কলকাতা সংবাদদাতা :
একটি বাংলা টিভি চ্যানেল এবং সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিল কেন্দ্রীয় বিজেপি। সেই অনুযায়ী রাজ্য বিজেপিকে কঠোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে বলে খবর। রাজ্য বিজেপিও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশ মেনে ওই টিভি চ্যানেল এবং সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে কড়া মনোভাব বজায় রেখেছে।
বাংলার সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে দূরত্ব কিছুতেই ঘুচছে না বিজেপির। যদিও রাজ্য বিজেপির বক্তব্য, তারা বাংলা সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে যথেষ্ট ভালো ব্যবহারই করে থাকেন। তবু একটি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল এবং একটি মধ্য মানের বাংলা দৈনিক ছাড়া তাদের পাশে আর কোনও সংবাদ মাধ্যমই নেই। আর সেই অভিযোগ তারা কেন্দ্রীয় বিজেপিকে জানিয়েও দিয়েছে।
সূত্রের খবর, বেশ কয়েকদিন ধরে বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় বিজেপির সঙ্গে রাজ্য বিজেপির আলোচনা চলছে। এর আগেও রাজ্য বিজেপির তরফে কেন্দ্রীয় নেতাদের বারবার বলা হয়েছে, বিজেপির প্রতি বাংলা সংবাদ মাধ্যমগুলির আচরণ যথাযথ নয়। বিশেষ করে বাংলার একটি বহুল প্রচলিত প্রথম শ্রেণির সংবাদপত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধেই ছিল তাদের প্রধান ক্ষোভ। কেন্দ্রীয় বিজেপি অবশ্য সব সময় রাজ্য বিজেপির বক্তব্য তেমন গুরুত্ব দেয়নি।
এর কারণও অবশ্য ছিল। সর্বভারতীয় স্তরে ওই সংবাদপত্র গোষ্ঠীর দুটি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল রয়েছে। একটি ইংরেজি এবং অপরটি হিন্দি। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্য, ওই দু্টি চ্যানেল রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ভারসাম্য রেখেই খবর সম্প্রচারিত করে থাকে। তাই তাঁরা রাজ্য বিজেপির বক্তব্যকে আমল দেননি। কিন্তু সূত্রের খবর, নির্বাচন পরবর্তী সময়ে সংবাদ মাধ্যমগুলির আচরণ রীতিমতো বিস্মিত করেছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের।
রাজ্য বিজেপির এক নেতার কথায়, শুধু তাই নয়, নির্বাচনী সমীক্ষার ফল নিয়ে বিস্ময়কর ভাবে সর্বভারতীয় স্তরে ওই গোষ্ঠীর হিন্দি এবং ইংরেজি চ্যানেলে যে রকম রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, ঠিক তার বিপরীত বিজেপির পক্ষে নেতিবাচক রিপোর্ট দেখা গিয়েছে রাজ্য স্তরে বাংলা চ্যানেল এবং সংবাদপত্রে। তার পরই ওই গোষ্ঠীর সংবাদ প্রচারের ধরন ও উদ্দেশ্য নাকি স্পষ্ট হয়ে যায় কেন্দ্রীয় বিজেপির।
এর পরই রাজ্য বিজেপির তরফে বাংলার সংবাদ মাধ্যমগুলির আচরণ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় বিজেপিকে। তারা কেন্দ্রীয় বিজেপিকে জানিয়েছে, পশ্চিমবাংলার টিভি চ্যানেলগুলি দেখলে মনে হবে, রাজ্য যেন খুব শান্তিতে রয়েছে। অথচ নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর ৩০ দিনে এই রাজ্যে ২৭ জন বিজেপি নেতা ও কর্মী খুন হয়েছেন। সেইসব খবর তারা সম্প্রচারই করেনি। বরং তারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে ব্যস্ত থেকেছে।
রাজ্য বিজেপি আরও জানিয়েছে, যদি কখনও কোথাও বিজেপি নেতা ও কর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার খবর ওই গোষ্ঠীর বাংলা চ্যানেলে দেখানো হয়েছে বা সংবাদপত্রে প্রকাশ করা হয়েছে, তখন তা ব্যালান্স করার জন্য কষ্টকল্পিত ভাবে তৃণমূল কর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার খবরও দেখানো হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেইসব হিংসা নাকি তৃণমূলের গোষ্ঠী সঙ্ঘর্ষ। অথচ তৃণমূল নেতাদের উদ্ধৃত করে বিজেপির বিরুদ্ধে সেই খবরগুলিতে অভিযোগ তোলা হয়েছে।
এ ছাড়া, করোনা এবং ইয়াস পরবর্তী সময়ে ত্রাণ বণ্টন নিয়ে রাজ্যে বৈষম্য করা হচ্ছে বলে রাজ্য বিজেপির অভিযোগ। কিন্তু কোনও সংবাদ মাধ্যমই তা খবর করার প্রয়োজন বোধ করছে না। বরং তাদের সংবাদ প্রচারের ধরন দেখে সবাই ভাববেন, রাজ্যে যেন করোনা বা ইয়াস সঙ্কটের সমস্ত প্রভাবই রুখে দিয়েছে রাজ্য সরকার। এমনকী, প্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং নারদা–কাণ্ড নিয়েও এক পেশে খবর সম্প্রচার করে গিয়েছে।
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা রাজ্য বিজেপির সমস্ত অভিযোগ যাচাই করে দেখেছেন। তাঁরা স্বীকার করে নিয়েছেন, পশ্চিমবাংলায় সংবাদ মাধ্যমে গণতন্ত্রের কিছু অবশিষ্ট নেই। রাজ্য সরকার সমস্ত সংবাদ মাধ্যমকেই বশংবদে পরিণত করেছে। বিশেষ করে ওই সংবাদপত্র গোষ্ঠী সম্পর্কে সতর্ক হয়ে গিয়েছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা। তাঁরা ওই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কড়া অবস্থানই নিতে চলেছেন বলে খবর।
এখানেই শেষ নয়। ইতিমধ্যে রাজ্য বিজেপিকে কেন্দ্রীয় নেতারা স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন, ওই গোষ্ঠীর চ্যানেলে কোনও বিজেপি নেতা যোগ দিতে পারবেন না। লক্ষ্য করার বিষয়, বেশ কিছুদিন ধরে ওই সংবাদ মাধ্যম গোষ্ঠীর চ্যানেলে যে টক শো–গুলি হচ্ছে, সেখানে কোনও বিজেপি নেতা উপস্থিত থাকছেন না। সেই অভাব পূরণ করতে শোগুলিতে ওই চ্যানেল কিছু অপরিচিত ব্যক্তিদের উপস্থিত করছে, যাঁরা বিজেপির পক্ষে কথা বলছেন। কিন্তু শেষে কোনও যুক্তি খুঁজে না পেয়ে চুপ করে যাচ্ছেন, বা হার স্বীকার করে নিচ্ছেন।
উল্লেখ্য, তৃণমূল বাংলার ক্ষমতায় আসার পর একই পথ নিয়েছিল ওই চ্যানেল। তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওই চ্যানেলে দলের নেতাদের যেতে বারণ করে দেন। তখন এ ভাবেই কিছু ব্যক্তিকে চ্যানেলে হাজির করিয়ে তৃণমূলের পক্ষে বলানো হত। তবে সমস্ত তর্কেই ওই ব্যক্তিরা হার স্বীকার করতেন। বিজেপির রাজ্য নেতাদের বক্তব্য, এবারও বিজেপির বিরুদ্ধে সেই একই রীতি নিয়েছে ওই চ্যানেল কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু এর পর কী হবে? রাজ্য বিজেপি নেতাদের কাছে তার কোনও উত্তর নেই। কেন না, এমন পক্ষপাতিত্বের মতো বিষয়ের ইস্যুতে সংবাদ মাধ্যমের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার কোনও অধিকার কারও নেই। তা হলে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হবে।
বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় বিজেপির এক প্রভাবশালী নেতা জানিয়েছেন, একটু অপেক্ষা করতে হবে সকলকে। তার পরই পরিষ্কার হয়ে যাবে সব। তাই রাজ্য বিজেপি নেতারাও বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন।