বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা : তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রসঙ্গে ফের তীব্র আক্রমণ শানালেন শুভেন্দু অধিকারি। কারও নাম না করে তিনি অভিযোগ করেছেন, গ্রামবাংলায় মদের দোকান ছড়িয়ে দিয়ে সেখান থেকেও তোলা নেন ভাইপো। পাশাপাশি অভিষেক–জায়াকে সিবিআইয়ের জেরা করা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে গোটা বাংলার মহিলাদের সম্মানকে জড়িয়ে দিতে চেয়েছেন, তার তীব্র সমালোচনা করেছেন বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। আবার, এদিনই বাংলা সিনেমার অভিনেত্রী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় যোগ দিলেন বিজেপিতে। অন্যদিকে, কলকাতায় বিমান বসু এবং অধীর চৌধুরি বৈঠকে বসেও বাম–কংগ্রেস জোটে আব্বাস–কাঁটা কী করে মেটাবেন, তার পথ খুঁজে পাননি। ফলে জট অব্যাহত জোটে।
হুগলির ডানকুনিতে এক সভায় বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারি চাঁছাছোলা ভাষায় বলেন, ‘পাড়ায় পাড়ায় এখন তো রাজ্য সরকারের সৌজন্যে মদের দোকানের ছড়াছড়ি। এর কারণও আছে। প্রত্যেক মদের বোতলে আড়াই টাকা করে ভেট দিতে হয় ভাতিজাকে (ভাইপো)।’ এর পর তিনি তোপ দাগেন অপর তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। বলেন, ‘আপনাদের সাংসদের তো অনেক কীর্তি আছে। তিনি দু’টাকার পাউচ আর একটা কুমরো নিয়ে সবসময় ঘুরে বেড়ান।’ এর জবাব দিতে গিয়ে অবশ্য ভদ্রতার সীমা ছাড়িয়ে যান কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘যতই ভদ্র সেজে থাকুক, আসলে শুভেন্দু একটা জন্তু (জানোয়ার) ছাড়া আর কিছু নয়।’ পাল্টা দিতে ছাড়েননি শুভেন্দুও। বলেন, ‘এ–সব কাণ্ড তিনি যত করবেন, ততই আমাদের ভালো। কারণ, বাংলার মানুষ কখনও এ–সব সমর্থন করেননি, করবেনও না।’
এদিন বেশ আক্রমণাত্মক ছিলেন বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ও। কয়লা পাচার–কাণ্ডে সিবিআই জেরা করেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী রুজিরা নারুলাকে (বন্দ্যোপাধ্যায়)। এর পরই বিষয়টিকে বাংলার নারী সমাজের সঙ্গে জড়িয়ে দিয়ে সিবিআই, বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেখেছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার বাঁকুড়ার ইন্দাসে এক জনসভায় লকেট চট্টোপাধ্যায় সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরে আক্রমণ শানান মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, ‘নিজের বউমা কয়লা চোর। আর মুখ্যমন্ত্রী সারা বাংলার বউমাদের কয়লা চোর বানিয়ে দিলেন! আগে নিজের বাড়ির ঝামেলা মেটান। বাংলার বউমাদের জড়াচ্ছেন কেন? কেন বাংলার নারী সমাজকে চোর বানাচ্ছেন?’ এদিকে, এদিন সবাইকে চমকে দিয়েছেন টালিগঞ্জের অভিনেত্রী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়। অভিনেতা যশ দাশগুপ্ত, অভিনেত্রী পায়েল সরকারের পর এই হেভিওয়েট নেত্রী এদিন যোগ দিলেন গেরুয়া শিবিরে।
পশ্চিমবাংলায় তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত। তাই তাঁর এই পদক্ষেপে চমকে গিয়েছেন অনেকেই। এদিন কলকাতায় তাঁর হাতে বিজেপির পতাকা তুলে দেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত, রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ প্রমুখ। অন্যদিকে, আইএসএফ প্রধান আব্বাস সিদ্দিকিকে নিয়ে জোট অব্যাহত রইল বাম–কংগ্রেস জোটে। আব্বাস সমস্যার সমাধান কী করে সম্ভব, তার নির্দিষ্ট পথ এখনও বাতলাতে পারেননি কোনও বাম বা কংগ্রেস নেতাই। যদিও বিষয়টি নিয়ে মীমাংসার জন্য এদিন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বৈঠকে বসেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরির সঙ্গে। রবিবার ব্রিগেডে প্রকাশ্য সভায় যে ভাবে কংগ্রেসকে আক্রমণ করেছিলেন আব্বাস সিদ্দিকি, বৈঠকে বিমান বসু পরিষ্কার করে দেন, তার সঙ্গে তিনি সহমত নন।
অন্য বাম নেতারা তাঁকে নিয়ে যতই গদগদ ভাব দেখান না কেন, বিমানবাবু এদিন বলেই দেন, ‘জোটের একটা সর্বসম্মত মত থাকে। তার বাইরে কারও কিছু বলা উচিত নয়। আশা করি, ব্যাপারটা সবাই বুঝতে পারবেন।’ কিন্তু অধীর চৌধুরি এদিনও পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, মালদা ও মুর্শিদাবাদ কংগ্রেসের ঘাঁটি। এই দুই জেলা থেকেই তাঁদের বেশির ভাগ সাংসদ, বিধায়ক রয়েছেন। তাই এই দুই জেলা থেকে কোনও আসনই তাঁরা ছাড়বেন না আব্বাসকে। বৈঠক যে ব্যর্থ, সে খবর গোপন ছিল না আব্বাসের কাছেও। এদিন সেই প্রসঙ্গে নিজের অনড় মনোভাবের কথাও পরিষ্কার করে দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘অধীরদা ঠিকই বলেছেন, কংগ্রেসের হাতে রয়েছে মাত্র ৫২টি আসন। তাই সেই আসনগুলি তিনি ছাড়বেন না বলেছেন। এ কথা বলার এক্তিয়ার রয়েছে তাঁর বা কংগ্রেসের। আবার, আমরা কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করব কিনা, সে কথা বলার স্বাধীনতাও আমাদের আছে।’
তাঁর ইঙ্গিত অস্পষ্ট নয় বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তাই জোটের পরিণতি কী হয়, তা নিয়ে এখনও কোনও বিশেষজ্ঞই নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না।