মো. আশিকুর রহমনা টুটুল, নাটোর প্রতিনিধিঃ হেমন্তের শুরুতেই অকস্মাত দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে নাটোরের লালপুরে মাঠ জুড়ে চাষ করা কাঁচা-আধাপাকা সোনালী রোপা ধান মাটিতে পড়ে গেছে, এতে রোপা আমনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ধান চাষীরা।
উপজেলার ধান ক্ষেত জুড়ে এখন আধাপা ও কাঁচ শিষের বাহার। সাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপের কারনে সৃষ্ট দুই দিনের মাঝারি ও হালকা বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ায় উপজেলার প্রায় জমির কাঁচা ও আধপাকা ধান মাটির সঙ্গে শুয়ে পড়েছে। যেগুলি দাঁড়িয়ে আছে তারও অবস্থা আধাভাঙ্গা। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এই উপজেলার কৃষকরা প্রায় উৎসব মুখর পরিবেশে রোপা আমনের চাষ করেছিলো। দফায় দফায় বৃষ্টির পানি পাওয়ায় এবার ধান হয়েছিলো ভালো, ছিলো বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা। কৃষকরাও বুকে বেঁধেছিলো রঙ্গীন স্বপ্ন। ১৫/২০ দিন পরে যে ধান কৃষকের গোলায় উঠত কিন্তু হঠাৎ এই বৃষ্টিতে কৃষকরে বুক ভরা স্বপ্ন এক নিমেশেই ভঙ্গ হয়ে গেছে। এখন শুধুই রয়েছে হতাশা। ধানের এই অবস্থায় হতাশ হয়ে পরেছে কৃষক পরিবার গুলি।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে কাঁচা ও আধাপাকা ধান মাটিতে শুয়ে আছে কিছু কিছু জমিতে জমে আছে বৃষ্টির পানি। এসময় স্থানীয় কৃষকরা বলেন,‘দু মুঠো ভাত খাওয়া আশায় এনজিও থেকে চড়াঁ সুদে ঋণ নিয়ে রোপা আমনের চাষ করেছিলাম। দফায় দফায় বৃষ্টি আর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবার ধানের ফলন ও ভালো হয়েছিলো। ভেবেছিলাম এবারের ধান বিক্রয় করে গতবছরের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিবো, কিন্তু শেষ মূহুর্তে এসে সব শেষ হয়ে গেলো।’
আব্দুর রহিম নামের এক কৃষক বলেন,‘ তিনি দুই বিঘা জমিতে রোপা ধানের চাষ করেছিলেন। সব ধানে এখন শিষ এসেছে। আর ১৫-২০ দিন পরে তার ধান ঘরে উঠতো কিন্তু হঠাৎ এই বৃষ্টিতে তার সব ধান মাটিতে পড়ে গেছে। এখন সব ধান চিটা হয়ে যাবে।’
লালপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানান গেছে, ‘এই উপজেলায় ৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের চাষের লক্ষমাত্রা ছিলো। চলতি মৌসুমে ৭হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের চাষ হয়েছে। যা লক্ষমাত্রার চেয়ে ৪৭০ হেক্টর বেশি জমিতে চাষ হয়েছে। এবছর এই উপজেলায় চাষকৃত ৭হাজার ৮২০ হেক্টর জমি থেকে হেক্টর প্রতি ৩.১২ মেট্রিকটন হারে ২৪ হাজার৩৯৮ মেট্রিকটন চাউল উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।’
লালপুর উপজেলা কৃষি অফিসার রফিকুল ইসলাম বলছেন,‘নিম্নচাপের কারনে কিছু জমির ধান পড়ে গেছে তবে এতে পাকা ধানের তেমন ক্ষতি হবে না। যে সকল জমির ধানে সবে মাত্র শিষ বের হয়েছে বা হয়নি, সেই সকল জমির ধানের কিছুটা ক্ষতি হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।’
এই বৃষ্টিতে ধানের নির্ধারিত ফলহানীর আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষকরা। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আকাশ জুড়ে মেঘের ঘনঘটা সঙ্গে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি অব্যাহত ছিলো।