বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা : আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি রবিবার সরকারি সফরে ফের পশ্চিমবাংলায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ওই দিন হলদিয়ায় তিনি একগুচ্ছ প্রকল্পের সূচনা করবেন। ওই সভায় উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে অভিনেতা তথা ঘাটালের তৃণমূল সাংসদ দেবকে (দীপক অধিকারী)। আর ওই ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তীব্র জল্পনা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে দেবও কি ধীরে ধীরে বিজেপির দিকে পা বাড়াচ্ছেন? যদিও অভিনেতা–সাংসদের তরফে এ বিষয়ে পরিষ্কার করে কোনও জবাব দেওয়া হয়নি।
উল্লেখ্য, ওই সভায় থাকছেন তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী। থাকতে পারেন কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারীও। উল্লেখ্য, পারিবারিক দিক থেকে শুভেন্দু অধিকারীর ভাই হলেন দিব্যেন্দু আর শিশির অধিকারী বাবা। রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অধিকারী পরিবারের সঙ্গে শাসক দল তৃণমূলের দূরত্ব অত্যন্ত প্রকট। শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর শিশিরবাবু এবং দিব্যেন্দুও ওই দলে যোগ দিতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে শুভেন্দুর ছোট ভাই সৌমেন্দু অধিকারী তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। যাই হোক, ওই সভায় উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। কিন্তু তিনি ওই সভায় থাকতে পারবেন কিনা, তা এখনও পরিষ্কার করেননি। যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের অনুষ্ঠানে রাজ্যের শাসক দলের শীর্ষ নেতাদের আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়টি সৌজন্য এবং প্রোটোকলের মধ্যেই পড়ে।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভায় দিব্যেন্দুর উপস্থিত থাকা নিয়ে রাজ্যের রাজনীতিতে কিছু ঘটনা ইতিমধ্যেই ঘটে গিয়েছে। সোমবারও দিব্যেন্দু অভিযোগ করেছেন, ওই সভায় তিনি যাতে উপস্থিত না থাকেন, সেইজন্য তাঁকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে তিনি থানায় অভিযোগও জানিয়েছেন। তাঁর নিশানা তথা ইঙ্গিত যে শাসক দল তৃণমূলের দিকে, তা পরিষ্কার। হলদিয়ার সভায় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিত থাকার বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার পর কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান চিঠি লিখেছিলেন তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারীকে। চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচির বিস্তারিত জানিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য তাঁকে আমন্ত্রণও জানান। প্রসঙ্গত, শিল্পনগরী হলদিয়া দিব্যেন্দু অধিকারীর লোকসভা কেন্দ্র তমলুকের মধ্যেই পড়েছে। দিল্লি সূত্রে বলা হয়েছে, স্থানীয় সাংসদ হিসেবেই দিব্যেন্দু অধিকারীকে সৌজন্য দেখিয়েই কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে কেন্দ্রের সৌজন্য প্রকাশকে রাজনৈতিক মহল ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছে।
উল্লেখ্য, এই ঘটনার প্রভাব পড়ে তৃণমূলের অভ্যন্তরেও। প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণের পরই পূর্ব মেদিনীপুরের তিনটি কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় সাংসদ দিব্যেন্দুকে। যদিও পাল্টা দিব্যেন্দু বলেন, ‘আমি আগেই ওই তিনটি কলেজের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দিয়েছি। তাই আমাকে সরানোর কোনও প্রশ্নই ওঠে না।’ তবে প্রশাসনের তরফে বলা হয়, সাংসদকে সরিয়ে দিয়ে প্রশাসক নিয়োগ করেছে রাজ্য শিক্ষা দফতর। ওই বিতর্ক থিতিয়ে যেতে না যেতেই এখন রাজ্যের রাজনৈতিক মহলের দৃষ্টি চলে গিয়েছে অভিনেতা দেবের দিকে। সাংসদ হওয়ায় তাঁকে হামেশাই দিল্লিতে যেতে হয়। সেই সূত্রে বিজেপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের কথা সকলেরই জানা। করোনা পরিস্থিতির আগে সেই যোগাযোগ নিয়ে প্রশ্নও উঠেছিল। তবে দেব বিজেপিতে যোগ দেননি। তাই সেই বিতর্কি বেশি দিন স্থায়ী হয়নি।
কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি একেবারেই আলাদা। সূত্রের খবর, তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জন্য এখনও নাকি অনেক সাংসদ, বিধায়ক, কাউন্সিলর এবং এমনকী আঞ্চলিক নেতারাও পা বাড়িয়ে রয়েছেন। কিন্তু তৃণমূল থেকে এ ভাবে জলস্রোতের মতো নেতাদের বিজেপিতে আসার বিষয়টি রাজ্য বিজেপির আদি নেতা ও কর্মীরা মন থেকে মেনে নিতে পারছেন না। ফলে অনেক জায়গাতেই বিজেপির আদি নেতাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তা নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে চর্চাও হচ্ছে। তাই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা এখন তৃণমূল থেকে আসা নেতাদের গ্রহণ করার বিষয়টি বেশ সতর্কতার সঙ্গে যাচাই করে দেখছেন।
এখন দেখার, দেবকে কি সৌজন্যের খাতিরেই প্রধানমন্ত্রীর সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, নাকি তার পেছনেও রয়েছে অনেক বড় গল্প!