বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা : জল্পনাটা শুরু হয়েছিল বৃহস্পতিবার সকালেই। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে লক্ষ্মীরতন শুক্লা সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘দাদা অসামান্য নেতা। তিনি জানেন সকলকে কী করে একসঙ্গে নিয়ে চলতে হয়!’ উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবারই উডল্যান্ডস হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফেরেন সৌরভ। আবার, বুধবারই মন্ত্রিত্ব এবং তৃণমূলের সমস্ত পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন লক্ষ্মীরতন। ফলে দুইয়ে দুইয়ে চার করতে অনেকেই দ্বিধা করেননি।
কিন্তু প্রশ্ন উঠে যায়, সৌরভ কী করে সকলকে একসঙ্গে নিয়ে চলেন, সে কথা লক্ষ্মীরতন স্পষ্ট উল্লেখ করে কী বোঝাতে চেয়েছেন? পরে সাংবাদিক সম্মেলনে এই পোস্ট নিয়েই প্রশ্নের সম্মুখীন হন লক্ষ্মীরতন। অতিসতর্ক ভাবে তিনি জবাব দেন, ‘আজ দাদা হাসপাতাল থেকে ছুটি পেয়েছেন। তাই ওই পোস্ট করেছি। আজ তো সবাই জানেন, দাদা একজন সত্যিকারের লিডার। সত্যিকারের একজন ক্যাপ্টেন। তাঁকে দেখেই আমি বড় হয়েছি। অনুপ্রাণিত হয়েছি। তিনি বাস্তবিকই একজন আইকন। আর আমি তো তাঁর সঙ্গেই বাংলার হয়ে খেলেছি। ভারতের হয়েও খেলেছি। খেলেছি আইপিএল–এ। তাই ওই পোস্ট করেছি।’ কিন্তু এই জবাবে কি আর জল্পনা থামে? প্রশ্ন ওঠে, তিনি কি বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন? লক্ষ্মীরতন অবশ্য এই সহজ বলটি ক্রিকেটের মতোই খেলতে দ্বিধা করেননি। সোজা মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেন ওই বল। বলেন, ‘আমি কোনও দলেই যোগ দিচ্ছি না। আমি তো রাজনীতিই ছেড়ে দিচ্ছি। তা হলে আবার অন্য কোথাও যাওয়ার প্রশ্ন উঠছে কেন?’
লক্ষ্মীরতনের উত্তর তো জানা গেল। কিন্তু কী বলছেন সৌরভ? উডল্যান্ডস থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে এদিন তিনি বেশ খোলামেলা কথা বলেন। তবে কোনও সাংবাদিকই তাঁকে রাজনীতির প্রশ্নে টেনে আনতে পারেননি। রাজনীতি সম্পর্কিত সমস্ত প্রশ্নই তিনি হাসিমুখে এড়িয়ে যান। ফলে জল্পনাটা সত্যি, না মিথ্যে, তার কোনওটাই বোঝা যায়নি। চিকিৎসকরা সৌরভকে বলে দিয়েছেন, কিছুদিন বিশ্রাম নেওয়ার পর তিনি ফের নিজের কাজের জগতে ফিরে যেতে পারবেন। সৌরভও সে কথাই মনে করিয়ে দেন সবাইকে। তাঁর কাজের জগতের মধ্যে যেমন রয়েছে বিসিসিআইয়ের সভাপতির কাজ, বাংলার ক্রিকেটের জন্য নিজের কিছু কাজকর্মও রয়েছে, রয়েছে বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত কাজ, রয়েছে টিভি চ্যানেলের জন্য ধারাবাহিক অনুষ্ঠানের (দাদাগিরি) কাজও। এর মধ্যে কি রাজনীতির কোনও কাজই নেই? তবে প্রশ্নটা এদিন উহ্যই থেকে যায়।
কিন্তু অবস্থা বদলে গেল বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্যের কথায়। এদিন বিকেলে হেস্টিংসে বিজেপির সদর দফতরে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, ‘বিশ্রাম পর্ব শেষ হওয়ার পর সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং লক্ষ্মীরতন শুক্লা একসঙ্গে নেট প্র্যাকটিস করবেন।’ এই বক্তব্যই যেন জল্পনার আগুনে ঘৃতাহুতি দেয়। প্রশ্ন ওঠে, দু’জনে একসঙ্গে নেট প্র্যাকটিস করবেন মানে কী? দু’জনে তো এখন কোনও দলে খেলেন না! বাংলা বা দেশের হয়েও খেলছেন না। তা হলে নেট প্র্যাকটিস করবেন কেন? এর মানে কি তবে রাজনীতিতে দু’জনকে একই দলে দেখা যাবে? আর সেই দলটার নাম কি বিজেপি? জল্পনা কিন্তু হচ্ছেই। তবে শমীক ভট্টাচার্য কিন্তু নিজের বক্তব্যের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি।
অবশ্য সৌরভ সম্পর্কে আর কোনও কথাই শমীক বলেননি। কিন্তু লক্ষ্মীরতন সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘তিনি দারুণ অলরাউন্ডার। বল, ব্যাট— দুই–ই ভালোই করতে পারেন। আসলে তিনি তৃণমূলের পিচে সেট হতে পারছেন না। আর শেষ পর্যন্ত তিনি তৃণমূলের হয়ে ব্যাট করবেন, নাকি তৃণমূলের বিরুদ্ধে বল করবেন, তার জবাব ভবিষ্যৎই দিতে পারবে। আমি বলেছিলাম, বিশ্রাম পর্ব শেষ হওয়ার পর সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং লক্ষ্মীরতন শুক্লা একসঙ্গে নেট প্র্যাকটিস করবেন।’ এর পরই তিনি চলে আসেন বিজেপি প্রসঙ্গে। জোর দিয়ে বলেন, ‘১৯৭৭ সালের পর এই প্রথম পশ্চিমবাংলা এবং কেন্দ্র— দুই জায়গাতেই একই দলের সরকার হবে। এটা সত্যিই খুব ইতিবাচক দিক হয়ে উঠবে আমাদের রাজ্যের পক্ষে।’
অন্যদিকে, বুধবারই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে কার্যত দলে আমন্ত্রণ জানিয়ে দেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা অরবিন্দ মেনন। ওইদিন কাটোয়ায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় সারা দেশের গর্ব। তিনি যদি বিজেপিতে আসেন, তা হলে আমরা তাঁকে কার্পেট পেতে ফুল দিয়ে স্বাগত জানাব।’ উল্লেখ্য, বর্তমানে বিজেপির পরামর্শদাতার ভূমিকাও পালন করছেন এই নেতা। জল্পনাটা এর পর বিশেষ মাত্রা পেয়ে যায়। আর বৃহস্পতিবার তা সীমা ছাড়িয়ে গেল। সঠিক উত্তরের জন্য হয়তো অপেক্ষা করতে হবে আরও কয়েক মাস।