বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা: পশ্চিমবাংলায় তৃণমূলের নেতা ও মন্ত্রীদের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে জল্পনা ক্রমশ বাড়ছে। পূর্ব মেদিনীপুরের পাশাপাশি কোচবিহার তৃণমূলেও তা নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। উল্লেখ্য, পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়েই এই জেলা তৃণমূলে ভাঙন শুরু হয়। লোকসভা নির্বাচনের পর তো রীতিমতো বিপর্যয়ের মুখে পড়ে দল। ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে দলের অবস্থা আরও ভয়ঙ্কর হবে বলে আশঙ্কা করছেন দলের বহু নেতা থেকে কর্মীরাও। মঙ্গলবার জেলা শহরে তৃণমূলের জেলা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকেই থাকলেন না দলের পাঁচ বিধায়ক। আর তা নিয়ে রীতিমতো অস্বস্তিতে জেলা–সহ উত্তর বাংলার তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব।
এদিন দলের বর্ধিত জেলা কমিটির বৈঠকে কোচবিহার দক্ষিণের বিধায়ক মিহির গোস্বামী যে থাকবেন না, তা নিশ্চিতই ছিল। কিন্তু বৈঠকে দেখা গেল তাঁর পাশাপাশি নেই নাটাবাড়ির বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, সিতাইয়ের বিধায়ক জগদীশ বর্মা বসুনিয়া, তুফানগঞ্জের বিধায়ক ফজল করিম মিয়াঁ এবং শীতলকুচির বিধায়ক হিতেন বর্মন। এই ঘটনা নিয়ে গোটা উত্তরবঙ্গে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। তৃণমূলের জেলা শীর্ষনেতারাও বিষয়টি নিয়ে নিজেদের ক্ষোভ গোপন রাখতে পারছেন না। উল্লেখ্য, কোচবিহারে তৃণমূলের বিধায়ক সংখ্যা ৮। দলের বৈঠকে মিহির গোস্বামীর অনুপস্থিতি নিয়ে তেমন কেউ বিস্মিত ছিলেন না। কয়েকদিন ধরে রীতিমতো বেসুরো গাইছেন মিহিরবাবু। দলের সব পদ থেকে তিনি ইস্তফাও দিয়ে দিয়েছেন। এমনকী, নিজের কার্যালয় থেকে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিও সরিয়ে দিয়েছেন। দলের ব্যানারে কর্মসূচিতে যোগ দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তবু রাজ্য কমিটির নির্দেশে দলের বর্ধিত জেলা কমিটির বৈঠকে তাঁকে হাজির করানোর চেষ্টা করেছিলেন জেলা নেতারা।
রাজ্যের দুই মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ এবং বিনয়কৃষ্ণ বর্মন প্রথমে তাঁকে ফোন করেছিলেন। কিন্তু তাঁর মোবাইল ছিল সুইচ অফ। তাই তাঁরা ছুটে গিয়েছিলেন তাঁর বাড়ি। কিন্তু তাঁকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। বাড়ি থেকে বলা হয় আলিপুরদুয়ারে তাঁর দিদির বাড়ি গিয়েছেন তিনি। সেখানেও ছুটে যান দুই মন্ত্রী। কিন্তু সেখানেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। দিদির বাড়ি থেকে বলা হয়, তিনি নাকি পারিবারিক কাজে আর এক বোনের বাড়ি অসম চলে গিয়েছেন। তার পর তৃণমূলের জেলা নেতারা বুঝে যান, মঙ্গলবারের বৈঠকে মিহিরবাবুকে হাজির করানো সম্ভব নয়। কিন্তু বৈঠকে আর চার বিধায়কের না থাকাটা একেবারে বজ্রাঘাতের মতো হয়েছে দলের কাছে। জগদীশ বর্মা বসুনিয়া, রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, ফজল করিম মিয়াঁ এবং হিতেন বর্মন বৈঠকে যে থাকবেন না, তা কারও ধারণায় ছিল না। ফলে বৈঠকে মিহিরবাবু–সহ পাঁচ বিধায়কের অনুপস্থিত থাকা নিয়ে রীতিমতো চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
এই ঘটনায় ভয়ানক চাপে পড়ে গিয়েছেন জেলা সভাপতি পার্থপ্রতিম রায় স্বয়ং। এ বিষয়ে পরে তিনি বলেছেন, ‘পাঁচ বিধায়ক বর্ধিত জেলা কমিটির বৈঠকে কেন ছিলেন না, তা বলতে পারব না। তাঁদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার পরই বলতে পারব। এই মুহূর্তে এ ব্যাপারে আমার কাছে কোনও তথ্য নেই।’ কিন্তু, তাঁর কথায় যেন পরিষ্কার, এখনই অশনি সঙ্কেত শুনতে পেয়ে গিয়েছেন তিনি।