রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোর পরিনতি
নাইম ইসলাম নিবির
ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে এটি স্পষ্ট যে, যুদ্ধটা চলছে মূলত প্রতিদ্বন্দ্বী বৃহৎ শক্তিবর্গের মধ্যে। শুধু যুদ্ধের মাঠটি ইউক্রেন। এখানে আক্রমণকারী হচ্ছে পতন থেকে উঠে আসা বৃহৎ শক্তি রাশিয়া। অন্য দিকে যুক্তরাষ্ট্রের অনুগত ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। মূল ভিকটিম দেশটির সাধারণ মানুষ, যারা প্রতিনিয়ত জীবন দিচ্ছে, হচ্ছে গৃহচ্যুত। নগরের পর নগর পরিণত হচ্ছে ধ্বংসস্তূপে। আমেরিকার পক্ষে আছে তার ন্যাটোভুক্ত ইউরোপীয় মিত্ররা। আর রাশিয়ার পক্ষে আছে আরেক নতুন পরাশক্তি চীনসহ আরো কয়েকটি দেশ।
এখানে একক পরাশক্তি হিসেবে আমেরিকা তার ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্য বজায় রাখার লক্ষ্যে এমন সব পরিকল্পনা হাতে রেখেছে যার অবধারিত পরিণতি ইউক্রেনে প্রক্সি ওয়্যার। এটি আমেরিকার কাছে নতুন কোনো বিষয় নয়। আমেরিকা নিজের স্বার্থে বিশ্বের যেকোনো স্থানে যেকোনো ফর্মে আঘাত হানতে বদ্ধপরিকর, যা মনরো ডকট্র্রিন দ্বারা অনুপ্রাণিত। যদিও মনরো ডকট্রিনের প্রধান লক্ষ্য ছিল ল্যাটিন আমেরিকা। পরবর্তীতে আমেরিকা সে নীতি গোটা বিশ্বেই প্রয়োগ করা শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম প্রেসিডেন্ট জেমস মনরো ১৮২৩ সালে ২ ডিসেম্বর যে পররাষ্ট্রনীতি ঘোষণা করেন, তার লক্ষ্য ছিল- ল্যাটিন আমেরিকায় ইউরোপের যেকোনো হস্তক্ষেপ প্রতিহত করা। উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা কিংবা অন্য যেকোনো রকম হস্তক্ষেপ আমেরিকা অবৈধ ঘোষণা করে এবং যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণের মার্কিন এখতিয়ার সংরক্ষিত হয়। পরবর্তীতে ২৬তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট মনরো ডকট্রিনকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে ঘোষণা করেন যে, ল্যাটিন আমেরিকার কোনো দেশ ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছে বলে যদি মার্কিন প্রশাসন মনে করে, তবে সে দেশ শাসন করার অধিকার যুক্তরাষ্ট্রের থাকবে। পরে আমেরিকা সে নীতিকে সারা দুনিয়ার জন্য প্রযোজ্য করে তোলে। ১৮৫৫ সালে উইলিয়াম ওয়াকার নামে একজন মার্কিন অভিযাত্রী তার সৈন্য বাহিনী নিয়ে নিকারাগুয়া দখল করে প্রেসিডেন্ট হয়ে যায়। শুধু তা-ই নয়, যুক্তরাষ্ট্র মেক্সিকোর প্রায় পাঁচ লাখ বর্গকিলোমিটার দখল করে এবং পরে নামমাত্র মূল্যে কিনে নেয়। এ নীতির মূল পরিকল্পনাগুলো ছিল এরকমÑ বৈরী সরকারের বিরুদ্ধে জনমত উস্কে দেয়া, অনাস্থা ভোটে পরাজিত করে পতন ঘটানো কিংবা ইমপিচ করা, অনুগতদের দিয়ে সামরিক অভ্যুথান ঘটানো এবং সব শেষে প্রয়োজনে সরাসরি মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ করা। এ নীতি এখন সারা বিশ্বের জন্য কার্যকর রয়েছে।
এ থেকে এটি স্পষ্ট হয়, যেহেতু বর্তমান পরিস্থিতিতে মার্কিন স্বার্থের জন্য প্রতিবন্ধক হয়ে উঠেছে চীন ও রাশিয়া; সেহেতু তাদের ও তাদের মিত্রদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া মার্কিন নীতির অংশ, যা আমরা অতি সম্প্রতি শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে ঘটতে দেখেছি। সুতরাং সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে চীন ও রাশিয়াকে এমনভাবে দুর্বল করা, যাতে তারা আমেরিকাকে আর চ্যালেঞ্জ করতে না পারে। বর্তমানে আমেরিকার ইউক্রেন যুদ্ধের মূল লক্ষ্য ওটাই।
এ ছাড়া আরো লক্ষ্য হচ্ছে, ইউরোপের ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোকে এই বার্তা দেয়া যে, নিজেদের (ইউরোপ) আলাদা নিরাপত্তার চিন্তাভাবনা অমূলক, যা তারা অনেক দিন ধরে ভেবে আসছে। ইউক্রেন যুদ্ধ ইউরোপের সে ভাবনা থামিয়ে দিয়েছে। ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের মতো দেশ ন্যাটোর সদস্য হওয়ার আবেদন করেছে।
কিন্তু প্রতিটি যুদ্ধেরই বিরূপ প্রতিক্রিয়া থাকে। এ যুদ্ধের পরিণতিও সুদূরপ্রসারী হবে তাতে সন্দেহ নেই। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে বিশ্বব্যাপী খাদ্যসঙ্কট দেখা দেবে। জ্বালানি তেলের মূল্য মানুষের সাধ্যের বাইরে চলে যাবে। সরকারগুলোর পক্ষে মুদ্রাস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা কঠিন হবে। এ অবস্থায় ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার মান কমতে থাকবে। ফলে সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাবে দেশে দেশে; যা সরকারগুলোর ভিত নাড়িয়ে দেবে।
এই পটভূমিতে নতুন এক বিশ্বব্যবস্থাও সামনে এসে পড়তে পারে। যার আলামত এরই মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। আর এই নবতর বিশ্বব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হচ্ছে, এমন এক বহুমুখী বিশ্ব গড়ে তোলা, যা একমুখী অপ্রতিরোধ্য মার্কিন একক অধিপত্য খর্ব করবে। এ ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে রাশিয়া ও চীন। এই উভয় দেশ মার্কিন ডলারের একচেটিয়া কর্তৃত্ব খর্ব করার লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে ডলারের বিকল্প হিসেবে রুশ রুবল ও চীনা মুদ্রা ‘ইউয়ানের’ মাধ্যমে বিশ্ব বাণিজ্য শুরু করেছে। অনেক দিন ধরে এটি সীমিত আকারে চলে আসছিল। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আমেরিকা ও ইউরোপের ব্যাপক অর্থনৈতিক অবরোধে রাশিয়া তার রুবলের ধস ঠেকাতে এবং নিজ অর্থনীতি ধরে রাখতে ইউরোপের দেশগুলোকে রুবলে দাম পরিশোধে বাধ্য করলে ডলারের বিকল্প ব্যবস্থার কার্যকারিতা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। লিবিয়া প্রথম ডলারের একচেটিয়া আধিপত্য রুখতে এ ব্যবস্থা হাতে নিয়েছিল। কিন্তু এ জন্য গাদ্দাফিকে জীবন দিয়ে করুণ পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে। কিন্তু রাশিয়া লিবিয়া নয়। বিশ্বের অন্যতম সুপার পাওয়ার। তা ছাড়া দেশটি পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশ খাদ্যশস্য ও তেল-গ্যাস উৎপাদন করে। ইউরোপসহ বিশ্বের বহু দেশ রুশ গম ও তেল-গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। রাশিয়া যদি খাদ্যশস্য ও তেল-গ্যাসসহ সব জিনিস রুবল ছাড়া অন্য কোনো বিনিময় গ্রহণ না করে; তা হলে ইউরোপের অনেক দেশসহ বিশ্বের বহু দেশ রুবল কিনতে বাধ্য হবে, যা ডলারের একচ্ছত্র আধিপত্য বিপর্যস্ত করবে। এরই মধ্যে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে হাঙ্গেরি, ইতালি ও জার্মানি রুবলে রুশ তেল-গ্যাস ক্রয় করছে। সুতরাং ইউক্রেন যুদ্ধের জয়-পরাজয়ের ওপর আর এটি নির্ভরশীল নয়; বরং নতুন একটি বিশ্বব্যবস্থার দিকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।
অন্য দিকে ইউক্রেন যুদ্ধ রাশিয়ার জন্য ‘ডু অর ডাই’ যুদ্ধে রূপ নিয়েছে। আর মনে হচ্ছে এতে শেষতক রাশিয়ার বিজয় ঠেকানো যাবে না। কারণ আমেরিকা ও ইউরোপীয় ন্যাটো দেশগুলো ইউক্রেনের পক্ষ নিয়ে সরাসরি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়াবে না। আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, যুদ্ধের শুরুতে এটি মনে হচ্ছিল, পশ্চিমারা ইউক্রেনে রাশিয়াকে একটা দীর্ঘ যুদ্ধে জড়িয়ে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করতে চায়। কিন্তু যতই সময় যাচ্ছে, মনে হচ্ছে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে বিশ্বে বিপর্যয় নেমে আসবে; যা পশ্চিমা স্বার্থের জন্য মারাত্মক ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এই যুদ্ধের নেপথ্য কুশীলব জো বাইডেন। কারণ দীর্ঘ আফগান যুদ্ধের পরাজয়ের পর ইউক্রেন যুদ্ধের কোনো বিপর্যয় আমেরিকার জনগণ মেনে নেবে না। আর সেটি হলে নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় মার্কিন মধ্যবর্তী নির্বাচনে নিশ্চিতভাবে বাইডেনের নেতৃত্বে ডেমোক্র্যাট দলের পরাজয় ঘটবে, যার দায় বাইডেনকেই বহন করতে হবে।
যদিও জো বাইডেন বহুমুখী পরিকল্পনা সামনে রেখে ইউক্রেন যুদ্ধ উস্কে দিয়েছেন, যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে- বিশ্বে আমেরিকার একক আধিপত্যকে ধরে রাখা; যা আমেরিকার জনগণ পছন্দ করে। তবে সেটি কোন মাত্রায় বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে তা আমরা দেখতে পাই আমেরিকার ইরাক যুদ্ধ সম্পর্কে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় মার্কিন বুদ্ধিজীবী নোয়াম চমস্কির লেখায়। চমস্কি তার ‘ইন্টারভেনশনস’ গ্রন্থে ‘ইরাক যুদ্ধ সম্পর্কিত ঘটনা’ শীর্ষক এক নিবন্ধে লিখেছেন, ‘বিশ্ব ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রটি ঘোষণা করে যে, তারা বিশ্বকে শক্তির দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। আধিপত্যই দেশটির সর্বোচ্চ অবস্থা। প্রেসিডেন্ট বুশ ও তার দলবল বিশ্বাস করেন, তাদের হাতে সহিংসতার যে শক্তি রয়েছে তা খুবই অসাধারণ- এটি প্রয়োগ করে যে কেউ যদি তাদের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চায় তারা ঘৃণার সাথে তাকে খারিজ করতে পারে।’
সব পরিকল্পনার পরও এরই মধ্যে ইরাকে সঙ্ঘাতময় পরিস্থিতি রেখে মার্কিন সেনা দেশে ফিরে গেছে। আফগানিস্তানে শোচনীয় পরাজয় মেনে বিদায় নিয়েছে। সিরিয়ায় রুশ সামরিক উপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নতুন হুমকি সৃষ্টি করেছে। অন্য দিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর বিপর্যস্ত ও বিধ্বস্ত রাশিয়া গত ৩০ বছরে আবার পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। একই সময়ে চীনও পরাশক্তি হিসেবে নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টা করছে এবং উভয় দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ। ইরান আগের চেয়ে আরো বেশি প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নতুন এক পরিস্থিতি, যা ইরাক-আফগান যুদ্ধ পূর্ববর্তী অবস্থার চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখন আমেরিকাকে তার আধিপত্য বজায় রাখতে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। বর্তমান মার্কিন পরিকল্পনাগুলো মোটাদাগে দৃশ্যমান।
