বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা: শুভেন্দুকে জব্দ করতে তাঁর বাবাকেই কি অস্ত্র করতে চাইছেন তৃণমূল দলনেত্রী? শুক্রবার দলের একটি ভার্চুয়াল বৈঠকের পর এই প্রশ্ন এখন ঘুরছে তৃণমূলেরই অন্দর মহলে। পাশাপাশি এদিন বিকেলের শেষে কলকাতায় আসেন শুভেন্দু অধিকারীও। সন্ধ্যায় উত্তর কলকাতায় নিজের ফ্ল্যাটে ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন তিনি। সব মিলিয়ে পশ্চিমবাংলার রাজনৈতিক মহলে শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে চর্চা অব্যাহত রয়েছে এদিনও।
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের সমস্ত সাংসদ, বিধায়ক ও জেলা সভাপতিদের সঙ্গে এদিন ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। বৈঠকে অন্য জেলাগুলির মতো পূর্ব মেদিনীপুর থেকে উপস্থিত ছিলেন ওই জেলার তৃণমূল সভাপতি তথা সাংসদ শিশির অধিকারীও। বলা বাহুল্য, শিশিরবাবুর উপস্থিতি সেই বৈঠককে অন্য মাত্রা দেয়। পশ্চিমবাংলার রাজনৈতিক মহলের দৃষ্টিও তাই গিয়ে পড়ে সেই বৈঠকের দিকে। বৈঠকে উপস্থিত সকলকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সতর্ক করে দিয়ে পরিষ্কার বলেন, ‘দলে থেকে দলবিরোধী কাজ কোনও মতেই বরদাস্ত করা হবে না। আমি জানি, বিজেপি এজেন্সিকে দিয়ে সবাইকে ভয় দেখাচ্ছে। তবু যাঁরা আমার সঙ্গে সাহস করে থাকতে চান, থাকুন। না হলে চলে যান।’ বৈঠকে একবারও তিনি শুভেন্দু অধিকারীর নাম করেননি। তবে তাঁর অধিকাংশ কথাই যেন ছিল শুভেন্দুকে ইঙ্গিত করে বলা।
সেই সময়ই তিনি পূর্ব মেদিনীপুরের তৃণমূল জেলা সভাপতি শিশির অধিকারীকে স্পষ্ট নির্দেশ দেন, ‘পূর্ব মেদিনীপুরের অনেক জায়গায় দলবিরোধী কাজ করছেন অনেকে। বিশেষ করে কাঁথি, নন্দীগ্রাম ও হলদিয়ায় বেশি করে দলবিরোধী কাজ হচ্ছে। যাঁরা দলবিরোধী কাজ করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে আপনাকে। আর, এখনই নন্দীগ্রাম এবং হলদিয়ার ব্লক সভাপতিকে বদলে দিন।’ তৃণমূল নেত্রী কী করতে চাইছেন, এর পর আর বুঝতে অসুবিধে হয় না। রাজনীতি পর্যবেক্ষকদের মতে, শুভেন্দু–বিতর্কের পর অধিকারী পরিবারের প্রতি হয়তো নেত্রীর আস্থা কমে গিয়েছে। তাই অধিকারী পরিবারের দলের প্রতি দায়বদ্ধতা কতটা, তা এখন যাচাই করে নিতে চাইছেন।
এদিকে, মিল্লি আল আমিন কলেজের অধ্যক্ষা বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের একটি মন্তব্যের বিরুদ্ধে এদিন রাজভবনে এসেছিলেন কলকাতার প্রাক্তন মহানাগরিক শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর বান্ধবী বৈশাখী। রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের কাছে নিজেদের অভিযোগ জানিয়ে ফেরার সময় সাংবাদিকদের কাছে শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে মুখ খোলেন শোভন। তিনি বলেন, ‘শুভেন্দু বহুদিনের পরীক্ষিত নেতা। তিনি সবসময় মর্যাদা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেন। এতদিন তা–ই করতেন। আমার ধারণা, তিনি যে সিদ্ধান্তই নিন না কেন, তা যথেষ্ট ভেবেচিন্তেই নেবেন। এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই।’
অন্যদিকে, এদিন শেষ বিকেলে কলকাতায় আসেন শুভেন্দু অধিকারী। কয়েকটি জায়গায় যান। তবে সেইসব জায়গার নাম নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের কাছে তিনি বা তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতাদের কেউ মুখ খোলেননি। কিন্তু এদিন সন্ধ্যায় তাঁকে কলকাতার সুকিয়া স্ট্রিটের ফ্ল্যাটে যেতে দেখা যায়। সেখানে কয়েকজন ঘনিষ্ঠ নেতা এবং একটি সংবাদ মাধ্যমের মালিক–সম্পাদক ও একটি ফুটবল ক্লাবের এক কর্তাকে দেখা যায়। সেখানে তাঁদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়। বৈঠকে কী কথা হয়েছে, তা জানা যায়নি। তথ্যাভিজ্ঞ মহলের ধারণা, নিজের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে, তা নিয়ে শুভেন্দু সকলের সঙ্গে আলোচনা করেন।