১৯৪৭-১৯৭১ দুই যুগের পাকিস্তানী শোষণের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে আমাদের সশস্ত্র
মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে লক্ষ প্রাণ ও মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের মহান স্বাধীনতা।
স্বাধীন বাংলাদেশকে নিয়ে আমাদের মহান নেতারা স্বপ্ন দেখেছিলেন। দুর্নীতি ও শোষণমুক্ত আধুনিক বিজ্ঞান সম্মত ও কল্যাণকর আর্দশিক জনকল্যাণমুখী একটি সুন্দর রাষ্ট্র গড়ে উঠবে। আমরাএকটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ভূখণ্ড পেয়েছি ।কিন্তু সেই সুন্দর স্বপ্নগুলো আমাদের অধরা রয়ে গেছে। আমরা কিছুটা ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ও পুঁজিবাদের ধনতন্ত্রে আক্ষরিক অর্থে হাজার হাজার মানুষ ধনী হয়েছি ঠিকই।
পক্ষান্তরে বিশাল এই কোটি কোটি জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্যতার ক্ষত ক্যান্সার রাষ্ট্রের সারা অঙ্গে দেখা দিয়েছে। আমারা অবকাঠামোগত অনেক কিছু উন্নত করেছি, সুউচ্চ কিছু ভবন,সেতু নির্মাণ করেছি । সেই সাথে প্রতিটা নাগরিকের মাথাপিছু ঋণের বোঝা বাড়ছে। আজ যে শিশুটি জন্ম নেয় তার মাথায় চাপে প্রায় লক্ষ টাকার ঋণের বোঝা। যিনি মারা যাচ্ছেন তিনিও নাগরিক হিসেবে সেই রাষ্ট্রীয় ঋণের বোঝা নিয়েই শায়িত হচ্ছেন পারলৌকিক চীর নিদ্রায়। আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনা ব্যয় বেড়েছে, কিন্তু সেই কাঙ্ক্ষিত নাগরিক সুবিধা বাড়েনি। আমরা দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জাতি হয়েছি। একজন সচেতন তরুণ প্রজন্মের রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে এমন রাষ্ট্র কখনো আমাদের প্রত্যাশা ও কামনা করতে পারি না। যে দেশে রাষ্ট্রযন্ত্রের অপব্যবহার ক্ষমতার লালসায় গণতন্ত্রের নামে রাতের অন্ধকারে ভোট হয়ে যায়,কোন রাজনৈতিক ব্যক্তি থেকে দল অবৈধ সংসদ ঘোষণা করে সেই সংসদে আবার শপথ নেয়,যে রাষ্ট্রে মত প্রকাশ করার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা পর্যন্ত নেই, সরকারের ও সেই দলের পক্ষে তৈলবাজী ও তোষামোদী ও প্রশংসায় ভাসুন কিম্বা ভাসান তাতে সমস্যা নেই।
কিছুক্ষেত্রে মত প্রকাশ করলেও দেশদ্রোহী কিংবা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলায় জেল খাটতে হয়। যে রাষ্ট্রে শতশত জলজ্যান্ত মানুষ গুম,খুন হয়ে যায়। যে রাষ্ট্রের সকল রাষ্ট্রযন্ত্র বিশেষ ব্যক্তি ও বিশেষ দলীয় তোষামোদে অকার্যকর প্রায়, যে রাষ্ট্রে নারী পুরুষ আবাল বৃদ্ধ-বনীতা থেকে শুরু করে শিশু পর্যন্ত কুৎসিত বিভৎস লোমহর্ষক নির্যাতনের শিকার হয়,যে রাষ্ট্রে সাধারণ মানুষের পুঁজি লুণ্ঠিত হয় তথাকথিত পুঁজিবাজারের দরবেশদের হাতে। যে রাষ্ট্রে বাবা তার সন্তানের চাকুরির জন্য ভিটে মাটি বিক্রি করে জনপ্রতিনিধি নামক কতিপয় ব্যক্তির হাতে তুলে দিয়ে নিঃশ্ব হয়।যে রাষ্ট্রের নাগরিক সে ও তার পরিবার একটু ভালো থাকার আশায় বিদেশ যাওয়ার আশায় মানব প্রচারের আশায় নিজে মহামূল্যবান জীবন দিতে হয়।
যে রাষ্ট্রের রাজধানীরসহ সকল শহর অপরিকল্পিত নগরায়নে রূপান্তরিত হয়ে জনদুর্ভোগে পরিণত হয় , যে রাষ্ট্রে পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনে মৃত্যু হয়, যে রাষ্ট্রে বিচার বর্হিভূত হত্যাকাণ্ডে রঞ্জিত হয় সাদা মাটি, যে রাষ্ট্রের লক্ষ তরুণ-তরুণী শিক্ষিত হয়। অথচ বেকারত্বের কারনে আত্নগ্লানীতে অপমানিত হয়ে কেউ কেউ আত্মহত্যা করে, যে রাষ্ট্রের ঔষধ ভেজালসহ শিশুখাদ্য থেকে শুরু করে সকল প্রকার খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিনের আতঙ্ক, যে রাষ্ট্রে নারী,শিশু ধর্ষণসহ নির্যাতন চলছেতো চলছেই। যে রাষ্ট্রে ভূমি, নদী দখল, অবৈধ্য বালু উত্তোলনের মহোউৎসবে মতে উঠে। যে রাষ্ট্রে পরিবেশ বায়ুদূষণে পৃথিবীর সর্বোচ্চ মাত্রায় স্পর্শ করেছে, যে রাষ্ট্রে বন খেকোরা গাছ কেটে বন উজাড় করে, যে রাষ্ট্রে পর্দা বালিশ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত, যে রাষ্ট্রে দু’মুঠো খাবারেরজজন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়,যে রাষ্ট্রে এনজিও’র অতি সামান্য ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে সে নাগরিক আত্মহত্যা করে, যে রাষ্ট্রে দরিদ্র জনসাধারণের চাল চুরির উৎসবে মেতে উঠে, যে রাষ্ট্রে স্বাস্থ্যখাতের বেহাল দশায় লক্ষ প্রাণ বিনা চিকিৎসায় মানুষের মৃত্যু হয়। যে রাষ্ট্রে যুব সমাজ ক্যাসিনো , মদ, মাদক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত পরে রাজনৈতিক পৃষ্ঠ-পোষকতায়। স্বাধীনতার অর্ধশত বছরে আজকের যুব সমাজ,সচেতন মহল, ছাত্র,কামার,তাতী,জেলে কৃষক, দিনমজুর,পেশাজীবী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব গোষ্ঠী দলগত নির্বিশেষে সকলের কাছে বিনয়ের সাথে প্রশ্ন আজকের বাংলাদেশ কোন ধরনের রাষ্ট্র ব্যবস্থায় পরিচিত হচ্ছে?যে রাষ্ট্রে ধনীরা হচ্ছে আরও ধনী, গরীবের হচ্ছে আরও নিঃস্ব। যে রাষ্ট্র থেকে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়। যে রাষ্ট্রে চলে পরিবহণ খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা চাঁদাবাজি। উন্নয়নের নামে চলে কতিপয় ঠিকাদারের দুর্নীতিতে ধনী হওয়ার উৎসব। স্বাস্থ্য ও শিক্ষার নামে চলে যেখানে মহাবাণিজ্য।যে রাষ্ট্রে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হন কেনা কাটায় হাটে বাজারে সাধারণ জনগণ। যে রাষ্ট্রে বাড়ছে জীবন ধারণের জন্য প্রতিনিয়ত নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্যের মূল্য। বঞ্চিত হচ্ছে কৃষক।মহান স্বাধীনতার যুদ্ধে আমাদের কৃতিসন্তান বীরমুক্তযোদ্ধারা বুকের তাজা রক্ত বিলিয়ে দিয়েছিলেন কী এমন একটি রাষ্ট্রের জন্য? মহান স্বাধীনতার চার যুগ পেরিয়ে অর্ধশত বছর বয়সে আমরা কেমন রাষ্ট্র গড়তে পেরেছি? আজকের রাষ্ট্রব্যবস্থা, রাষ্ট্রযন্ত্র,সরকার,পরিবার,গোত্র, দল,সমাজ,দেশের সকল শ্রেণি পেশায় সবকিছুতেই মরিচা পড়ে ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। প্রতিটা ক্ষেত্রেই ঘষে ঘষে মরিচা দূর করে গ্যালভানাইজিং করতে হবে। আর ভঙ্গুর যন্ত্রটি ফেলে নতুন যন্ত্র প্রতিস্থাপন করতে হবে। এই রাষ্ট্রযন্ত্র অতি দ্রুত মেরামতের অতীব প্রয়োজন।
অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা, শিক্ষা, বাসস্থান রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকদের জন্য সমান অধিকার রাষ্ট্রকেই সুনিশ্চিত করতে হবে।
তাই হাত গুটিয়ে বসে না থেকে রাষ্ট্রকে পূর্ণাঙ্গ মেরামতের দায়িত্ব নিতে হবে এই প্রজন্মের সৎ ও সুযোগ্য নাগরিকদেকেই। তবেই আঁধার কাটবে, আলো ফুটবে, আসবে নতুন ভোর, নতুন সকালে সকলের স্বপ্নের স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ আলোকিত হোক। ভালো থাকুক এই দেশ ও তার সন্তান। জয় হোক সকল মানুষ ও মানবতার।
আবু সায়েম মোহাম্মদ সা’-আদাত উল করীম
সাংবাদিক, কবি, লেখক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব
পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক,বাংলাদেশ কংগ্রেস কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি