কলকাতা সংবাদদাতা: বাংলায় বিজেপি ফের নিজেদের শক্তি ফিরে পাবে। এমনকী, সামনের নির্বাচনগুলিতে উচিত শিক্ষা দেবে তৃণমূলকে। মঙ্গলবার রাজ্য বিজেপির কার্যকারিণী বৈঠকে রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, বিধানসভা ভোটের পর বিজেপিকে যদি কেউ কমজোরি বা শক্তিহীন ভেবে থাকেন, ভুল ভাবছেন। দ্রুত তাঁদের সেই ভুল ভেঙে যাবে। সেই সঙ্গে বিধানসভা ভোটে বিজেপির কম আসন পাওয়ার কারণ খুঁজে বের করতে বিধানসভা ধরে ধরে ফলাফলের ময়নাতদন্ত করার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
এদিন বিজেপির বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল, পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করা। সে কথা উল্লেখ করে শুভেন্দু জানান, খুব তাড়াতাড়ি বিজেপি বিধায়কদের নিয়ে একটি একদিনের প্রশিক্ষণ শিবির করবেন। নতুন বিধায়কদের বিধানসভার নিয়ম বোঝানো হবে। সেই সঙ্গে বিধানসভায় কী ভাবে শাসক দলের মোকাবিলা করতে হবে, তা–ও শেখানো হবে। কলকাতার হেস্টিংসে রাজ্য বিজেপির সদর দফতরে হবে ওই প্রশিক্ষণ শিবির। শিবিরের উদ্বোধনে উপস্থিত থাকার জন্য রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে অনুরোধও করেন তিনি। পাশাপাশি এ কথাও বলেন, ‘শিবিরে প্রশিক্ষক হিসেবে আমি থাকবই। এ ছাড়া কয়েকজন প্রাক্তন বিধায়কও থাকবেন।’ তাঁদের নামও জানিয়ে দেন তিনি। তালিকায় রয়েছেন বিধায়ক মনোজ টিগ্গা, তৃণমূল থেকে আসা সব্যসাচী দত্ত, জটু লাহিড়ি–সহ আরও কয়েকজন।
তাঁদের মধ্যে সব্যসাচী দত্ত, জটু লাহিড়ি এ বছর ভোটে হেরে গিয়েছেন। তাঁদের তৃণমূলে ফেরার সম্ভাবনা নিয়ে কলকাতার মিডিয়াগুলি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচার করেছে বলে এদিন বৈঠকে বিজেপির অন্য নেতারা জানান। শুভেন্দু বিষয়টি নিয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য না করলেও তাঁদের প্রশিক্ষণ শিবিরে উপস্থিত থাকার কথা বলে বুঝিয়ে দেন, কলকাতার মিডিয়াগুলি তৃণমূলের অনুকূলে প্রচার করছে। ওই প্রচার করতে গিয়েই বিজেপি সম্পর্কে নানা বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছে। এইসব তথ্যের অধিকাংশই মিথ্যে। পাশাপাশি তিনি এ কথাও জানিয়েছেন, যত বড় নেতাই হোন না কেন, প্রত্যেক নেতাকেই নিজের এলাকায় যথেষ্ট সময় দিতে হবে। নিজের বুথে দল যাতে জয় পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
এই প্রথম বিজেপির সাংবিধানিক কোনও বৈঠকে উপস্থিত হলেন শুভেন্দু অধিকারী। যেহেতু সাংগঠনিক বৈঠক, তাই বৈঠকে চমকপ্রদ কোনও খবর থাকে না। তাই এমন বৈঠক নিয়ে তেমন আগ্রহ সাধারণ মানুষের খুব একটা থাকে না। কিন্তু শুভেন্দুর উপস্থিতি এদিন যেন বৈঠকের গুরুত্ব বেশ কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়। বৈঠকে শুভেন্দু কী বলেন, তা নিয়ে বিজেপি নেতাদের পাশাপাশি রাজনৈতিক মহলেরও কৌতূহল ছিল। বৈঠকে সেই প্রমাণও এদিন তিনি দিয়েছেন। দলের তরফে আত্মসমালোচনা যেমন করেছেন, তেমনই ভবিষ্যতের কথা ভেবে বেশ কিছু পরিকল্পনার কথাও বৈঠকে তিনি জানান। তাঁর বক্তব্য দলের অন্য নেতাদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলে বলে বৈঠকে উপস্থিত অনেক নেতাই জানিয়েছেন।
এবারের নির্বাচনে বিজেপির জয় নিয়ে নিশ্চিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতারা। অনেকেরই হিসেব ছিল, রাজ্যে বিজেপি দুশোর বেশি আসন পাবে। কিন্তু পেয়েছে ৭৭টি। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে ১২১টি বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে ছিল। সেই তুলনায় এবার আসন কম পেয়েছে তারা। তবে ৯২টি আসনে কম ব্যবধানে তৃণমূলের কাছে হেরেছে বিজেপি। দলের বহু নেতা ও কর্মীর অভিযোগ, ওই ৯২টি আসনের ভোট যদি পুনর্গণনা করা হয়, হিসেব বদলে যাবে। তাঁরা পরিষ্কার ভাষায় গণনায় কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন। এদিন বৈঠকে শুভেন্দু সেই প্রসঙ্গও তোলেন। তিনি সেখানে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন, ‘বিজেপি মোটেও শক্তিহীন হয়ে যায়নি। যেহেতু আমরা ভোটে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাব বলে ধরে নিয়েছিলাম, কিন্তু ফলাফলে তা হয়নি, তাই রাজ্যের নেতা ও কর্মীরা মানসিক ভাবে একটা ধাক্কা খেয়েছিলেন। এই সুযোগটাই নিয়েছেন তৃণমূল নেতারা। পুলিশ ও প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে তাঁরা বিজেপির জেলা নেতা ও কর্মীদের ওপর অত্যাচার করছেন। অনেক ক্ষেত্রে তৃণমূলে যোগ দিতে বাধ্য করছেন।’
বৈঠকে তিনি প্রতিটি আসন ধরে পর্যালোচনার কথাও বলেন। যদিও বৈঠকের সূচিতে সেই প্রসঙ্গ ছিল না। কিন্তু শুভেন্দু টেনে আনেন। তিনি জানান, তৃণমূল ২১৩টি আসন পেলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হেরেছেন এবং মোট প্রাপ্ত ভোটসংখ্যার ব্যবধানও খুব বেশি নয়। যেখানে তৃণমূল পেয়েছে ২ কোটি ৮৮ লক্ষ ভোট, সেখানে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ২ কোটি ২০ লক্ষ। গোটা পশ্চিমবাংলার নিরিখে ৬৮ লক্ষ ভোটের ব্যবধান খুব বেশি নয়। সংগঠন জোরদার করলে ভবিষ্যতে এই ব্যবধান মুছে তো যাবেই, বরং তৃণমূলের তুলনায় বিজেপিই বেশি লাভবান হবে। তিনি পরিষ্কার বলেন, ‘মমতার পরাজয় এবং মোট প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধানই বলে দিচ্ছে, তৃণমূল খুব বেশি এগিয়ে নেই এবং বিজেপিও পিছিয়ে নেই।’