বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা: ২০২১ সালে পশ্চিমবাংলায় রাজনৈতিক পালাবদল হচ্ছেই। এই বিশ্বাস বঙ্গ–বিজেপির। তাই নির্বাচনের আগেই তেড়েফুঁড়ে রাজ্য জুড়ে তৃণমূল সরকার বিরোধী আন্দোলন শুরু করেছে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারাও সর্বোত ভাবে তাদের সহযোগিতা করছেন। এখন নিজেদের গতিবিধি আন্দোলনেই সীমাবদ্ধ রাখতে চান না বিজেপি নেতারা। তৃণমূল বিরোধী আন্দোলনের পাশাপাশি রাজ্যের স্বার্থে গঠনমূলক কাজও করতে চান তাঁরা। তাই রাজ্যে লগ্নি টানতে তাঁরা এবার শিল্প সম্মেলন করতে চাইছেন। আগামী বছর জানুয়ারি মাসেই এই সম্মেলন করা হবে বলে বিজেপির তরফে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর রাতে ঘোষণা করে দেওয়া হয়। যদিও বিজেপির এই প্রয়াসের সমালোচনা করেছে তৃণমূল। বলেছে, বিজেপির এই পদক্ষেপ আসলে নির্বাচনী চমক ছাড়া আর কিছু নয়।
ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পশ্চিমবাংলায় শিল্পে বিনিয়োগ টানতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতি বছরই শিল্প সম্মেলন করেন। দেশ–বিদেশের বিখ্যাত সব শিল্পপতিরা দু’দিনের জন্য সেই সম্মেলনে আসেন। সংবাদ মাধ্যমেও সেইসব সম্মেলন বেশ গুরুত্ব পায়। এ বছরও ডিসেম্বরের মাঝামাঝি নাগাদ বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিটের আয়োজন করছে পশ্চিমবাংলা সরকার। তবে সমালোচকদের মতে, সেই সম্মেলনের প্রচার যতখানি হয়, তার অংশ মাত্রও বিনিয়োগ হয়নি বাংলার শিল্পে। বিরোধী দলগুলিও সেই সম্মেলনের সমালোচনা করে এসেছে প্রতিবারই। বিজেপিও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে হওয়া সেই শিল্প সম্মেলন নিয়ে সমালোচনায় কম মুখর হয়নি। আর, এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জবাব দিতে তারাই শিল্প সম্মেলনের আয়োজন করতে চলেছে। এর পেছনে উদ্দেশ্য একটাই, রাজ্যে যেন লগ্নি বৃদ্ধি পায়। ক্ষমতায় আসার পর তারা যে শিল্পকেই বেশি গুরুত্ব দিতে চায়, সে কথাও পরিষ্কার করে দিয়েছে শিল্প সম্মেলন আয়োজনের ঘোষণায়।
বিজেপির রাজ্য নেতারা নিশ্চিত, ২০২১ সালে তৃণমূলকে সরিয়ে ক্ষমতায় আসছেন তাঁরাই। মানুষের সামনে তৃণমূলের ব্যর্থতা তুলে ধরতে তাঁরা বিজনেস ইন্টারন্যাশনাল সামিট করতে চলেছেন। বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রাজ্যসভায় বিজেপির সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত বলেছেন, ‘আমরা চাইছি লগ্নিকারী, শিল্পপতি এবং উদ্যোগপতিদের সঙ্গে একটা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করতে। এই আলোচনায় নতুন ব্যবসা শুরু করেছেন, এমন ব্যক্তিত্বরাও থাকবেন। তাঁরা কী চান, এই আলোচনার মধ্য দিয়ে আমরাও পরিষ্কার বুঝতে পারব। ফলে রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটা রূপরেখাও আমরা তৈরি করে নিতে পারব।’ তিনিই জানান, আগামী বছরের জানুয়ারিতে এই বিজনেস সামিট কলকাতায় হবে। তিনি বলেছেন, ‘আমরা জানি, বাংলায় জমির সমস্যা আছে। আইন মেনে সেই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা আমরা করব। রাজ্যের যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাটাই এখন অত্যন্ত জরুরি। বাংলায় বিজেপি ইতিবাচক রাজনীতিতে আগ্রহী।’
বিজেপি নেতা রন্তিদেব সেনগুপ্ত বলেছেন, ‘শেষ ১০ বছর রাজ্যে বড় বা ছোট, কোনও শিল্পই আসেনি। বিজেপি সেই ব্যর্থতা কাটিয়ে রাজ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’ শিশির বাজোরিয়া বলেছেন, ‘রাজ্যে যেমন আইন–শৃঙ্খলা বলে কিছু নেই, তেমনই শিল্পেরও কোনও পরিকাঠামো নেই। সম্মেলন করে কোন কোন শিল্পপতিকে কত খাওয়ালেন, কোন হোটেলে রাখলেন, কত দামি গাড়িতে করে তাঁদের নিয়ে এলেন বা পৌঁছে দিলেন, সে সব করে কোনও শিল্প আসে না। রাজ্যে এতদিন ধরে যে শিল্প সম্মেলন হচ্ছে, তা মানুষের চোখে ধুলো দিতেই করে চলেছে সরকার।’ এ ব্যাপারে বিজেপির রাজ্য নেতারা জানিয়েছেন, ২০২১ সালে পশ্চিমবাংলার ক্ষমতা থেকে তৃণমূল সরছেই। তারা রাজ্যের কোনও উন্নয়নই করেনি। ১০ বছর মানুষকে ভুল বুঝিয়ে এসেছে। এতদিনে মানুষ ভুল বুঝতে পেরেছেন। তাঁরাই ক্ষমতা থেকে তৃণমূলকে সরিয়ে দেবেন। তার পর শিল্পে বাংলার মরুপ্রান্তরকে শস্যশ্যামলা করে তুলতে আগে থেকেই তাঁরা প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে চাইছেন।
তবে বিজেপির এই উদ্যোগের তীব্র সমালোচনা করেছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। সাংসদ সৌগত রায় স্পষ্টই বলেছেন, ‘এটা একটা নির্বাচনী চমক ছাড়া আর কিছুই নয়। রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকার যখন কোনও শিল্প সম্মেলনের আয়োজন করে, তখনই তা সফল হয়। বিজেপি কি বাংলার ক্ষমতায় আছে? তা হলে তারা সফল শিল্প সম্মেলনের আয়োজন করবে কী করে?’ তিনি এই অভিযোগও করেছেন, ‘কেন্দ্রের বিজেপি সরকারও কী করেছে? দেশে কি কোনও লগ্নি নিয়ে আসতে পেরেছে? —পারেনি। বদলে দেশের সম্পদই প্রতিদিন বেচে দিচ্ছে।’