1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : রাকিবুল হাসান শান্ত : রাকিবুল হাসান শান্ত
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা শুভেন্দু অধিকারীর, পশ্চিমবাংলায় ভয়ঙ্কর চাপে তৃণমূল

  • Update Time : শনিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২০
  • ২৭৩ Time View

বিশেষ প্রতিবেদক,কলকাতা: শুভেন্দু–ধাক্কায় বেসামাল তৃণমূল। তোলপাড় পশ্চিমবাংলার রাজনীতি।
তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের দৌত্য কাজে দিল না। বৃহস্পতিবারই হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্সের (‌এইচআরবিসি)‌ চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু শুভেন্দুকে পদে থাকার জন্য অনুরোধ না করে রাতারাতি সেই পদে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে বসিয়ে পাল্টা চাল দেয় রাজ্যের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। কিন্তু শুক্রবার কী হতে পারে, কেউই ভাবতে পারেননি তৃণমূলের। এদিন সকালেই নিজের জন্য সরকারের দেওয়া সমস্ত ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছেড়ে দেন। এতদিন তিনি জেড ক্যাটাগরির নিরাপত্তা পেতেন।

তার পর বেলা বাড়তে বজ্রঘাত হয় তৃণমূল শিবিরে। পরিবহণ, সেচ এবং জলসম্পদ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা মেল করে জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। মেল করে একই কথা জানিয়েছেন রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়কে। রাজভবন সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রীর সুপারিশে শুভেন্দুর ইস্তফা গ্রহণ করেছেন রাজ্যপাল। একই সঙ্গে হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যানের পদও এদিন তিনি ছেড়ে দেন। তবে বিধায়ক পদ এখনই ছাড়ছেন না তিনি।

কিন্তু কেন মন্ত্রিত্ব ছাড়লেন? কারণ চিঠিতে জানাননি তিনি। তবে মন্ত্রী হিসেবে কাজ করতে দেওয়ার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। ঘটনায় রীতিমতো চাপে পড়ে যায় তৃণমূল। বিকেলেই দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নিয়ে কালীঘাটের বাড়িতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠকে বসেন। ছিলেন ফিরহাদ হাকিম, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সি–সহ প্রথম সারির বহু নেতাই। সূত্রের খবর, শুভেন্দু না ছাড়লে বিধায়ক পদ বা দল থেকে তাঁকে বহিষ্কারের কথা দল ভাবছে না। পাশাপাশি শুভেন্দুর ছেড়ে দেওয়া তিনটি দফতর নিজের হাতে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ ছাড়া, শুভেন্দুকে যে দল বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে, তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর একটি সিদ্ধান্তে।

জানা গিয়েছে, এবার গোটা রাজ্য জুড়ে মুখ্যমন্ত্রী আগের তুলনায় অনেক বেশি সভা করবেন। রাজনৈতিক মহলের মতে, শুভেন্দু দল ছেড়ে গেলে যে ক্ষত তৈরি হবে, তা পূরণ করার দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রীই নিচ্ছেন। এদিকে, বুধবারই সৌগত রায় দাবি করেছিলেন, শুভেন্দুর সঙ্গে বৈঠক ইতিবাচক হয়েছে। তিনি দল ছাড়ছেন না। কোনও সমস্যাও নেই। কিন্তু এদিন শুভেন্দু মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিতেই চাপে পড়ে যান সাংসদ সৌগত রায়। অবস্থা সামাল দিতে তিনি বলেছেন, ‘এখনও তিনি দলের সদস্যপদ ত্যাগ করেননি। বিধায়ক পদও ছাড়েননি। তাঁর সঙ্গে আমার ফের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। যতক্ষণ তিনি দলে আছেন, ততক্ষণ কথা চালিয়ে যাব। তাই এখনই হতাশ হয়ে পড়ার কোনও কারণ নেই।’

