রাঙামাটি প্রতিনিধি: রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধি সাথে সাথে জল বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা বেড়েছে। বর্তমানে জল বিদ্যুৎকেন্দ্রটির পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে চার ইউনিট সচল হয়েছে। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দীর্ঘদিন ধরেই একটি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হয়।
সংশ্লিষ্টরা সুত্রে জানা গেছে, শুষ্ক মৌসুমে প্রতিবছরই রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানি কমতে শুরু হওয়ার কারণে এ জলবিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা হ্রাস পায়। এবছরও একই কারণে হ্রদের পানি স্বল্প দেখা দেয়। এতে করে শুষ্ক মৌসুম থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা হ্রাস পেয়েছিল। বর্তমানে গত কয়েকদিনের বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে নেমে আসা পানির ঢলে কাপ্তাই হ্রদে পানির উচ্চতা বাড়তে শুরু করেছে। প্রতিবছর শুস্ক মৌসুমে হ্রদের নব্যতাও কমেগিয়ে পানির ধারণ ক্ষমতা হ্রাস পায় । বিগত ৫০ বছরের অধিক সময়ে কাপ্তাই কৃত্রিম হ্রদটি ড্রেজিং করা হয়নি।ফলে কাপ্তাই হ্রদ ক্রমন্নয়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে।
কেন্দ্রের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, কাপ্তাই হ্রদের পানির ধারণ ১০৯ এমএসএল ((মীন সী লেভেল)। রোববার সকাল আটটা পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদের পানির পরিমাণ ছিলো ৮৪ দশমিক ৫৩ এমএসএল (মীন সী লেভেল)। স্বাভাবিক সময় হিসেবে কাপ্তাই হ্রদে পরিমাণ থাকার কথা ৮৭ দশমিক ৮৪ এমএসএল (মীন সী লেভেল)। চারটি ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন কারণে কাপ্তাই হ্রদ থেকে কেন্দ্রের পাওয়ার হাউজ দিয়ে প্রতিদিন ২২-২৫ হাজার ফিট কিউফ পার সেকেন্ড পানি কর্ণফুলী নদীতে নির্গত হচ্ছে।
কর্ণফুলী জল বিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, কাপ্তাই হ্রদে পানির লেভেলের উপরেই নির্ভর করে বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা। পাঁচটি ইউনিট সম্পন্ন জল বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে ২৩০ মেগাওয়াট। গত সপ্তাহেও কেন্দ্রের দৈনিক বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো ১০০ মেগাওয়াটের নীচে। বর্তমানে গত কয়েকদিনে চারটি ইউনিটে বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে ১২২-১২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে ২নং ইউনিটটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এখনো বন্ধ রয়েছে। অবশিষ্ট ৪টি ইউনিট সচল আছে। এর মধ্যে ১নং ইউনিটে দৈনিক ২৯-৩৫ মেগাওয়াট, ৩নং ইউনিটে ৩০-৩৫ মেগাওয়াট, ৪নং ইউনিটে ৩০ মেগাওয়াট এবং ৫নং ইউনিটে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। গড়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ১২২- ১২৫ মেগাওয়াট।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কর্ণফুলী জল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী এটিএম আবদুজ্জাহের সাংবাদিকদের জানান, বর্তমানে জল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ২নং ইউনিটটি ছাড়া অন্য চারটি ইউনিট সচল আছে। প্রতিদিন ১২২-১২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে চার ইউনিটে। তবে কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতার পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৩ এমএসএল কম আছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের ধারাবাহিকতা থাকলে হ্রদের পানির পরিমাণও কমতে থাকবে। প্রকৌশলী বলেন, ২নং ইউনিটটি দীর্ঘদিন ধরে যান্ত্রিক জটিলতার কারণে বন্ধ রয়েছে। আমরা সেটিও সারানোর কাজ করছি; এই ইউনিটটি সচল হলে আমরা সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ উৎপাদনে আবারো ফিরে যাবো।
প্রসঙ্গত, ১৯৬২ সালে কর্ণফুলী জল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনার পর জাতীয় গ্রিডে ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের সক্ষমতা ছিল বিদ্যুৎকেন্দ্রেটির। পরবর্তী সময়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ২৩০ মেগাওয়াট উৎপাদনে মানোন্নয়ন করা হয়। বাংলাদেশের বৃহত্তম জলসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প ‘কর্ণফুলী বহুমুখী প্রকল্প’-এর অংশ হিসেবে এ জলবিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপিত হয়েছে।