বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা :
১৪৪ ধারা জারি ছিল প্রতিটি কেন্দ্রেই। নির্বাচন কমিশনেরও দাবি, ভোট হয়েছে নির্বিঘ্নেই। এ কথা ঠিক, হিংসার জেরে কোথাও ভোট প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেনি। তবে হিংসা, মারামারি, জখম হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এমনকী, এড়ানো যায়নি প্রাণহানির মতো ঘটনাও। আর তা কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকা সত্ত্বেও। বিজেপি প্রার্থী তথা অভিনেত্রী পাপিয়া অধিকারীকে মারধর করে একদল তৃণমূল কর্মী। আবার তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা মণ্ডলকে একটি গ্রামের বাসিন্দারা নিগ্রহ করে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এর পর চতুর্থ দফার ভোট গ্রহণ করে হবে ১০ এপ্রিল।
মঙ্গলবার পশ্চিমবাংলার বিধানসভা নির্বাচনে ৩১টি আসনে ভোট গ্রহণ হয়। এদিন ভোট গ্রহণ হয় ১০ হাজার ৮৭১টি কেন্দ্রে। মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আরিজ আফতাব জানিয়েছেন, এদিন মোট ২০৫ জন প্রার্থী ছিলেন ৩১টি আসনে। তাঁদের মধ্যে ১৯২ জন পুরুষ এবং ১৩ জন মহিলা। পর্যবেক্ষক ছিলেন মোট ৩৮ জন। ২২ জন সাধারণ, ৭ জন পুলিশ এবং ৯ জন ব্যয় পর্যবেক্ষক। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৭৭.৬৮ শতাংশ। এর মধ্যে হুগলিতে ভোটদানের হার ৭৯.৬৩ শতাংশ, হাওড়ায় ৭৭.৯৩ শতাংশ এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৭৬.৬৮ শতাংশ। যদিও বহু বুথে রাত আটটার পরও ভোট গ্রহণ করতে দেখা গিয়েছে। ফলে ভোটদানের হার আরও বাড়বে বলে ধরে নেওয়া যায়। শুরুতেই শোনা যায়, এক তৃণমূল নেতার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে চারটি ইভিএম এবং ভিভিপ্যাট। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ নির্বাচন কমিশন সেকেন্ড অফিসারকে সাসপেন্ড করেছে। যদিও সেকেন্ড অফিসার দাবি করেছেন, তিনি নাকি জানতেন না ওই ব্যক্তি তৃণমূল নেতা। অবশ্য তাঁর সাফাই গ্রহণ করেনি কমিশন।
ইভিএম কাণ্ডে ১ সাব ইন্সপেক্টর ও ৩ জন হোমগার্ডকেও সাসপেন্ড করা হয়। জানা গিয়েছে, উলুবেড়িয়া উত্তর বিধানসভার অন্তর্গত তুলসিবেড়িয়ার গাঁতাইত পাড়ায় গৌতম ঘোষ নামে এক তৃণমূল নেতার বাড়িতে চারটি ইভিএম এবং ভিভিপ্যাটের সেট নিয়ে আসা হয়। খবর জানাজানি হতেই উত্তেজনা তৈরি হয় এলাকায়। ওই নেতার বাড়ি ঘেরাও করে স্থানীয়রা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। খবর পেয়ে আসেন উলুবেড়িয়া ২ নম্বর ব্লকের বিডিও এবং সেক্টর অফিসার। তাঁরা ঘেরাও হলে সেখানে যায় পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী। উত্তেজিত জনতাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। বেলা বাড়তেই বিভিন্ন স্থান থেকে সঙ্ঘর্ষের খবর আসতে শুরু করে। এইসব ঘটনায় বিজেপি, তৃণমূল, সিপিএম ও আইএসএফের ৬ জন প্রার্থী আহত হয়েছেন। যদিও আরিজ আফতাব দাবি করেছেন, প্রতিটি ঘটনায় দ্রুত পদক্ষেপ করা হয়েছে। ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার সময়ই হিংসার জেরে প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়। হুগলির গোঘাটের বদনগঞ্জে এক বিজেপি কর্মীর স্ত্রীকে খুনের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান বিজেপি প্রার্থী বিশ্বনাথ কারক। তাঁর অভিযোগ, হিংসার কথা বারবার প্রশাসনকে জানালেও কাজ হয়নি। বিজেপির তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, আগের রাতে সেখানকার খুশিগঞ্জে বিজেপি করার অপরাধে এক ব্যক্তির ছেলে পিরু আদককে মারধর করে একদল তৃণমূলকর্মী। ছেলেকে বাঁচাতে ছুটে যান তাঁর মা মাধবীদেবী। তখন তাঁকেও বেধড়ক মারা হয়। তাতেই মৃত্যু হয় মাধবীদেবীর। ঘটনার মধ্যে কলকাতার বেলঘরিয়ার নিমতায় কয়েকদিন আগে যে নৃশংস ঘটনা ঘটেছে, তার ছায়া দেখতে পাওয়া গিয়েছে বলে অনুমান ওয়াকিবহাল মহলের। এর পরই একটি আশ্চর্যজনক ঘটনা প্রকাশ্যে চলে আসে। ঘটনাটি ঘটেছে বিষ্ণুপুরে। সেখানকার পানাকুয়ায় ১২৩ নম্বর বুথে এক মহিলাকে ভোট দিতে বাধা দেন এক তৃণমূল কর্মী। ওই মহিলাকে শারীরিক ভাবে হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছে। সেই দৃশ্যও ভাইরাল হয়ে গিয়েছে উপস্থিত জনতার তোলা মোবাইলের ভিডিও মারফত। সেখানে দেখা যায় ওই তৃণমূল কর্মী রীতিমতো শাসিয়ে সেই মহিলাকে ভোট না দিয়ে ফিরে যেতে বলছেন। পাল্টা চ্যালেঞ্জ করতে দেখা যায় ওই মহিলাকেও।
ঘটনায় নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেছে সিপিএম। ইতিমধ্যে রিপোর্ট তলব করেছে কমিশন। সেখানকার সেক্টর অফিসার এবং পুলিশ কর্তাদের ডেকে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁর নাম গৌরাঙ্গ মাখাল। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দুপুরের পর উলুবেড়িয়া দক্ষিণের বিজেপি প্রার্থী পাপিয়া অধিকারীকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এদিন তৃণমূল ও বিজেপির সঙ্ঘর্ষে এক বিজেপি কর্মী আহত হন। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁকে দেখতে গেলে পাপিয়ার সঙ্গে তৃণমূলকর্মীদের বচসা হয়। তখনই পাপিয়া অধিকারীকে চড়–থাপ্পড় মারে তৃণমূল সমর্থকরা। পাপিয়াও সংবাদ মাধ্যমের কাছে সরাসরি তৃণমূলের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেছেন। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। এর পরের ঘটনা হুগলির আরামবাগ। সেখানকার আরান্ডিতে গ্রামবাসীদের একাংশ তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা মণ্ডলকে তাড়া করেন বলে অভিযোগ। ভয় পেয়ে খোলা মাঠে ছুটে পালান সুজাতা। তাঁর পেছনে ছুটতে থাকা গ্রামবাসীদের মধ্যে মহিলারাও ছিলেন।
সুজাতার দাবি, তাঁকে নাকি প্রাণে মারার চেষ্টা করেছে বিজেপি। যদিও সুজাতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিজেপি নেতারা। আবার সুজাতার স্বামী (এখনও ডিভোর্স প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়নি) তথা বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ দাবি করেছেন, সুজাতা নাকি গ্রামে গিয়ে সেখানকার মানুষকে হুমকি দিচ্ছিলেন। তাই ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা তাঁকে তাড়া করেছেন।
আরও পড়ুন : দৈনিক সংক্রমণ কিছুটা কমেছে ভারতে