বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:
বেসুরো গাইছিলেন কিছুদিন ধরেই। কিন্তু মঙ্গলবার আচমকাই নাম না করে শুভেন্দু অধিকারীকে নিশানা করেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বিরুদ্ধে টুইট করে রীতিমতো শোরগোল ফেলে দেন তিনি। যদিও তাঁর সমালোচনার কোনও জবাব দেননি শুভেন্দু অধিকারী। তবে মুখ খুলেছেন বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। কড়া ভাষায় তিনিও তোপ দেগেছেন রাজীবের বিরুদ্ধে।
এদিন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় টুইটে লেখেন, ‘সমালোচনা তো অনেক হল। মানুষের বিপুল সমর্থন নিয়ে আসা নির্বাচিত সরকারের সমালোচনা ও মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধিতা করতে গিয়ে কথায় কথায় দিল্লি আর ৩৫৬ ধারার জুজু দেখালে বাংলার মানুষ ভালো ভাবে নেবে না।’ পরে তিনি এই বক্তব্য পোস্টও করেন ফেসবুকে। উল্লেখ্য, সোমবার রাতেই বিজেপি নেতা তথা রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে দিল্লিতে তলব করা হয়। তাঁকে এ ভাবে দিল্লিতে ডেকে পাঠানোয় রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে জল্পনা ছড়ায়, তাঁকে সম্ভবত বিরোধী দলনেতার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্যই দিল্লিতে তলব করা হয়েছে। এদিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার সঙ্গে বৈঠক করার পরই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রাজ্যের তৃণমূল সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কঠিন ভাষায় আক্রমণ শানান শুভেন্দু। তাঁর ওই আক্রমণের ধারা দেখেই রাজ্যের রাজনৈতিক মহলের ভুল ভাঙে। অমিত শাহের সঙ্গে শুভেন্দুর বৈঠকে কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, তা জানা না গেলেও এ কথা পরিষ্কার, তাঁর ওপরই আস্থা রাখছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
এদিনের বৈঠকে ভোট–পরবর্তী হিংসা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য অমিত শাহের হাতে তুলে দেন শুভেন্দু। সে কথা জানিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘নবনির্বাচিত তৃণমূল কংগ্রেস সরকার সংবিধান মানছে না। নিজের খেয়াল খুশিমতো প্রশাসন চালাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। ভোট পরবর্তী হিংসা এখনও অব্যাহত। বহু বিজেপি কর্মী ঘরছাড়া। খুন হয়েছেন ৪৬ জন বিজেপি কর্মী–সমর্থক। রাজ্যের অবস্থা ৩৫৬ জারির থেকেও খারাপ। কেন্দ্রীয় সরকার পদক্ষেপ না করলে রাজ্যের অবস্থা আরও খারাপ হবে।’ এর পরই রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় টুইটে ওই বিতর্কিত কথা লেখেন। তখনই রাজীব সম্পর্কে জল্পনা শুরু হয়ে যায় রাজ্য রাজনীতিতে। সূত্রের খবর, বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরই তৃণমূলে ফিরতে চেয়ে রাজীব বার্তা পাঠিয়েছিলেন ওই দলের নেতৃত্বকে। কিন্তু তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট স্বয়ং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই কেউ তাঁকে ফেরানোর ব্যাপারে আশ্বাস দিতে পারেননি। এখন শোনা যাচ্ছে, শান্তিপুর বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তিনি তৃণমূল প্রার্থী হতে চান। সেই অনুরোধও নাকি তৃণমূলের কয়েকজন শীর্ষনেতার কাছে রেখেছেন। সেই অনুরোধ গৃহীত হওয়া যে কঠিন, তা সেই তৃণমূল নেতারা তাঁকে জানিয়ে দিয়েছেন। সেই কারণে রাজীবের এই টুইট এবং পোস্ট নিয়ে বেশ চর্চা শুরু হয়েছে বাংলার রাজনীতিতে।
তবে রাজীবের এই টুইটকে বিজেপির রাজ্য নেতারা ভালো ভাবে গ্রহণ করেননি। যদিও বিষয়টি নিয়ে কেউই মুখ খোলেননি। তবে বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ বিষয়টি নিয়ে চুপ করে যাননি। তিনিও পাল্টা টুইট করেছেন। সেখানে রাজীবকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে বলেছেন, ‘এ–সব কথা রাজীবের মনে পড়ল ৪২ হাজার ভোটে হারার পর? রাজ্যে ৪২ জনেরও বেশি বিজেপি কর্মী খুন হয়েছেন তৃণমূল দুষ্কৃতীদের হাতে। তা নিয়ে তাঁর কোনও মন্তব্য নেই। এই সময় যদি চুপ করে থাকতে হয়, তা হলে শাসক দলের সন্ত্রাসকে সমর্থন করাই হবে। অথচ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার করোনা এবং ইয়াস বিপর্যয় নিয়ে রাজ্য সরকারের পুরোপুরি পাশে দাঁড়িয়েছে। রাজ্য সরকার সাহায্যগুলি দু’হাত পেতে নিয়েছে, কিন্তু অকৃতজ্ঞের মতো স্বীকার করে না। কেন্দ্রীয় সরকার প্রয়োজন হলে রাজ্যকে আরও সাহায্য করবে। এই কাজে আমরা পিছিয়ে থাকব না। তবে রাজ্যের নেতিবাচক ভূমিকার প্রতিবাদ করবই। পথেও নামব। আগে আপনি নিজের অবস্থান পরিষ্কার করুন। যদি বিজেপিতে থেকে থাকেন, তা হলে এ ব্যাপারে নীরব না থেকে বিজেপি কর্মীদের পাশে থাকলে ভালো হয়।’
তবে দিল্লিতে শুভেন্দু কিন্তু এদিন ছিলেন বেশ খোলামেলা। কোনও রকম রাখঢাক না করে সাংবাদিকদের সামনে তিনি এদিন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গও টেনে আনেন। প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে তাঁর যোগ না দেওয়া নিয়ে স্পষ্ট বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মুখ্যসচিব অসম্মান করেছেন।’ সাংবাদিক বৈঠকে এই সময়েই ওঠে ত্রিপল বিতর্কের কথা। প্রসঙ্গত, শুভেন্দু এবং তাঁর ভাই সৌমেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে কাঁথি পুরসভার পুর–প্রশাসক বোর্ডের সদস্য রত্নদ্বীপ মান্না ত্রিপল চুরির অভিযোগ দায়ের করেছেন। এ ব্যাপারে শুভেন্দু বলেন, ‘আমার এত দুর্ভাগ্য হয়নি যে ত্রিপল চুরি করতে যাব। এফআইআর দায়ের যে কেউ করতেই পারে। আইনি পথে তার জবাবও দেওয়া হবে। আসলে বিজেপি নেতা ও কর্মীদের বিরুদ্ধে গাঁজা–কেস দেওয়া, চুরির কেস দেওয়া তৃণমূল সরকারের তো একটা খেলা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ পরে অমিত শাহের সঙ্গে নিজের বৈঠক সম্পর্কে টুইটে লেখেন, ‘বাংলার জন্য আশীর্বাদ চেয়েছি।’ মঙ্গলবার তিনি কলকাতায় ফেরেননি। বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও তাঁর বৈঠক রয়েছে।