1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : রাকিবুল হাসান শান্ত : রাকিবুল হাসান শান্ত
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

অষ্টমীতে কলকাতার রাস্তায় মানুষ আছে, আলো আছে, গাড়িও চলছে, নেই উন্মাদনা

  • Update Time : রবিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২০
  • ২৭৫ Time View

বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা: করোনা পরিস্থিতিতে নিউ নর্মাল সময় এখন গোটা ভারতেই। তাই এবারের শারদোৎসবও নিউ নর্মাল। ষষ্ঠী ও সপ্তমীতে বৃষ্টির শঙ্কা, কখনও কখনও দু–এক পশনা বৃষ্টি, এ ছাড়া সারাদিনই ছিল মেঘে ঢাকা আকাশ। তবে ঝকঝকে দিন ছিল অষ্টমীর। তাই রাস্তায় লোকজন ভালোই দেখা গিয়েছে। তবে অন্য বারগুলির মতো কোনও মতেই একে ঠাকুর দেখার ভিড় বলা যায় না। রাতেও বহু মানুষকে রাস্তায় চলাফেরা করতে দেখা গিয়েছে। সংখ্যাটা অবশ্যই আগের দু’দিনের চেয়ে একটু বেশিই ছিল।

বালিগঞ্জ কালচারালের পুজোয় অষ্টমীর সকালে দেখা গিয়েছে গায়ক সস্ত্রীক অনুপম রায়কে। বললেন, ‘অন্যান্য বার পুজোর সময় রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় অনেক অনুষ্ঠান থাকে। তাই কলকাতার পুজো দেখা হয়ে ওঠে না। এবার করোনা পরিস্থিতির জেরে কলকাতাতেই রয়েছি। তাই পুজো দেখতে একটু বের হয়েছি। তবে এমন পুজো দেখতে ভালো লাগে না। আমি চাই না, এমন পুজো আর হোক। আগামী বছর যেন স্বাভাবিক পুজো ফিরে আসে।’ দক্ষিণ কলকাতার বিখ্যাত সুরুচির পুজোয় অষ্টমীর সকালে দেখা গেল পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রী বাংলাদেশের অভিনেত্রী মিথিলা (‌রাফিয়াত রশিদ মিথিলা)‌ এবং অভিনেত্রী তথা তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহান ও তাঁর বর নিখিল জৈনকে। এই পুজোর অন্যতম আয়োজক রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের পাশে দাঁড়িয়ে একসঙ্গে তাঁরা অষ্টমীর অঞ্জলিও দেন। শুধু তাই নয়, প্রতিমার সামনে নুসরত আরতিও করেন।

সুরুচির মণ্ডপে উপস্থিত হয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রও। তিনিও অঞ্জলি দিয়েছেন। তবে এই ঘটনা নিয়ে একটি বিতর্কও তৈরি হয়েছে। মণ্ডপে ঢুকে আদালতের নির্দেশ অবমাননা করেছেন মহুয়া, সৃজিত, মিথিলা, নুসরত এবং নিখিল। তাই আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় তাঁদের আইনি নোটিশ পাঠাতে চলেছেন। তিনি আদালত অবমাননার অভিযোগ আনবেন তাঁদের বিরুদ্ধে। সব্যসাচীবাবু জানিয়েছেন, পুজো কমিটির সদস্য ছাড়া কেউই মণ্ডপে ঢুকতে পারেন না। তা হলে তাঁরা মণ্ডপে ঢুকলেন কী করে? কেউ সেলিব্রিটি হলে আইনের বাইরে চলে যান না। যদিও নুসরত, সৃজিত সুরুচির পুজোর সদস্য বলে দাবি করা হয়েছে পুজো ও নুসরত এবং সৃজিতের তরফে। এদিকে, অভিনেত্রী তথা তৃণমূল সাংসদ মিমি চক্রবর্তীকে অষ্টমীর সকালে দেখা গেল কসবায় নিজের আবাসনের পুজোয়। শুধু তাই নয়, নিয়ম মেনে তিনি পুষ্পাঞ্জলিও দিলেন। স্বেচ্ছায় নিজের কাঁধে দায়িত্ব তুলে নিয়ে উপস্থিত সকলের হাতে স্যানিটাইজার দিলেন। তার পর দিলেন ফুল, বেল পাতা।

কোভিড পরিস্থিতির জন্য এবার বেলুড় মঠের পুজো মণ্ডপে হচ্ছে না। হচ্ছে মূল মন্দিরেই। মহাষ্টমীতে ষোড়শো উপাচারেই দেবীর পুজো হচ্ছে। চলেছে বিধি মেনে পুষ্পাঞ্জলিও। শনিবার সকালেই হয়েছে সন্ধিপুজো। শাস্ত্রমতে হয়েছে কুমারী পুজোও। তবে বেলুড় মঠে এই প্রথম সন্ন্যাসী মহারাজরা নন, কুমারীকে আসন অবধি নিয়ে আসেন বাবা–মায়েরা। স্বাস্থ্য বিধি মেনে সন্ন্যাসীদের বসার ব্যবস্থা করা হয়। এদিন বিখ্যাত বারোয়ারি পুজোগুলির প্রতিমা দর্শন করা না গেলেও রাস্তায় মানুষ ছিল। তবে জনস্রোত ছিল না। পুলিশকে তেমন ব্যস্ত হতে দেখা যায়নি। ভিড় কমায় বড় মণ্ডপগুলির সামনে আইন–শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা পুলিশের সংখ্যা কমিয়ে অর্ধেক করা হয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশমতো কেউ মণ্ডপে প্রবেশ করতে পারছেন না এবং শারীরিক দূরত্ববিধি মেনে পুজোর সব কাজ করতে হচ্ছে। হাইকোর্টের রায়কে সম্মান জানিয়ে এবার পুজোর উদ্যোক্তারাও সব কিছু করছেন।

এদিনও দূর থেকেই দর্শকরা পুজোমণ্ডপ দেখেছেন। বাইরে থেকেই যে সব মণ্ডপের ভেতরে থাকা প্রতিমা দর্শন করা যাচ্ছে, সেইসব প্রতিমা দেখেছেন দর্শকরা। উত্তর কলকাতার অন্যতম বারোয়ারি পুজো কাশীবোস লেন সর্বজনীন পুজো কমিটি জানিয়েছে, এই বছর তাঁদের থিম দেবীঘট। দর্শনার্থীদের ভার্চুয়ালি দেবীপ্রতিমা দর্শন করতে হচ্ছে। করোনাসুরের দাপটের মধ্যে এবার একরাশ প্রাণ বায়ু পেতে ড্রাইভ ইন পুজো হিন্দুস্তান ক্লাব দেখে নিয়েছেন অনেকেই। মহিলা পরিচালিত এই পুজো এবার সেজেছে শিল্পী অয়ন সাহার ভাবনায়। অতিমারীতে সমাজকে নিজের মুখোমুখি দাঁড় করাবে মধ্য কলকাতার নাগরিক কল্যাণ সমিতির পুজো। শিল্পী দীপাঞ্জন দে–র ভাবনায় এবার এই পুজোর থিম দর্পণে দুর্গা। খিদিরপুরের অন্যতম জনপ্রিয় পুজো ২৫ পল্লী। কোভিডবিধি মেনেই হয়েছে পুজোর আয়োজন। সত্যজিৎ রায়ের জন্ম শতবার্ষিকীতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেছে ৬৬–র পল্লী। অপুর সংসার ফুটে উঠেছে এই মণ্ডপে। একফ্রেমে রয়েছেন সর্বজয়া ও অপু। মা ধরা দিয়েছেন দেবী রূপে।

ব্রিটিশ জমানায় উত্তর কলকাতার পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিট অভিজাত এবং বনেদি পাড়া হিসেবেই পরিচিত ছিল। এখনও এই পাড়াতেই কয়েক শতাব্দী ধরে বেশ কিছু অভিজাত পরিবারের বাস রয়েছে। এখনও তিনটি পারিবারিক পুজো হয়। অন্যতম হরকুটিরের পুজো। ওই বাড়ির সদস্যরা জানালেন, পরিবারের আদি পুরুষ কেশব চক্রবর্তীর উত্তরসূরী আনারপুরের রাধাকান্ত চট্টোপাধ্যায় পাথুরিয়াঘাটায় এসে একটি কুঁড়েঘরে থাকতে শুরু করেন। নুনের ব্যবসায় তিনি বহু অর্থ উপার্জন করেন। তার পর এই বাড়ি তৈরি করেন। নাম হরকুটির। রাধাকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের উদ্যোগেই বাড়িতে পারিবারিক দুর্গাপুজোর শুরু। বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত সিদ্ধেশ্বর মহদেব এবং শ্রীধর নারায়ণ শিলা। প্রতিদিনই অন্নভোগ হয়। রাধাকান্তের ২৫০টি নৌকো ছিল। তাঁর ছেলে ছিল না। মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হয় ঈশানচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের। হরপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতামহ ঈশানচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদিবাড়ি ছিল বর্ধমানের কেশেরা বৈকুণ্ঠপুরে।

