বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা : রাত পোহালেই পশ্চিমবাংলার বিধানসভা ভোটে পঞ্চম দফার ভোট গ্রহণ হবে শনিবার। এদিন ৬ জেলায় মোট ৪৫টি আসনে ভোট নেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন। এই দফায় বহু বুথই অতি স্পর্শকাতর বলে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নবান্ন দখলের ক্ষেত্রে এই দফার ভোট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে তথ্যাভিজ্ঞ মহল।
এদিন যে ৪৫টি কেন্দ্রে ভোট নেওয়া হবে, সেগুলির মধ্যে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার ১৬টি আসন, নদিয়ার ৮টি আসন, পূর্ব বর্ধমানের ৮টি আসন, দার্জিলিংয়ে ৩টি আসন, কালিম্পংয়ের ১টি আসনে এবং জলপাইগুড়ির সব কটি আসনেই। বেশির ভাগ কেন্দ্রই রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের গড় বলে পরিচিত। তাই সেই আসনগুলিতে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে তৃণমূল মরিয়া চেষ্টা চালাবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। অন্যদিকে, তাদের ধারণা, তৃণমূলের গড় হিসেবে পরিচিত আসনগুলি কেড়ে নিতে বিজেপিও আপ্রাণ চেষ্টা করবে। ফলে সেইসব আসনে হিংসার ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কায় রয়েছে রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা।
পঞ্চম দফায় শাসক দলের যে সব প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হবে, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন তৃণমূল নেতা মদন মিত্র, মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, অভিনেতা চিরঞ্জিত চক্রবর্তী, মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, মন্ত্রী গৌতম দেব, মন্ত্রী সুজিত বসু, গায়িকা অদিতি মুন্সি, মুখপাত্র তাপস রায় প্রমুখ। বিজেপি প্রার্থীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন রাজ্য নেতা শমীক ভট্টাচার্য, সব্যসাচী দত্ত, রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়, সায়নদীপ মিত্র, অভিনেতা পার্নো মিত্র প্রমুখ। এ ছাড়া বামেদের প্রাক্তন মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যেরও ভাগ্য পরীক্ষা হবে এদিন। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের দিক থেকে এই ৪৫টি কেন্দ্রের মধ্যে তৃণমূল এগিয়ে ছিল ২৩টি এবং বিজেপি এগিয়েছিল ২২টি আসনে। এই দফার নির্বাচনে যাতে হিংসার ঘটনা আটকে দেওয়া যায়, সেইজন্য জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন নির্বাচন কমিশনের তরফে বিবেক দুবে।
সেইজন্য কড়া নজরদারি চালাতে ৪৫টি কেন্দ্রে মোতায়েন থাকবে ৮৫৬ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। যদিও এই ভোটের জন্য তৈরি রাখা হয়েছে আরও ২২০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীকে। প্রয়োজন পড়লে তাদেরও ব্যবহার করা হবে। এদিন যে কেন্দ্রগুলিতে ভোট গ্রহণ হবে, সেগুলি হল ধূপগুড়ি, ময়নাগুড়ি, জলপাইগুড়ি, রায়গঞ্জ, ডাবগ্রাম–ফুলবাড়ি, মাল, নাগরাকাটা, কালিম্পং, দার্জিলিং, কার্শিয়ং, মাটিগাড়া–নকশালবাড়ি, শিলিগুড়ি, ফাঁসিদেওয়া, শান্তিপুর, রানাঘাট উত্তর পশ্চিম, কৃষ্ণগঞ্জ, রানাঘাট উত্তর পূর্ব, রানাঘাট দক্ষিণ, চাকদা, কল্যাণী, হরিণঘাটা, পানিহাটি, কামারহাটি, বরানগর, দমদম, রাজারহাট–নিউটাউন, বিধাননগর, রাজারহাট–গোপালপুর, মধ্যমগ্রাম, বারাসত, দেগঙ্গা, হাড়োয়া, মিনাখাঁ, সন্দেশখালি, বসিরহাট দক্ষিণ, বসিরহাট উত্তর, হিঙ্গলগঞ্জ, খণ্ডঘোষ, বর্ধমান দক্ষিণ, রায়না, জামালপুর, মন্তেশ্বর, কালনা, মেমারি, বর্ধমান উত্তর।
এদিকে, রাজ্যে দুটি কেন্দ্রের ভোট বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। দুটি কেন্দ্রই মুর্শিদাবাদের। কেন্দ্র দুটি হল সমশেরগঞ্জ এবং জঙ্গিপুর। শুক্রবার বিকেলে বহরমপুরের কোভিড হাসপাতালে করোনা সংক্রমিত হয়ে মৃত্যু হয় জঙ্গিপুরের আরএসপি প্রার্থী প্রদীপ নন্দীর। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার করোনা সংক্রমিত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল সমশেরগঞ্জের কংগ্রেস প্রার্থী রেজাউল হকের। ফলে এই দুটি আসনের ভোট আপাতত স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। দু্টি কেন্দ্রেই ভোট গ্রহণের কথা ছিল ষষ্ঠ দফায়। এ ছাড়াও চুঁচুড়া কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থীও করোনায় সংক্রমিত বলে জানা গিয়েছে। যদিও চুঁচুড়া কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ চতুর্থ দফায় হয়ে গিয়েছে।