করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ভ্যাকসিন কর্মসূচি শুরু হয়েছে। পুরো যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে অবস্থান করছেন লক্ষ লক্ষ বাঙ্গালী। যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হলেও তা গ্রহণে এখনো মানসিকভাবে পুরোপুরি প্রস্তুত নয় প্রবাসী বাংলাদেশিরা। তাদের মধ্যে ভ্যাকসিন নেয়ার প্রচণ্ড ইচ্ছা থাকলেও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয় নিয়ে অনেকের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
গত ১৪ ডিসেম্বর সোমবার থেকে মার্কিন জনগণ ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন নিতে শুরু করেছে। করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরুর বিষয় নিয়ে বাংলাদেশি অধুষ্যিত স্টেট- নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, ক্যালিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা, টেক্সাস, ম্যাসাচুসেটস, ভার্জিনিয়া, পেনসিলভানিয়া, জর্জিয়া, কানেকটিকাট এবং ওয়াশিংটন ডিসির প্রায় পঁচিশ জন প্রবাসী বাংলাদেশি মতামত দেন। তারা বলেন, ফাইজারের ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলাফল না দেখে সহসাই তারা তা নেয়ার ব্যাপারে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন না। অধিকাংশ প্রবাসী একবাক্যেই বলেন, ‘আগে দেখবো, পরে ভ্যাকসিন নেবো’।
ইতিমধ্যে প্রতিটি স্টেটেই প্রথম দফায় ৩০ লাখ ডোজ করে ভ্যাকসিন পাঠানো হয়েছে। মাইনাস ৮০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয় বলে ড্রাই আইসে মুড়িয়ে ট্রাকে এবং বিমানে করে স্থানীয় সময় গত ১৩ ডিসেম্বর ভোর থেকে ১৪৫টি কেন্দ্রে করোনার এ ভ্যাকসিন পাঠানো হয়। ১৪ ও ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে আরও ৪৯১টি কেন্দ্রে ফাইজারের এ করোনার ভ্যাকসিন পৌঁছে দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন বিতরণ তদারকি কর্মকর্তা জেনারেল গুস্তাভ পেরনা।
ফাইজারের এই করোনার টিকা ৯৫ শতাংশ কার্যকর প্রমাণিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) জরুরিভিত্তিতে দেশটিতে তা ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। মার্কিন বিশেষজ্ঞরাও ফাইজার-বায়োএনটেকের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন জরুরি অনুমোদন প্রদানের পক্ষে সমর্থন দিয়েছেন।
এদিকে, করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পাওয়া গেলেও তা নিতে অনীহা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৩০ শতাংশ মানুষ! পিআর ফার্ম বোসপারের জরিপ বলছে, দেশটির এক-তৃতীয়াংশ প্রাপ্তবয়স্ক জানিয়েছেন, ভাইরাস প্রতিরোধে ভ্যাকসিনের প্রতি তাদের আস্থা নেই। জরিপের পেছনে নিজেদের উদ্দেশের কথা জানাতে গিয়ে বোসপারের প্রধান কর্মকর্তা কার্টিস স্পারার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘লকডাউনের বিরুদ্ধে দেখছি অনেকে আন্দোলন করছেন। মানুষ আসলে কী ভাবছে, সেটি জানতে আমরা এমন জরিপ চালাই। সামগ্রিক চিত্র নিয়ে আমি হতাশ। বাজি ধরে বলতে পারি আরও অনেক মানুষ ভ্যাকসিন নেবে না।’
জরিপটি হয়েছে গত ২৮ ও ২৯ এপ্রিল। বাজার জরিপকারী সংস্থা প্রোপেলার বোসপারের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করেছে। তারা ১ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেন। ভ্যাকিসন তৈরি হলে তারা নিতে চান কি না- এমন প্রশ্নের পাশাপাশি অংশগ্রহণকারীদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, যারা ভ্যাকসিন নেবেন, তাদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি কী?
ভ্যাকসিনের প্রতি মার্কিনিদের অনীহা নতুন কিছু নয়। স্পারার বলছেন, করোনা আসার পরেও এই দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাচ্ছে না। যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৪ বছর, তাদের মধ্যে ৫৭.৬ শতাংশ ভ্যাকসিন নিতে চান। তরুণেরা এই রোগে কম আক্রান্ত হন, এমন চিন্তা থেকে অনেকে ভ্যাকসিন নিতে চান না বলে ধারণা স্পারারের।