দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি
দায়ী কি শুধুই রাজনীতি?
আমরা যারা সাধারণ জনগণ তারা সবকিছুতেই শুধুমাত্র পলিটিক্যাল ইস্যূ জড়িয়ে ফেলি। যেমন, দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি। এই বৃদ্ধির কারণ হিসেবে সরকার পক্ষ একভাবে বক্তব্য দিচ্ছে, বিরোধীপক্ষ আরেকভাবে, আর সবকিছু ছাড়িয়ে জনগণ দেখছে পলিটিক্যালভাবে। পরিস্থিতি যখন এমন অবস্থা তখন আমরা কোনো উপায় না পেয়ে সাতপাঁচ না ভেবে মনে মনে পলিটিশিয়ানদেরকেই দায়ী করছি। তবে পলিটিক্যাল ইস্যূর বাহিরেও আরো যেসব কারণ থাকতে পারে সেটা অনেকেই অনুধাবন করিনা বা করতে চাইনা। আমি সেই বিষয়ে কিছু কথা আলোকপাত করতে চাই। আসুন আমরা গঠনমূলক আলোচনা করি । আলোচনাটি সম্পদের Sustainable use নিয়ে। আর সম্পদের Sustainable use তো Sustainable জনসম্পদ বা মানবসম্পদ দ্বারাই সম্ভব ।
ছেলে আমার শহরে থাকে । তাই জুতো ছাড়া হাঁটতে পারেনা। মাটিতে পা লাগলে সে খুবই বিব্রত হয় । গা ঘিনঘিন করে তার। সে মাটিকে নিতান্তই ময়লা মনে করে। আর কাদাকে কি মনে করে তা আপনারাই বুঝে নিন । মাটি কি জিনিস তা তার নিকট পৌঁছে দিতে আমরা মনে হয় ব্যর্থ হয়েছি। এই ব্যর্থতা থেকে মুক্তি পেতে মাটি ও কাদার প্রতি ছেলের যে ভয় বা জড়তা বা অবজ্ঞা তা দূর করতে ছেলেকে মাঠের কাদামাটিতে নিয়ে গেছি। মাটির প্রতি ভালোবাসা জাগাতে চেষ্টা করেছি। আমরা যারা শহরে থাকি অথবা গ্রামের ধনীরা তারা কি সকলে সন্তানদের মাটিতে মানুষ করার চেষ্টা করি? না, অনেকেই করিনা। ফলে মাটি ও মাটির সুফল আমাদেরকে ছোঁয়া দেয়না। আর যারা মাটির সুফল বুঝে না তাদেরকে দিয়ে কিভাবে ফসল ফলাবেন অথবা শস্য উৎপাদন করবেন? আর আপনার আমার যদি ফসল উৎপাদনের আগ্রহ না থাকে তবে কি চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হবেনা? এই কম উৎপাদনের সুযোগটার ফলে দ্রব্যের দাম কিভাবে কম পাবার আশা করতে পারি?
আমার মনে আছে, ২০০০ সালে আমি যখন ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ি তখন মাঠে সব রকমের ফসল দেখা যেত । কোন জমি খালি বা পতিত অবস্থায় পড়ে থাকতো না। জমিতে কৃষিকাজের জন্য দিনমজুরে বা বদলির অভাব হতো না । হতোনা অভাব বর্গা চাষীরও । আর ২০২৩ সালে বাড়িতে গিয়ে দেখি দিন মজুরে বা বদলি কাজের লোকের কত অভাব ! ২০ জনকে বলেও ডহি বা বর্গাচাষের জন্য রাজি করানো যায় না । আর শত শত একর জমি খালি পড়ে আছে। খালি পড়ে আছে বাড়ির আঙ্গিনা । সেই আঙ্গিনা এখন মোবাইল ব্যবহারকারীদের দখলে । তারা সারা রাত জেগে সকাল ১০-১২ টায় ঘুম থেকে উঠে । পাশাপাশি আধুনিক বিনোদনের নামে শিশু থেকে বয়োজ্যেষ্ঠরা যে হারে ইলেকট্রনিকস ডিভাইস ( বিশেষ করে মোবাইল) ব্যবহার করছে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মাটির কাছে যাবে কিনা ( ফসল ফলাতে) সে ব্যাপারে আমার উদ্বেগ আশংকাজনক হারে বাড়ছে। এমন হলে কি হবে মেধার বিকাশ বা শারীরিক গঠন । কারণ কৃষি কাজের সাথে শারীরিক গঠন বা মেধা বিকাশের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত । আর দ্রব্যমূল্যেতো অঙ্গাঙ্গী।
আমরা যদি নিবিড়ভাবে চিন্তা করি দেখি তবে সহজেই অনুমেয় হবে দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির জন্য কি শুধু রাজনৈতিক কারণই দায়ী ? তাই, আসুন দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি নিয়ে শুধুমাত্র রাজনৈতিক অবস্থাকে দায়ী না করে দ্রব্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধে, ভেঁজাল মুক্ত খাদ্য পেতে আর সন্তানের ভবিষ্যৎ বিকাশে আমরা মাটির সাথে সম্পর্ক করি। মাটিকে ফসলের মাঠ বানাই।
লেখক : প্রানিবিদ মোহাম্মদ রোকন, মাস্টার্স at Wildlife & Biodiversity Conservation. সাবেক শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ।