বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:আচমকাই শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের। শারদোৎসবের একদিন আগেই বেলভিউ ক্লিনিক সূত্রে তাঁর স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা প্রকট হয়ে ওঠার খবর পাওয়া গিয়েছে। ফলে চিন্তায় চিকিৎসকরা। উদ্বেগে তাঁর পরিবার ও গুণগ্রাহীরা।
বেশ কিছুদিন ধরে চিকিৎসায় তাঁর অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল। ক্রমশ স্বাভাবিক অবস্থার দিকেই যাচ্ছিলেন তিনি। তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলে শোনা যাচ্ছিল। হাসপাতালের তরফে বলে হয়েছে, তাঁর শারীরিক অবস্থা যখন খুব খারাপ হয়ে পড়ে, তখন তাঁকে দিনে ১০ লিটার করে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু, তাঁর অবস্থা স্বাভাবিক হতে শুরু করলে তা নেমে আসে ৪ লিটারে। অনেক সময় অক্সিজেন না নিয়েই তিনি স্বাভাবিক আচরণ করতে পারছিলেন।
কিন্তু মঙ্গলবার রাতে শোনা গেল ঠিক বিপরীত খবর। এদিন সন্ধেয় তাঁর গ্লাসগো কোমা স্কেল অনেকটাই নেমে গিয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। স্কেলে এই সূচক দেখেই রোগী চিকিৎসায় কতটা সাড়া দিচ্ছেন, তা বোঝা যায়। জানা গিয়েছে, গত কয়েকদিন ধরে তাঁকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন এবং উচ্চমাত্রার স্টেরয়েড দেওয়া হয়েছে। ফলে তাঁর মস্তিষ্ক স্বাভাবিক কাজই করেছে। এদিন স্টেরয়েড ছাড়া তাঁর মস্তিষ্ক কেমন কাজ করে, তা বোঝার জন্য স্টেরয়েড দেওয়া বন্ধ করা হয়। আর সেখানেই দেখা গিয়েছে সমস্যা।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এদিন তাঁর গ্লাসগো কোমা স্কেলের মান নেমে গিয়েছে ৯–এ। একজন সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষের এই সূচকের মান থাকে ১৫। আর, সবচেয়ে আশঙ্কার কথা হল, এই স্কেলের মান কারও যদি ৩–এ নেমে যায়, তা হলে সেই রোগীর ব্রেন ডেথ হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। অভিনেতার গ্লাসগো কোমা স্কেলের মান দেখার পর বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে তাঁর চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা ১৬ সদস্যের মেডিক্যাল টিম বৈঠকে পড়ে পড়ে। এই টিমের সদস্য ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট বিশেষজ্ঞ ডা. অরিন্দম কর জানিয়েছেন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের স্নায়ুর কার্যকলাপ স্বাভাবিক করতে ফের তাঁকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন এবং স্টেরয়েড দেওয়া হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, এর ফলে তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হবে। কিন্তু তাতে যদি কাজ না হয়, তা হলে তাঁর চিকিৎসার পদ্ধতি নিয়ে ভিন্ন কোনও উপায় ভাবতে হবে।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের চিকিৎসা নিয়ে এদিন দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকরা নিজেদের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কের আচ্ছন্ন ভাব কেটে গিয়েছে। কিন্তু আমাদের এই ধারণা ঠিক ছিল না।’ অসুস্থ অভিনেতার শারীরিক অবস্থা কবে স্বাভাবিক হবে, তা নিয়ে এখন নিজেরাই সংশয়ে পড়ে গিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবে, এখনও পর্যন্ত আশার খবর, অশীতিপর অভিনেতার কিডনি, যকৃৎ, হার্ট–সহ সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ঠিক কাজ করছে।