বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা :
ভোটের প্রচারে চুঁচুড়ায় গিয়ে সাংসদ তথা চুঁচুড়ার বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়কে সরাসরি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে দিতে চাইলেন তৃণমূল দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী, লকেটকে তিনি রোজভ্যালির সঙ্গে জড়িয়ে তাদের গলার ‘লকেট’ বলে কটাক্ষ করলেন। যদিও তাঁর এই কটাক্ষকে কেউ কেউ অশালীন ইঙ্গিত বলে মনে করছেন। অন্যদিকে, লকেট চট্টোপাধ্যায়ও প্রমাণ চেয়ে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রীর দিকে।
আট দফার মধ্যে মাত্র দুই দফার ভোট হয়েছে। তৃতীয় দফার ভোট মঙ্গলবার। ভোটের দফা যত এগোচ্ছে, তৃণমূল দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ততই যেন মেজাজ হারাচ্ছেন। এতদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে কদাকার, হোদল কুতকুত বলে কটাক্ষ করতেন, কখনও বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডাকে ‘চাড্ডা, ফাড্ডা, নাড্ডা’ বলে বিদ্রূপ করেছেন। এবার বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়কে যে ভাষায় তিনি আক্রমণ করেছেন, একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হয়ে আরেকজন মহিলাকে সেই ভাষায় আক্রমণ করা যায় কিনা, তা নিয়ে কারও কারও মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি তাঁর কটাক্ষ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরালও হয়ে গিয়েছে। অনেকে এই প্রশ্নও তুলেছেন, তা হলে বিজেপি সাংসদ লকেটও কি চিটফান্ডের সঙ্গে জড়িত?
এদিন চুঁচুড়ায় এক জনসভায় মমতা বলেন, ‘বিজেপি লকেটকে প্রার্থী করেছে কেন? আসলে ওদের লোক নেই। এর পর নিশ্চয় পুরভোট, পঞ্চায়েত ভোটেও দাঁড়াবে। আমি তো ওদের সব কিছু জানি।’ তার পরই চিটফান্ডের সঙ্গে লকেটকে জড়িয়ে দেন তিনি। বলেন, ‘লকেট তো রোজভ্যালির গলার লকেট হয়ে ঘুরে বেড়ায়। সব জানি। ও তো জিতবে না। বিজেপির হয়ে টাকার জন্য দাঁড়িয়েছে। এরা এমপি হবে, এমএলএ হবে, কাউন্সিলর হবে, গ্রামসভা হবে, ভাত খাবে, মাছ খাবে, মাংস খাবে, দুধ–ভাত খাবে, দই খাবে, বিরিয়ানি খাবে, তরকা খাবে। আর অন্য মানুষ কেউ কিছু খাবে না! কেন?’ কিন্তু মমতা যে ভাবে লকেটকে ‘রোজভ্যালির গলার লকেট হয়ে ঘুরে বেড়ায়’ বলে কটাক্ষ করেছেন, তাকে কেউ কেউ অশালীন ইঙ্গিত বলে মনে করছেন।
অবশ্য লকেট চট্টোপাধ্যায়ও তাঁর মন্তব্যের কড়া উত্তর দিয়েছেন। তবে জবাব দিয়েছেন অত্যন্ত পরিশীলিত ভাষায়। বলেছেন, ‘তিনি এখনও মুখ্যমন্ত্রী। তাই তাঁকে নিয়ে যা–তা কথা আমি বলতে পারব না।’ এদিন তিনি প্রচারের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তাঁরই ফাঁকে সংবাদ মাধ্যমের কাছে তিনি পাল্টা বলেন, ‘ক্ষমতা থাকলে, প্রমাণ করুন, মামলা করুন। আসলে তিনি বুঝে গিয়েছেন, এবার তিনি হারছেন। তিনি সত্যিই এখন জেনে গিয়েছেন নন্দীগ্রামে হারবেন। সারা বাংলায় তাঁর দল হারছে। তাই হারের ভয়ে এখন এ–সব বলছেন। মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন।’
উল্লেখ্য, বিজেপি নেতারা বারবার চিটফাণ্ড কেলেঙ্কারিতে তৃণমূলের একাধিক নেতার জড়িয়ে থাকার অভিযোগ করে এসেছেন। এমনকী, লকেট চট্টোপাধ্যায়ও এ নিয়ে বারবার তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। এবারও চিটফান্ড কেলেঙ্কারি ভোটবাজারে রীতিমতো অস্বস্তি বাড়িয়েছে শাসক শিবিরে। তাই এই প্রশ্নও উঠেছে, সেই অস্বস্তি এড়াতেই কি মমতা এবার চিটফাণ্ড ইস্যু টেনে সরাসরি বিজেপি প্রার্থীকে জড়িয়ে দিতে চাইছেন? যদিও লকেটের মুখে এখনও একটাই কথা, ‘চিটফান্ড–কাণ্ডে প্রতারিতরা এখনও টাকা ফেরত পাননি। সে কথা কি মুখ্যমন্ত্রী বা তাঁর ভাইপো ভুলে গিয়েছেন?’ এর আগে চিটফান্ড ইস্যুতে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী একবার বলেছিলেন, ‘যা গেছে, তা গেছে।’ তাঁর সেই কথা নিয়েও সমালোচনা হয়েছিল।