ঈশানচন্দ্রেরই ছেলে গঙ্গানারায়ণ। তিনি যেমন ভালো ছিলেন লেখাপড়ায়, তেমনই ছিলেন মৃদঙ্গে পারদর্শী। কদৌসিংহের কাছে মৃদঙ্গের তালিম নেন। হরপ্রসাদ বাংলা, সংস্কৃত, তৈলঙ্গি, উর্দু, ফার্সি, ইংরেজি, ফরাসি, লাতিন ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। তিনি শ্রীরামকৃষ্ণের সংস্পর্শেও আসেন। তিনি ছিলেন সঙ্গীতে পারদর্শী। হরকুটিরের পাঁচ খিলানের ঠাকুরদালানে ইউরোপীয় এবং ইসলামি স্থাপত্যের ছাপ স্পষ্ট। বাড়িতে কাঠামো পুজো হয় জন্মাষ্টমীর পরের দিন। দেবীর বোধন হয় প্রতিপদের দিন। পুজো হয় কালিকাপুরাণ মতে। দেবী দুর্গার সংসারে লক্ষ্মী–সরস্বতীর কোনও বাহন থাকে না। পুজোর ভোগে থাকে খিচুড়ি, সাদাভাত, পাঁচভাজা, বিভিন্ন রকম তরকারি, পায়েস ও চাটনি। রাতে লুচি ও ভাজা দেওয়া দেওয়া হয়। দশমীতে দেওয়া হয় পান্তা ভাত। দশমীতে মাছ–ভাত খেয়ে সধবা মহিলারা দেবীকে বরণ করেন। বরণের পরে গৃহকর্ত্রী আর দেবীর মুখ দেখেন না। তিনি একটি ঘরে দেবীর উল্টোদিকে একটি আসনে বসে একটি পাত্রে দইয়ের মধ্যে হাত ডুবিয়ে বসে থাকেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত বিসর্জন সম্পন্ন হয়।

পরিবারে আজও বজায় আছে কনকাঞ্জলি প্রথা। তাঁদের পুজোয় প্রতিমা শিল্পীরা বংশ পরম্পরায় আসেন শান্তিপুর থেকে। তেমনই ডাকের সাজের শিল্পী ভূতনাথ মালাকার আসেন বর্ধমানের পাটুলি থেকে। ঢাকিরাও বংশপরম্পরায় আসেন জয়রামবাটি থেকে। এই পরিবারের সঙ্গে জড়িয়ে আছে যদুভট্টের স্মৃতি। একদা তিনি এই বাড়িতে ভিয়ানের ব্রাহ্মণ হয়ে এসেছিলেন। পরে সঙ্গীতে তাঁর বিরল প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে তাঁকে উপযুক্ত সম্মান দেয় পরিবার। এখন মহালয়া কিংবা পঞ্চমীতে ঠাকুর দালানে বসে কীর্তনের আসর। এই বাড়িতে এসেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ, পরবর্তী সময়ে মোহনানন্দ ব্রহ্মচারী। করোনা পরিস্থিতিতে এ বার হরকুটিরের পুজোয় বাইরের লোকের আনাগোনা বন্ধ। পরিবারের সদস্য অর্চিষ্মান রায় বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, এ বছর পুজোটি পরিবারের সদস্যদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।

অন্যদিকে, দশমীতে টাকি পুরসভা ইছামতী নদীতে প্রতিমা বিসর্জনের অনুমতি দিলেও মিলল প্রশাসনের অনুমোদন। ফলে ইছামতীর ঐতিহ্যবাহী ভাসান এবার বন্ধ থাকবে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এবার নদীর পাড় থেকেই প্রতিমা বিসর্জন দিতে হবে জলে। নদীর পাড়েও কোনও রকম জমায়েত করা যাবে না। তাই দর্শকদের এবার ইছামতীর বিসর্জন দেখতে যেতে বারণ করা হয়েছে প্রশাসনের তরফে। তবে একমাত্র টাকি জমিদার বাড়ির প্রতিমা নিরঞ্জনের বিষয়ে এখনও প্রশাসন কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। আলোচনা চলছে বলে টাকি প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..