নিজস্ব প্রতিবেদক:হাজার হাজার পাহাড় বাসীর ফুলেল শুভেচ্ছা সিক্ত হলো পাহাড়ের সাফ জয়ী ৫
নারী ফুটবলার। ২৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বিকালে রাঙামাটি চিংহ্লা মং মারী স্টেডিয়ামে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ বিজয়ী পাহাড়ের পাঁচ নারী ফুটবলার
আনাই, আনুছিং, রুপনা, ঋতুপর্ণা ও মনিকাকে বীরোচিত এ সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে।
রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ, রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বিরোচিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নগদ অর্থ, ক্রেষ্ট ও ফুলেল শুভেচ্ছা তুলে দেন খাদ্য
মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি।
বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ
মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, রাঙ্গামাটি জেলা
পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রæ চৌধুরী, বিজিবি সেক্টর কমান্ডার অধিনায়ক
কর্ণেল মোঃ তরিকুল ইসলাম, রাঙ্গামাটি জোন কমান্ডার লেঃ কর্ণেল মোঃ আশিকুর
রহমান, পুলিশসুপার মীর আবু তৌহিদ,
রাঙামাটি পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী, রাঙামাটি জেলা
আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক হাজী মোঃ মুছা মাতব্বর সহ রাঙ্গামাটির
সর্বস্তরের প্রশাসন নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের যৌথ
উদ্যোগে ঘাগড়া স্কুল থেকে তাদেরকে ছাদখোলা গাড়িতে চড়িয়ে রাঙ্গামাটি শহরে
নিয়ে আসা হয়। এ সময় রাস্তায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে স্থাণীয় গ্রামবাসী
খেলোয়াড়দের ফুল ছিটিয়ে উষ্ণ অর্ভথনা জানান। প্রায় ২ ঘন্টা ছাদ খোলা বাসে
চড়ে রাঙামাটির বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাঙামাটি মারী স্টেডিয়ামে
এসে বিজয় মিছিল শেষ হয়। এ সময় খেলোয়াড়রা হাত নাড়িয়ে শুভেচ্ছা জানান।
পরে বিকেল ৫ টায় রাঙামাটি মারী স্টেডিয়ামে বিজয়ী পাহাড়ের পাঁচ নারী
ফুটবলারকে ফুল দিয়ে বীরোচিত সংবর্ধনার স্থলে বরণ করে নেয়। অনুষ্ঠানের
শুরুতে জাতীয় সংগীত ও সম্প্রীতির নৃত্যের মাধ্যমে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শুরু
হয়।
এসময় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সাফ জয়ী মিডফিল্ডার ঋতুপর্ণ চাকমা খেলোয়াড়দের
পক্ষে বলেন, এতো বড়ো আয়োজন আমাদের মুগ্ধ করেছে। রাঙামাটির মানুষযে
আমাদের এতো ভালোবাসে তা আমরা কল্পনা করতে পারিনি। রাঙামাটি জেলা পরিষদ
ও রাঙামাটি জেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই হাজার হাজার মানুষের মাঝে
রেখে আমাদেরকে সংবর্ধিত করছে। তিনি বলেন, আমরা কৃতজ্ঞ আমাদের শিক্ষক ও
কোচদের কাছে। যাদের কল্যাণে আজ আমরা এই অবস্থানে উঠে এসেছি। তারা যদি
আমাদের পাশে না থাকতো তাহলে আমরা কখনোই আজ এতো বড়ো হতে পারতাম না। ঋতু
বলেন, পাহাড়ের প্রতিটি নারী সুযোগ পেলে তার প্রতিভা গড়ে তুলবে। ঘাগড়া
স্কুলকে জাতীয় করণ করে রাঙ্গামাটিতে ফুটবল একাডেমী ও হোষ্টেল গড়ে তোলার
জন্য আহবান জানান।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক বলেন, বাংলাদেশের সাফ জয়ী ৫ নারী আমাদের গর্ব।
তাদের কল্যাণে আজ বাংলাদেশ বিশ^ দরবারে মাথা উচু করে দাঁড়িয়েছে। তাদের এই
অবদানের পেছনে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত। প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা যদি ২০১০ সালে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন
না করতে তাহলে এই কন্যারা উঠে আসতো না। তিনি বলেন, তাদের সংবর্ধিত করতে
পেরে আমরা আজ গর্বিত।
রাঙামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রæ চৌধুরী বলেন, পার্বত্য
রাঙামাটির প্রতিটি গ্রামের প্রতিভা লুকিয়ে রয়েছে। আগামীতে প্রাথমিক
স্কুলে যাতে আরো বেশী খেলাধুলা হয় তার জন্য রাঙামাটি জেলা পরিষদ অবশ্যই
কাজ করবে। তিনি বলেন, পার্বত্য রাঙ্গামাটির অহংকার দীপংকর তালুকদারের
স্বদিচ্ছায় রাঙ্গামাটির হ্যাচারী এলাকায় একটি ক্রীড়া একাডেমীর জন্য
হোষ্টেল নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। ইতিমধ্যে আমরা নীতিগত সিদ্ধান্ত
নিয়েছি। এই হোস্টেলে রাঙামাটির দুর্গম এলাকার প্রতিভাবান খেলোয়াড়রা
এখানে থেকে তাদের প্রতিভার বিকাশ ঘটাবে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দীপংকর তালুকদার বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের নারীরা
দেখিয়ে দিয়েছে তারা কোন ভাবেই পিছিয়ে নেই। রুপনা চাকমা যেভাবে গোলবারকে
পাহাড়া দিয়ে দেশের জন্য সোনা নিয়ে এসেছে তা আমাদের জন্য বড় প্রাপ্তি।
পার্বত্য রাঙামাটির ও পার্বত্য অঞ্চলের জন্য প্রাপ্তি। তিনি বলেন ,
তোমাদের চলার পথ এখানে যাতে থেমে না যায়। আগামীতে বিশ^কাপ জয় করে নিয়ে
আসতে হবে। দীপংকর তালুকদার বলেন, জাতির পিতার কন্য শেখ হাসিনা নারী তাই
নারীদের তিনি প্রাধান্য দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্ট
আয়োজন করে তিনি প্রমান করে দিয়েছেন নারীদের সুযোগ দিলে তারা দেশের জন্য
কিছু করতে পারে। তিনি বলেন , অনেকেই অনেক কথা বলেছে। বঙ্গমাতা ফুটবল
টুর্নামেন্ট আয়োজন করাকে নিয়ে। ২০১০ সালে টুর্নামেন্টের শুরু দিয়ে আমাদের
মেয়েরা উঠে এসেছে। মেয়েরাই আজ দেশের জন্য স্বর্ন পদক নিয়ে এসেছে। এই ধারা
আমাদের ধরে রাখতে হবে। তিনি বলেন , যে স্কুল লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলাই
ভালো করবে তাদের পৃষ্টপোষক আমরা অবশ্যই করবো।
পরে খাদ্য মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিরর সভাপতি প্রতিটি
খেলোয়াড়রকে ৫০ হাজার টাকা এবং ২জন কোচকে ২৫ হাজার টাকা, উন্নয়ন বোর্ডের
পক্ষ থেকে প্রতিটি খেলোয়াড়রকে ৫০ হাজার টাকা এবং ২জন কোচকে ২৫ হাজার
টাকা, রাঙামাটি জেলা পরিষদ থেকে প্রতিটি খেলোয়াড়রকে ২ লক্ষ টাকা করে
এবং ২জন কোচকে ২৫ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়। এছ্ড়াা বিজিবি
সেক্টর কমান্ডার, রাঙামাটি জোন, রাঙামাটি পৌরসভা সহ বিভিন্ন সংগঠনের
পক্ষ থেকে ক্রেষ্ট ও সম্মাননা প্রদান করা হয়।