বিশেষ করে আফগান যুদ্ধে আমেরিকার পরাজয় মার্কিন প্রশাসন ও সমরনায়কদের একটি কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সেটি হচ্ছে, মার্কিন একক আধিপত্যের অবনতি সম্পর্কে উদ্বেগ। কিন্তু সেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিরসন, মিত্রদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং আমেরিকার একক আধিপত্য টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে ওয়াশিংটনের সাম্প্রতিক সব পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হচ্ছে চীন। মার্কিন প্রশাসন মনে করে তাদের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বব্যবস্থার সবচেয়ে বড় হুমকি হচ্ছে গণচীন। তাই মার্কিন প্রশাসন চীনকে প্রতিহত করতে এরই মধ্যে আমেরিকাসহ জাপান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া নিয়ে কোয়াড জোট গঠন করেছে। আবার ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়াকে তিন দেশীয় অকাস গঠন করেছে। এ ছাড়া আমেরিকার বিপক্ষে যেতে পারে কিংবা গেছে এমন সরকারকে সহিংস গণ-অভ্যুত্থান বা অন্য কোনো পন্থায় পরিবর্তন করা হচ্ছে; যা এরই মধ্যে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে আমরা দেখেছি। প্রায় একই পদ্ধতিতে ইউক্রেনে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রুশপন্থী সরকারকে হটানো হয়েছিল। কিংবা এরও আগে আরব বসন্তের নামে তিউনিসিয়া, লিবিয়া, মিসরসহ কয়েকটি দেশে সরকারের পতন ঘটানো হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের মোকাবেলায় যে কোয়াড ও অকাস নামের সামরিক জোট গঠন করেছে, তার মুখ্য ভূমিকায় থাকবে ভারত। আমেরিকা মনে করে তার ‘চীন কনটেইন’ পলিসি এগিয়ে নিতে ভারতই কার্যকর অনুঘটক। কিন্তু আফগানিস্তানে পরাজয়ের গ্লানি মোচন করতে অবিলম্বে একটি যুদ্ধ প্রয়োজন, যা শত্রুকে বিপর্যস্ত করবে এবং বিশ্ব বিবেক আমেরিকার পক্ষে নিয়ে আসবে। আর সেই যুদ্ধক্ষেত্রটি হচ্ছে ইউক্রেন। এ জন্যই ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক
অভিযান শুরুর পরপরই পশ্চিমা বিশ্ব ও তৃতীয় বিশ্বের এলিট ক্লাস রাশিয়ার বিরুদ্ধে ঘৃণায় ফেটে পড়ে। পক্ষান্তরে, এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকার যেসব দেশ বহু বছর ধরে পশ্চিমা ঔপনিবেশিক শাসনে শোষণ, নিপীড়ন- নিষ্পেষণের শিকার হয়েছে তারা রাশিয়াকে সমর্থন করছে। মার্কিন প্রশাসন ইউক্রেনে এমন একটি জয় পেতে চায় যা শুধু আফগান পরাজয়ের গ্লানিই মোচন করবে না, মার্কিন জনগণকেও বিমোহিত করবে এবং মধ্যবর্তী নির্বাচনে বড় বিজয়ের সহায়ক হবে।
দ্বিতীয়ত, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক শক্তিকে এমনভাবে পর্যুদস্ত করা, যাতে সে কখনো আর যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করতে না পারে। আর এটি হলে কার্যত চীন-রাশিয়া সামরিক জোটও দুর্বল হয়ে পড়বে। তৃতীয়ত, পাকিস্তানের সরকার পাল্টানোর ঘটনা কেবল ইউক্রেন ইস্যুতে নয়, এর সাথে দক্ষিণ এশিয়ায় আমেরিকার ‘চীন কনটেইন’ পলিসি, ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যু, আফগানিস্তান, ইরান, মধ্য এশিয়া বিষয় জড়িত রয়েছে বলে ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। মূলত ভারতের ‘টু ফ্রন্ট’ যুদ্ধের পরিকল্পনাকে এক ফ্রন্টে অর্থাৎ চীন ফ্রন্টে কেন্দ্রীভূত করা। পাকিস্তানকে নিউট্রাল করে ভারতকে চীনের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক হওয়ার সুযোগ করে দেয়া। অন্য দিকে পাকিস্তানের মাটিকে কাজে লাগিয়ে আফগানিস্তান, ইরান ও মধ্য এশিয়ায় মার্কিন প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করা, যা তাকে অতীতের একচ্ছত্র অধিপতির আসনে আসীন রাখবে।
নাইম ইসলাম নিবির
প্রধানমন্ত্রীর স্নেহধন্য রাজনীতিক ও কলাম লেখক
nayemulislamnayem148@gmail.com