বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:বিজেপিতেই আছেন। এ কথা পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন কলকাতার প্রাক্তন মহানাগরিক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়। আর এ কথার মাধ্যমেই তৃণমূলে তাঁর ফেরা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে যে জল্পনা শুরু হয়েছিল, তাতে জল ঢেলে দিলেন। একটি সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, তিনি এখনও বিজেপিতেই রয়েছেন। তবে গেরুয়া পতাকা হাতে রাজনীতির মাঠে কবে নামবেন, সে কথা এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি।
২০১৯ সালের অগস্টে তিনি বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। তার পর এক বছর পেরিয়ে গিয়েছে। এই ২০২১–এর অগস্টে পৌঁছে ফের তিনি তৃণমূলে ফিরতে পারেন কিনা, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে পশ্চিমবাংলার রাজনৈতিক মহলে। ইতিমধ্যে তাঁরই স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়কে ১৪১ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে শোভনবাবু তৃণমূলে ফেরার ব্যাপারে নমনীয় হওয়ার বার্তা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা নিয়ে জল্পনা বাড়লেও শোভনবাবু কিন্তু তৃণমূলে ফেরার ব্যাপারে কোনও রকম বার্তা দেননি। সূত্রের খবর, এই প্রসঙ্গে দলনেত্রী নাকি ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছিলেন, যেহেতু তিনি বিজেপির পতাকা ধরে তৃণমূল ছেড়েছিলেন, তাই তাঁকে ফিরতে হলে তৃণমূলের পতাকা হাতে নিয়েই ফিরতে হবে। বিষয়টি নাকি শোভনবাবুর স্বাভিমানে আঘাত করে। সেই কারণে তৃণমূলে ফেরার ব্যাপারে আর কোনও সক্রিয়তা দেখাননি। তাই রত্নাদেবীকে আর তাঁর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার নির্দেশ সম্বলিত কোনও চিঠি দেওয়া হয়নি। তাই রত্না দেবীও থেকে গিয়েছেন আগের দায়িত্বেই।
এদিকে, শোভন চট্টোপাধ্যায় তৃণমূলে ফিরতে পারেন, এমন জল্পনা শুরু হওয়ায় নড়েচড়ে বসেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারাও। কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয় এবং রাজনৈতিক পরামর্শদাতা অরবিন্দ মেনন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। শেষে অরবিন্দ মেনন তাঁর সঙ্গে বৈঠকও করেন। পুরো বিষয়টি শোভনবাবুকে অনেকটাই প্রীত করেছে বলে খবর। অন্যদিকে, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে নাকি এ বিষয়ে দিল্লির স্পষ্ট বার্তা জানিয়ে দেওয়া হয়। এর পরই স্বয়ং দিলীপ ঘোষ সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়ে দেন, শোভন চট্টোপাধ্যায় বিজেপিতেই রয়েছেন। কিছুদিনের মধ্যেই তাঁকে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা যাবে। তবু, তাঁর কথায় বিজেপি কর্মী–সমর্থকরা যে খুব বেশি আশাবাদী হতে পারেননি, তা তাঁদের আচরণেই প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। তাই শোভনবাবুকে নিয়ে জল্পনা কিন্তু কমেনি। তার মাঝে বিজেপিতেই থাকার কথা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়ে শোভনবাবু সেই জল্পনাকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে চেয়েছেন বলে ধারণা তথ্যাভিজ্ঞ মহলের।
ওই সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শোভনবাবু জানিয়েছেন, ‘আমি রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিই ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে। তার পর থেকে আজ পর্যন্ত তৃণমূল নেতাদের রাজনীতি নিয়ে কোনও রকম আলাপ–আলোচনা করার সুযোগ দিইনি। তবে এ কথা ঠিক, কেউ কেউ সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আমি আমার সিদ্ধান্তে অনড় ছিলাম। এখনও আছি। তাই তাঁরা উদ্দেশ্যসিদ্ধ করতে পারেননি।’ কিন্তু তিনি কবে বিজেপির কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছেন? রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানিয়েছিলেন, বিজেপির পতাকা হাতে নিয়েই তিনি কর্মসূচিতে যোগ দেবেন। এই বিষয়টির স্পষ্ট জবাব কিন্তু শোভন চট্টোপাধ্যায় দেননি। তাঁর নীরবতা দেখে ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, দিলীপ ঘোষের ওপর তিনি যে খুব একটা প্রীত নন, তা চুপ থেকেই বুঝিয়ে দিয়েছেন। তাই তৃণমূলে ফেরার জল্পনায় জল ঢেলে দিলেও তিনি বিজেপির কর্মসূচিতে অংশ নেবেনই, এমন নিশ্চয়তা কিন্তু তাঁর কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
তবে এতদিন রাজ্য রাজনীতিতে বিজেপির হয়ে কেন তিনি সে ভাবে সক্রিয় হননি, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বলেছেন, ‘দিল্লিতে গিয়ে বিজেপিতে যোগ দিলেও কলকাতায় ফেরার পর কিছু অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটে গিয়েছে। তাতে একটা বিড়ম্বনা তৈরি হয়েছিল। সেই কারণে বিজেপির কোনও কর্মসূচিতে আমি যোগ দিতে পারিনি।’ সেই সঙ্গে এ কথাও জানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে যে সব অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছিল, সে সব কথা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছেন। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা তাঁর সঙ্গে সহমত এবং তাঁর পাশেই রয়েছেন বলেও শোভনবাবুর বক্তব্যে ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে।
রাজ্য রাজনীতির বিতর্কে এ ভাবে এই প্রথম মুখ খুললেন শোভনবাবু। ফলে বিষয়টি নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে ফের যে আলাপ–আলোচনা শুরু হবে, তা সহজেই অনুমেয়। তবে তাঁর এদিনের বক্তব্য নিয়ে বিজেপি বা তৃণমূল, কোনও দলের তরফেই কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি।