বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা : সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এখনও রাজনীতিতে আসেননি। যোগ দেননি বহুল আলোচিত বিজেপিতেও। অনেকে, যেমন সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তাঁকে রাজনীতিতে না আসার পরামর্শ দিয়ে এসেছেন, শুধু তাই নয়, সৌরভের অসুস্থতার পেছনে বিজেপির তৈরি মানসিক চাপ রয়েছে বলেও ইঙ্গিতে জানিয়েছিলেন। তবে সাধারণ মানুষ তাঁর পরামর্শ খুব একটা কানে নিচ্ছেন না। সিএনএক্স–এর জনমত সমীক্ষায় উঠে এলো একটি চমকপ্রদ তথ্য। বাংলার অধিকাংশ মানুষই চাইছেন, রাজনীতিতে যোগ দেওয়া উচিত ভারতের জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়কের।
কিছুদিন আগে বুকে ব্যথা নিয়ে উডল্যান্ডস হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন সৌরভ। সেখানে তাঁর বুকে একটি স্টেন্ট বসাতে হয়। সুস্থ হয়ে বাড়ির ফেরার কয়েকদিন পর ফের অসুস্থ বোধ করলে তাঁকে ভর্তি করা হয় অ্যাপোলো হাসপাতালে। সেখানে তাঁর বুকে দুটি স্টেন্ট বসানো হয়। কয়েকদিন সেখানে চিকিৎসাধীন থেকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। এখন অবশ্য তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ। তিনি এখন ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের প্রেসিডেন্ট। বোর্ডের কাজে স্বাভাবিক ভাবেই যোগ দিয়েছেন তিনি। তাঁর অসুস্থতার জন্য তাঁর রাজনীতি যোগ নিয়ে জল্পনা কিছুদিন বন্ধ ছিল। কিন্তু সিএনএক্স–এর জনমত সমীক্ষার ফল প্রকাশ্যে আসতেই ফের সেই জল্পনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
অবশ্য বিষয়টি নিয়ে এখনও মুখ খোলেননি সৌরভ। মনে করা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করে দেওয়ার পর এ বিষয়ে নিজের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা প্রকাশ্যে জানাবেন। সিএনএক্স–এর সমীক্ষার ফলে দেখা যাচ্ছে, ৭৭ শতাংশ মানুষ চাইছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের রাজনীতিতে আসা উচিত। তা হলে বাংলার রাজনীতি সমৃদ্ধই হবে বলে তাঁরা মনে করছেন। অন্যদিকে, মাত্র ২১ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, তাঁরা চান না সৌরভ রাজনীতিতে আসুন। আর ২ শতাংশ এ ব্যাপারে কোনও রকম মতামত দিতে অস্বীকার করেছেন। উল্লেখ্য, সৌরভকে রাজনীতিতে সমস্ত দলই সমীহ করে চলে। তিনি অসুস্থ হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ–সহ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা যেমন বারবার খোঁজ নিয়েছেন, তেমনই তাঁকে দেখতে গিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য, সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য, সুজন চক্রবর্তী প্রমুখ।
এদিকে, বুধবারই বিজেপিতে যোগ দিলেন টালিগঞ্জের অভিনেতা যশ দাশগুপ্ত, অভিনেত্রী পাপিয়া অধিকারী, শর্মিলা ভট্টাচার্য, সৌমিলি বিশ্বাস প্রমুখ। কলকাতার একটি পাঁচতারা হোটেলে তাঁদের হাতে দলের পতাকা তুলে দেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহসভাপতি মুকুল রায়। উল্লেখ্য, অভিনেতা যশ যখন বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, তখন তাঁর ‘বিশেষ বান্ধবী’ নুসরত জাহান রয়েছেন তৃণমূলে। নুসরত লোকসভার সাংসদ। দু’জন রয়েছেন দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দলে। ঘটনাটি কি তাঁদের ‘বন্ধুত্বে’ প্রভাব ফেলবে? বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে যশ বলেছেন, ‘আমি যে আজ বিজেপিতে যোগ দিয়েছি, সে কথা নুসরতকে এখনও বলিনি। তা ছাড়া আমাদের বন্ধুত্ব অভিনয়কে ঘিরেই। মানুষের জন্য কাজ করতেই আমার রাজনীতিতে আসা। শুধু নুসরত তো নয়, আমার আরেক বন্ধু মিমিও তো তৃণমূল সাংসদ।’
কিন্তু যশ–মিমির সম্পর্ক তো এখন অতীত। বরং যশ–নুসরত সম্পর্কই এখন সংবাদ মাধ্যমের কাছে চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। এমনকী, নুসরত তাঁর স্বামীর ঘর ছেড়ে এখন বাপের বাড়িতে রয়েছেন। নুসরত–নিখিলের সংসার নাকি এখন ভাঙার মুখে। এর পেছনে নাকি যশের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কই দায়ী বলে অনেকের অনুমান। কিন্তু যশের স্পষ্ট কথা, ‘যে যার ব্যক্তিগত পছন্দ অনুযায়ী রাজনীতি করে। বন্ধুত্বের মধ্যে রাজনীতি না ঢোকানোই ভালো।’ তবে যশের বিজেপিতে যোগ দেওয়া নিয়ে নুসরত এখনও মুখ খোলেননি। তবে এদিন টুইট করে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে তিনি যে ভাবে আক্রমণ করেছেন, তাতে রাজনৈতিক মহলের ধারণা, তিনিও বন্ধুত্বের বাইরেই রাজনীতিকে রাখতে চাইছেন।
তবে রাজনীতিতে এখনই আসছেন না বলে বুধবার জানিয়ে দিলেন অভিনেতা প্রসেনজিত। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা করেন বিজেপি নেতা অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর হাতে অনির্বাণ নিজের লেখা একটি বই তুলে দেন। তার পরই পশ্চিমবাংলার রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়ে যায়, প্রসেনজিত হয়তো বিজেপিতেই যোগ দিতে চলেছেন। তার পরই অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র তোপ দাগেন প্রসেনজিতের বিরুদ্ধে। শ্রীলেখা সিপিএম ঘনিষ্ঠ বলে টালিগঞ্জে পরিচিত। কিন্তু এদিন প্রসেনজিত সাংবাদিকদের জানিয়ে দেন, এই মুহূর্তে তিনি রাজনীতিতে আসছেন না। উল্লেখ্য, সোমবার গভীর রাতে মিঠুন চক্রবর্তীর মুম্বইয়ের বাংলোয় যান আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। তার পর মিঠুনকে নিয়েও একই রকম জল্পনা তৈরি হয়েছিল। মিঠুন অবশ্য সেই জল্পনা উড়িয়ে দেন। কিন্তু এত সব রটনা শুধুই রটনা, নাকি তার আড়ালে অন্য ঘটনা রয়েছে, তা নিয়ে চর্চা অব্যাহত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মধ্যে।
এ ছাড়া, এদিন পশ্চিম মেদিনীপুরের পিছাবনিতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন বিজেপি শুভেন্দু অধিকারী। সেখানে বিজেপির হয়ে রোড শো শুরু করার আগে তিনি বলেন, ‘আমি মাটির গন্ধ জানি। মাটিতে নেমে রাজনীতি করি। তাই বলছি, এবার বিধানসভা নির্বাচনের পর তৃণমূলের কোনও অস্তিত্ব থাকবে না। বিজেপিই বিপুল ভোটে নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসবে।’ উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে এক জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, এবারের ভোটে তৃণমূল ২২১টি আসনে জিতে ক্ষমতায় আসবে। আর কুলপিতে অপর এক জনসভায় মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, এবারের নির্বাচনে তৃণমূল ২৫০টি আসনে জিতে সরকার গড়বে। তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের এই দুই দাবির জবাবে এদিন শুভেন্দু মুখ খোলেন বলে ধারণা রাজনৈতিক মহলের।