বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:অদ্ভুত ঘটনা। কলকাতার বেসরকারি ল্যাবগুলিতে এখন করোনা ভাইরাস পরীক্ষা হচ্ছে। কিন্তু সেইসব নমুনা পরীক্ষার ১০০ শতাংশ রিপোর্টই নাকি পজিটিভ আসছে! এটা কী করে সম্ভব? ব্যাপার দেখে চোখ কপালে উঠেছে কলকাতা পুরসভার। এমনই সব রিপোর্টের কথা জেনে পুর আধিকারিকরা সঙ্গে সঙ্গেই সেই ল্যাবগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করে দিয়েছেন। প্রশ্ন উঠেছে, কলকাতার বেসরকারি ল্যাবগুলি কি তা হলে স্রেফ ব্যবসা বাড়াতেই এমন সব রিপোর্ট ইচ্ছে করেই দিচ্ছে?
বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন স্বয়ং অতীন ঘোষ। তিনি কলকাতা পুরসভার বিদায়ী ডেপুটি মেয়র। এখন অবশ্য পুরসভার প্রশাসনিক বোর্ডের সদস্য। তিনি জানিয়েছেন, কিছুদিন ধরে কলকাতার বেসরকারি ল্যাবগুলি করোনা পরীক্ষা করছে। কিন্তু তাদের ১০০ শতাংশেরই নমুনা পরীক্ষার করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসছে। এমন হওয়ার কথা নয়। মনে হচ্ছে, বেসরকারি ল্যাবগুলির পরিকাঠামোয় কোনও সমস্যা রয়েছে। পুরো বিষয়টি পুরসভা খতিয়ে দেখছে। এ ব্যাপারে কলকাতা পুরসভার একটি সিদ্ধান্তের কথাও জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘বেসরকারি ল্যাবগুলির পরীক্ষার রিপোর্ট ফের সরকারি ল্যাবগুলিতে পরীক্ষা করে দেখা হবে। তা হলে পরিষ্কার হয়ে যাবে, বেসরকারি ল্যাবগুলি সঠিক রিপোর্ট দিচ্ছে কিনা!
অনেকে অবশ্য বেসরকারি ল্যাবগুলির এমন কাজের পিছনে অসাধু উদ্দেশ্য দেখতে পাচ্ছেন। এখন শহর জুড়ে ব্যাঙের ছাতার মতো নার্সিংহোমের পাশাপাশি অসংখ্য বেসরকারি ল্যাব তৈরি হয়েছে। তারা পুরো বিষয়টিকে স্রেফ ব্যবসা হিসেবেই দেখছে। তাই করোনার মতো কঠিন পরিস্থিতিতেও নিজেদের লাভ বাড়াতে এমন কাজ তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে করে থাকতে পারে। যাতে পজিটিভ রিপোর্ট পাওয়ার পর ফের সেই রোগী পরেরবার আবার তাদের কাছেই করোনা পরীক্ষা করতে আসেন। পাশাপাশি কোনও ব্যক্তির রিপোর্ট পজিটিভ হলে তাঁর বাড়ির অন্য সদস্যরাও করোনা পরীক্ষা করান। ফলে ল্যাবগুলির ব্যবসা অনেকটাই বেড়ে যায়। যাঁরা এমন মনে করছেন, তাঁরা এই অসাধু চক্র ভাঙার জন্য পুরসভা ও প্রশাসনের আরও কড়া হওয়া উচিত বলে মনে করছেন।
এ ছাড়া, করোনা চিকিৎসা নিয়ে বেসরকারি হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে বেশি টাকা চার্জ নেওয়া নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। বিষয়টিতে অবশেষে হস্তক্ষেপ করল রাজ্য সরকার। এবার বেসরকারি হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা–সহ চিকিৎসার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং পরিষেবার সর্বোচ্চ দাম বেঁধে দেওয়া হল। নবান্ন এক নির্দেশিকা জারি করে শুক্রবার জানিয়ে দিয়েছে, বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রোগীর করোনা পরীক্ষার জন্য ২ হাজার ২৫০ টাকার বেশি নেওয়া যাবে না। পিপিই–সহ যে কোনও সুরক্ষা সামগ্রীর জন্য ১০০০ টাকা এবং চিকিৎসকের পারিশ্রমিক হিসেবে ১০০০ টাকার বেশি নিতে পারবে না কোনও বেসরকারি হাসপাতালই।
উল্লেখ্য, করোনা পরিস্থিতিতে বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে ব্যবসার বদলে সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীই জানিয়েছেন, তাঁর কাছে এ বিষয়ে ভুরিভুরি অভিযোগ জমা পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যে যথেষ্ট বিরক্ত, তা তিনি নিজেই পরিষ্কার করে দিয়েছেন বারবার। মনে করা হচ্ছে, এবার রাজ্য সরকার কড়া মনোভাব নিয়েই বিষয়টিতে পদক্ষেপ করল।
এদিকে, এদিন করোনা সংক্রমণ রেকর্ড করল রাজ্যে। শেষ ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে ৫৪২ জন করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। করোনা–সময়ে এর আগে এতসংখ্যায় করোনা সংক্রমণ রাজ্যে ঘটেনি। ফলে রাজ্যে মোট করোনা সংক্রমণ পৌঁছে গিয়েছে ১৬ হাজার ১৯০ জনে। আর শেষ ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। ফলে রাজ্যে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬১৬ জন।