বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে পশ্চিমবাংলার ওপর কি চাপ বাড়াচ্ছে কেন্দ্র? রাজ্যে আসা কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল ফের মুখ্যসচিবকে জোড়া চিঠি দিয়ে করোনা–সংক্রান্ত এমন সব প্রশ্ন করেছে, তাতে রাজনৈতিক মহলে সেই জল্পনাই প্রবল হয়ে উঠেছে।
কয়েকদিন আগে রাজ্যের মুখ্যসচিব দাবি করেছিলেন, পরিকাঠামোয় রাজ্য সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রেখেছে। মুখ্যমন্ত্রীও দাবি করেছিলেন, বাংলায় সেরা চিকিৎসা হচ্ছে। চিঠিতে প্রতিনিধি দলটি যে সব প্রশ্ন করেছে, তা মূলত মুখ্যমন্ত্রীর দাবিকেই চ্যালেঞ্জ করছে বলে বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা। একটি চিঠিতে দলটি পরিষ্কার জানিয়েছে, করোনায় মৃত্যু কিনা, বিচার করতে যে বিশেষ অডিট কমিটি তৈরি করেছে রাজ্য, সেই কমিটির সঙ্গে কথা বলতে চায় তারা। কীসের ওপর নির্ভর করে করোনা আক্রান্তের মৃত্যুর পরও তা অন্য কারণে মৃত্যু কিনা নির্ধারণ করছে এই কমিটি, তা নিয়েও জানতে চেয়েছে দলটি।
এদিন দলের প্রধান তথা প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব অপূর্ব চন্দ্র চিঠি দুটি মুখ্যসচিব রাজীব সিনহাকে পাঠান। একটিতে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন করোনা পরীক্ষার সংখ্যা নিয়েও। জানতে চেয়েছেন, দিনে আড়াই থেকে পাঁচ হাজার পরীক্ষা করাতে হলে যে পরিকাঠামো দরকার, সেই পরিকাঠামো তৈরির জন্য রাজ্য সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে? বৃহস্পতিবার কলকাতায় দলটি রাজারহাটের চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট এবং এম আর বাঙুর হাসপাতাল পরিদর্শন করে সেখানকার পরিকাঠামোর খামতি তুলে ধরে চিঠিতে বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছে মুখ্যসচিবের কাছে।
চিঠিতে জানতে চাওয়া হয়েছে, রাজারহাটের চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট এবং এম আর বাঙুর হাসপাতালে বহু রোগীর করোনা পরীক্ষার ফল আসতে অনেক সময় লাগছে। শুধু তাই নয়, রীতিমতো উদাহরণ দিয়ে চিঠিতে লেখা হয়েছে, ১৬, ১৭ এবং ১৮ এপ্রিল রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সেই রিপোর্ট ২৩ তারিখ পর্যন্ত আসেনি। কেন রিপোর্ট আসতে এত দেরি হচ্ছে, সেই কারণও নবান্নের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। দলটির বক্তব্য, এ ভাবে চলতে থাকলে হাসপাতালে যিনি করোনা আক্রান্ত নন, তিনিও আক্রান্ত হয়ে পড়তে পারেন।
এমনকী, তারা হাসপাতালে ভর্তির প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। কেন্দ্রীয় দলটি দু’জন রোগীর কথা উল্লেখ করে লিখেছে, রোগী দু’জন খুব খারাপ অবস্থায় থাকলেও তাঁদের কোনও মেডিক্যাল সাপোর্ট দেওয়া হয়নি। হাসপাতালের ভেতরে সামাজিক দূরত্বও মানা হচ্ছে না বলেও তারা অভিযোগ করেছে। কেন্দ্রীয় দলটি প্রশ্ন তুলেছে, সন্দেহভাজন রোগীদের অন্য হাসপাতালগুলি থেকে বাঙুরে রেফার করা হচ্ছে। কিন্তু সেখানে গিয়ে রোগীদের নিজেদেরই রিপোর্ট করতে হচ্ছে। তা ছাড়া সেখানে পৌঁছতে অনেকের দেরি হচ্ছে, অথবা অনেকে হয়তো যাচ্ছেনই না।
বাঙুরে এখন রোগীর সংখ্যা ৩৫৪ জন। অথচ ভেন্টিলেটর বেড মাত্র ১২। হাসপাতাল জানিয়েছে, কারও ভেন্টিলেশন সাপোর্ট প্রয়োজন হলে অন্যত্র পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু তার কোনও রেকর্ড হাসপাতাল দেখাতে পারেনি। বাঙুর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডের একটি ভিডিও কয়েকদিন আগে ভাইরাল হয়। সেখানে মৃত কয়েকজনকে দীর্ঘ সময় বেডে পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। অন্য বেডগুলিতে তখনও অন্যান্য রোগী ছিলেন। যিনি ভিডিওটি রেকর্ড করেছিলেন, মৃতদেহগুলি ঘণ্টাখানেক ধরে বেডে পড়ে রয়েছে বলে ভাষ্যে জানিয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় দলটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রশ্ন করলে তাঁরা জানান, ডেথ সার্টিফিকেট দিতে ৪ ঘণ্টা সময় লাগে, তাই মৃতদেহ পড়েছিল। প্রতিনিধি দলটি তখন প্রশ্ন তোলে, তা হলে মৃতদেহ মর্গে রাখা হয়নি কেন? এ ছাড়াও আরও অনেক প্রশ্ন তুলেছে কেন্দ্রীয় দলটি। কিন্তু কয়েকদিন আগেই মুখ্যসচিব জানিয়েছিলেন, সব তথ্যই তাঁরা দিয়ে দিয়েছিলেন। আর তথ্য দেওয়া সম্ভব নয়। তাই এখন দেখার কেন্দ্রীয় দলের চিঠির উত্তর রাজ্য সরকার দেয় কিনা!