জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন ও নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলের যৌথ উদ্যোগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস-২০২১ উদযাপন করা হয়েছে। স্থানীয় সময় বুধবার সকালে স্থায়ী মিশন ও কনস্যুলেট স্ব স্ব কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিবসটির কর্মসূচি শুরু করে। এরপর জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
সকালের আয়োজনের মধ্যে আরও ছিল দিবসটি উপলক্ষে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণীপাঠ, মুক্ত আলোচনা এবং জন্মদিনের কেককাটা পর্ব। স্থায়ী মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে এবং কনস্যুলেট জেনারেলের অডিটোরিয়ামে আলাদাভাবে আয়োজিত সকালের পর্বে জাতির পিতা ও তার পরিবারের শাহাদাৎবরণকারী সদস্যদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
বিকেলে স্থায়ী মিশন ও কনস্যুলেটের যৌথ উদ্যোগে শিশুদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে ভার্চুয়ালভাবে অনুষ্ঠিত হয় শিশু আনন্দমেলা। এতে নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশি শিশুদের অংশগ্রহণে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ উপস্থাপন এবং ‘নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে বঙ্গবন্ধুর উদ্দেশ্যে পত্রলিখন’ প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। বিজয়ীদের ভাষণ উপস্থাপনের ভিডিও ও পত্র ভার্চুয়াল এই অনুষ্ঠানে প্রদর্শন করা হয়। শিশুদের অংশগ্রহণে ‘শুনো একটি মুজিবের কণ্ঠে’ সমবেত সঙ্গীত, কবিতাপাঠ ও নৃত্যানুষ্ঠানের আয়োজনে মুগ্ধ হন দর্শকরা।
অনুষ্ঠানটির র্যাফেল ড্র পর্ব অংশগ্রহণকারী শিশুদের বাড়তি আনন্দ এনে দেয়। বিকেলের এই ভার্চুয়াল আয়োজনে জাতির পিতার জন্ম থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, স্বাধীন বাংলাদেশ পুনর্গঠনসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তার অবদানের ওপর একটি শিশুতোষ গ্রাফিক্স ভিডিও প্রদর্শন করা হয়।
সকালের আলোচনা পর্ব এবং বিকেলের ‘শিশু আনন্দমেলা’ উভয়পর্বেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। এছাড়া শিশুদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল, নিউইয়র্ক কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুন্নেছা।
স্বাগত বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা বলেন, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একইসূত্রে গাঁথা। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলার স্বাধিকার আদায়ের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে জাতির পিতা সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আমাদের উপহার দিয়েছেন স্বাধীন স্বার্বভৌম বাংলাদেশ।
তিনি আরও বলেন, জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে অদম্য গতিতে এগিয়ে চলেছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্লোগান ‘মুজিববর্ষের কূটনীতি, প্রগতি ও সম্প্রীতি’ এবং এ বছর জাতীয় শিশু দিবসের প্রতিপাদ্য ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, শিশুর জীবন হোক রঙিন’ উদ্বৃত করেন তিনি।
জাতির পিতা শিশুদের কতটা গভীরভাবে ভালোবাসতেন, শিশুদের সুন্দর ভষ্যিতের জন্য তিনি তার সাড়ে তিন বছরের সরকারে যে সকল পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করে গেছেন যা তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা।
প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মকে জাতির পিতার সংগ্রামীজীবন সমন্ধে অবহিত করা এবং শিশুকাল থেকেই দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধু করার জন্য অভিভাবকসহ সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত ফাতিমা। তিনি শিশুদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর লেখা একটি চিঠি পাঠ করে শোনান।
কোভিড-১৯ এর এই সংকটময় প্রেক্ষাপটে স্থানীয় নীতি ও নির্দেশনা, জাতিসংঘ সদরদফতরের পরামর্শ ও জাতীয় নির্দেশনা অনুযায়ী জনস্বার্থ রক্ষার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সকালের পর্বটি সংক্ষিপ্ত আকারে এবং বিকালের পর্বটি ভার্চুয়ালভাবে আয়োজন করা হয়।
স্ব স্ব কার্যালয়ে সকালের আয়োজনে যথাক্রমে স্থায়ী মিশন ও কনস্যুলেটের সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী অংশগ্রহণ করেন। বিকেলের পর্বে নিউইয়র্ক বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পারফর্মিং আর্টস্ (বিপা) এবং বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টস্ (বাফা) এর শিশুশিল্পী এবং নিউইয়র্কে বসবাসরত শিশু ও তাদের অভিভাবকসহ স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ভার্চুয়াল শিশু আনন্দমেলায় অংশগ্রহণ করেন।