কিন্তু শুভেন্দু কী করবেন এবার? তিনি কি বিজেপিতে যাবেন? তিনি কি নতুন কোনও দল গড়বেন? নাকি তিনি তৃণমূলেই থেকে যাবেন? তিনি নিজে এখনও কিছু বলেননি। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার তাঁর দিল্লি যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পরের দিনই দিল্লি গেলে বিতর্ক তৈরি হতে পারে। তাই বিতর্ক এড়াতে তিনি দিল্লি যাওয়ার পরিকল্পনা ত্যাগ করেন। অন্যদিকে, শুভেন্দুর মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পরই তা নিয়ে বিরোধী দলগুলি মুখ খুলতে শুরু করে দিয়েছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘তৃণমূলের শেষের শুরু হয়েছে। এই দলকে পতনের হাত থেকে কেউ রক্ষা করতে পারবেন না। আর কিছুদিন অপেক্ষা করুন। দেখতে পাবেন, দলটাই উঠে যাবে। আমি আগেই বলেছি, সরকারের মতো দলের মধ্যেও চলছে বিরামহীন স্বৈরাচার। তাই অধিকাংশ নেতাই দল ছাড়তে চলেছেন।’ পাশাপাশি শুভেন্দু যদি বিজেপিতে আসেন, তা হলে তাঁকে স্বাগত জানানো হবে বলেও তিনি জানিয়ে দেন।
বিজেপির সর্বভারতীয় সহসভাপতি মুকুল রায় বলেছেন, ‘শুভেন্দু তৃণমূল স্তর থেকে রাজনীতি করছেন। গণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তিনি উঠে এসে নেতা হয়েছেন। কিন্তু এখন তিনি কিছুই করতে পারছিলেন না। এখন তৃণমূলে সব কিছুই হচ্ছে প্রশান্ত কিশোরের ইশারায়। তাই সেখানে থাকা তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না। তিনি আমাদের সঙ্গে এলে বাংলায় পরিবর্তনের আন্দোলন আরও জোরদার হবে।’ পাশাপাশি তৃণমূলের স্নায়ুর চাপ বাড়িয়ে দিয়েছেন বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। তিনি বলেছেন, ‘শুধু শুভেন্দু কেন, আরও অনেকেই বিজেপিতে আসবেন। আর কিছুদিন অপেক্ষা করুন, দেখবেন সুব্রত মুখোপাধ্যায় সহ তৃণমূলের ৫৮ জন বিধায়ক বিজেপিতে যোগ দেবেন। বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলটার অস্তিত্ব আর থাকলে হয়!’ যদিও সৌমিত্রের কথা প্রকাশ্যে আসতেই অস্বস্তিতে পড়ে যান সুব্রত নিজে। কায়দা করে এদিন সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘যাই হোক না কেন, সামনের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের জয় নিয়ে কোনও চিন্তা নেই। কারণ, আমাদের একজনই নেত্রী। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’

শুভেন্দু বিতর্কে মুখ খুলেছে কংগ্রেসও। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি বলেছেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাপুড়ের মতো বিজেপিকে বাংলায় ডেকে এনেছিলেন। তাই বিজেপি বহিরাগত, এ কথা তাঁর মুখে অন্তত মানায় না। ঠিক যেমন সাপুড়েকে সাপের ছোবলে মরতে হয়, তেমন মৃত্যুই তৃণমূলের ললাটে লেখা রয়েছে। সত্যি কথা বলতে কী, মন্ত্রিত্ব থেকে শুভেন্দুর ইস্তফা দেওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলায় তৃণমূলের অন্তর্জলি যাত্রা শুরু হয়ে গিয়েছে।’ সিপিএম নেতা তথা বিধানসভায় বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘শুভেন্দুর ইস্তফা নিয়ে আমরা মোটেই ভাবছি না। তবে, এ কথা ঠিক, দল ভাঙানোর এই নোংরা সংস্কৃতি বাংলায় আমদানি করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। প্রশ্ন হল, এবার কি তার বলি তিনি নিজেই হচ্ছেন? ‘তৃণমূলের উন্নয়নের জোয়ারে’ সবাই দলে দলে নাকি সেখানে গিয়ে ভিড়েছিল। এখন কি ভাটা চলছে? তাই কি সবাই দল ছেড়ে দিকে দিকে পালিয়ে যাচ্ছে?’ মুখ খুলেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়ও। তিনি বলেছেন, ‘শুভেন্দুর ইস্তফায় স্পষ্ট, তৃণমূলও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ।’

শুধু শুভেন্দুতেই এদিন তৃণমূল ধাক্কা খায়নি। এদিনই বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামাণিকের সঙ্গে দিল্লি যান কোচবিহার দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক মিহির গোস্বামী। সেখানেই তিনি তৃণমূলের প্রাথমিক সদস্যপদ ত্যাগ করার কথা ঘোষণা করেন। শুধু তাতেই থেমে থাকেননি তিনি। এদিন সন্ধ্যায় বিজেপির সদর দফতরে তাঁকে দেখা যায়। সেখানেই তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। তবে বিধায়ক পদ তিনিও ছেড়ে দেননি। অবশ্য এ কথা জানিয়েছেন, দলনেত্রী চাইলে বিধায়ক পদও ছেড়ে দিতে তিনি রাজি। ফলে তৃণমূল নেতাদের মধ্যে এখন হাজার এক প্রশ্ন ঘোরাফেরা করতে শুরু করেছে। শুভেন্দু যদি বিধায়ক পদ বা দল ছেড়ে দেন, তা হলে তাঁর অনুগামীরা কী করবেন? তাঁদের দ্বারা জেলার অন্য নেতারাও কি প্রভাবিত হবেন? বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো চিন্তিত স্বয়ং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলে ভাঙন রুখতে মরিয়া তৃণমূলের শীর্ষনেতারা জেলার নেতাদের কলকাতায় ডেকে পাঠিয়েছেন। তাঁদের প্রত্যেকের সঙ্গে বৈঠকে কথা বলা হবে বলে তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..