বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা : সামান্য অস্পষ্ট উচ্চারণ হলেও বাংলায় বাঙালিকে শারদ শুভেচ্ছা জানালেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বৃহস্পতিবার মহাষষ্ঠীতে সল্টলেকের ইজেডসিসিতে দুর্গাপুজোর ভারচুয়াল উদ্বোধন করেন তিনি। এই ভারচুয়াল অনুষ্ঠানের শুরুতে রবীন্দ্র সঙ্গীত গেয়ে শারদ আবহ তৈরি করে দেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি সাংসদ তথা গায়ক বাবুল সুপ্রিয়। বেশ কয়েকটি গান তিনি গেয়ে শোনান। তাঁর গানের সঙ্গে তাল মেলান প্রধানমন্ত্রীও। সেই গানের পরই নাচ পরিবেশন করেন ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়। সৌরভ–জায়ার অসামান্য দক্ষতায় মুগ্ধ হয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী থেকে বহু সাধারণ মানুষও।
এর পরই বলতে শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী। কথায় কথায় বাংলা ভাষার ব্যবহার তাঁকে যেন অনেকটাই কাছাকাছি নিয়ে আসে বাঙালি মননের। কখনও রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বাংলার বন্দনা করেছেন, আবার কখনও উদাত্ত কণ্ঠে দুর্গাস্তব পাঠ করেছেন। দুর্গাপুজো উদ্বোধন করে বাঙালির শারদোৎসবের সঙ্গী হতে পেরে যে তিনি খুশি হয়েছেন, সে কথা তিনি গোপন রাখেননি। শুধু তাই নয়, কেন বারবার বাংলাভাষায় কথা বলেছেন, তার কারণও জানিয়েছেন নিজেই। বলেছেন, ‘বাংলাভাষা এত মিষ্টি যে বলার লোভ সংবরণ করতে পারছি না। একটা অদ্ভুত সুরের ধ্বনি রয়েছে এই ভাষায়। কথা বললে মন দিয়ে শুনতে ইচ্ছে করে।’ পরিষ্কার বলেছেন, ‘বাংলার মানুষ চিরদিনই দেশকে উন্নতির পথ দেখিয়েছে। উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, আগামিদিনেও বাঙালি একই ভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। বাংলা চিরকালই এগিয়ে যাওয়ার কথা বলে। আধুনিকতার কথা বলে। তাই বাংলার ভাবনায় সমৃদ্ধ এই দেশ। শুধু বাংলা নয়, মনে রাখবেন, মা দুর্গার আশীর্বাদে আজ গোটা ভারতই তাই বাংলাময়।’
এ কথা বলেই তিনি থেমে যাননি। তাঁর কথায় বারবার উঠে এসেছে স্বামী বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় থেকে শুরু করে স্বাধীনোত্তর সময়ের সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেন, মহানায়ক উত্তমকুমারও। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনকে ঘিরে এদিন জমজমাট ছিল ইজেডসিসি চত্বর। বিজেপির বহু নেতা ও নেত্রীই স্বাস্থ্যবিধি মেনে উপস্থিত ছিলেন ওই মণ্ডপে। প্রত্যেক পুরুষের পরনে ছিল ধুতি–পাঞ্জাবি। প্রতিটি মেয়ে পরেছিলেন লাল পাড়ের সাদা শাড়ি। প্রসঙ্গত, গত কয়েকদিন ধরে ইজেডসিসি–র পুজোর উদ্বোধন নিয়ে সরগরম ছিল পশ্চিমবাংলা। তা আরও বেড়ে যায় বুধবার পঞ্চমীতেই। সেদিন ইজেডসিসি–তে ঢাক বাজিয়ে সকলের নজর কেড়ে নিয়েছিলেন বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়।
তবে রহস্যময় ঘটনা হল, এদিনের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন না শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে বিষয়টি নিয়ে ফের গুঞ্জন তৈরি হয়েছে বিজেপির অন্দর মহলে। এদিন শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে পুজোর উপহার পাঠান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈশাখীও মুখ্যমন্ত্রীকে শাড়ি পাঠান। ফলে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, তিনি কি তবে তৃণমূলের দিকে গুটিগুটি পায়ে এগোনোর চেষ্টা করছেন? তবে রাজনৈতিক মহলের মতে, শোভন এবং বৈশাখীর এত ঘনঘন আচরণ পরিবর্তনে সাধারণ মানুষও তাঁদের নিয়ে আগ্রহ হারাচ্ছেন। রাজনীতিতেও তাঁদের গুরুত্ব কমছে বলে অনেকের ধারণা। তবে এদিন মোদির ভাষণ নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বাম, কংগ্রেস এবং তৃণমূল।
তিনটি দলেরই বক্তব্য ছিল, যেহেতু ২০২১ সালে পশ্চিমবাংলায় বিধানসভা নির্বাচন। তাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলায় ভাষণ দিয়ে, বাঙালি মনীষীদের কথা বলে বাঙালির মন ছুঁতে চেষ্টা করেছেন। এই প্রচেষ্টার মধ্যে আন্তরিকতা নেই বলে দাবি তিনটি দলেরই। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী, কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরি এবং তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায় এদিন প্রায় একই সুরে প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করেন। অন্যদিকে, এদিনের অনুষ্ঠানে ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়ের নাচের কারণে ফের সৌরভের রাজনীতি–যোগ নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে বাংলায়। যদিও বিষয়টি নিয়ে উচ্চবাচ্য করেননি ভারতের ক্রিকেট দলের সর্বকালের অন্যতম সেরা অধিনায়ক।
তবে এই ঘটনার ঠিক আগের দিন শিলিগুড়িতে সিপিএম বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্যের বই উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন সৌরভ। ফলে রাজনৈতিক মহল বিষয়টি নিয়ে দ্বিধা–বিভক্ত। সত্যিই যদি রাজনীতিতে আসেন, তা হলে সৌরভ বাম না বিজেপি, কোন দিকে পা বাড়াবেন, তা নিয়ে চর্চাই হয়েছে শুধু, পরিষ্কার উত্তর কোথাও কেউ দিতে পারেননি।