চৌধুরী হারুনুর রশীদ,রাঙামাটি প্রতিনিধি :
রাঙামাটি পাহাড়ে অসুস্থ বন্য হাতির চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে ফিরে গেল সংরক্ষিত বনাঞ্চলে । পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের অধীনে লংগদু উপজেলার ভাসান্যাদম ইউনিয়নের খাগড়াছড়ি মৌজায় বিডিআর ক্যাম্পের সন্নিকটে পাহাড়ের ভিতরে হাতি মাটিতে শুয়ে থাকে । গতকাল মঙ্গলবার খবর পেয়ে নিকটস্থ কর্মকর্তা -কর্মচারীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পর্যাবেক্ষন করে। বন কর্মকর্তা -কর্মচারীরা হাতিটি কিছুক্ষণ পরপর উঠে দাঁড়ায়, একটু পায়চারি করে আবার শুয়ে পড়ে। মুখ দিয়ে একটু পরপর হা করে চটপট করে, পায়ে আঘাতের কারনে ফুলে গেলে অসুস্থতা লক্ষ্য করা যায়। বনবিভাগের লোকজন সারারাত হাতিটার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগেন বিভাগীয় বনকর্মকর্তা অজিত রুদ্র জানান,পরের দিন সকালে আমরা দুলহাজারা সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি সার্জন মুস্তাফিজুর রহমান, চট্টগ্রামস্থ ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিবেকানন্দ ও তার টিম সহকারে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামাদি নিয়ে ঘটনাস্হলে যাই। পরে হাতিটি পূর্বের জায়গা থেকে বনের একটু ভিতরে অবস্হান করছে। কিছুটা ঝুকি নিয়ে আমাদের টিম কাছাকাছি গিয়ে অসুস্থতার বিষয় দেখা যায়।
স্হানীয় চেয়ারম্যান ও আনসার ভিডিপির সদস্যরা শতশত উৎসুক জনতাকে নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেন। প্রধান বন সংরক্ষক মহোদয়, বন সংরক্ষক, বন্যপ্রাণী অঞ্চল/রাঙামাটি অঞ্চল, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, বন্যপ্রাণী বিভাগ, চট্টগ্রাম সহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে হাতিটিকে অবশ করার জন্যে tranquilizer gun shoot করা হয়। কিন্তু হাতিটি ঠায় দাড়িয়ে থাকে। পরে আরো দুবার shoot করা হয়। দেখা গেল হাতিটি দাড়িয়ে থাকলেও বডি নিস্তেজ ছিল। দু’পায়ে রশি বেঁধেও হাতিটিকে শোয়ানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সম্ভব হয়নি। যার কারনে ঐ অবস্থাই যাবতীয় চিকিৎসা করা হয়। হাতিটির সামনের ডান পায়ের হাঁটুতে, পিঠে ও বুকে তিনটি গুলির ক্ষত দেখা যায়। ক্ষতগুলোতে ড্রেসিং করা হয়। ব্যথানাশক ও এন্টিবায়োটিক ঔষধ দেয়া হয়। বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য অনুযায়ী হাতিটি আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠবে। সুস্থ হওয়ার হাতিটি গভীর জঙ্গলে চলে যায় ।
বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার উপজেলার ভাসান্ন্যা আদাম ইউনিয়নের খাগড়াছড়ি এলাকায় লোকালয়ে একদল বন্য হাতি আসে। রোববার সকালে অন্য হাতিরা চলে গেলেও লোকালয়ে একটি আমগাছের নিচে একটি হাতি রয়ে যায়। গ্রামের লোকজন দেখতে পেয়ে সেখানে জড়ো হতে থাকেন। পরে বন বিভাগকে খবর দেওয়া হলে হাতিটিকে খাবার দেওয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে বন বিভাগের কর্মীরা নিশ্চিত হন, বন্য হাতিটি অসুস্থ। গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকেরা হাতিটির চিকিৎসা দেন।
এই কাজে সংশ্লিষ্ট সকলকে পরামর্শ ও সহযোগিতার জন্যে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিভাগীয় বনকর্মকর্তা পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগ অজিত কুমার রুদ্র।