ইতিহাস ঐতিহ্য ও ভ্রমণ বিষয়ক লেখক: কিবলাতাঈন মসজিদ মানে দুই কেবলার মসজিদ। মসজিদটি মদিনা শরিফের পশ্চিম প্রান্তে খালিদ বিন ওয়ালিদ সড়কে অবস্থিত। বনু সালামা অঞ্চলে হওয়ার সুবাদে এই মসজিদের প্রথম নাম ছিলো- মসজিদে বনু সালামা।
মসজিদে কিবলাতাইন ইতিহাসের এক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী। এই মসজিদে নামাজ আদায়ের সময় কেবলা বদলের আদেশ দেওয়া হয়। নামাজ পড়তে দাঁড়িয়ে অহি পাওয়ার পর নবী করিম (সা.) মসজিদে আকসার দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নামাজের মাঝখানে মক্কামুখি হয়ে নামাজের বাকিটুকু সম্পন্ন করেন। এজন্য এই মসজিদের নাম কিবলাতাঈন (দুই কেবলার মসজিদ)।
বর্তমানে মসজিদের ভেতরের মূল অংশ অক্ষত রেখে চারদিকে দালান করে মসজিদটি বাড়ানো হয়েছে। স্মৃতিস্বরূপ বায়তুল মোকাদ্দাসের দিকেরকার কেবলার জায়গাটি দু’তলা বরাবর রেখে দেওয়া হয়েছে।ইতিহাসের সাক্ষী দুই কেবলার মসজিদ !!
তথ্য সুত্রথেকে জানা যায়,
পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকে হজরত ঈসা (আ.) পর্যন্ত নবী-রাসূলদের কেবলা ছিলো বায়তুল মোকাদ্দাস। কিন্তু নবী করিম (সা.) ও সাহাবাদের একাংশ বায়তুল মোকাদ্দাস এবং কাবার দিকে ফিরে নামাজ আদায়ের বিরল সৌভাগ্য অর্জন করেন।ইসলামের সূচনালগ্ন থেকে মদিনায় হিজরতের প্রায় ১৬ মাস পর্যন্ত বায়তুল মোকাদ্দাসের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। তবে মুসলমানদের স্বতন্ত্র জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠিত ও বিকশিত করার লক্ষে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কাবার দিকে ফিরে নামাজ আদায়ের প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে উপলব্ধি করছিলেন।
অন্যদিকে মুসলমানদের কেবলা বায়তুল মোকাদ্দাসের দিকে হওয়ার কারণে ইহুদিরাও এই বলে অপপ্রচার করে বেড়াত যে, আমাদের ও মুসলমানদের কেবলা যেহেতু এক ও অভিন্ন, অতএব ধর্মের ক্ষেত্রেও মুসলমানদের উচিত আমাদেরই অনুসরণ করা।
এসব কারণে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হৃদয়ের সুপ্ত বাসনা ছিলো, কাবা যদি মুসলমানদের কেবলা হতো! এ বাসনা তীব্রতর হলে নবী করিম (সা.) ব্যাকুলচিত্তে আকাশের দিকে বারবার তাকাতেন, অহির মাধ্যমে এর অনুমোদনের প্রত্যাশায়।ইতিহাসের সাক্ষী দুই কেবলার মসজিদ !!!!
হিজরি দ্বিতীয় সনের শাবান মাসে মতান্তরে রজব মাসের মাঝামাঝি সময়ে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বেশ কয়েকজন সাহাবি নিয়ে হজরত বিশর ইবনে বারা (রা.)-এর দাওয়াতে যোগ দিতে বনু সালামায় পৌঁছে জোহরের নামাজ, মতান্তরে আসরের নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে তাশরিফ নেন।
নামাজে ইমাম ছিলেন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আর মুক্তাদি ছিলেন সাহাবায়ে কেরাম (রা.)। দ্বিতীয় ও তৃতীয় রাকাতের মাঝামাঝি সময়ে নবী করিম (সা.)-এর আন্তরিক ইচ্ছার বাস্তবায়নে হজরত জিবরাইল (আ.) অহি নিয়ে অবতীর্ণ হন। অহিতে বলা হয়, ‘হে মুহাম্মদ! আপনি নিজের মুখ মসজিদে হারামের দিকে ফেরান এবং (মুসলমানগণ) তোমরা যেখানেই থাকো, সে দিকেই নিজেদের মুখ ফেরাবে।’ আল্লাহর নির্দেশ হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম (রা.) চার রাকাতবিশিষ্ট নামাজের দুই রাকাত কাবা শরিফের দিকে ফিরে আদায় করেছিলেন, বিধায় এ মসজিদ ইসলামের ইতিহাসে মসজিদে কিবলাতাইন বা দুই কিবলাবিশিষ্ট মসজিদ নামে সুপরিচিত ও সমাদৃত।
আতা মোহাম্মাদ উবায়েদ
ইতিহাস ঐতিহ্য ও ভ্রমন বিষয়ক লেখক
obayed.roni@gmail.com