বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা :
কে জানত খ্যাপা ষাঁড়ের আক্রোশ গিয়ে পড়বে তৃণমূল নেত্রীর মিছিলের ওপর! হাওড়ায় তৃণমূলের সেই বিশাল পদযাত্রাকে রীতিমতো বেসামাল করে দেয় ওই ষাঁড়। হাওড়ার সেই পদযাত্রায় মিনিট দশেক তাণ্ডব চালায় ওই ষাঁড়। ঘটনায় শোরগোল পড়ে যায় তৃণমূল শিবিরে। পরে অবশ্য মিছিলটি নির্বিঘ্নেই শেষ করা গিয়েছে। অন্যদিকে, রায়দিঘিতে এক জনসভায় আগের বারের প্রার্থী দেবশ্রী রায় সম্পর্কে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেন, সেখানকার মানুষ নাকি তাঁকে চাইছেন না। তাই প্রার্থী বদল করে এবার নতুন প্রার্থী দিয়েছেন তিনি। দলনেত্রীর ওই মন্তব্যে নিজের ক্ষোভ গোপন রাখেননি অভিনেত্রী তথা বিদায়ী বিধায়ক।
উত্তর হাওড়ার পিলখানায় হুইল চেয়ারে বসেই পদযাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন তৃণমূল দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার বিকেলে ওই পদযাত্রা যখন জিটি রোডের কাছে পৌঁছে যায়, তখন হঠাৎই ঘটে বিপত্তি। না, কোনও বিরোধী দলের কর্মী–সমর্থক এই বিপত্তি ঘটাননি। বিপত্তি ঘটাল একটি ষাঁড়। কোত্থেকে উদয় হয়ে আচমকাই ঢুকে পড়ল ওই জনবহুল মিছিলের মধ্যে। শুধু ঢুকলই না, এত মানুষের উপস্থিতি দেখে হয়তো একটু ঘাবড়ে গিয়েই খেপে যায় সে। শুরু করে দেয় তাণ্ডব। ষাঁড়ের তাণ্ডবে রীতিমতো ঘাবড়ে যান তৃণমূল কর্মী–সমর্থক থেকে শুরু করে পুলিশ কর্মীরাও। কী করবেন কেউই বুঝে উঠতে পারছিলেন না। ছন্নছাড়া অবস্থা হয়ে যায় মিছিলের। কর্মী–সমর্থকরা এদিক–সেদিকে ছুটোছুটি শুরু করে দেন। তা দেখে আরও বিরক্ত হয় ষাঁড়টি। সে–ও দিকভ্রান্ত হয়ে ছুটোছুটি শুরু করে দেয়।
ষাঁড় যখন এই কাণ্ড ঘটাচ্ছে, তখন মিছিলের সেই স্থান থেকে খুব বেশি দূরে ছিলেন না মমতা। তাঁর নিরাপত্তা রক্ষীরাও রীতিমতো আশঙ্কিত হয়ে পড়েন। তাঁরা নেত্রীকে ঘিরে এগিয়ে পিছিয়ে নিয়ে যেতে শুরু করেন। সেই সঙ্গে মিছিলের পুরোভাগে থাকা কর্মী–সমর্থকরা লাঠি, দড়ি সংগ্রহ করে ব্যস্ত হয়ে পড়েন ষাঁড়টিকে নিয়ন্ত্রণের জন্য। কিন্তু বিশাল দেহের ষাঁড়টিকে কী করে যে ধরে–বেঁধে বাগে আনা যাবে, সে কথা ভেবেই উঠতে পারছিলেন না কেউ। ফলে খ্যাপা ষাঁড়টিকে নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছিল না। এক সময় কর্মীরা দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলতে সমর্থ হন ষাঁড়টিকে। কিন্তু বিশালকার ষাঁড়টি সেই দড়ি অনায়াসে ছিঁড়ে বেরিয়ে যায় এবং তাণ্ডব চালিয়ে যেতে থাকে। কোনও উপায় না দেখে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে সেই ষাঁড়টিকে। শেষ পর্যন্ত পুলিশের লাঠিতেই যেন ‘সোজা’ হয় খ্যাপা ষাঁড়। রণে ভঙ্গ দিয়ে মিছিল থেকে বেরিয়ে একটি গলিতে ঢুকে যায়। স্বস্তি পান পুলিশ কর্মীরা। কর্মী–সমর্থকরাও মিছিল শুরু করেন।
অন্যদিকে, এদিন রায়দিঘিতে নির্বাচনী জনসভা ছিল মমতার। সেখানে তিনি আচমকাই টেনে আনেন অভিনেত্রী তথা বিদায়ী বিধায়ক দেবশ্রী রায়ের নাম। বলেন, ‘রায়দিঘিতে আগে আমাদের বিধায়ক ছিল দেবশ্রী রায়। কিন্তু মানুষের মারাত্মক ক্ষোভ ছিল তার ওপর। তাই এবার তাকে প্রার্থী করিনি। আমি এ ক্ষেত্রে মানুষের দাবিকেই মর্যাদা দিয়েছি।’ এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া দিতে দেরি করেননি দেবশ্রীও। রীতিমতো ক্ষোভ জানিয়ে বলেছেন, ‘আমিই ওই কেন্দ্রে এবার প্রার্থী হতে চাইনি। তাই আমাকে প্রার্থী করা হয়নি।’ এর পর মমতার নাম না করে বলেন, ‘তিনি আমার আদর্শ ছিলেন। সেই আদর্শেই তাঁর হাত ধরে রাজনীতিতে আসি। বুঝতে পারিনি তাঁর কাছ থেকে এত বড় প্রতিদান পাব। ধন্যবাদ তাঁকে।’ কিন্তু তিনি প্রার্থী হতে চাননি কেন? তাঁর জবাব, ‘তৃণমূল কর্মীদের একটি অংশ চরম দুর্নীতিতে জড়িয়ে গিয়েছিলেন। আমি তার প্রতিবাদ করেছিলাম। তাই সবাই আমার পিছনে উঠেপড়ে লেগেছিলেন। আমাকে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়েছে। তাই আমি এই কেন্দ্রে আর প্রার্থী হতে চাইনি। আমাকে মানুষ চায় না, এ কথা ঠিক নয়। তিনি এখানে নিয়মিত আসেন না। তাই সত্যিটা হয়তো জানেন না।’
উল্লেখ্য, রায়দিঘি থেকে পর পর দু’বার বিধায়ক হয়েছেন অভিনেত্রী দেবশ্রী রায়। এবার তাঁকে প্রার্থী করেনি তৃণমূল। ক্ষুব্ধ দেবশ্রী দল ছেড়ে দেন। ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সিকে। এবার সেই আসনে তৃণমূল প্রার্থী করা হয়েছে অলক জলদাতাকে। দেবশ্রী বলেন, ‘ওই আসনে অনেক কষ্টে জয় এনেছিলাম। আমাকে দেখেই মানুষ ভোট দিয়েছিল। জানি না এবার কী হবে!’ দেবশ্রীর এ কথায় অন্য ইঙ্গিত রয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
এ ছাড়া, রায়দিঘির এই জনসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরও একটি মন্তব্য নিয়ে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী হয়েছে শান্তনু বাপুলি। সে এখানে তৃণমূলের প্রার্থী হতে চেয়েছিল। কিন্তু সে কলকাতায় থাকে, এখানে থাকে না। তাই তাঁকে প্রার্থী করিনি।’ মমতার এই মন্তব্য নিয়েও বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে। এ কথার সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
কারণ, এ বছর রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে জুন মালিয়া, সোহম চট্টোপাধ্যায়, সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, কৌশানী মুখোপাধ্যায় প্রমুখ শিল্পীদের প্রার্থী করেছে তৃণমূল। তাঁরা সকলেই কলকাতায় থাকেন। তা ছাড়া রায়দিঘির দু’বার তৃণমূল বিধায়ক দেবশ্রী রায়ও কলকাতার বাসিন্দা। তা হলে এমন যুক্তি রায়দিঘিতে দিতে গেলেন কেন মমতা? প্রশ্ন তৃণমূল কর্মীদেরই।
রাজ্যে তৃতীয় দফায় যে সব কেন্দ্রে ভোট হবে, সেই তালিকায় রয়েছে এই কেন্দ্রও। ভোট হবে মঙ্গলবার। এখানে এবার সিপিএম প্রার্থী করেছে হেভিওয়েট নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়কে।