রাঙামাটি প্রতিনিধি: রাঙামাটিতে বেতন-ভাতা ছাড়াই প্রায় ২ বছর ধরে চাকরি করছেন, আউটসোর্সিংয়ে জনবল সরবরাহ পদ্ধতিতে ভূমি অফিসে নিয়োগ পাওয়া ১৫ সরকারি কর্মচারী। প্রশাসনিক জটিলতার কারণে অসহণীয় মানবিক পরিস্থিতির শিকার হতে হচ্ছে তাদেরকে। ইতিমধ্যে তাদের ১২ জনকে বেতন-ভাতা প্রদানের প্রক্রিয়ায় আনা হলেও সেখানে তিন অফিস সহায়ককে বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে এ প্রক্রিয়াতেও বঞ্চিত থেকে যাচ্ছেন অসহায় তিন অফিস সহায়ক। অথচ নির্বিকার সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে উন্মুক্ত দরপত্রে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার তিন উপজেলা ভূমি অফিসে সেবা প্রদানে ১৫ কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়। দরপত্রে এ জনবল সরবরাহের কাজটি পায়, ঢাকার মধ্যবাড্ডার ‘মেসার্স বিনিময় সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেড’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির সরবরাহ করা জনবলের তালিকা অনুযায়ী ২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি ওই ১৫ কর্মচারীকে নিজ কর্মস্থলে যোগদানের জন্য চূড়ান্ত নিয়োগপত্র দেন, তৎকালীন জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ। এতে নিজ কর্মস্থলে নিয়মিত কাজে যোগদান করেন, নিয়োগ পাওয়া ১৫ কর্মচারী।
এদিকে কোনো রকম বেতন-ভাতা না পাওয়ায় বৈশি^ক মহামারী করোনাকালে চরম মানবেতর পিরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন ওইসব নিরীহ কর্মচারী। চরম আর্থিক সংকটে বর্তমানে বিপর্যস্ত তাদের স্বাভাবিক ও পারিবারিক জীবন। নিয়মিত দাপ্তরিক কর্তব্য পালনকালে ইতিমধ্যে করোনায় লড়তে হয়েছে, এক অফিস সহায়ককে। তাদের প্রাপ্য বেতন-ভাতা পরিশোধসহ চাকরি রাজস্ব খাতে স্থায়ী করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ও মানবিক দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, পরিস্থিতির শিকার তিন অফিস সহায়ক।
নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন- জেলার বাঘাইছড়ি ভূমি অফিসে ২ জন চেইনম্যান, ১ জন নিরাপত্তা প্রহরী, ১ জন প্রসেস সার্ভার, ১ জন অফিস সহায়ক, কাউখালী উপজেলা ভূমি অফিসে ২ জন চেইনম্যান, ১ জন প্রসেস সার্ভার, ১ জন অফিস সহায়ক, ১ জন নিরাপত্তা প্রহরী এবং কাপ্তাই উপজেলা ভূমি অফিসে ২ জন চেইনম্যান, ১ জন নিরাপত্তা প্রহরী, ১ জন প্রসেস সার্ভার ও ১ জন অফিস সহায়ক। কর্মস্থলে যোগদানের পর থেকে এ পর্যন্ত কোনো রকম বেতন-ভাতা পাননি তারা। আজকাল করতে করতে প্রায় দুই বছর চলে যাচ্ছে, কিন্তু বেতন-ভাতাসহ চাকরি স্থায়ীকরণের বিষয়টি আজও সম্পূর্ণ অনিশ্চিত।
অন্যদিকে যোগদানের কিছুদিন পর থেকে দেশে চলে আসে বৈশি^ক করোনা মহামারির দুর্যোগ। সেই থেকে দফায় দফায় লকডাউনে চরম অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে তাদের পারিবারিক ও স্বাভাবিক জীবন। প্রশাসনিক জটিলতার কারণে করোনার মধ্যেও ওইসব নিরীহ কর্মচারীর ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণ অনিশ্চয়তায়। তাদেরকে পার করতে হচ্ছে চরম মানবেতর পরিস্থিতি। এরমধ্যে চলতি সালের ৭ মার্চ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন সংযোগ অধিশাখার পাঠানো এক চিঠিতে নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়েছে, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগের ক্ষেত্রে ঠিকাদারদের মধ্যে ব্যাপক দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং অবৈধ অর্থ লেনদেনের অভিযোগ পাওয়ায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রস্তাব অনুযায়ী এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়গুলো নিবিড় মনিটরিংয়ের প্রয়োজন। এক্ষত্রে আউটসোর্সিংকৃত কর্মচারীদের পাওনা নিজ ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পরিশোধ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন করেছেন।
ওইসব কর্মচারীর বেতন-ভাতা পরিশোধের প্রক্রিয়ায় সর্বশেষ ২৭ জুন রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরে এক আদেশে বলা হয়েছে, জনবল সরবরাহকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স বিনিময় সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেড সরবরাহ করা তালিকা অনুযায়ী জেলার বাঘাইছড়ি, কাউখালী ও কাপ্তাই ভূমি অফিসে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ ১৫ কর্মচারীর মধ্যে তিন অফিস সহায়ক বাদে অন্য ১২ কর্মচারীর জনবল সরবরাহের চুক্তির মেয়াদ চলতি ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এদিকে আদেশ অনুযায়ী দেখা যায়, তিন অফিস সহায়কের চাকরি ও বেতন-ভাতা নিয়ে সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। বেতন না পেয়েও ঝুঁকিতে নিয়মিত কর্তব্য পালন করতে গিয়ে করোনাভারাসে সংক্রমিত হয়েছেন, কাউখালী ভূমি অফিসে কর্মরত অফিস সহায়ক। যদিও ইতিমধ্যে করোনামুক্ত হয়েছেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অফিস সহায়ক বলেন, আমরা কী দোষ করেছি ? আমাদের দোষ কী এতটা দিন বেতন-ভাতা ছাড়া সেবা দেওয়া ? তা না হলে এ কঠিন পরিস্থিতিতে কেন এভাবে আমাদের ওপর এমন অমানবিক অবিচার করা হচ্ছে ? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সব সময় দেশের মানুষের কথা ভাবেন। করোনাকালে জনগণকে নিয়মিত সহায়তা করে যাচ্ছেন। এতে আমরা গর্বিত। কিন্তু এতটা সময় সম্পূর্ণ নিজের খেয়েদেয়ে শেষ পর্যন্ত আমাদেরকে এভাবে কেন বঞ্চিত করা হচ্ছে, তা বুঝতে পারছি না। বিষয়টি খুব কষ্টের আর বেদনভরা। তাই আমাদের পাওনা পরিশোধসহ চাকরি রাজস্ব খাতে স্থায়ীকরণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় হস্তক্ষেপ ও মানবিক দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, রাঙামাটির ভূমি অফিসে কর্মরত ও বঞ্চিত অফিস সহায়ক কর্মচারীরা।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা সব প্রক্রিয়া ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। বিষয়টি মানবিক, তাই এটি নিয়ে দ্রুত জটিলতার নিস্পত্তি কাম্য। আশা করছি, মন্ত্রণালয় হতে শিগগির নির্দেশনা আসতে পারে। অফিস সহায়কদের বিষয়টি নিয়েও সুনজর রয়েছে।