যাওয়া যাবে লংগদু ও বাঘাইছড়ি এবং সাজেকে । এক সময় নানিয়ারচর উপজেলা সদরে যাওয়ার মতো সরাসরি কোনো সড়ক ছিল না। নৌপথে যেতে দুই ঘণ্টা সময় লাগতো, এখন এক ঘণ্টারও কম সময়ে নানিয়ারচর সদরে সড়ক পথে যাওয়া যাচ্ছে।
একই সঙ্গে বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলায় সড়ক পথে যাওয়ার জন্য রাঙামাটি থেকে খাগড়াছড়ি হয়ে যেতে হতো। কিন্তু পার্বত্যাঞ্চলের সবচেয়ে দীর্ঘ এ সেতু নির্মাণ হওয়ায় তিন উপজেলার মানুষ সহজেই জেলা সদরের সঙ্গে যাতায়াতের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। একটি সেতুতেই দুর্গমতা ঘুচছে তিন উপজেলার। পাশাপাশি খুব সহজেই সাজেকে চলে যাওয়া সম্ভব হবে। তবে নানিয়ারচর থেকে লংগদু ১৮ কিলোমিটারের সড়কটি এখনো না নির্মাণ হওয়ায় লংগদু ও বাঘাইছড়িবাসী সেতু উদ্বোধনের দিন থেকে এর সুবিধা পাচ্ছে না। সড়কটির প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে।
জানাগেছে, রাঙামাটি থেকে বর্তমানে বাঘাইছড়িতে সড়ক পথে যেতে পাড়ি দিতে হয় প্রায় ১৫০ কিলোমিটার পথ। সময় লাগে প্রায় ৬-৭ ঘণ্টা। তাছাড়া সরাসরি বাস সার্ভিস চালু না থাকায় এ সময় আরও বেশি লাগে। তাই কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির পর নৌ-পথেই উপজেলাবাসীকে জেলায় যাতায়াত করতে হতো। তাতেও সময় লাগতো প্রায় ৬-৭ ঘণ্টা। একইভাবে রাঙামাটি থেকে সড়ক পথে লংগদু যেতেও প্রায় ১৪০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। সময়টাও লাগে ৫-৬ ঘণ্টা। এ উপজেলার সঙ্গেও রাঙামাটি সদরের কোনো বাস সার্ভিস চালু নেই। নৌ-পথেই একমাত্র ভরসা। কিন্তু নানিয়ারচরের চেঙ্গি সেতুর মাধ্যমে সেই দুর্গমতা অনেকাংশে ঘুচিয়ে যাচ্ছে। রাঙামাটি থেকে নানিয়ারচরের দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। নানিয়ারচর থেকে লংগদু সদরে দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার এবং বাঘাইছড়ির দূরত্ব ৩০ কিলোমিটারের মতো। এতে ঘণ্টা বা দেড় ঘণ্টার মধ্যে সরাসরি লংগদু বা বাঘাইছড়ি যাওয়া সম্ভব হবে।
নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রগতি চাকমা সাংবাদিকদের বলেন, এক সেতুর মাধ্যমে আমাদের অনেক দিনের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। আমরা এখন খুব সহজেই জেলা সদরে যাতায়াত করতে পারবো। তাছাড়া এলাকার উৎপাদিত কৃষি পণ্যের পরিবহন ও বাজারজাত সহজ হবে। একই সঙ্গে বাকি দুই উপজেলা লংগদু, বাঘাইছড়ি হয়ে আমরা সাজেকেও চলে যেতে পারবো।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরাসরি রাঙামাটি-নানিয়ারচর-লংগদু-বাঘাইছড়ি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ১৯৯৩ সালে নানিয়ারচর অংশে চেঙ্গী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। অবশেষে নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নানিয়ারচরের চেঙ্গী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। ঘোষণার দুই বছর পর ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে শুরু হয় সেতু নির্মাণের কাজ। এটি বাস্তবায়নে কাজ করেছে সেনাবাহিনীর ১৯ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন ব্যাটেলিয়ন (ইসিবি)।
উল্লেখ্য, সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের তথ্য মতে, ৫শ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ দশমিক ২ মিটার প্রস্থের এ সেতু নির্মাণে প্রায় ১ শ২০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে এবং দুই কিলোমিটার সড়ক সংযোগের জন্য ১শ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এরমধ্যে ৪৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় করা হয়। ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহে আরেফিন বলেন, নানিয়ারচর-লংগদু সড়ক নির্মাণে একটি প্রকল্প প্রস্তুত করা হয়েছে। অতি সহসাৎ সড়কটির কাজ শুরু করা হবে।