1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. Azharislam729@gmail.com : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
  4. bobinrahman37@gmail.com : Bobin Rahman : Bobin Rahman
  5. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  6. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  7. harun.cht@gmail.com : চৌধুরী হারুনুর রশীদ : চৌধুরী হারুনুর রশীদ
  8. shanto.hasan000@gmail.com : Rakibul Hasan : Rakibul Hasan
  9. msharifhossain3487@gmail.com : Md Sharif Hossain : Md Sharif Hossain
  10. humiraproma8@gmail.com : হুমায়রা প্রমা : হুমায়রা প্রমা
  11. dailyprottoy@gmail.com : প্রত্যয় আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রত্যয় আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  12. namou9374@gmail.com : ইকবাল হাসান : ইকবাল হাসান
  13. mohammedrizwanulislam@gmail.com : Mohammed Rizwanul Islam : Mohammed Rizwanul Islam
  14. hasanuzzamankoushik@yahoo.com : হাসানুজ্জামান কৌশিক : এ. কে. এম. হাসানুজ্জামান কৌশিক
  15. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  16. niloyrahman482@gmail.com : Rahman Rafiur : Rafiur Rahman
  17. Sabirareza@gmail.com : সাবিরা রেজা নুপুর : সাবিরা রেজা নুপুর
  18. prottoybiswas5@gmail.com : Prottoy Biswas : Prottoy Biswas
  19. rajeebs495@gmail.com : Sarkar Rajeeb : সরকার রাজীব
  20. sadik.h.emon@gmail.com : সাদিক হাসান ইমন : সাদিক হাসান ইমন
  21. safuzahid@gmail.com : Safwan Zahid : Safwan Zahid
  22. mhsamadeee@gmail.com : M.H. Samad : M.H. Samad
  23. Shazedulhossain15@gmail.com : মোহাম্মদ সাজেদুল হোছাইন টিটু : মোহাম্মদ সাজেদুল হোছাইন টিটু
  24. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  25. showdip4@gmail.com : মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ : মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ
  26. shrabonhossain251@gmail.com : Sholaman Hossain : Sholaman Hossain
  27. tanimshikder1@gmail.com : Tanim Shikder : Tanim Shikder
  28. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :
  29. Fokhrulpress@gmail.com : ফকরুল ইসলাম : ফকরুল ইসলাম
  30. uttamkumarray101@gmail.com : Uttam Kumar Ray : Uttam Kumar Ray
  31. msk.zahir16062012@gmail.com : প্রত্যয় নিউজ ডেস্ক : প্রত্যয় নিউজ ডেস্ক

দেশ ও জনগণের স্বার্থে খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদের দিকে নজর দিতে হবে।

  • Update Time : মঙ্গলবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ২৭০ Time View

দেশ ও জনগণের স্বার্থে খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদের দিকে নজর দিতে হবে।

বিশ্বের উন্নয়কামী দেশগুলো দ্রুত উন্নয়নের শীর্ষে পৌঁছার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। মুক্ত অর্থনীতির প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য যত ধরনের উন্নয়নমূলক কর্মসূচি নেয়া প্রয়োজন, তারা সবই নিচ্ছে। বিভিন্ন দশকে একেকটি দেশ বিশ্বে অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেদেরকে আবির্ভূত করছে। গত এক দশক আগেও চীনের কথা খুব একটা শোনা যেত না। অথচ বর্তমানে চীনকে বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে  অর্থনৈতিক শক্তির দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও চীন অনেক এগিয়ে আছে। মাত্র এক দশকের ভেতরে চীনের অর্থনৈতিক অবস্থান বদলে যাওয়া বিশ্বের অর্থনীতিবিদদের কাছে অভাবনীয় ও বিস্ময়কর বিষয়ে পরিনত হয়ে গিয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতিবিদেরা ভবিষ্যতবাণী করছেন, আগামী বিশ্বে চীনই হবে অর্থনীতির মহাপরাশক্তি ও একচ্ছত্র অধিপতি। এখনই চীনকে বলা হচ্ছে ‘ইকোনমিক সুপার পাওয়ার’ রাষ্ট্র। আইএমএফের জরিপে যুক্তরাষ্ট্রের পরই চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে চি‎হ্নিত হয়েছে। তারপরও যুক্তরাষ্ট্র তাদের কাছে ঋণের জন্য হাত পাতছে। চীনা নেতারা যদিও বিনয় দেখিয়ে বলছে, বিশ্ব অর্থনীতিতে চীনের অবস্থান নিয়ে যেভাবে বলা হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে তারা অত উন্নতি করেনি। তাদের এই বিনয় প্রকাশের কারণ, তারা মনে করছে, এতে চলমান বিশ্বমন্দার চাপ তাদের উপর পড়তে পারে। অর্থনৈতিক সহযোগিতা পাওয়ার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের দিকে হাত বাড়াতে পারে।

তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত সোমালিয়াও ক্রমশঃ উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সিআইএ-এর রিপোর্ট অনুযায়ী সোমালিয়া অর্থনৈতিক দিক থেকে বেশ ভালভাবে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের অর্থনীতির মূল শক্তি পশুসম্পদ, রেমিটেন্স ও টেলিকমিউনিকেশন্স। অন্যদিকে ইথোপিয়াকে বলা হয়, বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতগতির উন্নয়নশীল দেশ। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে তারা এতটাই উন্নতি লাভ করছে যে, আইএমএফ-এর হিসেবে ২০০৪ থেকে ২০০৯ সালে দেশটি শতকরা ১০ ভাগের উপরে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করে স্থিত অবস্থা লাভ করে। এখন তা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এভাবে আফ্রিকার অন্যান্য দরিদ্র দেশগুলোও এখন অর্থনৈতিক উন্নতির লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। অর্থাৎ বদলে যাওয়া বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় দরিদ্রতম দেশগুলো তাদের সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুত উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক অগ্রসরতার দিক থেকে বাংলাদেশকে বলা হচ্ছে ‘ইমার্জিং টাইগার’। বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো প্রায়ই বাংলাদেশের উন্নতির বিষয়টি নিয়ে তাদের আগ্রহ প্রকাশ এবং ইতিবাচক মন্তব্য করছে। আমরা বিদেশিদের ঘন ঘন আগমণ, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় রিপোর্ট এবং সমস্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ থেকে বিষয়টি আঁচ করতে পারি। গুরুত্ব না থাকলে বাংলাদেশ নিয়ে এত মাথা ঘামিয়ে তাদের সময় নষ্ট করার কোন কারণ নেই। সাধারণ মানুষও অনুভব করতে পারে, বাংলাদেশ ক্রমাগত উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে আয়তনের তুলনায় ১৬ কোটির মতো বিপুল জনসংখ্যার দেশে না খেয়ে মৃত্যুর ঘটনা নেই বললেই চলে। যা বাংলাদেশের জন্য একটি বিস্ময়কর ঘটনা। তবে না খেয়ে মানুষের মৃত্যু না হওয়ার ঘটনা উন্নয়নের প্রাথমিক সূচক হলেও এগিয়ে যাওয়ার সূচক নয়। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, আইনশৃঙ্খলার উন্নতি সর্বোপরি মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়াই মূল সূচক হিসেবে গণ্য। অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে বাংলাদেশ যে এগিয়ে চলেছে, তাতে সন্দেহ নেই। দশকের পর দশক অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে ধীর গতিতে হলেও অর্থনীতি এগিয়ে চলেছে। ধারাবাহিকভাবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে এতদিনে বাংলাদেশ হয়ত মধ্যমআয়ের দেশে পরিণত হতো। তারপরও বিগত এক দশক ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল রয়েছে। জিডিপি গড় ৭-এর মধ্যে রয়েছে। আগামী অর্থ বছরে বাজেটে জিডিপি’র লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ শতাংশের উপরে। জিডিপির হিসাবটি আপেক্ষিকতার ঘেরাটোপে বন্দি হয়ে আছে। সরকার একরকম বললে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ অন্যান্য সংস্থা ও অর্থনীতিবিদরা এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। সরকারের হিসাবের সাথে তাদের হিসাব মিলে না। এই গড়মিলের মধ্যেই দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। বলা যায়, মধ্যম গতির চেয়ে কম গতিতে এগুচ্ছে। যদি মধ্যম গতিতেও চলত, তবে বাংলাদেশ দ্রুতই দক্ষিণ এশিয়ার এক নম্বর ধনী দেশে পরিণত হতো। বলা হয়, অর্থনৈতিক অগ্রগতির দিক থেকে আমরা এখন ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছি। তবে আমাদের লক্ষ্য ভারত বা পাকিস্তান হওয়া উচিত নয়। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত সিঙ্গাপুর, যে শূন্য থেকে সমৃদ্ধ হয়েছে। সাড়ে চার দশক আগেও অর্থনৈতিক শক্তির দিক থেকে এশিয়ার চতুর্থ টাইগার হিসেবে পরিচিত সিঙ্গাপুরের বলতে গেলে কিছুই ছিল না। ৭২৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ক্ষুদ্র এ দেশটি ১৯৬৩ সালে বৃটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে মালয়েশিয়ার সাথে যুক্ত হয়। ১৯৬৫ সালে সিঙ্গাপুরে বসবাসরত চাইনিজদের সাথে মালয়েশিয়ানদের দাঙ্গার সূত্র ধরে সংসদে ১২৬-০ ভোটে সিঙ্গাপুরকে মালয়েশিয়া থেকে আলাদা করে দেয়। সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউ আফসোস করে বলেছিলেন ‘এখন আমাদের কি হবে! কি করে বাঁচব!’ সিঙ্গাপুরের জমি নেই, চাষবাস করারও কোন উপায় নেই। এ অবস্থায় তারা স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য পণ্য আমদানি-রপ্তানির উপর জোর দেয়। ভৌগলিক গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান কাজে লাগিয়ে বন্দরকে আমদানি-রপ্তানির গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করে। বাজারভিত্তিক অর্থনীতি আঁকড়ে ধরে। এই অর্থনীতিই এখন তার মূলভিত্তি। মূলশক্তি আমদানিকৃত পণ্যের পরিশোধন এবং রপ্তানি। বিশ্বের মধ্যে সিঙ্গাপুর রপ্তানির দিক দিয়ে ১৪ নম্বর এবং আমদানির দিক থেকে ১৫ নম্বর দেশ। দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশ, দক্ষ জনশক্তি, শক্তিশালী অবকাঠামো ও নিম্ন ট্যাক্স রেটের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের দেশে পরিণত হয়েছে। অর্থাৎ প্রায় শূন্য ও দরিদ্রতম অবস্থা থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কিভাবে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে এবং উঠে আসছে তা উন্নয়নমুখী দেশগুলোর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও পদক্ষেপ থেকে একটি চিত্র পাওয়া যায়। উন্নয়নকামী দেশ হিসেবে দ্রুত অগ্রসরমান অর্থনীতির বিশ্বে আমাদের অবস্থান ও সম্ভাবনার বিষয়টি নিয়ে ভাবার অবকাশ রয়েছে। আমরা শূন্য নই, আমাদের প্রাকৃতিক প্রাচুর্য্য রয়েছে। রয়েছে বিশাল জনগোষ্ঠী। শুধু প্রয়োজন নিজেদের সম্পদ যথাযথভাবে আহরণ ও কাজে লাগানো।

বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি হতে পারে আবিষ্কৃত ও অনাবিষ্কৃত বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ সম্পদ আঁকড়ে ধরেই বাংলাদেশ হতে পারে এশিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তি। শুধু প্রয়োজন সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর উপলব্ধি ও সম্পদের যথাযথ ব্যবহার। ইতোমধ্যে জিওলজিক্যাল সার্ভে অব বাংলাদেশ (জিএসবি) বিভিন্ন সমীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে মাটির নিচে কি পরিমাণ বিভিন্ন ধরনের মূল্যবান খনিজ সম্পদ রয়েছে, তা এখনও সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। প্রায়ই মূল্যবান খনিজ সম্পদ আবিষ্কারের খবর আমাদেরকে বিস্মিত করে। যেমন বিস্মিত করেছে দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার (হিলি) মশিদপুর এলাকায় মূল্যবান আকরিক লোহার খনির সন্ধান। জিএসবি’র হিসাব অনুযায়ী, এই খনির দেড় হাজার থেকে দুই হাজার ফুট গভীরতায় এক থেকে তিন ফুট পুরুত্বে ম্যাগনেটিক মিনারেলস, হেমাটাইট, ম্যাগনেটাইট ও লিমোনাইট পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে খনির ১২০০ ফুট গভীরে রয়েছে চুনাপাথর। লৌহ আকরিকের খনির আবিষ্কার দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই আবিষ্কারের ফলে বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা বেড়ে যাবে এবং আবস্থানও উন্নত হবে। বলা প্রয়োজন, ইতোমধ্যে বাংলাদেশে অত্যন্ত মূল্যবান বিভিন্ন খনিজ সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। গ্যাস, তেল, কয়লা ছাড়াও পাওয়া গেছে স্বর্ণের চেয়েও দামী ইউরেনিয়াম। অন্যান্য মূল্যবান খনিজের মধ্যে রয়েছে, চুনা পাথর, কঠিন পাথর, নুড়ি পাথর, কাচ বালি, হোয়াইট ক্লে, ব্রিক ক্লে, পিট, মিনারেলস সমৃদ্ধ বিচ স্যান্ড। ভূতাত্ত্বিকভাবে বাংলাদেশ ‘বেঙ্গল ব্যাসিন’-এর বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে। এর উত্তরাংশ শতকরা ১২ ভাগ পাললিক পাথর, উত্তর ও উত্তর-পূর্বাংশের ৮ ভাগ প্লিস্টোসিন এবং উত্তর-পশ্চিম, মধ্য উত্তরাংশ ও পূর্বাংশ শতকরা ৮০ ভাগ বালি, পলি ও কাদা দ্বারা পরিবেষ্টিত। অর্থাৎ দেশের এই অংশ বিভিন্ন ধরনের খনিজ সম্পদের বেল্ট হিসেবে পরিচিত। ইতোমধ্যে জিএসবি দেশের ৪২ ভাগ ভূখণ্ডে যে জরিপ পরিচালনা করেছে, তাতে বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থ প্রাপ্তির উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এসব সম্পদ যথাযথভাবে আহরণ ও ব্যবহার করতে পারলে বাংলাদেশের অর্থনীতির চেহারা বদলে যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। বাংলাদেশকে যে ইমার্জিং টাইগার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, এর অন্যতম মূল কারণ আবিষ্কৃত ও অনাবিষ্কৃত মূল্যবান খনিজ সম্পদের ভাণ্ডার। বিশ্বের পরাশক্তিধর দেশগুলো যে ইউরেনিয়ামকে ব্যবহার করে পারমাণবিক শক্তি অর্জন করেছে, এর পর্যাপ্ত মওজুত বাংলাদেশে রয়েছে। ১৯৭৫ সালে মৌলভীবাজারে প্রথম ইউরেনিয়ামের সন্ধান মেলে। এরপর ১৯৮৫ সালে সিলেটের জৈন্তাপুরে এবং ১৯৮৯ সালে ময়মনসিংহের গারো পাহাড় পরিবেষ্টিত সোমেশ্বরী নদীতে ইউরেনিয়াম পাওয়া যায়। সাম্প্রতি জিএসবি’র জরিপে পদ্মা, ব্র‏হ্মপুত্র, যমুনা এবং সিলেট ও ময়মনসিংহের নদীবাহিত বালুতে ভারি খনিজ ও আহরণযোগ্য ইউরেনিয়াম পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। জিএসবি পদ্মা-যমুনার প্রায় ১০টি স্থানে ২০ মিটার গভীর থেকে বালু সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে দেখেছে, আহরণযোগ্য ভারি খনিজ ও রাসায়নিক পদার্থের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদনের জন্য ৭ শতাংশ যথেষ্ট। ১ টন বালুতে ১ গ্রাম ইউরেনিয়াম পাওয়া গেলেই বাণিজ্যিকভাবে তা আহরণযোগ্য বলে বিবেচনা করা হয়। এই আহরণযোগ্য ইউরেনিয়াম ব্যবহার করে বাংলাদেশ ব্যাপক উপকৃত হতে পারে। বাংলাদেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি পাওয়ায় ইউরেনিয়াম ব্যবহারের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এতে ইউরেনিয়াম ব্যবহার করা হলে সাশ্রয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন যেমন সম্ভব, তেমনি জ্বালানি সংকটও অনেকটা কেটে যাবে। বেশ কয়েক বছর আগে সমুদ্র উপকূলের বালুতে অত্যন্ত মূল্যবান ভারি খনিজ পদার্থের সন্ধান পাওয়া যায়। এই খনিজের নাম দেয়া হয় ‘ব্লাক গোল্ড’ বা কালো সোনা। বিশেষজ্ঞরা সৈকতের বালু পরীক্ষা করে দেখেছেন এতে রয়েছে জিরকন (১ লাখ ৫৮ হাজার ১১৭ টন), রুটাইল (৭০ হাজার ২৭৪ টন), ইলমেনাইট (১০ লাখ ২৫ হাজার ৫৫৮ টন), লিউকক্সেন (৯৬ হাজার ৭০৯ টন), কায়ানাইট (৯০ হাজার ৭৪৫ টন), গারনেট (২লাখ ২২ হাজার ৭৬১ টন), ম্যাগনেটাইট (৮০ হাজার ৫৯৯ টন) এবং মোনাজাইট (১৭ হাজার ৩৫২টন)। এই বিপুল পরিমাণ মূল্যবান খনিজ আহরণ ও ব্যবহার করতে পারলে অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক উন্নত হবে। ইতোমধ্যে এই সম্পদ আহরণে সমীক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়ার একটি প্রতিষ্ঠান সরকারের কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে। ইউরেনিয়াম ও ব্লাক গোল্ড ছাড়াও সিরামিকের জন্য হোয়াইট ক্লে, কাচের জন্য গ্ল্যাস স্যান্ড, ইটের জন্য ব্রিক ক্লে, জ্বালানির জন্য পিট কয়লা থেকে শুরু করে আরও মূল্যবান খনিজ সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। মাটির নিচে আরও কি পরিমাণ মূল্যবান খনিজ সম্পদ রয়েছে, তা এখনও অজানা। এছাড়া বাংলাদেশের বিশাল সমুদ্র সীমায় অফুরন্ত তেল ও গ্যাস যে রয়েছে, তা ইতোমধ্যে জানা গেছে। প্রাকৃতিক মূল্যবান খনিজের পর্যাপ্ততা এবং সর্বশেষ লোহার খনি আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে এটাই প্রমাণিত হয়, প্রাকৃতিক সম্পদের দিক থেকে বাংলাদেশ পৃথিবীর কোন দেশের চেয়ে কম নয়। এই সম্পদ আহরণ ও ব্যবহারযোগ্য করে তুলতে পারলে বাংলাদেশ যে সিঙ্গাপুরকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে, তাতে সন্দেহ নেই। এ জন্য প্রয়োজন মহাপরিকল্পনা ও উদ্যোগ।

