প্রত্যয় ডেস্ক, চৌধুরী হারুনুর রশিদ, রাঙামাটি প্রতিনিধিঃ দক্ষিন এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির দীর্ঘ ছয় যুগ পর নির্মিত হয় নানিয়ার চর দৃশ্যমান সেতু। রাঙামাটি জেলার দুর্গম নানিয়াচর, লংগদু ও বাঘাইছড়ির লোকজন সড়ক পথে যাতায়তের পথ সুগম হলো।
বহু প্রত্যাশিত নানিয়াচর চেঙ্গি নদীর ওপর ৫শ মিটার দীর্ঘ এই সেতু দিয়ে খুব সহজেই সাজেকে চলে যাওয়া যাবে। এক সময় নানিয়ারচর উপজেলা সদরে যাওয়ার মতো সরাসরি কোনও সড়ক ছিল না। তিনটি উপজেলায় নৌ পথে যেতে অনেক সময় লাগতো। যাত্রী ও পন্য পরিবহনের জন্য চলাচলের জন্য সেতুটি শিগগিরই খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।
সেতু নির্মাণকারী সংস্থা মনিকো লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার পাল জানিয়েছেন, প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ। সহসাই সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
রাঙামাটি থেকে সড়কপথে লংগদু যেতেও প্রায় ১৪০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। সময়টাও লাগে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা। রাঙামাটি থেকে বর্তমানে বাঘাইছড়িতে সড়ক পথে যেতে পাড়ি দিতে হয় প্রায় ১৫০ কিলোমিটার পথ। সময় লাগে প্রায় ছয় থেকে ঘণ্টা।
সেতু নির্মাণকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের তথ্য মতে, ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ দশমিক ২ মিটার প্রস্থের এই সেতু নির্মাণে প্রায় ১২০ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। আর দুই কিলোমিটার সড়ক সংযোগের জন্য ১০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৪৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় করা হয়। ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
একই সঙ্গে বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলায় সড়ক পথে যাওয়ার জন্য রাঙামাটি থেকে খাগড়াছড়ি হয়ে যেতে হতো। কিন্তু পার্বত্যাঞ্চলের সবচেয়ে দীর্ঘ এই সেতু নির্মাণ হওয়ায় তিন উপজেলার প্রায় চার লক্ষাধিক মানুষ সহজেই জেলা সদরের সঙ্গে যাতায়াতের সুযোগ পাচ্ছেন। এই একটি সেতুতেই দুর্গম যাতায়াতের কষ্ট ঘুচছে তিন উপজেলার।
ভোগলিক অবস্থার কারণে সব উপজেলার যোগাযোগ সহজ ছিল না। নানিয়ারচর থেকে লংগদু ১৮ কিলোমিটারের সড়কটি এখনও নির্মিত না হওয়ায় লংগদু ও বাঘাইছড়িবাসী সেতু উদ্বোধনের দিন থেকে এর সুবিধা পাচ্ছেন না। এখনো সেতু ও সড়কের কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। পাহাড়ে চার আঞ্চলিক দলের আধিপত্য বিস্তার ও ভ্রাতৃত্বঘাতি সংঘাত এই উপজেলায় বেশী রক্তপাতসহ প্রাণহানি ঘটে।
রাঙামাটি-নানিয়ারচর-লংগদু-বাঘাইছড়ি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ১৯৯৩ সালে নানিয়ারচর অংশে চেঙ্গি নদীর ওপর সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। অবশেষে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নানিয়ারচরের চেঙ্গি নদীর ওপর সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
বাঘাইছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দীন বলেন, ‘ বাঘাইছড়ির সঙ্গে রাঙামাটির সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের ফলে চিকিৎসা নিতে আসা অসুস্থ রোগী ও মৌসুমী ফল কৃষি পন্য নেয়া সহজ হবে । দীর্ঘদিন ধরে নৌপথে ও খাগড়াছড়ি হয়ে যাতাযত হয়েছে । ফলে অর্থনৈতিক গতিশীল হবে।