রাঙামাটি প্রতিনিধি: রাঙামাটিতে বৈধ জোট পারমিটের মাধ্যমে কর্তন করে মজুদকৃত ৩,০১,৯৮৩ ঘনফুট সেগুনসহ বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান কাঠ যার বাজার মূল্য প্রায় শতকোটি টাকার অধিক দীর্ঘ তিন বছর ধরে খোলা আকাশের নীচে রোদে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হতে যাচ্ছে । রাঙামাটি জেলার বরকল উপজেলার ছোট হরিণার এলাকার বিভিন্ন স্টকে দেখা গেছে।
এতে করে বরকল উপজেলায় জোট মালিক (বাগান মালিক) সহ সংশ্লিষ্ট কাঠ ব্যবসায়ী, এর সঙ্গে জড়িত সাধারণ মানুষ এবং খেতে খাওয়া দিন মজুর চরম আর্থিক দৈন্য দশায় অভাব অনটনের কারনে ছেলে-মেয়ের লেখা পড়া নিয়ে এক চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে বছরের পর বছর দিনাতিপাত করছে।
এই করুণ অবস্থার জন্য রাঙামাটির কাঠ ব্যবসায়ীরা দোষ দিচ্ছেন স্থানীয় বন বিভাগকে। তাদের মতে বন বিভাগের অসহযোগীতার কারনে আজকে এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে এই অবস্থা সৃষ্ট্রি হয়েছে কাঠ ব্যবসায়ীরা জানায়। এজন্য তারা শিগগিরই আইনের আশ্রয় নেবেন বলে হুশিয়ারী দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাঙামাটি চাকমা সার্কেলের অধীনে মোট ১৫৯ টি মৌজার মধ্যে বরকল উপজেলায় রয়েছে মোট ২৮টি মৌজা। এর মধ্যে ১১টি মৌজায় জোট পারমিটের কাজ অর্থাৎ কাঠ ব্যবসা কোন অদৃশ্য কারনে গত তিন বছর ধরে বন্ধ রয়েছে -তার কারন বন বিভাগ কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ীদেরকে ব্যাখ্যা করছে না। অথচ বাকী সব মৌজাগুলিতে জোত পারমিটের কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা বলেছেন।
রাঙামাটি বন সার্কেলের অধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগ কর্তৃপক্ষ সেই ২০১৭ সাল থেকে বিভিন্ন সময় সম্পূর্ণ বৈধ প্রক্রিয়া মোট ৭১টি ফ্রি জোট পারমিট ইস্যু করেছিল। সেই পারমিটের অনুবলে এবং বন বিভাগের ও সংশ্লিষ্ট সরকারী দপ্তরে সকল নিয়ম অনুসরন করে এসব মজুদকৃত কাঠ বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন জোট ভূমি থেকে কেটে সড়ক ও নদী পথে এনে ছোট হরিণা ১২ বিজিবি জোনের পাশর্^বর্তী দোকানঘাট এবং বড়ইতলা এলাকায় মজুদ করা হয়েছিল।
এসব মজুদকৃত কাঠের মধ্যে রয়েছে-সেগুন, গামার ও কড়ই। এসব কাঠ দীর্ঘ বছন ধরে খোলা আকাশের নীচে থাকায় বর্তমানে অর্ধেক অংশের বেশী রোদে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে পঁেচ নষ্ট হয়ে গেছে যা সম্প্রতি সরেজমিনে তদন্তে গিয়ে এ বাস্তব চিত্র দেখা গেছে। ফলে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে তেমন জোত মালিকরা তাদের কাঠ বাজার জাত করতে পারছে না ।
এখানে প্রশ্ন থাকে যে, কোন অদৃশ্য কারনে বন বিভাগ কর্তৃপক্ষ এসব বৈধভাবে সংগৃহীত কাঠগুলি পরিবহণ ও বাজারজাত করনে সংশ্লিষ্ট কাঠ ব্যবসায়ীদেরকে অনুমতি দিচ্ছেনা।
যার কারনে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী পাহাড়ী-বাঙালী যারা জড়িত রয়েছেন তারা কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করার পর মজুদকৃত কাঠগুলি সঠিক সময়ে পরিবহণ ও বাজারজাত করতে না পেরে বর্তমানে পথের ভিখারি হওয়ার পথে বসেছেন বলে জানিয়েছেন এসব কাঠ ব্যবসায়ীরা।
বরকল কাঠ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির লি: সভাপতি মো: শাহ আলম বলেছেন, বন বিভাগ আমাদেরকে সহযোগীতা করতেছেনা। আমরা যখনই মজুদকৃত কাঠগুলি পরিবহণের জন্য ডি-ফরম অনুমোদনের জন্য বন বিভাগের কাছে যায় তখন তারা ডি-ফরম ইস্যু করেনা। এ অবস্থায় বিগত তিন বছরে আমাদের কাঠগুলি প্রায় পঁেচ নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা শিগগিরই বন বিভাগের বিরুদ্ধে মামলা করবো এবং আমরা ক্ষতিপূরণসহ আমাদেরকে টাকা ফেরত চায়। আমরা আর কাঠ চাই না বলে জানান স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ী শাহ আলম।
একই সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল জানান, সম্পূর্ন বৈধ কাগজপত্রের মাধ্যমে এসব কাঠ স্টক করা হয়েছিল। কিন্তু বন বিভাগ কেন বা কোন কারনে পরিরহনে সহযোগীতা করছেনা তা আমরা জানিনা। যার ফলে কাঠ ব্যবসা বন্ধ থাকায় এবং মজুদকৃত কাঠ গুলি পরিবহণ ও বাজারজাত করতে না পারায় আজ দিন মজুর থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট এলাকার সকল মানুষ অনাহারে অর্ধাহারে দিন যাপন করছে।
অবিলম্বে বরকল উপজেলায় কাঠ ব্যবসা চালু করার জন্য সরকারের নিকট দাবী জানান আব্দুল জলিল।
একইসাথে কাঠ ব্যবসায়ী মো: নূরুল আলম, সোহরাব হোসেন, জহির উদ্দিন তালুকদার ও মো: বখতেয়ার উদ্দীন চৌধুরী একই দাবী জানিয়ে বলেছেন, যে তাঁরা বরকলে কাঠ ব্যবসা খুলে দেওয়ার জন্য প্রধান মন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি ও বন মন্ত্রী কাছে আবেদন করেছেন বলে জানা যায় ।
স্থানীয় কার্বরী প্রতি বিন্দু চাকমা ও পুলিন চাকমা একইভাবে বরকলে কাঠ ব্যবসা খুলে দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবী জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো: রফিকুজ্জামান শাহ এর কাছ থেকে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, কাঠ ব্যবসায়ীদেরকে আমরা সর্বাত্মক সহযোগীতা করে যাচ্ছি। কিন্তু তারা কি কারনে সেই মজুদকৃত কাঠগুলি নিয়ে আসতে পারছেনা সেটা একমাত্র তারাই জানে। আমরা বাঁধা দিচ্ছি এ অভিযোগ সঠিক নয়। এখন নিজের দোষ পরের ঘারে চাঁপানো হচ্ছে বলে জানান এই বন কর্মকর্তা।