এ পর্যন্ত যেসব মূল্যবান খনিজ সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে, তা যথাযথভাবে আহরণ ও ব্যবহারযোগ্য করে তুলতে পারলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে, তাতে সন্দেহ নেই। এক ইউরেনিয়াম দিয়েই বাংলাদেশ অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশে সরাসরি ইউরেনিয়াম ব্যবহারের আইন না থাকলেও, তা রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। এর সাথে অন্যান্য খনিজ সম্পদ যুক্ত হলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সূচক কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা সহজেই অনুমেয়। এ কথা অনস্বীকার্য, এসব সম্পদ আহরণে আমাদের প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এই অসামর্থ্য কাটিয়ে ওঠার পরিকল্পিত উদ্যোগ যে আছে, তাও পরিলক্ষিত হচ্ছে না। আমরা কেবল সম্পদের খবর পাওয়ার আনন্দের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছি। সম্পদ ভোগ করার আনন্দের ব্যবস্থা করতে পারছি না। এ অবস্থা হলে সম্পদ আবিষ্কার করলেই কি আর না করলেই কি! কাজেই প্রাকৃতিক সম্পদের মওজুত আবিষ্কারের পর তা মাটির নিচে ফেলে রাখার কোন অর্থ হয় না। অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ হতে হলে এই বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ ও ব্যবহারের উপর জোর দেয়া ছাড়া বিকল্প নেই। অব্যবহৃত থেকে গেলে এ সম্পদ শুধু বিনষ্ট হবে, কোন উপকারে আসবে না। এ খাতে রাজনৈতিক দলগুলোর দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। তাদের দৃষ্টি ক্ষমতার মসনদের দিকে না থেকে অর্থনীতির দিকে থাকা উচিত। বদলে যাওয়া বিশ্বে উন্নত দেশগুলো তো বটেই উন্নয়নকামী দেশগুলোও এখন অর্থনীতিকে মূল এজেণ্ডা ধরে ক্ষমতায় যাওয়ার নীতি গ্রহণ করছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো এ নীতি গ্রহণ না করলে যতই ইমার্জিং টাইগার বলা হোক না কেন, তা কেবল কথার কথাই হয়ে থাকবে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় পেছনের সারিতে পড়ে থাকবে। সিঙ্গাপুর যদি শূন্য থেকে অতি দ্রুত এশিয়ার চতুর্থ টাইগারে পরিণত হতে পারে, তবে আমরাও বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের ব্যবস্থা ও তা কাজে লাগিয়ে হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান এবং সিঙ্গাপুরের পর এশিয়ার পঞ্চম টাইগারে পরিণত হতে পারব। এজন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও  সে অনুযায়ী কার্যকর পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা। অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিলে এ লক্ষ্যে দ্রুত পৌঁছানো সম্ভব বলে আশা করা যায়।

নাইম ইসলাম নিবির : রাজনীতিক ও কলামিস্ট 

nayemulislamnayem148@gmail.com

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..