চৌধুরী হারুনুর রশীদ, রাঙামাটি: রাঙামাটিতে পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে নিরাপদে সরাতে তৎপর জেলা প্রশাসন। শুক্রবার হতে রাঙামাটিতে থেমে থেমে মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে যে কোনো মুহূর্তে পাহাড়ধসের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাই ঝুঁকিতে বসবাসরত এসব লোকজনকে নিরাপদে সরাতে জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে মাঠে কাজ করছে, টাস্কেেফার্স ও বিশেষ কয়েকটি টিম। ইতোমধ্যে বেশকিছু মানুষকে সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে, জেলা প্রশাসন ও টাস্কফোর্স।
আজ ২০ জুন২০২১ইং রোববার সকালে রুপ নগর ,টিভি ভবন এলাকায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো.মামুন, অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শিক্ষা) মো.আল মামুন ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মাগফুরুল আব্বাসী,রোভার স্কাউট , কাউন্সিলার, রেডক্রিসেন্ট ,আনসার,পুলিশ ও স্থানীয় সেচ্ছাসেবক ৫টি টিম কাজ করছে । রেডক্রিসেন্ট এর রিকোস চাকমা বলেন, আমরা জেলা প্রশাসনের নির্দেশে ঘরে ঘরে গিয়ে আশ্রয়কেন্দ্র ও তাবুতে আসার জন্য সবাইকে অনুরোধ করেছি । কেউ আসছে কেউ কেউ আসতে চাই না ।
জেলা রোভার স্কাউট সাধারণ সম্পাদক নুরুল আবচার বলেন, রোভার স্কাউটসহ বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংস্থা জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করছি । তিনি বলেন, রাত ৩টা পর্যন্ত ভারী বর্ষনের সময় ভুমি ধসের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করতে আশ্রয় কেন্দ্র ও তাবুতে চলে আসার অনুরোধ করেছি ।
এদিকে বৃষ্টিপাত হলেই রাঙামাটিতে জনমনে তৈরি হয় পাহাড়ধসের শঙ্কা। কিন্তু তবু ঝুঁকিপূর্ণ বাড়িঘরে বসবাস করছে বহু লোকজন। শহরে বসবাসরত ঝুঁকিপূর্ণ লোকজনকে নিরাপদে সরাতে শুক্রবার সন্ধ্যা হতে মাঠে নেমেছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, আনসার, ভিডিপি, রেডক্রিসেন্ট, রোভার স্কাউট দলের সদস্য এবং পৌরসভার স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলররা এলাকায় গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ লোকজনকে নিরাপদে সরে যেতে উদ্বুদ্ধ করছেন। এলাকায় গিয়ে মাইকিংয়ে সতর্কবার্তা প্রচার করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে শুক্রবার রাতে শহরের ভেদভেদী লোকনাথ মন্দির এলাকা, রুপনগর, টিভি ভবন এলাকাসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার ২৫ জনকে সরিয়ে বিএম ইন্সটিটিউট আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে।
রাঙামাটিতে ভূমিধসসহ সম্ভাব্য যে কোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় সর্বাত্মক পূর্ব প্রস্তুতি রয়েছে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসন জানায়, থেমে থেমে মাঝারি বৃষ্টিপাত হওয়ায় রাঙামাটিতে পাহাড় ধসের শঙ্কা আছে। তাই সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সর্বাত্মক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান বলেন, রাঙামাটি শহরে ৩৩ স্থানে পাহাড়ধসের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। ওইসব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় লোকজনকে বসবাসে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাদেরকে নিরাপদে সরে যেতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এরপরও ঝুঁকিপূর্ণ বসতঘর ছেড়ে নিরাপদে সরে না গেলে আইনানুগ তাদেরকে সরাতে বাধ্যতামূলক করা হবে। রাঙামাটি পৌর এলাকায় ২৩ আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ওইসব কেন্দ্রের স্কুল-কলেজগুলো খোলা রাখতে প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের বলে দেওয়া হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে নির্বাহী অফিসাররা যার যার প্রস্তুতি নিয়েছেন।
প্রতিবছর বর্ষায় সদরসহ জেলায় কোথাও না কোথাও পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। ২০১৭ সালের ১৩ জুন রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড়ধসের দুর্যোগে ৫ সেনা সদস্যসহ ১২০ জনের প্রাণহানি ঘটে। পরবর্তী ২০১৮ সালের জুনে জেলার নানিয়ারচর উপজেলায় পাহাড় ধসে ২ শিশুসহ ১১ জন এবং ২০১৯ সালের জুনে জেলার কাপ্তাইয়ে তিন জনের প্রাণহানি ঘটেছে।