প্রত্যয় ডেস্ক, পশ্চিমবঙ্গ, বিশেষ সংবাদদাতাঃ শুক্রবারই রামপুরহাটের আয়াসে তৃণমূলের কর্মিসভায় বীরভূমের দোর্দন্ডপ্রতাপ নেতা অনুব্রত মণ্ডল রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘অপদার্থ’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। ঘটনায় যথেষ্ট ক্ষুব্ধ হন মন্ত্রী। যদিও বিতর্ক এড়াতে তিনি বলেছিলেন, অনুব্রত নাকি তাঁকে স্নেহ করেন। তাই ওই কথা বলেছেন! কিন্তু সূত্রের খবর, ঘনিষ্ঠ মহলে নিজের ক্ষোভ গোপন রাখেননি তিনি। এমনকী, তৃণমূলের অনেক মন্ত্রী ও নেতাও বিষয়টি নিয়ে নিজেদের বিরক্তির কথা দলের শীর্ষনেতৃত্বকে জানাতে দ্বিধা করেননি। বিষয়টি কানে গিয়েছে সেই প্রতাপশালী নেতা অনুব্রতরও। বুঝতে পারেন বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা হলে তাঁরই বিপদ বাড়তে পারে। তাই ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই পুরোপুরি ভোল বদলে ফেলেন তিনি। আর তাই আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বীরভূমের রামপুরহাট থেকে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম ঘোষণা করে দেন শনিবার।
কিন্তু, কথা হল, যে কোনও নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা ঠিক করার পাশাপাশি ঘোষণাও করেন স্বয়ং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে রামপুরহাট কেন, কোত্থেকে কাকে তিনি প্রার্থী করতে চান, তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও নেননি বলে খবর। কারণ, সিদ্ধান্ত তিনি নিলেও দলের পরামর্শদাতা হিসেবে এবার পিকে (প্রশান্ত ভূষণ) রয়েছেন। তাঁর সঙ্গে কথা না বলে দলনেত্রী নিশ্চয়ই কারও নাম দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করবেন না। তাই তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা এবার তৈরি হবে অনেক ভাবনাচিন্তা করেই। এমতাবস্থায় অনুব্রত মণ্ডল আগামী নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দিতে পারেন কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে দলের অভ্যন্তরেই। অনুব্রতর এই ঘোষণা দলনেত্রীর কাছে কী ভাষ্য পৌঁছে দেবে, তা নিয়ে বীরভূমের অনেক তৃণমূল নেতাই আশঙ্কায় রয়েছেন। স্বয়ং কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই ঘটনা নিয়ে যথেষ্ট অস্বস্তিতে রয়েছেন।
তবে, এ নিয়ে শনিবার অবশ্য কোনও বিতর্ককেই পাত্তা দিতে চাননি অনুব্রত। এদিন তিনি সাফ বলে দেন, ‘আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় রামপুরহাট থেকে দীর্ঘদিন ধরে বিধায়ক নির্বাচিত হয়ে আসছেন। তাই আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর নাম ঘোষণা করব না তো আর কার নাম ঘোষণা করব? তিনি যেমন বর্তমান বিধায়ক, তেমনই রাজ্যের একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীও। সুতরাং তিনি তো প্রার্থী হবেনই। তাই তাঁর নাম ঘোষণা করার মধ্যে অন্যায় কিছু নেই। আমি ঠিকই করেছি। প্রয়োজনে একশোবার তাঁর নাম ঘোষণা করব।’ বিতর্ক এড়াতে অবশ্য স্বয়ং কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি নিয়ে এদিন কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। তবে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, তা হলে কি বর্তমান বিধায়কদের সকলেই সামনের নির্বাচনে প্রার্থী হবেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে অবশ্য অনুব্রত ছিলেন যথেষ্ট সংযত। তিনি বলেন, ‘সে সব ঘোষণা করবেন আমাদের নেত্রী। আমি শুধু আশিসদার নাম ঘোষণা করেছি।’
কিন্তু, কথা হল, বীরভূমের ব্যাপারে কি দলনেত্রী সিদ্ধান্ত নেন না? এই জেলায় প্রার্থী মনোনয়নে অনুব্রতই কি একমাত্র সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী? যদিও বাংলার রাজনৈতিক মহলের সকলেই জানেন, অনুব্রত মণ্ডলের প্রতি বরাবরই দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা স্নেহ রয়েছে। তাঁকে নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে বলার সময় একবার তিনি বলেছিলেন, ‘ওঁর মাথায় অক্সিজেন কম যায়।’ তখন দলনেত্রীর এ কথা নিয়ে বাংলার রাজনীতিতে বেশ চর্চা হয়েছে। এখনও অনেক আলোচনায় দলনেত্রীর সেই কথা বারবার উঠে আসে। কিন্তু অনুব্রতর বর্তমান আচরণকে মমতা কী দৃষ্টিতে দেখেন, তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে তৃণমূলের অন্য নেতা এবং নেত্রীদেরও। তবে, আরও একটি চমকপ্রদ ঘটনা হল, কৃষিমন্ত্রী ‘অপদার্থ’ বলার কথা এদিন পুরোপুরি অস্বীকার করে গিয়েছেন অনুব্রত।
সাংবাদিকদের কাছে এদিন তিনি বলেন, ‘আপনারা সবাই বুঝতে ভুল করেছেন। আমি যা বলেছি, ব্লক সভাপতি আনারুলকে বলেছি। আর আশিসদাকে বলেছিলাম, তুমি তো মন্ত্রী, তুমিই ব্যাপারটা দেখো।’ তার কাছে এর প্রমাণ রয়েছে বলেও এদিন তিনি দাবি করেন। তাঁর দলের তরফে শুক্রবারের বৈঠকের তিনটি ক্যামেরায় ছবি তোলা হয়েছে। তার ফুটেজেই নাকি স্পষ্ট, তিনি কৃষিমন্ত্রীকে ‘অপদার্থ’ বলেননি! অনুব্রতর দাবি এবং সাফাই প্রসঙ্গে রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, তাঁর কথাতেই পরিষ্কার দলের অভ্যন্তরেই অনুব্রতর কথা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। আর সেই জন্যই এদিন তাঁর ভোলবদল!