পার্বত্যঞ্চল প্রতিনিধি, রাঙামাটি: রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের আয়ের অন্যতম উৎস নিজস্ব দুইটি বিশ্রামাগার (রেস্টহাউজ)। সাদা রঙের তিনতলা ভবনে ১৮টি ও আকাশি রঙের চারতলা ভবনে ১২টি কক্ষ মিলিয়ে তিন ক্যাটাগরির মোট ৩০টি কক্ষ রয়েছে দুটিভবনে। তবে আকাশি রঙের ভবনের প্রথম ও চতুর্থ তলার সব’কটি রুম জেলা পরিষদের তিন সদস্যের দখলে। সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্যমতে, পরিষদের নতুন পর্ষদ পুনর্গঠনের পর ২০২১ সাল থেকেই তিনজন সদস্য জেলা শহরে তাদের বসবাসের ‘ঘর নেই’ এই অজুহাতে সাধারণ ও ভিআইপি মানের পাঁচটি কক্ষ দখলে রেখেছেন! এতে করে কক্ষগুলো ভাড়া দিতে না পারায় নিজস্বআয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রাঙামাটির ‘হেভিওয়েট’ উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান পার্বত্য জেলা পরিষদ।
অনুসন্ধানে জানা গিয়েছে, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাদা রঙের বিশ্রামাগারের কক্ষ সংখ্যা ১৮টি। তিনতলা বিশিষ্ট ভবনটিতে তিনটি ভিআইপি কক্ষ, চারটি সেমি-ভিআইপি ও এগারোটি সাধারণের মানের বা ননভিআইপি কক্ষ রয়েছে। তন্মধ্যে ভিআইপি কক্ষের দৈনিক ভাড়া ১২০০, সেমি-ভিআইপি ৮০০ ও সাধারণ কক্ষের মধ্যে টুইন বেড (দুই বিছানা) ৫০০ ও সিঙ্গেল বেড (এক বিছানা) ৩০০ টাকা। চারতলা বিশিষ্ট আকাশি রঙের বিশ্রামাগারের কক্ষ সংখ্যা ১২টি। ভিআইপি কক্ষের দৈনিক ভাড়া ১০০০ টাকা এবং সাধারণ কক্ষের ভাড়া ৩০০ টাকা। পুরো ভবনের প্রথম ও চতুর্থতলা মিলে ৫টি কক্ষ জেলা পরিষদের তিন সদস্যের দখলে রয়েছে। তিনটি কক্ষ বেডসিট ও আসবাবপত্রের অভাবে চালু করা যায়নি। এই ভবনের নিচতলায় দুই কক্ষ রয়েছে; পুরো নিচতলা জেলা পরিষদ সদস্য আছমা বেগমের দখলে রয়েছে। দ্বিতীয় তলায় চারটি ও তৃতীয় তলায় তিনটি কক্ষ রয়েছে। সেখানে তিনটি কক্ষ এখন বালিশ ও বেডসিটের অভাবে অব্যবহৃত আছে বলে জানা গেছে। তবে চতুর্থ তলায় তিনটি ভিআইপি কক্ষ থাকলেও পরিষদের দুই সদস্য নিউচিং মারমা ও দীপ্তিময় তালুকদারের দখলে এই তলাটি। আছমা বেগমের দখলে থাকা সাধারণ কক্ষগুলোর দৈনিক ভাড়া ৩০০ টাকা, নিউচিং মারমা এবং দীপ্তিময় তালুকদারের দখলে থাকা ভিআইপি কক্ষগুলোর দৈনিক ভাড়া ১০০০ টাকা। ২০২০ সালের শেষদিকে পরিষদের নতুন পর্ষদ পুনর্গঠনের পর থেকেই তারা তিনজনে মিলে পাঁচটি কক্ষ দখলে নিয়েছেন। বিগত দুই বছর ধরে তাদের দখলেই রয়েছে। দৈনিক হিসাবে কক্ষভাড়া বাবদ টাকা নিলে জেলা পরিষদ আছমার দখলে থাকা ১০১ এবং ১০২ নম্বর সাধারণ মানের দুইটি কক্ষ থেকে পরিষদের দুই বছরে ৪ লাখ ৩৮ হাজার টাকা পাওয়ার কথা। অন্যদিকে, নিউচিং মারমার দখলে থাকা চতুর্থ তলার ৪০১ এবং ৪০২ নম্বর ভিআইপি কক্ষ থেকে দুই বছরে ১৪ লাখ ৬০ টাকার আর দীপ্তিময় তালুকদার থেকে ৪০৩ নম্বর রুমবাবদ ৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা পাওয়ার কথা। তিন সদস্যের দখলে থাকায় পাঁচটি কক্ষ ভাড়া দিতে না পারছেনা বিশ্রামাগার কর্তৃপক্ষ।
অভিযোগ রয়েছে, জেলা শহরে বসবাসের মতো বাসাবাড়ি নেই- এ অজুহাতে তিনটি ভিআইপি ও দুইটি নন-ভিআইপি রুম দখলে নিলেও জেলা পরিষদ সদস্য আছমা বেগম ছাড়া অপর দুই সদস্য নিউচিং মারমা ও দীপ্তিময় তালুকদারের পরিবারের কেউ রেস্টহাউজে থাকেন না। এই পাঁচটি কক্ষ ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে পরিষদ সদস্যদের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন এবং ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত নেতারা পরিষদের রেস্টহাউজে আশ্রয় নিলেও ভাড়া পরিশোধ করেন না। রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের নিজস্ব আয়ের যেসব খাতসমূহ রয়েছে তারমধ্যে জেলা পরিষদের বিশ্রামাগারটি অন্যতম। নিজস্ব আয়খাতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ৩ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তারমধ্যে শুষ্কফাঁড়ি হতে ১ কোটি ৭০ লাখ, ভূমি হস্তান্তর কর বাবদ ৭০ লাখ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন ফি বাবদ ২০ লাখ টাকা এবং বিবিধআয়ের হিসাবে ব্যাংক মুনাফা, বিশ্রামাগার ও বাড়িভাড়া বাবদ ৪০ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, পরিষদের নিজস্ব আয়খাতে বিশ্রামাগার হতে বাৎসরিক ৫ লাখ আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও প্রতিবছরই ঘাটতি থেকে যায়।
২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর রাঙামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নতুন পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছিল। পুরোনো দুই পর্ষদের সদস্য ও জেলার কাউখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অংসুই প্রু চৌধুরী নতুন পর্ষদে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরিষদের নতুন পর্ষদে ১৪ সদস্যের মধ্যে প্রথমবারের মতো সদস্য হন কাপ্তাই উপজেলা হতে দীপ্তিময় তালুকদার, রাজস্থলী উপজেলা হতে নিউচিং মারমা, লংগদু উপজেলা হতে বিগত পর্ষদের সদস্য মৃত মো. জানে আলমের স্ত্রী আছমা বেগম। তিন সদস্যের মধ্যে নিউচিং মারমা জেলা আওয়ামী লীগের সদ্যবিগত কমিটির সদস্য ছিলেন। দীপ্তিময় তালুকদার কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও আছমা বেগম লংগদু উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্বপালন করছেন।